আবার তোরা মানুষ হ
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৯ জুন, ২০১৫, ১১:৩০:২২ রাত
ক্রিকেটকে ভারতকে পরাজিত করে বেশ সুনাম কামিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। এ নিয়ে বিভিন্ন আনন্দ, কৌতুক, ব্যাঙ্গ ইত্যাদির সীমা নেই। আর সেই সাথে আছে গবেষনা ও পরিসংখান। কোন ম্যচে কিভাবে ভারত কি করেছে, বাংলাদেশ কি করেছে। কত বছর পরে সেঞ্চুরী করেছে, কতটা উইকেট নিয়েছে ইত্যাদি নিয়ে গবেষনার অন্ত নেই। অতি উতসাহী অনেকে তো এর ভেতরে ভারতের কিছু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধও খুজে পাচ্ছেন। যাই হোক আমি খেলা কম বুঝি , তাই অতকিছু বুঝি না। তবে আমি দুটি কথা বুঝতে পারছি। এক, ভারত আন্তঃজাতিক ক্রিকেট খেলছে ৮০ বছরেরও বেশী আর বাংলাদেশের এখনো ২০ বছর হয়নি। দুই, ভারতের ক্রিকেট দলের ১১ জন খেলোয়াড় আসে তাদের জনসংখা ১২০ কোটি লোকের ভেতর থেকে আর বাংলাদেশের ১১ জন খেলোয়াড় আসে ১৬ কোটি লোকের ভেতর থেকে। এই দুটি দিক থেকে বিচার করলেই বোঝা যায় যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলটি আসলে ভারতের কাছে শিশু। এই শিশু দলটিই যখন ভারতকে বিস্তর ব্যাবধানে হারায় তখন সকল বাংলাদেশীই গর্বিত হয়ে ওঠে। তবে সেই গর্ব প্রকাশ করার জন্য এই লেখাটা নয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড কি দেশের সবচেয়ে সেরা প্রতিস্টান? ক্রিকেট খেলোয়াড়েরা কি দেশের সবচেয়ে সেরা প্রতিভাবান? যারা ক্রিকেটের সাথে জড়িত আছে তাদের মধ্যে কি দায়িত্ব অবহেলা, দুর্নীতি ইত্যাদি নেই? সব কিছুই আছে। ক্রিকেটে অব্যাবস্থাপনা এত বেশী যে সম্প্রতি ক্রিকেট বিশ্বকাপে ক্রিকেট বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্লেনের ভেতরে এক সহযাত্রী মহিলার গায়ে হাত দেবার জন্য অস্ট্রেলীয়াতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। আরেক কর্মকর্তার বিরূদ্ধে অভিযোগ আছে যে তিনি অস্ট্রেলিয়াতে খেলোয়াড়দেরকে রাতে হোটেল থেকে বের হতে না দিয়ে নিজে জুয়া খেলার আসরে গিয়েছিলেন। এরা দেশে কি করেন সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। পরিস্থিতি এমন হবার পরেও ক্রিকেটে আমরা ভারতকে যেভাবে পরাজিত করতে পারি তেমন ভাবে অন্য কোন ক্ষেত্রে পরাজিত করতে পারিনা কেন? এর কারন একটাই - আমাদের নতজানু নীতি। আমরা প্রথমেই ভারতের কাছে হেরে বসে থাকি। প্রতিযোগীতাই করিনা, জিতব কিভাবে?
একেবারে উপর থেকে দেখি। সম্প্রতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ নিয়ে অতি উতসাহী লোকজনদের তো মাতামাতির অন্ত ছিল না। বড় দাড়ীওয়ালা লোকজন তো মোদীর পা ছুয়ে ছালাম করেছে, করোজোড়ে নমস্কার জানিয়েছে। এখানেই শেষ নয়। প্রবীন একজন মন্ত্রী বলেছেন "বাংলাদেশে ভারত বিরোধীদের কোন ঠাই নেই" আর নবীন একজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন "আমরা ধীরে ধীরে একই রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছি"। এই কথাটাগুলো কি দেশের স্বাধীনতা বিরোধী হয় কিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে কি দিয়ে গেলেন আর কি নিয়ে গেলেন ইত্যাদি জটিল আলোচনার ভেতরে আজকে যাচ্ছি না। আজকে বলছি আমাদের নতজানু, হেরে যাওয়া মানষিকতা কথা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তোষামদের কথা।
এবার একটু নীচে নামি। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে প্রতিদিনই বাংলাদেশী লোক মরছে। সেদিন তো খবরে আসল, গুলি করে নয়, জবাই করে একজন বাংলাদেশীকে মেরেছে ভারতের সীমান্তরক্ষীরা। বছর দশেক আগেও সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গুলী বিনিময় হোত। ভারতীয় বাংলাদেশীদের সাথে পেরে ওঠেনি এমন অনেকবার হয়েছে। কিন্তু এখন আর তা হয় না। এখন আমরা আগেই হার স্বীকার করে বসে থাকি। তাইতো আমাদের কোমর আর শক্ত নেই। কয়েকদিন আগেই তো মায়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা একজন বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীকে প্যান্ট খুলে চোরের মতন বেধে রখেছে। এ নিয়ে দেশে নেই কোন প্রতিবাদ, মিডিয়াতে নেই কোন সমালোচনা। সরকারের উচ্চপদস্ত দায়িত্বশীলেরা বলছেন এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি। ভুল বুঝে একজনকে বেধে রেখেছে। এই কথাটা শুনে মনে হল ভুল কি তারা বুঝেছে নাকি আমরা(জনগন) বুঝছি? ভারতের সামনে করোজোড়ে দাড়াতা দাড়াতে আমাদের সীমান্তরক্ষীদের এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন মায়ানমারের রক্ষীরাই তাদেরকে চোরের মতন বেধে রাখে। এটাকেই হেরে যাওয়া মানষিকতা বলে।
আরো নীচে নামি। দেশে বিভিন্ন বড় বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সব সময় ভারতীয় তারকা আনাটা একেবারে ফ্যাশন হয়ে গেছে। যারা ভারতীয় শিল্পী আনতে পারে না তারা অন্তত ভারতীয় গান বাজিয়ে ভারতীয় ধাচে অনুষ্ঠান করে। ভারতীয় শিল্পীদের ভীড়ে অনেক বাংলাদেশী শিল্পীরা নিজেরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেছে। এছাড়া আছে ভারতীয় সিনেমা ও নাটক। আমরা ধরেই নিয়েছি যে আমরা ভারতের চেয়ে ভালো বা সমমানের সিনেমা, নাটক বানাতে পারি না। এজন্যই আমরা ওদের নকল করি। অনেক গুনী শিল্পী নকল না করলেও অদের অনুকরন করতে ভোলেন না। নির্মাতা থেকে শুরু করে দর্শক পর্যন্ত, সবাই আছেন ভারতীয় শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাস্ত। বিশ্বের যে কোন দেশে দেখবেন, আন্ত;জাতিক কোন খেলার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে সেই দেশের শিল্প সাংস্কৃতি, বিশেষ করে গ্রামীন বা উপজাতী শিল্প দেখানো হয়। ওদিকে বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান হয় ভারতের শিল্পীদের অনুষ্ঠানে নাচ ও গানের অনুষ্ঠান। নির্মাতাও খুশি, দর্শকেরাও খুশি। তার মানে এতাই যে আমরা ধরেই নিয়েছি যে ভারতের মতন আমরা পারব না। অথচ এই ভারতের সাথেই পাল্লা দিয়ে সিনেমা ও গান বানানো হোত ৫০-৬০ এর দশকে।
আরো নীচে নামি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস রপ্তানীকারক দেশ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে এখন প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে ভারত। ভারতের পরোক্ষ রাজনীতিতে গার্মেন্টস এর আজ এই দশা। আমাদের দেশে টেকনিশিয়ানদের কমতি নেই। অথচ গার্মেন্টস শিল্পে যত সফটওয়্যার আছে তা সবই ভারত থেকে আনা হয়। শুধু তাই নয়। এই সফটওয়্যার এর কোন সমস্যা দেখে দিলে ভারতের টেকনিশিয়ান ভাড়া করে আনা হয়। এজন্য সেই টেকনিশিয়ান তার ফ্যামিলি সহ কোম্পানীর খরচে বাংলাদেশে কয়েক মাসের একটা বিনামুল্যে ট্যুর দিয়ে যায়। অথচ দেশের টেকনিশিয়ান দিয়েই এমন সফটয়ার বানানো বা অন্তত ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়। এটা আমরা করি না। আমরা ধরেই নিয়েছি, এমন টেকনিশিয়ান ভারতেই ভাল, বাংলাদেশে ভাল নয়।
সবচেয়ে নীচের স্তরে আছে ভোক্তারা। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল, পাখী ড্রেস ছাড়া তাদের চলেই না। এছাড়া রয়েছে পেয়াজ, ভারতীয় আলু ইত্যাদি। সব কিছু ভারতেই ভালো। এমনও উদাহরন আছে যে কম দামী দেশের পন্য বাদ দিয়ে বেশী দামে ভারতীয় পন্য কেনে। এজন্য কর্তারা সাহস পায় পলিও টিকা ভারতের অল্যাত কোম্পানীর কাছ থেকে কিনতে। তারা উতসাহ পায় বোর্ডের বই কোলকাতা থেকে প্রিন্ট করতে। এজন্য আমদের নতজানু মানষিকতাই দায়ী।
ক্রিকেটে আমরা যেমন বাঘ, আমরা আসলে তেমন বাঘ হতে পারি সব যায়গাতেই। ক্রিকেটে যেমন সারা দেশের মানুষ আশা করে, মনে করে, সাহস করে। এই উতসাহতেই অর্ধেক জিতে যায় আআদের ক্রিকেট দল, বাকিটা যেতে নিজেদের দক্ষতায়। ঠিক একইভাবে সকল নির্মাতা, কারিগর, শিল্পী, ব্যাবসায়ী যদি জনগনের কাছ থেকে এমন উতসাহ পায় তাহলে মানুষ সবকিছুতেই ভারতকে হারাতে পারবে। আর তেমন হলে তোষামদী নেতাদের মুখ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। আসুন আমাদের মানষিকতা বদলাই, নিজেকে চিনি। যেভাবে এক সময় ভারতের সাথে সব কিছুতে প্রতিযোগীতা হতো তেমনি আবারও শুরু হোক। তোষামোদি ও দাস না হয়ে, আবার আমরা মানুষ হই।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: বিবিধ
১২৮৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু মূল সমস্যা বাংলাদেশেরই। সহায়, সম্বল, সম্পদহীন ১৬ কোটি গিজগিজে বাংলাদেশর অসৎ মুসলিমরা সেখানে যায় সেখানেই দুই নাম্বারী করে। আমাদের মুমিন বিজিবি সদস্য মায়ানমার সীমান্তে ঘুড়ঘুড় করে চোরাচালানে ভাগ বসাতে। সঙ্গত কারনেই মায়ানমার সীমান্তরক্ষীরা ঐ বিজিপি সদস্য কে নেংটা করে চোরের মত বসিয়ে রেখেছে। ধন্যবাদ।
জিতে যা এক আধটু তা সে খেলাতেই কেবল । আর এই জেতাটা নিয়ে এমন মাতামাতি হয়ে যায় যে তা স্বাধীনতার যুদ্ধের লেবেলে গিয়ে ঠেকে ।
খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশকে জিততে হবে আত্ম সন্মান নিয়ে , অর্থনীতিতে , সামাজিক ভাবে , সাংষ্কৃতিক পরিমন্ডলে .. সেটা ভেতরে এবং বাইরেও ।
১৯৪৫ এ আমেরিকার কাছ থেকে দু দুটো এটম বোমা খেয়েও জাপান এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত শক্তি । মিত্র শক্তির সবাই তাকে সমঝে চলে ।
শুধু ওপার থেকে বলে দিবে বহুত ইয়েছে আর এপাশ থেকে বলে দেয়া হবে, 'ছোঁ যা বাছা ভারতীয় মুল্লুকে দোটিম আচ্ছা নেহি।'
ব্যাস আমাদের টিম তখু শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখবে, 'আগে কি সুন্দর ক্রিকেট খেলিতাম'।
মন্তব্য করতে লগইন করুন