প্রিয় বই - The old man and the sea (প্রতিযোগীতা)
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৫ জুন, ২০১৫, ০৬:৩৮:৪৮ সকাল
যারা এই বইটি পড়েননি, তারা দয়া করে, ইংরেজী নাম দেখেই আমার লেখাটা এড়িয়ে যাবেন না। এই বইটি না পড়ে থাকলে, খুব দ্রুত এটি সংগ্রহ করুন। আমাদের দেশে এই বইটির বেশ কয়েকটি অনুবাদ আছে। যদি সংগ্রহ করতে না পারেন, সমস্যা নেই। এই লেখার শেষে লিঙ্ক দিয়ে দিয়েছি। বিনামুল্যে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এই বইটির জন্য আমেরিকান লেখক Ernest Hemingway ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। আমার বিশ্বাস, এই বইটি পড়লে, আপনার সারা জীবনের ১০টি সেরা বই এর মধ্যে এই বইটির নাম বলবেন। মুলত, সারা বিশ্বের সেরা ১০-১২ টি বইয়ের নাম বলতে বললে এই বইটির নাম আসে।
নোবেল পুরস্কার পাওয়া বেশীরভাগ বই একটু কঠিন ও ধরনের হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলীর কথাই ধরুন। কিন্তু এই, The oldman and the sea বইটি অত্যান্ত সহজ। লেখক Ernest Hemingway নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ঘটনার সুন্দর বর্ননার জন্য। এমনভাবে বর্ননা করেছেন, মনে হয় যেন ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটছে। তাছাড়া খুব ভালো কাজ জানলেই যে একজন সফল হবার মতন সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায় না, এই বিষয়টা তিনি খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ওই গল্পে। ওই গল্পটি সহ, অন্য অনেক গল্পে লেখক শিখিয়েছেন শত বাঁধা বিপত্তি ও দুর্ভোগ সত্যেও বাঁধা পার হয়ে কিভাবে জীবনে বেঁচে থাকার সাহস সঞ্চয় করতে হয়। দুঃখের বিষয়, সবাইকে সাহস দিলেও নিজের জীবনে সাহস পাননি লেখক। ৬২ বছর বয়সে, আত্মহত্যা করেন তিনি। আমেরিকান লেখক হলেও কিউবাতে বসেই এই বইটি লিখেছিলেন। কাহিনীটা হল , কিউবার হাভানা বন্দরের এক বুড়ো জেলের কাহিনী। জেলেদের জীবনযাত্রা, সমুদ্রে কিভাবে মাছ ধরে, কি কি লাগে ইত্যাদি সবই নিখুতভাবে ফুটে উঠেছে এই গল্পে। ওই বইটি লেখার সময় লেখক অভিজ্ঞতার জন্য নিজেও জেলেদের সাথে মিশেছেন, মাছ ধরেছেন। উপরে ছবিটি তেমনই এক সময়ের ছবি। লেখকের ছিল বউ মরা কপাল। একে একে চারটে বিয়ে করেছেন তিনি। ছবিতে তার সাথে দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদেরকে দেখা যাচ্ছে।
কাহীনির পটভুমীঃ
সান্তিয়াগো নামক এক বুড়ো জেলে ছিল হাভানা বন্দরে। সে খুবই অভিজ্ঞ ও পারদর্শী একজন জেলে। তার কাছ থেকে কাজ শিখে অনেকে বড় বড় জেলে হয়েছে। অনেক মাছ ধরে, অনেক টাকা আয় করে। সান্তিয়াগো নিজেও এক সময় অনেক বড় মাছ ধরেছেম, অনেক আয় করেছে। কিন্তু এই বুড়ো বয়সে তার শুরু হয়েছে দুর্ভাগ্য। প্রায় তিন মাস ধরে তিনি কোন মাছ পান না। সমুদ্রে নৌকা নিয়ে যান, ফিরে আসেন খালি হাতে। এমনই হচ্ছে প্রত্যেক দিন। তার নৌকায় সাহায্যকারী যে ছেলেটি কাজ করত। তাকে অনেক আগেই তার বাবা নিয়ে চলে গেছে। ছেলেটি অন্য জেলের সাথে কাজ করে। কম বেশী মাছ ধরে। কিন্তু বুড়ো সান্তিয়াগো অভাগাই আছে।
ছেলেটি অন্য জেলের সাথে কাজ করলেও সে কয়েকদিন কাজ করেই সান্তিয়াগোর প্রতিভা চিনে ফেলেছে। সান্তিয়াগো এতই অভিজ্ঞ যে, বড়শিতে মাছ বাধলে, সুতায় হাত দিয়েই নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারে কত বড় মাছ ধরা পড়েছে। রাতে চাঁদ ও তারা দেখে নির্ভুলভাবে পথ চিনে সাগর থেকে ফিরে আসতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, ছেলেটির সান্তিয়াগোর প্রতি এতটাই মায়া হয়েছে যে, সে নিজে প্রায় প্রত্যেকদিন এসে তার সাথে দেখা করে তাকে আশার বানী শুনিয়ে যায়। তার জন্য খাবার নিয়ে আসে, এমনকি মাছ ধরার টোপও নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়। নিজের কাজে যাবার আগে সান্তিয়াগোর নৌকাটা সাজিয়ে রেডি করে দিয়ে যায়। কিন্তু সান্তিয়াগো তো অভাগা। মাছই পাচ্ছে না।
এমনি রুটিনের এক দিনে, সান্তিয়াগো সমুদ্রে পাড়ি জমিয়েছে। পানিতে বিভিন্ন গভীরতায় চারটে বড়শি ফেলা। সবচেয়ে গভীরেরটা সাড়ে সাতশ ফুট পানির নীচে। প্রতিদিনই এমন করে সান্তিয়াগো। প্রতিদিনই খালি হাতে ফেরত যায়। আজকে মনে হয় তার ভাগ্যটা একটু ভাল। একটি বড়শির সুতা নড়তে শুরু করেছে। সুতায় হাত দিয়ে বুঝে গেল এটা একটা ছোট , মাত্র দুই পাউন্ড ওজনের মাছ। তাই আর সুতা না ছেড়ে মাছটিকে টেনে তুলল।
(পাঠক, অনেকেই জানেন - বড় মাছ বড়শিতে ধরা পড়লেই টেনে তোলা যায় না। সুতা ছেড়ে দৌড়াতে দিয়ে মাছটিকে ক্লান্ত বানাতে হয়। এর পরে টেনে তোলা। আর সমুদ্রের বড় মাছগুলো ক্লান্ত হলে কিছুক্ষনের জন্য পানির উপরে ভেসে উঠে। তখন বর্শা দিয়ে আঘাত করে মাছটিকে মারতে হয়। এর পরে মৃত মাছ টেনে তুলতে হয়। অবশ্য আধুনিক যুগে যে সব মাছ ধরার জাহাজ আছে, তাতে ক্রেন পর্যন্ত থাকে। গল্পটি তো অনেক আগের। পঞ্চাশের দশকের। )
এর পরে সারা দিন কেটে গেল। কোন মাছের দেখাই নেই। সান্তিয়াগো একবার ভাবল ঠিক আছে আজ ফিয়ে যাই, আমার দুর্ভাগ্য হয়ত কাটতে শুরু করেছে। আজ ২ পাউন্ড পেয়েছি কাল ২০০ পাউন্ড পাবো। পরক্ষনে আবার ভাবল, এতদিন পরে ২ পাউন্ড ওজনের মাছ নিয়ে ফিরে যাওয়ার চেয়ে ওটাকে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে যাওয়াটাই ভালো। এমন চিন্তা করতে করতেই তার সবচেয়ে গভীর বড়শিতে কিছু ধরা পড়ল। সুতাটা কাপছে। সুতা ধরে দেখে - এটা কি কোন কুমির নাকি হাঙ্গর? প্রায় ২ হাজার পাউন্ড ওজনের মাছ। সুতা ছেড়ে দিল। মাছ দৌড়াচ্ছে, আর বুড়ো জেলে বসে বসে সুতা যাওয়া দেখছে। মাছ আর ক্লান্ত হয়ই না।
বেলা গড়িয়ে রাত হল। নির্জন সমুদ্রে মাঝ রাতে, ছোট নৌকায় সান্তিয়াগো একা। কি করবে সে। এই মাছের যা গতি দেখা যাচ্ছে তাতে তো সহজে ক্লান্ত হবে না। সে কি সুতাটা কেটে, মাছটিকে ছেড়ে দিয়ে বাড়ী ফিরে যাবে? এখন মাঝ রাত, তারা দেখে দেখে রওনা দিলে সকালে তীরে পৌছে যাবে। নাকি সে ঘটনার শেষ দেখে যাবে। সাথে কোন, খাবার নেই, রয়েছে মাত্র এক বোতল পানি। এর পরে সে কি খেয়ে বাচবে? কোনটা বেশী দরকার, তার নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা নাকি দুর্ভাগ্য ঘোচানো, তা যত কস্টই হোক না কেন। সান্তিয়াগো ঠিক করল সে মাছটি নিয়েই ফিরে যাবে, যাই হোক না কেন।
সেই মাছের পেছনে, তার ৩ দিন কেটে গেছে। এই সময়ে অন্য দু একটি ছোট খাটো মাছ ধরা পড়েছে। এই ৩ দিন সান্তিয়াগো কাঁচা মাছ খেয়ে বেঁচেছে। বসে বসে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ঘুমিয়েছে। কিছুক্ষন পর পর নড়া চড়ায় উঠে গেছে। আর সারাদিন ড়োদে আর তৃষ্ণায় কস্ট পেয়েছে। মাছটা এখন মোটামুটি ক্লান্ত। একবার পানির উপরে এসে দেখাও দিয়ে গেছে। সান্তিয়াগো যা ভেবেছে তার চেয়ে লম্বা মাছটি। তার নৌকার চেয়েও লম্বা। এই মাছটি মারতে পারলে সে একা নৌকায় কিভাবে উঠাবে? এটাকে কি কেটে খন্ড করবে? তার কাছে তেমন বড় ছুরি চাকুও নেই। কি করবে, কিভাবে মাছটি নিয়ে যাবে, সেটাই ভাবতে লাগল।
শেষ পর্যন্ত কি সান্তিয়াগো সেই মাছটি মারতে পারে, নাকি তার ৩ দিনের অমানুষিক পরিশ্রম বৃথা যায়। যদি মাছটি মারতে পারে সেটিকে সে কি বাড়ি আনতে পারে, নাকি সমুদ্রের মাছ নৌকায় তুলতে না পেরে সমুদ্রেই ফেলে দিয়ে আসে;? তার দুর্ভাগ্য কি ঘোচে, নাকি অভাগা, অভাগাই থেকে যায়? তিন দিনের স্বাসরুদ্ধকর বর্ননার সাথে সাথে সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন ওই বইটিতে।
বাংলায় বইটি পড়তে ডাউনলোড করুন নীচের লিঙ্কে।
http://www.mediafire.com/view/63se83oju4ij23e/the-old-man-and-the-sea.pdf
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: Contest_priyo
২৬৭৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন