প্রিয় ব্যাক্তিত্ব - উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) - (প্রতিযোগীতা)
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১২ জুন, ২০১৫, ০২:১৬:০৬ দুপুর
মহানবী (সাঃ) ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এভাবেই নিজ ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অন্যান্য রাসুলেরা। যেমন ইব্রাহীম(আঃ), মুসা(আঃ), ইসা(আঃ)। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ধর্ম হারিয়ে গেছে। রাসুল(সাঃ) এর ধর্ম ইসলামও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়ার ঝুকি ছিল। আর এমন হারিয়ে গেলে আর কোন উপায় ছিল না। কারন আর কোন নবী বা রাসুল আসবে না। এই ঝুকি এড়িয়ে ইসলাম ধর্মকে চীরস্থায়ী করতেই আল্লাহর বিশেষ রহমত ছিলেন ওই চারজন খালিফা। এই চারজন খালিফা, ইসলাম প্রতিস্টার জন্য তাদের জান মাল নিয়ে রাসুল (সা) এর পাশে থেকেছেন। রাসুল (সাঃ) এর মৃত্যুর পরেও এর চারজন একে একে ৩০ বছর ধরে ইসলামের পতাকা ধরে রেখেছেন। আল্লাহর রহমতে, প্রতিষ্ঠিত ইসলামকে এরা চারজনেই চীরস্থায়ী করেছেন। এদেরই একজন ইসলামের দ্বিতীয় খালিফা - উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ)। আমি তার খুউউউউব বড় একজন ভক্ত। এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে, রাসুল (সা) কে বাদ দিয়ে তার একজন সাহাবী আমার প্রিয় পাত্র কেন হল? উত্তর হল, মুসলমান থাকতে গেলে আল্লাহর রাসুল (সা) কে অপছন্দ করার কোন সুযোগ নেই। তিনি এমনিতেই সবারই প্রিয়। তিনি সর্বকালের শ্রেস্ট মানুষ। কাজেই তার কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এর পরে, আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যাক্তিগত পছন্দ থাকতে পারে। আমার পছন্দ ঊমর (রা)। এই লেখাতে তার সম্পর্কে জানা-অজানা বেশ কিছু তথ্য রয়েছে।
ঊমর বিন আল খাত্তাব ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় বানি আদি গোত্রের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। খাত্তাব ছিল ঊমর (রা) এর বাবার নাম। খাত্তাব পেশায় ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী। এছাড়া তিনি তার বুধিমত্তার জন্য সমাজে বেশ সমাদৃত ছিলেন। যার ফলে তখনকার সমাজ পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। অল্প বয়স থেকেই পুত্র উমরকে কঠিন পরিশ্রম করার জন্য চাপ দিতেন, পিতা খাত্তাব। অনেক সময় মারধরও করতেন। এর ফলে অল্প বয়স থেকেই ঊমর হয়ে উঠেছিলেন পরিশ্রমী। সেই আমলে মক্কার মানুষের জ্ঞান এতটাই সীমিত ছিল যে তারা মনে করত তাদের চারপাশের পাহাড়গুলো আকাশটাকে ধরে রেখেছে। অর্থাৎ পাহাড়ের ওই পাশে যে কিছু আছে বা থাকতে পারে যেটাই আরবের অনেক মানূষ তখন জানতো না। সেই আমলেই, বাবার সাথে বানিজ্য ভ্রমনে রোম, ইরান ইত্যাদি দেশে যাবার সুযোগ হয়েছিল উমরের। এই সব ভ্রমনে অনেক লোকের সাথে তার দেখা হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিদ্যান ও জ্ঞানী। কাজেই উমরের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পান। আরবে সাধারনত মানুষ লেখাপড়া করত না। কিন্তু উমর করেছিলেন। তিনি লিখতে ও পড়েতে শিখেছিলেন। শুধু তাই নয়। সাহিত্য ও কাব্য প্রেমী ছিলেন তিনি। তাছাড়া কুরাইশ বংশের ঐতিহ্য অনুসারে তিনি অল্প বয়সে ঘোড়ায় চড়া, কুস্তি, তলোয়ার চালানো ইত্যাদি শেখেন। দীর্ঘ ও বলিস্ট দেহী উমর বেশ ভালো কুস্তিগির ছিলেন। সর্বপরি, উমর একজন ভালো বক্তা ছিলেন এবং পরবর্তিতে তিনি তার বাবার সদস্যপদটি লাভ করেন। মক্কার আর দশজন সাধারন যুবকের মতন, ইসলাম গ্রহনের আগে, তিনি মদ্যপান করতেন।
রাসুল (সা) নবুয়ত পান ৬১০ খ্রিস্টাব্দে। মক্কার কৃতদাস, দরিদ্র ও শোষিত শ্রেনী ও কতিপয় কাছের লোক ছাড়া সবাই প্রথমদিকে রাসুল (সা) এর বিরুদ্ধে ছিল। উমর তো ছিলেন সমাজের কর্তাব্যাক্তিদের একজন। সেই সময় তাদের একটা বহু-ইশ্বরবাদী ধর্ম ছিল। সেই ধর্ম রক্ষার জন্যই অন্য সবার সাথে উমরও ছিলেন রাসুল (সা) এর ঘোর বিরোধী। তিনি কয়েকবার রাসুল (সা) কে হত্যার হুমকীও দিয়েছিলেন। অবশেষে, ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে উমর একেবারে রাসুল(সা) কে হত্যা করার জন্যই রওনা হয়। পথে তার দেখা হয় প্রিয় বন্ধু নাঈম বিন আব্দুল্লাহ এর সাথে। নাঈম গোপনে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তিনি জানতেন, ঊমর যা বলে তা করেই ছাড়ে। তাই তার মনযোগ অন্য দিকে ঘোরানোর জন্য তাঁকে বললেন তোমার বোন ও তার স্বামী তো (গোপনে) ইসলাম গ্রহন করেছে। এই কথা শুনে উমর মনে করলেন, ওদেরকেই আগে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। ঠিকই বোনের বাসায় গিয়ে দেখেন তারা কোরআন পড়ছে। শুরু করলেন বোনের স্বামীর সাথে ঝগড়া। এই ঝগড়া ঠেকাতে বোন দৌড়ে এল। তাঁকে চড় মেরে রক্তাক্ত করে দিলেন। বোন বলল "তুমি আমাকে মারতে পার, কিন্তু ইসলামকে মুছে ফেলতে পারবেনা"। বোনকে মেরে অনুতপ উমর ওরা কি পড়ছিল (কোরআনের আয়াত) তা দেখতে চাইলেন। নিজে পড়লেন -
- নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ। আমি ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। শুধুমাত্র আমারই ইবাদত কর ও আমার উদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম কর। (সুরা তাহা ১৪)
উমর এর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। তিনি বললেন, এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহরই বানী। তিনি সাক্ষ দিলেন রাসুল (সা) আল্লাহর নবী ও রাসুল। যে তলোয়ার দিয়ে রাসুল (সা) কে হত্যা করতে চেয়েছিলেন সেই তলোয়ার নিয়ে গিয়েই তিনি রাসুল (সা) এর কাছে ইসলাম গ্রহন করলেন। বর্ণীত আছে, রাসুল (সা) এই ঘটনার আগের দিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন "হে আল্লাহ, উমর নতুবা আবু জাহেল এদের যে কোন একজনকে দিয়ে ইসলামকে শক্তিশালী করে দিন।"
হ্যাঁ, উমর এর যোগদানের পরে আল্লাহর রহমতে ইসলাম শক্তিশালী হয়েছিল। ছয় বছর ধরে মানুষ গোপনে ইসলাম গ্রহন করত, গোপনে ধর্ম পালন করত। কিন্তু উমরই প্রথম সবাইকে নিয়ে প্রকাশ্য কাবা ঘরের আশে পাশে কুরাইশদের বড় হোমড়া চোমড়াদের দেখিয়ে রীতিমতন মিছিল করেছেন। সেইবারই প্রথম মুসলিমেরা প্রকাশ্যে কাবা ঘরের সামনে ইবাদত করতে শুরু করে। কাফের নেতাদের এই দেখে গা জ্বলেছে কিন্তু কিছু বলতে সাহস পায়নি। ইসলাম শক্তিশালী করার প্রথম সিড়িটিই উমর (রা)। রাসুল(সা) এর জীবদ্ধশায়, এভাবেই উমরের ছোট বড় বিভিন্ন অবদান রয়েছে। এগুলো সব বলতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তাছাড়া, আমি উমর(রা) এর ভক্ত মুলত তার শাশকের রূপ দেখে। সেটাই এই লেখাতে আলোচনা করব।
মানব ইতিহাসে যদি সেরা শাশক বা রাস্ট্রনেতাদের একটা তালিকা করা হয়, সেই তালিকায় উমর (রা) এর নাম সম্ভবত সবার প্রথমে থাকবে। ইসলাম মানুষকে কেমন শাসক বানায় অথবা ইসলামিক রাস্ট্রে কেমন শাশক থাকে তার সবচেয়ে সেরা উদাহরন উমর (রা)। অন্য তিনজন খালিফাও সেরা, কিন্তু উমর এমন কিছু অভাবনীয় কাজ করেছেন যার ফলে মেডেলটা তাকেই দিতে হয়। তেমনই দু একটি ঘটনা দেখে নেই।
মানবতাঃ উমর (রা) খালিফা হয়েছেন ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে। এর আগে দুই বছর খালিফার দায়িত্ব পালন করেন আবু বকর (রা)। আর তার আগে তো রাসুল (সা) নিজেই জীবিত ছিলেন। উমর (রা) ৬৪৪ ঘ্রিস্টাব্দে নিহত হবার আগ পর্যন্ত ১০ বছর খালিফা পদে ছিলেন। উমর (রা) যেভাবে প্রকাশ্যে ইবাদত করার প্রচলন করেন। ঠিক একইভাবে ইসলামিক রাস্ট্রের সীমানা বাড়ানোটাও কার্জত তিনিই শুরু করেন। তার শাশনামলে আশেপাশের দেশগুলিতে ইসলাম ছড়িয়ে ছটিয়ে যায়। তিনি নিজেই ব্যাক্তিগতভাবে অনেক রাস্ট্রনায়ককে ইসলামর দাওয়াত দিয়েছেন। তেমনই অন্য দেশের রাস্ট্রে নায়কের সাথে দেখা করতে গেলেন খালিফা উমর(রা)। মরুভুমির মধ্যে, অনেক লম্বা পথ। কোন রাষ্ট্র নায়ক কোন দেশে গেলে তার সাথে হাতি, ঘোড়া, সৈন্য, ইত্যাদির বহর থাকে। কিন্তু উমর শুধুমাত্র একটি উঠ চালক ভৃত্য নিয়ে রওনা হলেন। তিনি উঠের পিঠে আর ভৃত্যটি হাটতে হাটতে দড়ি ধরে উঠিটি টানছে। হটাত ঊমর এর খেয়াল হল ভৃত্যটির তো একলা কস্ট হচ্ছে। কাজেই তিনি পালা বদলের পদ্ধতি করে নিলেন। একবার তিনি দড়ি ধরে টানেন, ভৃত্য উঠের পিঠে। আরেকবার তিনি উঠের পিঠে, ভৃত্য দড়ি ধরে টানে। এভাবেই পালাক্রমে ভ্রমন চলছিল। আল্লাহর কি কুদরত, এভাবে পালা বদল করতে করতে, ভ্রমন শেষে গন্তব্যে পৌছানোর সময় উমর উঠের দড়ি ধরে টানছেন, আর ভৃত্য উঠের পিঠে বসে আছে। এমনটিই সবাই দেখেছে। এমনটা না হলে কিন্তু এই ঘটনাটা কারোরই জানা হোত না। হয়ত ভৃত্য এই ঘটনাটি বলত কিন্তু বেশীরভাগ লোকই তার কথা বিশ্বাস করত না। দেশের শাশক ভৃত্যকে উঠের পিঠে বসিয়ে উঠের দড়ি ধরে টেনে নিয়ে যায়, এমন দৃস্টান্ত ইতিহাসে আর নেই।
নাগরিক অধিকারঃ ইসলামিক রাস্ট্রের শাশনের ভার কাধে নিয়ে খুবই পেরেশানিতে থাকতেন ঊমর। কখন তার কি ভুল হয়ে যায়, এ নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকতেন। তিনি বলেছিলেন, তার শাশনামলে ওই রাজ্যে যদি একটা কুকুরও না খেয়ে মারা যায় তাহলে শেষ বিচারের দিনে এজন্য তাঁকে জবাবাদিহি করতে হবে। এটা যার দর্শন, সে দেশের মানুষের প্রতি কতটা যত্নশীল তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেশের মানুষ কেমন আছে সেটা নিজের চোখে দেখার জন্য রাতে ছদ্যবেশে ঘুরতেন তিনি। এমন ঘুরতে ঘুরতে অনেক ধটনা ঘটেছে। এর কয়েকটি ঘটনা আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। একবার এক দরিদ্র বৃদ্ধ মা তার মেয়েকে, তরল দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করতে বলেছিল। মেয়েটি রাজী হয়নি এই কারনে যে, আর কেউ না দেখুক, আল্লাহ তো দেখছেন। ঊমর (রা) ওই সময় আড়াল থেকে সবই দেখলেন ও শুনলেন। তাদেরকে খালিফার দরবারে পরের দিন যেতে বললেন। ওরা গিয়ে দেখল, রাতের ওই লোকটিই খালিফা ঊমর। শুধু তাই নয়, মেয়েটির বিয়েও দেওয়া হল ঊমরের ছেলের সাথে। অন্য আরেকদিন উমর (রা) দেখলেন, এক মা তার সন্তানদেরকে দেবার মতন কোন খাবার না থাকায় শুধু পানি চুলার উপরে দিয়ে গরম করছেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি নিজেই সরকারী কোষাগারে, যেখানে শশ্য রাখা থাকে, সেখানে ছুটে গেলেন। নিজের পিঠে বহন করে গমের বস্তা নিয়ে আসলেন ওই দরিদ্র মহিলার বাড়িতে। প্রহরী ও অন্যান্য লোকেরা তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। কিত্নু উমর (রা) বলেন, আখিরাতে আমার পাপের বোঝা তমরা কেউ বহন করবে না। কাজেই এই বোঝা আমাকে বহন করতে দাও। রাস্ট্রের সকল মানুষের সুখ ও সাচ্ছন্দ নিশ্চিত করতে না পারলে সেটাকে ব্যার্থতা বা দায়িত্ব অবহেলা নয়, একেবারে পাপই মনে করতেন উমর (রা)। আর এ কারনেই তার কোন প্রহরী লাগত না। বিনা প্রহরীতে দিনে রাতে যে কোন যায়গায় যেতেন তিনি। এমন শাশকের কোন শত্রু থাকে না। যদিও শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের কারনে তিনি আততায়ীর তীরের আঘাতে নিহত হন।
অর্থনীতিঃ এতক্ষন তো বললাম দেশের মানুষের প্রতি তার দায়ীত্বের নমুনা। এবার বলছি দেশের অর্থের (সরকারী টাকা পয়সা) প্রতি তার দায়িত্ব। একবার তার এক দুর সম্পর্কের আত্বীয় এসেছিল কোন একটা সুপারিশের কারনে। তাদের ধারনা ছিল, উমর নিজে যেহেতু খালিফা, সেহেতু তিনি তাদেরকে ছাড় দিবেন। সেই আত্মীয়, উমরের কাছে গিয়ে দেখলেন, রাতে বাতি জালিয়ে কিছু একটা হিসাব নিকাশ করছে। তাদেরকে কিছুক্ষন বসতে বললেন। এর পরে হিসাব নিকাশ শেষে, বাতি নিভিয়ে দিলেন। এর পরে জিজ্ঞেস করলেন, কি খবর? আত্মীয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন - বাতিটি নেভালেন কেন? উমর (রা) উত্তর দিলেন, "ওটা সরকারী বাতি। সরকারী হিসাব করার জন্য সেটা ব্যাবহার করছিলাম। আপনি আমার আত্মীয়, আপনার সাথে আমার ব্যাক্তিগত কথাবার্তা। তাই আমার ব্যাক্তিগত কথায় সরকারী বাতি জ্বালিয়ে অপচয় করতে পারব না।" এই কথা শুনে তার আত্মীয় কোন সুপারিশ করার সাহসই পেলেন না। উমর (রা) নিজে সরকারী তহবিল থেকে একটা বেতন নিতেন। কিন্তু সেটা এতটাই কম নিতেন যে তার দুইটা জামা কেনা হয়ে উঠেনি। এমন কয়েকবার হয়েছে যে সরকারী অতিথী, গন্যমান্য মেহমান অপেক্ষা করছে, আর তিনি তার একমাত্র জামাটা দ্রুত শুকানোর চেস্টা করছেন। একবার অন্য কোন এক দেশ থেকে প্রচুর ফল এসেছিল দেশে মানুষকে বিলি করার জন্য। ঊমর (রা) সেই বিলি করার জন্য এলাকা ভিত্তিতে ফল ভাগ করছেন। বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন। সারাদিন খুব ব্যাস্ত। এমনই এক সময় তার একজন বালক পুত্র একটি বস্তা থেকে একটি আপেল হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করতে যাবে, ঠিক সেই সময় উমর(রা) তার কাছ থেকে কেড়ে ফলটি নিয়ে তাকে ধমক দিয়ে ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন। কাজ শেষে অন্দর মহলে গিয়ে উমর (রা) দেখলেন তার পুত্রদের হাতে আপেল। নিজের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন "তোমরাও কি বিলি করা ফল পেয়েছ?" স্ত্রী বললেন "না, তুমি ছেলেকে আপেল খেতে দাওনি, কান্না কাটি করছিল , তাই বাজার থেকে আপেল কিনেছি"। উমর (রা) তার স্ত্রীকে বললেন "আমার ছেলের মুখ থেকে আপেল কেড়ে নেবার সময় মনে হয়েছে আমার কলিজা ছড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি করব, এগুলো সব, দেশের মানুষের আমানত।" এর পরে ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন "তুমি যে বাজার থেকে আপেল কিনেছো, টাকা পেলে কোথায়?"। স্ত্রী উত্তর দিল, সংসারের খরচ থেকে কিছু টাকা জমিয়েছিল। এই কথা শুনে তো উমর (রা) এর মাথায় আরেক বুদ্ধি আসল। সংসারের খরচ থেকে টাকা বাচানো যায়, তার মানে সরকারী তহবিল থেকে তিনি বেশী বেতন নিচ্ছেন। এই ঘটনার পরে, তিনি নিজের বেতন আরো কম নিতেন।
বিচারঃ উমর (রা) এর ন্যায় বিচারের একটা দৃস্টান্তই যথেস্ট। তিনি খালিফা থাকাকালীন সময় তার নিজের যুবক পুত্র, যেনা করার অপরাধে দোষি সাব্যস্ত হয়। তার সাজা হয় ৪০টি (অথবা ৮০টি) চাবুক এর আঘাত। এই চাবুক অন্য কেউ মারলে হয়ত উমর (রা) এর ছেলে, এই বিবেচনাতে আস্তে মারবে। তাই নিজেই চাবুক মারলেন। এতে ছেলেটির মৃত্য হয়। এমন ন্যায় বিচারের দৃস্টান্তও ইতিহাসে বিরল।
স্বাধীনতাঃ ইসলামের গন্ডির ভেতরে থেকে যা ইচ্ছে করার স্বাধীনতা ছিল দেশের মানুষের। এছাড়া উমর (রা) নিজে জনগনের কাছে জবাবাদিহি করতে বাধ্য ছিলেন। একবার কোন একটা উতসবে সবাই একটি করে জামা পেয়েছে। উমর (রা) এর কাছে দুইটি নতুন জামা দেখে একজন সাধারন মানুষ জিজ্ঞেসা করেছিল, খালিফা দুটি জামা কোথায় পেলেন। তখন উমর (রা) এর ছেলে উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি তার বাবাকে নিজের নতুন জামাটা দিয়েছেন। কারন , বাবার ওই এক জামা ধুয়ে শুকাতে শুকাতে অনেক কাজ ব্যাহত হয়। উমর (রা) একবার জনগনকে বলেছেন, "তোমরা কয়েকজন এক সাথে সফরে যাবার সময় যেমন একজনকে সবকিছু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দাও, তাকে টাকা পয়সা দাও, আমিও ঠিক তেমনই একজন, তোমাদের ব্যাবস্থাপনায় নিয়োজিত আছি।"
আগেই বলেছি চার খালিফার শাশনামল আল্লাহর বিশেষ রহমত। এমন শাশক আর কোনদিন পাওয়া যাবে না। সারা বিশ্বের ইতিহাসের এমন শ্রেস্ট শাশকের অনুককরন থাকুক আধুনিক শাশকদের মাঝে এটাই কামন করি। উমর (রা) এর জন্য "আল্লাহ তুমি তাঁকে জান্নাত দান কর" এমন দোয়া করার প্রয়োজন নেই। কারন উমর (রা) সেই গুটি কয়েক সৌভাগ্যবানদের একজন যিনি জান্নাতের সুসংবাদ দুনিয়াতে বসেই পেয়েছেন। উমর (রা) এর মতন শাশককে, আল্লাহ জান্নাতে আরো মর্যাদাবান করুন। সেই সাথে, আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ করে দিন। আমীন।
আমার ফেসবুক ---------- এখানে
বিষয়: Contest_priyo
১৭৮৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রিয় হারা কার কান্নার মত এ বুকে আসিয়া বিধে
আমিরুল মোমেনিন
তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি জানেনা মুয়াজ্জিন।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
বর্তমান যুগটি একটি স্বার্থবাদী যুগ!
উমার রাদিআল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহনের পূর্বে জাহিলী যুগেও শ্রেষ্ঠ ছিলেন ইসলাম গ্রহনের পরেও ইসলামীক জিন্দেগীতেও শ্রেষ্ঠ ছিলেন! উনার ঈমান এবং আমল সত্যি প্রতিটি মুমিন জীবনকে অনুপ্রাণিত করে, সত্যের পথে অটল থাকতে সাহায্য করে!
হিজরী সাল গননা করা আবিষ্কার করেছিলেন উমর রাদিআল্লাহু আনহু! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম জান্নাতে উনার ঘর দেখে এসেছিলেন !
প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে নিয়ে লিখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো! আল্লাহ আমাদের কে সুন্দরভাবে অনুসরন করার তৌফিক দান করুন!
শুভাকামনা ও দোআ রইলো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন