প্রবাসে হালাল মাংশ - কতটুকু হালাল
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৬ এপ্রিল, ২০১৫, ০৫:১৯:১০ সকাল
প্রবাসীদের কাছে এটা একটা বিষয়। আমাদের মধ্যে যেমন নামাজ না পড়া মুসলমান সবচেয়ে বেশী দেখা যায়, তেমনি হালাল-হারাম বেছে না চলা প্রবাসী মুসলমানও আমাদের কম নই। আমি নিজেও ওই দলের লোক। নতুন বৈরাগী হওয়ার চেস্টায় আছি আর কি। তবে অতি সম্প্রতি "আবু জান্নাত" ভাইয়ের এ বিষয়ে একটা লেখা পড়ে ভালো লাগল। আরো ভালো লাগল, লেখার মন্তব্যগুলো পড়ে। হালাল-হারাম বেছে চলতে আগ্রহী এমন লোকের এই সমাজে আরো বাড়ুক সেটাই আশা করি। এ ব্যাপারে কিছু তথ্য দেবার জন্য এই লেখাটা। এখানে অমুসলিম দেশের চিত্র তুলে হরা হয়েছে।
হালাল হারাম এর ব্যাপারে, কিভাবে জবাই করা হয়েছে সেটা একমাত্র দেখার বিষয় নয়। এর সাথে আরো অনেক কিছু আছে। যে টাকা দিয়ে ওই খাবার কেনা হচ্ছে সেটা হালাল পথে আয় করা হয়েছে কিনা, অন্য কাউকে ঠকিয়ে সেই খাবারে ভাগ বসানো হচ্ছে কিনা, কাউকে বঞ্চিত করা হল কিনা, আশে পাশে কেউ অভাবী আছে কিনা, ইত্যাদি অনেক কিছু মেনে চলার আছে। তবে আশার কথা এই যে, প্রবাসে সাধারনত মানুষ হালাল পথে রোজগার করে, অন্যকে বঞ্ছিত করে নয়া আর খাবারের অভাবী তেমন কেউ নেই। কাজেই ওই বিষয়গুলো চিন্তা করার দরকার নেই। প্রয়োজন নেই তারপরেও ওই কথাগুলো এজন্য বললাম - বাংলাদেশে হালাল জবাই করা মাংশ পাওয়া গেলেও হালালের অন্যান্য উপকরনগুলো পাওয়া কঠিন। দেশে রয়েছে অসৎ আয়ের ছড়াছড়ি, রয়েছে বাটপারি ও অধিকার বঞ্চিত করা, আশেপাশে রয়েছে প্রচুর অনাহারী মানুষ। কাজেই বাংলাদেশে হালাল খাবার পাওয়াটা খুবই কঠিন। বেছে চলতে একটু কস্ট হলেও প্রবাসে হালাল খাবার পাওয়া বাংলাদেশের চেয়ে সহজ।
বিভিন্ন দেশে খাদ্যের জন্য প্রানী হত্যার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। অমুসলিম উন্নত দেশগুলতে এক ধরনের ফ্যাক্টরিতে এই প্রানী হত্যা, ও মাংশ প্যাকেট করা হয়। ওই ফ্যাক্টরীতে প্রথমে পশুটিকে যে কোন একভাবে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। একে stunning বলে। এই অজ্ঞান করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি। এর পরে এই অজ্ঞান প্রানীটির গলা কাটা হয় বা হৃদপিন্ডে কোন শলাকা ঢুকানো হয়। মৃত্যুযন্ত্রনা কমানোর জন্য অজ্ঞান অবস্থায় প্রানীটিকে মারা হয়। হালাল ও হারাম প্রানী একই সঙ্গে হত্যা করে এমন ফ্যাক্টরী প্রচুর আছে। গরু ছাগল ইত্যাদির ক্ষেত্রে মানুষের হাত পড়ে কিন্তু মুরগীর রয়েছে অটোমেটিক মেশিন। এক সাথে বোতাম টিপে হাজার মুরগীকে মেরে ফেলে যায়। এমন এক মুরগীর ফ্যাক্টরীতে যাবার সুযোগ হয়েছিল। দেখে মনে হয়েছে যে আমরা যেমন ইসলামিক জবাই করি তেমন করে একটা একটা করে জবাই করতে গেলে ওই বেচারারা সারাদিন জবাই করেই কুল পাবে না। মুরগী প্যাকেট করা আর সাপ্লাই দেবে কখন? বাণিজ্যিক চাহিদা পুরনের জন্য এমন ফ্যাক্টারীতে সঠিক হালাল জবাই দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তার পরেও মুসলমান ক্রেতার কাছে তাদের ব্যাবসার ঠিক রাখার জন্য তারা হালাল সার্টিফিকেট যোগাড় করে। তাদের প্যাকেট ও বাক্সতে থাকে হালালের স্টিকার।
সবাই জানেন, এসব দেশে খাবার সবই টাটকা ও উন্নতমানের ও স্বাস্থসম্মত। এর পরেও মানুষ চর্বিহীন খাবার খোঁজে। যে খাবারে চর্বি আছে সেটা কৃত্তিম উপায়ে চর্বিহীন করে একটু বেশী দামে বাজারে ছাড়া হয়। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে চর্বিযুক্ত খাবার পাওয়াটাই দুস্কর। চর্বিহীন দুধ। দুধের চর্বি বাদ দিলে তাতে সাদা পানি ছাড়া এর কি থাকে? সেই পানসে স্বাদের, সাদা পানি বেশী দাম দিয়ে কিনে খেয়ে মানুষ খুশী। টিক এমনিভাবে দুটি স্টিকার ওসব দেশে খুব চলে। অর্গানিক ও হালাল। এই অর্গানিক জিনিসটা যে কি সেটা আমি এখনও ভালোভাবে বুঝে উঠিতে পারিনি। অর্গানিক কথাটির বাংলা অর্থ হল - প্রানী সম্পর্কীয়। তবে এই ক্ষেত্রে অর্গানিক হল প্রাকৃতিক। উদাহরন- দেশী মুরগী, নদীর মাছ ইত্যাদি। কোন কৃত্তিম পদ্ধতি বা বস্তু ব্যাবহার হলে সেটা আর অর্গানিক থাকে না সেমন ফার্মের মুরগী, চাষের মাছ ইত্যাদি। অর্গানিকের যে অংশটা বুঝি না তা হল সব কিছুই অর্গানিক পাওয়া যায়। ডিম, মাংশ, টিস্যু পেপার, টয়লেট পেপার, কাগজ, প্যাকেট, সাবান, টুথপেস্ট, স্যাম্পু, কালি, ব্যান্ডেজ কি নেই। এগুলো কিভাবে অর্গানিক হয় সেটা আমি এখনও বুঝি না। এদের অর্গানিক সার্টিফিকেট আছে, প্যাকেটের গায়ে অর্গানিক স্টিকারও আছে। বেশী দাম দিয়ে এগুলো কেনার মানুষও অনেক আছে।
আমি যেমন অর্গানিক বুঝি না, ঠিক তেমনি অমুসলিমেরাও হালাল বোঝে না। ওদের কাছে হালাল জিনিসটা একটা স্টিকার ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব দেশে হালালের সার্টিফিকেট দেওয়ার কোন সরকারী বা বেসরকারী কোন গ্রহনযোগ্য প্রতিষ্ঠান নেই। তাই হালালের সার্টিফিকেট দেয় অলিতে গলিতে বেড়ে ওঠা ইসলামিক সংগঠন যেগুলো আসলে ক্লাব বা সমিতি ইত্যাদি হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। চাইলে যে কেউ এমন একটা সংগঠন খুলে কালকে থেকে হালালের সার্টিফিকেট দিতে পারে। এটা মোটেও বেআইনী নয়। তাছাড়া ইদানিং হাজার মুরগীকে এক বোতাম টিপে হত্যা করার আগে আল্লাহর নাম নিলেই সেটা হয়ে যায় হালাল জবাই, পেয়ে যায় হালাল সার্টিফিকেট। প্যাকেটে লাগানো থাকে "হালাল" স্টিকার। আমি এক চাইনিজ দোকানে শুকরের মাংশের তৈরি এক বিশেষ খাবারের প্যাকেটে একবার হালাল স্টিকার দেখেছিলাম।
মোট কথা "হালাল" স্টিকারটি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাছাড়া, মুসলিম বা অমুসলিম সব দেশেই বড় কোন প্রতিষ্ঠান বানিজ্যিকভাবে মাংশের সাপ্লাই দিলে সেটা হালাল হবার সম্ভাবনা খুব কম। তবে হালাল মাংশ পাওয়া যায় ছোট ছোট দোকানে। যেসব লাইসেন্সধারী মুসলমান কসাই নিজেদের দোকানে নিজেরা জবাই দেয় তাদের কাছে হালাল মাংশ পাওয়া যায়। তারা একদিনে অমন হাজার হাজার পশু বিক্রি করে না তাই জবাই করার জন্য সময় পায়। মুসলিম দেশে তো এমন দোকানের অভাব নেই। অমুসলিম দেশে এমন দোকানের সংখা কম তবে ইচ্ছে থাকলে সমস্যা হয় না। কাজেই অন্যের লেখা "হালাল" স্টিকারের উপরে ভরসা না করে নিজে স্বচক্ষে দেখে হালাল মাংশ কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
---------- আমার ফেসবুক এখানে
বিষয়: বিবিধ
১১৫০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হালাল মাংশের ব্যাপারে আমার মত হল, বড় কোম্পানীর চেয়ে ছোট দোকান থেকে নিজে দেখে হালাল মাংশ নেওয়াটা সহজ। আপনাকে ধন্যবাদ
আপনার তথ্যগুলোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন