সাদিয়ার এক টাকার হিসাব মিলে না কেন !!
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১০ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৫০:১১ রাত
ব্লগারনী সাদিয়া মুকিম এর দেওয়া কুইজগুলো বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। কুইজগুলো যখন আমার চোখে পড়ে ততক্ষনে উত্তর দেওয়া ও সঠিক উত্তরদাতা নির্বাচন করাও শেষ। কুইজগুলোর দ্বিতিয় প্রশ্নটি দেখে প্রায় দেড় যুগ আগের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। চিন্তা করেছিলাম সেই ব্যাপারে কিছু লিখব। কিন্রু পরে সময় হল না, তাছাড়া ওই একই বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করাটা কেমন বেমানান লাগছিল। কিন্তু আজ আরেক ব্লগারনী আফরা এর মজাদার পোস্ট 'মানি না মানব না" দেখে সাহস পেলাম।
১৯৯৭-২০০১ সালে ভারতের মাদ্রাজে লেখাপড়া করেছি। দক্ষিন ভারতে যারা লেখা পড়ে করেছে তারা জানে যে অনার্স-মাস্টার্স এর কোর্সেও সেখানে থাকে কিন্ডার গার্টেনের পরিবেশ। খুব কড়া শাশন, পারলে বেত দিয়ে পেটায় আর কি। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। কড়া শাশনে থাকলে মানুষ বেশী দুস্টু হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ছিল। বাঙ্গালী তো আছেই, ভারতীয় অনেক ছাত্রদের সাথে সখ্যতা ছিল। এদের বেশির ভাগই ছিল অন্যান্য কলেজ-ইউনিভার্সিটির। আমি কখনো হোস্টেলে থাকিনি। একটা ভাড়া ফ্লাটে চারজন ছাত্র থাকতাম। সেই বাসা ও রুমমেট সবই বদল হয়েছে একাধিকবার। চার বছরের অনেক স্মৃতি আছে। কি না করেছি। আমারা সবাই বাবার পাঠানো টাকায় চলতাম। ঐ সময় ওটাকে সংগ্রামের জীবন মনে হলেও এখন বুঝি ওটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে সেরা সময়।
একদিন সন্ধ্যায় অশ্বিনী নামক এক ভারতীয় ছেলে কথায় কথায় দু একটা কুইজ জিজ্ঞেস করল। সেগুলো সবই ছিল অংক নিয়ে। সেগুলোর সঠিক উত্তর দেওয়ার পরে সে আমাকে শেষে (সাদিয়া মুকিমের) ওই কুইজটি জিজ্ঞেস করল। কুইজটিতে একটু ভিন্নতা আছে কিন্তু মুল কথা একই। ওই প্রথমবার আমি প্রশ্নটি শুনলাম। অশ্বিনী আরো বলল যে সে এই প্রশ্নের উত্তর নিজেও জনে না। একে একে আশেপাশে সবার কাছে বলা হল। কেউই উত্তর দিতে পারে না। আমাদের ফ্লাটে যে ভারতীয় ছেলেটি থাকত তার নাম ধর্মেন্দ্র হলেও তার দেশের বাড়ির এলাকার নাম অনুসারে সবাই তাকে ভিন্ডি বলে ডাকত। সেই ভিন্ডি সেই রাতে বাসায় ছিল না। আমরা অনেক আশে পাশের অনেকে মিলে প্রায় ৭-৮ জনের একটা গ্রুপের কেউই প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারল না। আর আমার তো ঘুম আসেনা এমন অবস্থা। আমরা এত বোকা ছিলাম না। প্রশ্নটির হিসাব যে ভুল আছে সেটা বুঝতে পারছিলাম। অন্য দিক থেকে হিসাব করলে মেলে কিন্তু এদিক থেকে হিসাব কেন মেলে না। ভুলটি কোথায় সেটিই আমরা খুজে পাচ্ছিলাম না। একসময় রাত কেটে গেল।
সকালে ভিন্ডি আসার সাথে সাথে ওকেও প্রশ্নটি বললাম। ভিন্ডি ছিল এরোনটিক (বিমান) ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। সে একটু চিন্তা করে এর পরে ভুলটি ধরিয়ে দিল। আর পরে আমরা সবাই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম এবং এই জিনিসটা কেন এতক্ষন বুঝিনি তা নিয়ে হাসাহাসি করলাম। আর শুরু হল ভিন্ডিকে নিয়ে হই চই, সে ছিল ওই দিনের হিরো। ছেলেটি এর আগে পরেও অন্য কোনদিন আমার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। সে এখন কোথায় আছে জানিনা। সে উন্নতি করুক, ভালো থাকুক, এটাই চাই।
সাদিয়া মুকিমের কুইজের দুই নম্বরে ওই প্রশ্নটি দেখে আমি বেশ উতসাহিত হয়েছিলাম। কারন গত ১৫-১৬ বছরে এই প্রশ্নটি আমি অনেককেই করেছি। অনেকে উত্তর দিতে পারেনি। যারা উত্তর দিয়েছে তারা বলেছে হিসাবে ভুল আছে। কিন্তু ভুলটা যে কোথায় সেটা ভিন্ডির মতন সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে কেউই পারেনি। এই কুইজের উত্তরেও ভুলটা না বোঝাই থেকে গেছে। চেস্টা করে দেখি, অতি সহজেই ভুলটা দেখাতে পারি কিনা।
প্রশ্নটিঃ তিন বন্ধু কোন দোকানে গিয়ে ২৫ টাকার কোন জিনিস কিনল। সবাই ১০ টাকা করে দিয়ে ৩০ টাকা দোকানদারের হাতে দিল। দোকানদার ক্যাশ বাক্স থেকে ৫ টাকা ফেরত দিল। কর্মচারী টাকাটা নিয়ে নিজে ২ টাকা বকশিশ রেখে দিয়ে ৩ টাকা তিন বন্ধুকে ফেরত দিল। অর্থাৎ, প্রত্যেক বন্ধুর খরচ হল ৯ টাকা করে।
এখন বন্ধুরা হিসাব করছে - তিন বন্ধু ৯ টাকা করে = ২৭ টাকা। কর্মচারি রেখে দিয়েছে ২ টাকা। ২৭+২=২৯ টাকা। তাহলে বাকী ১ টাকা কোথায় গেল ?
এই ধাধার উত্তরে বলা হয়, জিনিসটির মুল্য ২৫ টাকা + ২ টাকা বকশিশ + ৩ টাকা ফেরত = ৩০ টাকা। এটাই হল সঠিক হিসাব। প্রশ্নে দেওয়া হিসাবটা ভুল। লক্ষ্য করুন, এটা কিন্তু অস্পম্পুর্ন উত্তর। ভুলটা কোথায় সেটাই বলা হয়নি? হিসাবটা ওভাবে কেন মেলে না?
প্রথমে বলে নেই, এই প্রশ্নটি কায়দা করে করা হয় মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। একজন ৩০ টাকা না দিয়ে ৩ জন মিলে ৩০ টাকা দেয়। তিনজন টাকা ফেরত নেয়, ভাগ করে নেয়। এই তিনজনকে আনাই হয়েছে বিভ্রান্ত করার জন্য। তবে সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি হয়েছে ৫ টাকা ফেরতের পুরোটা তিনবন্ধু পায়নি। এর থেকে ২ টাকা পেয়েছে কর্মচারী। এই বিভ্রান্তিটা ঠিক করতে পারলেই হিসাবের ভুলটি আমাদের সামনে বেড়িয়ে পড়বে।
চিত্র দেখুন। সঠিক হিসাব, ২৫+২+৩ = ৩০। ওদিকে ভুল হিসাব ২৭+২ = ২৯। আসলে এই পুরো কাহিনীতে ২৯ বলে কোন সংখা নেই। এটা আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলা হয়েছে। সঠিক চিত্রতে দেখুন, ২৭ এর মধ্যে অলরেডি ২ রয়েছে। সেই ২ আবার ২৭ এর সাথে যোগ করে ২৯ বানাবো কেন? প্রশ্নে যখন বলা হয় ৩ বন্ধু দিয়েছে ২৭ টাকা + ২ টাকা বকশিশ তখনই তো ভুলটি করা হয়। কারন ওই ২ টাকা বকশিশ তো ২৭ এর ভেতরেই আছে। বকশিশ আছে বলেই তো ওটা ২৭ হয়েছে। নইলে ২৫ হোত। ওই ২ টাকা আবার যোগ কেন করব?
আশা করি, এবার ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
বিদ্রঃ ব্লগারনী শব্দটা আজকে আবিস্কার করলাম। হরিণী, বিহারিণী, সুনয়নী, তেমন ব্লগারনী। অনেকে এটা আবার বাংলা ব্যাকারনে সন্ধি বিচ্ছেদ করে "ব্লগার+রানী" ও বানাতে পারেন। যদিও Bogger ইংরেজি শব্দটির কোন লিঙ্গভেদ নেই। কিন্তু এখন তো ব্লগার বাংলা শব্দ হয়ে গেছে। তাই ব্লগারনী হতে দোষ কি?
বিষয়: বিবিধ
১৭২০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিরোনাম দেখেতো আত্নাটা কেঁপে উঠেছিলো! ব্লগারনী উপাধি পেয়ে খুবি খুশি লাগছে! মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে পুরো পোস্ট পড়লাম আলহামদুলিল্লাহ! আমার কুইজ পোস্টের চাইতেও আপনার হিসাব মিলে না কেনো পোস্ট অন্নেক বেশি আনন্দদায়ক, চমৎকার!
অংকের প্রশ্নগুলো এবং কুইজগুলো আমাদের মেয়েরা ঠিক করেছিলো! আপনাদের আমলেও এর অস্তিত্ব ছিল জেনে নতুনভাবে আবারো ভালো লাগলো!
মনটা একটু খারাপ ছিলো আলহামদুলিল্লাহ এই পোসটটি পড়ে খুব উৎফুল্ল বোধ করছি! আলহামদুলিল্লাহ!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
াআরেক খান কথা, এলিট ভাই মনে ওয় সাদিয়া আফা/ভাইরে খুব বালা ফায়।
েএলিট ভাইগো, ইন্টারনেটে মাইয়া/পোলা বুঝা ভুত মুসকিল - যে কেউ যে কোনো রকম নাম নিতে ফারে।
বহুত মুশকিলের বেফার!
মন্তব্য করতে লগইন করুন