আপনারাই আমাকে এখানে রেখে দিয়েছেন
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৪ এপ্রিল, ২০১৫, ১১:৩১:৩২ রাত
"চ্যাটার্জি" থেকে "কবির" হয়ে যাওয়া কলকাতার বিখ্যাত গায়ক সুমন। তিনি সম্প্রতি হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যবার্ষিকীতে ফেসবুকে স্মৃতিচারন করে কয়েক লাইন লিখেছিলেন। সুমন একবার কলকাতার খ্যাতমান লেখক, শিল্পীদের এক পার্টিতে হুমায়ুন আহমেদকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন কলকাতার একজন শিল্পীর সঙ্গে। "উনি হুমায়ুন আহমেদ, বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক"। তখন হুমায়ুন আহমেদ দুই হাত জোড় করে বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলেন, "আমাকে সাহিত্যিক বলবেন না। আমি বেস্ট সেলার লিখি। সাহিত্য করি না"। এর পরে হুমায়ুন আহমেদ, কাছে দাঁড়ানো সমরেশ মজুমদারকে দেখিয়ে বলছেন, "সাহিত্যিক হলেন সমরেশ দা"
হুমায়ুন আহমেদ এর বিনয় প্রশংশনীয়। তবে উনার কথাটা কিন্তু আসলেই সত্য। সর্বাধিক বিক্রি হয় এমন বই লিখেছেন তিনি। সাহিত্য কখনো করেননি, তিনি একজন লেখক। আমার নিজের অনেক সময় লেগেছে লেখক কাকে বলে সেটা চিনতে। ইংরেজীতে offcut অফকাট বলে একটা কথা আছে। এর বাংলাটা হয়ত "ছাট-কাট"। তরকারী, মাংশ-মাছ, দরজির কাপড় ইত্যাদির প্রয়োজনীয় অংশটুকে কেটে নেওয়ার পরে বে-সাইজ ছোট ছোট কিছু অংশ পড়ে থাকে। এগুলো আর ব্যাবহার করা হয় না, ফেলে দিতে হয়। একজন লেখকের লেখারও তেমন অফকাট থাকে। অনেক লেখা বই আকারে প্রকাশ হয় অনেক লেখা তেমন ভাল নয় বিধায় থেকে যায়, নইলে নস্ট হয়ে যায়। হুমায়ুন আহমেদ এর অফকাট এর সংকলন একটি বই আছে। বইটার নাম "হিজিবিজি"। আসলেই ওটা হিজিবিজি। বইটির কোন এক যায়গায় এই কথাটাও লেখা আছে "পাঠক হয়ত বুঝতে পারছেন আমার যা ইচ্ছে তাই লেখে চলেছি"। ওই অফকাট গুলো এতোটাই সুন্দর যে অবিভুত হয়ে যেতে হয়। একেই লেখক বলে।
৫-৭ বছর আগে দেশের টিভি চ্যনেলগুলো গানের শিল্পী প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছিল। সারা দেশের আনাচে কানাচে থেকে নাম না জানা প্রতিভাবান কন্ঠশিল্পী হটাত করে তারকা হয়ে যাচ্ছিল। শিশু কন্ঠশিল্পীদের নিয়ে এমন প্রতিযোগীর অনুষ্ঠানে অন্যতম বিচারক ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। ওই হিজিবিজি বইতে শিশু কন্ঠশিল্পীদের ব্যাপারে লেখা আছে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৬ জন ফুটবল খেলোয়াড় নেই অথচ এত গানের পাখী। সেই গানের পাখীর যুগ শেষ হয়ে এর পরে এল কথার পাখী, ব্লগার।
আমি নিজে কম্পিউটার লাইনের লোক। কাজেই ব্লগার জিনিসটা কি সেটা অনেক আগে জানতাম। তবে বাংলাদেশে ব্লগার আছে বা কেউ ব্লগ লেখে এই ব্যাপারে কোন ধরনাই ছিল না। এক যুগের বেশী সময় ধরে দেশের বাইরে আছি বলেই হয়ত অনেক কিছু জানতে পারিনি। দেশের সংবাদও খুব একটা জানা ছিল না। তবে, শাহবাগের আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে কি হয়, কি হচ্ছে, কি হবে এমন একটা কৌতুহল অনুভব করি এবং এর পর থেকেই দেশের সংবাদ জানা শুরু করি। তখন দেখতে পাই ব্লগার আর ব্লগার। কথার পাখী ব্লগারের অভাব নেই। সবাই ব্লগার। যে কার্টুন আকে সেও ব্লগার, যে সংবাদ লেখে সেও ব্লগার, যে ফেসবুকে স্টাটাস দেয় সেও ব্লগার। তবে সবচেয়ে বড় ব্লগার হল যে ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে। এছাড়া আরো কিছু ব্লগার খুজে পেলাম যাদেরকে দেখলে পাড়ার বখাটে, নেশাখোর ছেলে মনে হয়। সবাই ব্লগার।
অল্পক্ষনেই আসল জিনিসটা বুঝতে পারলাম। দেশে কম বেশী ব্লগ লিখত বা সত্যিকারের ব্লগার ছিল কয়েক শত। শাহবাগের বাহিনী এসে কয়েক হাজার অযোগ্য লোককে ব্লগারের খাতায় নাম লিখিয়ে দিয়েছিল। এদের বেশীর ভাগই নিজের আদর্শের কথা লিখেছে, এদের মনোভাব ব্যাক্ত করেছে, দলকানা হয়ে নিজের নেতারই গুনগান গেয়েছে। লেখার প্লাটফর্ম যেহেতু উন্মুক্ত এবং আড়ালে থেকেই লেখা যায়, সেহেতু ওই অযোগ্য লোকের ভুল আদর্শের জবাব দিতে ব্লগ জগতে বিচরন শুরু করে কিছু লোক যারা লেখায় একেবারে অনভিজ্ঞ। আমি নিজে তাদেরই একজন। জবাব দিতে দিতে এক পর্যায়ে দু-একটা লেখা শুরু করেছি। আমি মনে করেছি আমার হিজিবিজি কেই বা পড়বে। কিন্তু আপনারাই আমাকে এই জগতে রেখে দিয়েছেন। আমার একটা লেখা যখন শতাধিক লোক পড়ে তখন আমার আর কিছু চাওয়ার থাকে না। আপনাদের উতসাহে, আজ ভালো খারাপ যাই লিখি না কেন, ব্লগারে খাতায় ঠিকই নাম লিখিয়ে ফেলেছি। লোভ এত বেড়েছে যে, সম্ভব হলে, অভিজ্ঞতা বাড়লে, ভবিশ্যতে লেখক হব এমন চিন্তাও মাথায় ঢুকে গেছে। বিখ্যাত না হতে পারলেও, দু একটা হিজিবিজি লিখে অন্তত লেখকের খাতায় নামটা লেখানো এখন আমার একটা স্বপ্ন। এই লোভটা ধরিয়ে দেবার জন্য শতভাগ দায়ী আপনারা।
আপনাদের বিনয়ও আমাকে অবিভুত করে। আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই আমার লেখাতে মন্তব্য করে উতসাহ দিয়েছেন যারা রীতিমতন লেখক। একাধিক প্রকাশিত বই তাদের আছে। তবুও তাদের বিনয় ও উতসাহ দানের কমতি নেই। এতাই তো বড় মনের লক্ষন। অল্প দু-এক জন আছেন যারা আমার নাম দেখলেই লেখাটা পড়েন। তারা আমাকে সবচেয়ে বেশী লজ্জায় ফেলেন। কারন আমি জানি তিনি নিশ্চিত লেখাটি পড়বেন কিন্তু আমি তো নিশ্চিতভাবে সব সময় পছন্দসই লিখতে পারি না। অনেক আছেন খুব সুন্দর সালাম দেন, সুন্দর মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে মেয়েরা তো এক্সপার্ট। তাছাড়া আমার নিজের কোন বোন না থাকায় তাদের কাছ থেকে "ভাইয়া" শব্দটি শুনে দুর্বল হয়ে পড়ি। আমি বেশীরভাগই সুচিন্তিত কমেন্টই পাই যা আমার লেখার সাথে কিছু তথ্য যোগ করে বা ভুল তথ্য সংশোধন করে। আপনারা আমার লেখা পড়ছেন আবার এর পরে কমেন্টও করছেন। অথচ আমি এতটাই অকৃতজ্ঞ যে বেশীরভাগ সময় সেই কমেন্টের উত্তর দেই না। আমার এই অপরাধের পেছনে কারনটা জানলে হয়ত আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন।
আগেই বলেছি, প্রথম দিকে আমি ভুল আদর্শে চালিত তথাকথিত ব্লগারদের জবাব দিতাম। শুধু মন্তব্য ও প্রতি মন্তব। এক প্রকারের বিতর্ক হতো। এগুলো হত অন্যান্য ব্লগে। যে আমার বিরুদ্ধে লিখতো তাকে সাথে সাথে জবাব দিতাম। সেই সময়, যে আমার পক্ষে লিখে তাঁকে কিছু লেখার মতন সময় সুযোগ হতো না। সেই থেকে ওই বদভ্যাস রয়ে গেছে। কেউ আমার বিপক্ষে বললেই তাঁকে জবাব দেওয়া হয়। টুডে ব্লগে যারা মন্তব্য করে তারা আমার লেখাতে ভুল খুজে পেলেও আমার সঙ্গে নিজের আদর্শের মিল খুজে পায়। কাজেই বিপক্ষে কেউই লেখে না, আমারও উত্তর দেওয়া হয় না। (তাই বলে আবার আজকে থেকেই আমার বিপক্ষে লেখা শুরু করে দিয়েন না , হা হা হা)
আপনাদের সবাইকে আমি চিনি, আপনাদের লেখা পড়ি, আপনাদের কমেন্ট পড়ি, আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আপনারাই আমাকে এখানে রেখে দিয়েছেন। আল্লাহ আপনাদের সবার মঙ্গল করুন।
---------- আমার ফেসবুক এখানে
বিষয়: বিবিধ
১২৪৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা বুঝতে পারি অনেক ব্যস্ত তারপরেও খুশি হই আপনার কাছ থেকে ভিন্ন ধর্মী মজার লিখাগুলো যখন সুযোগ পাই! আপনার সময় সুযোগ মতো এসে সুন্দর লিখাগুলো শেয়ার করবেন এটাই প্রত্যাশা!
বিয়ে নিয়ে পোস্ট কনটেস্ট এ আপনার সম্পর্কে জেনেছিলাম! আশাকরি আমাদের বিদেশিনী ভাবি এবং পুত্র ভালো আছেন!
শুকরিয়া ও শুভকামনা রইলো!
আপনি আমার লেখা পড়েন এটা জেনে আমি খুব আনন্দিত। হ্যাঁ, আমার পরিবারের সবাই ভালো আছে। আশা করি আপনি ভালো আছেন। অনেক ধন্যবাদ
হি হি হি হি
হাম আমি তেমন একজন আপনার লিখা দেখলেই পড়ি।
তবে এখন কমেন্টস করিনা কারন আপনি জবাব দেননা তাই।
ভাইয়া বলার সাথে সাথে মাথায় দুই দুই চারটা হাতুড়ি দিলে একদম সোনায় সোহাগা।
আপনি আমার লেখা পড়েন এটা জেনে আমি খুব আনন্দিত। আমি আপনার লেখার একটিস্ট ভক্ত। বিশেষ করে ওই "না বলা কথা" লেখাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনার জীবন কাহিনীর সাথে সুন্দর করে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেছেন। আপনার কমেন্ট গুলোও উতসাহ মুলক। তাছাড়া তো আপনি আমার এলাকার (খুলনা) বড় ভাই। আপনার উতসাহ সব সময় প্রয়োজন। অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন