আল্লাহ কোথায়

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৭ মার্চ, ২০১৫, ০৩:০১:১১ রাত



অবিশ্বাসীরা তো বটেই, এটা বিশ্বাসীরাও এটা জানতে চায়। অবিশ্বাসীদের বহু পুরাতন "আল্লাহ কোথায় আছে দেখাও" প্রশ্নটির উত্তর বিশ্বাসীরা দিয়েছে যুগে যুগে। কেউ বলেছে কত কিছুই তো দেখা যায় না। যেমন ব্যাথা, আনন্দ ইত্যাদি। অবিশ্বাসীরা আবার বলেছে - আচ্ছা দেখা যায় না সেটা বুঝলাম। কিন্তু তিনি কোথায় আছেন বা অবস্থান করছেন ? ব্যাস উত্তর চলে আসল - তিনি তো সবখানেই আছেন। হয়ত এভাবেই ধীরে ধীরে মানুষে মনে একটা ধারনা চলে এসেছে যে আল্লাহ অদৃশ্য, নিরাকার ও সর্বত্রে বিরাজমান। আসলে ইসলামিক শিক্ষা অর্থাৎ কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসারে এটা একটা ভুল কথা। এ বিষয়ে একটু পরে আবার ফিরে আসব। প্রথমে অবিশ্বাসীদের কথা বলে নেই।

অবিশ্বাসীরা সব সময় বিজ্ঞানকে ঢাল হিসাবে ব্যাবহার করে। তারা বিজ্ঞান মনস্ক এবং কোন কিছুই যুক্তি প্রমান ছাড়া বিশ্বাস করে না। আল্লাহ বিশ্বাস করে না কারন বিজ্ঞান কোন রকমের যুক্তি ও প্রমান হাজির করে "আল্লাহ আছেন" প্রমান করতে পারে না যে । যতক্ষন গবেষনা করা যায়, সেই পর্যন্তই বিজ্ঞানের দৌড়। যে জিনিস নিয়ে গবেষনা করতে পারে না সেই জিনিস সম্পর্কে কিছুই জানে না। আল্লাহ নিয়ে গবেষনা করা যায় না। এজন্য বিজ্ঞান এব্যাপারে কিছু জানেও না। এক হাজার বছর আগে, কেউ যদি বলত - "বিদ্যুৎ বলে একটা জিনিস আছে যেটা তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা যায় এবং এটা প্রচন্ড শক্তির উৎস। এমনকি এই বিদ্যুৎ ছুঁয়ে দেখলেই মানুষ মারা যাবে।" এই কথাটা শুনে তখন বিজ্ঞানীরা বলত - তুমি কি আমাকে ভুতের গল্পে বিশ্বাস করতে বলছ? কারন এক হাজার বছর আগে, বিদ্যুৎ কি তা বিজ্ঞান জানত না। হাজার বছর তো দুরের কথা , একশ বছর আগেই মানুষ জানত না যে বিদ্যুৎ স্পর্শ করলেই মারা যেতে হবে। লাইট বাল্ব এর আবিস্কারক টমাস আলভা এডিসন, ১৯০৩ সালে বিদ্যুৎ এর শক্তির ভয়বাহতা প্রমানের জন্য ইলেকট্রিক শক দিয়ে একটা হাতি মেরে দেখিয়েছেন (ছবি দেখুন)। আজকেও এমন অনেক জিনিস আছে যা বিজ্ঞান জানে না, বোঝেও না। কাজেই বিজ্ঞানকে সবজান্তার মনে করাটা মুর্খতা।



ওই মৃত হাতির কথাটাই ধরুন। ইলেকট্রিক শক দেবার "৫ মিনিট আগে" ও "৫ মিনিট পরে" হাতির দেহে বিজ্ঞান অনুযায়ী কি পার্থক্য আছে? জীব বিজ্ঞান অনুযায়ী তো হাতির শরীরের কাঠামো, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, চামড়া, মাংশ, হাড় ইত্যাদি একই আছে। রাসায়নিক বিজ্ঞান অনুযায়ী হাতির দেহের সব রাসায়ানিক উপাদান একই আছে। পদার্থ বিজ্ঞান অনুযায়ী, হাতির দেহর সব অনু-পরামানু একই আছে। সবই এক। জীবিত ও মৃত হাতির কোন পার্থক্য বিজ্ঞান বলতে পারবে না। অর্থাৎ বিজ্ঞান অনুযায়ী মরা ও জ্যান্ত প্রানী একই জিনিস। জানি অনেকেই এই কথাটি মানবেন না। তারা বলবেন - না, বিজ্ঞান বলবে মরা হাতিটির যেটা নেই, সেটা হল "জীবন"। হ্যা, এখানেই বিজ্ঞান ধরা। জীবন যে কি জিনিসটা বিজ্ঞান বলতে পারে না। আর যেটা বিজ্ঞান চেনে না, সেটা বিশ্বাসও করে না। কাজেই বিজ্ঞানের স্বভাব মতেই "জীবন" এর অস্তিত্ব বিশ্বাস করার সুযোগ বিজ্ঞানে নেই। আপনি বেঁচে আছেন বা আপনার জীবন আছে এটা তো নিশ্চই স্বীকার করেন। সেই জীবনটা কি, কেমন দেখতে, বা কোথায় থাকে এগুলো বিজ্ঞান বলতে পারে না। আপনিও কিন্তু এসব না জেনেই "জীবন আছে" এটা বিশ্বাস করে চলেছেন। নিজের জীবন নিজেই দেখতে পান না তবুও না দেখেই এটা বিশ্বাস করেন। ওদিকে যখন আল্লাহর কথা শোনেন তখন না দেখে বিশ্বাস করতে পারেন না।



ক্যামেরাকে আমরা কম্পিউটার এর চোখ হিসাবে ধরে নিতে পারি। এই ক্যামেরার সাহায্যে কম্পিউটার ছবি তোলে, ভিডিও করে এবং পরে সেটা দেখাতে পারে। এটা তো কম্পিউটার এর চোখই। এমন ক্যামেরা চোখ রয়েছে বিভিন্ন রোবটেরও। এ পর্যন্ত বানানো সবচেয়ে উন্নত রোবোট হল হোন্ডা এসিমো (HONDA - ASIMO)। মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি দেখতে এই যন্ত্রটি চার ফুট লম্বা রোবট। এটি একমাত্র যন্ত্র যা প্রায় মানুষের মতন পা ফেলে হাটতে পারে এবং হাতে পাঁচ আঙ্গুলও আছে যা প্রায় মানুষের মতনই নাড়াতে পারে। এছাড়া এটি নাচতে পারে, সিড়ি বেয়ে ওঠা নামা করতে পারে, পথ দেখিয়ে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে, খাবারের ট্রে এনে দিতে পারে। কথা বলা আর হাত পা নাড়ানো তো এর কাছে কোন ব্যাপার না। এই রোবটেরও ক্যামেরা চোখ রয়েছে যেটা দিয়ে সে দেখে। একজনকে দেখে চিনে রাখতে পারে। আশে পাশের কেউ প্রশ্ন করলে চট করে তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে পারে। এই রোবটের রয়েছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা যা ধীরে ধীরে শিখে নিজেই সমৃদ্ধ করে। এত কিছু পারলেও কিন্তু সে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বোঝে না। কোনভাবেই একে আপনি স্বাদ ও গন্ধ চেনাতে পারবেন না। কারন এই রোবোট গন্ধ দেখতে চাইবে অথবা স্বাদ শুনতে চাইবে। স্বাদ ও গন্ধ বোঝার মতন ব্যবস্থাই নেই এই রোবটের দেহে। পিঠের ব্যাগের মতন দেখতে ওটা ওই রোবটের ব্যাটারী। এর বিদ্যুতেই রোবটটা চলে। এই বিদ্যুতই ওর জীবন। এই রোবটটি কিন্তু বিদ্যুৎ, অর্থাৎ ওর নিজের জীবন চিনে না। তাছাড়া, মানুষ যে কি জিনিস সেটা একটা রোবট কোনদিনই বুঝবে না। যত উন্নত রোবট বানানো হোক না কেন। ওই রোবট যেমন বিদ্যুৎ বোঝে না আমরাও তেমনি জীবন বুঝি না। আমরা আল্লাহর তৈরি। আল্লাহকে দেখার ও জানার ব্যাবস্থা আমাদের শরীরে নেই। অনেক উন্নত করে আমাদেরকে বানানোর পরেও, আল্লাহকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই।



এবার ফিরে আসি বিশ্বাসীদের কাছে। "আল্লাহ সর্বত্রে বিরাজমান" এটা অন্যান্য ধর্মের কথা এবং এটা আসলে ইসলামের বিপরীত। কোরআনে অনেকবার বলা হয়েছে যে আল্লাহ তার আরশে থাকেন। তাছাড়া, তিনি অতীত বর্তমান ভবিশ্যত সবই একইসাথে জানেন। তিনি সবকিছুই একই সাথে দেখেন, শোনেন ও জানেন। যদিও অনেক হাদিসে এসেছে যে আল্লাহ আমাদের "সাথে রয়েছেন"। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তিনি আমাদের সাথে অবস্থান করছেন। তিনি আমাদের নজরে রেখেছেন ও আমাদের প্রয়োজন মেটান। আমাদের সাথে অবস্থান করেন না। আমরা যেমন বলি - অমুক তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে। এখানে কিন্তু আমরা সাথে অবস্থানের কথা বলি না। আল্লাহ তার যায়গায় (আরশ) আছেন। তবে সবকিছুই তার আওতায় বা নিয়োন্ত্রনে রয়েছে। তিনি নিজে সর্বত্রে বিরাজমান নন। তাছাড়া আল্লাহর নিরাকার ও অদৃশ্য নন। আল্লাহর আকার আল্লাহর মতন এবং তাঁকে দেখার ক্ষমতা আমাদের নেই।

সুত্রঃ

১। এবং তাহার সমতুল্য কেউ নেই (সুরা ইখলাসঃ ৪)

২। দৃষ্টি তাঁহাকে অবধারন করিতে পারে না; কিন্তু তিনি অবধারন করেন সকল দৃস্টি এবং তিনিই সুক্ষদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত (সুরা আনআমঃ ১০৩)

৩। আল্লাহ আরশে সমাসীন হনঃ সুরা ৭- আয়াত ৫৪। সুরা ১০- আয়াত ৩ । সুরা ১৩ - আয়াত ২। সুরা ২৫ - আয়াত ৫৯ । সুরা ৩২ - আয়াত ৪ । সুরা ৫০ - আয়াত ৩৮। সুরা ৫৭ -আয়াত ৪

---------- Find me on facebook



বিষয়: বিবিধ

২০৩৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

307579
০৭ মার্চ ২০১৫ রাত ০৪:৫৫
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম। আমাদের ইসলামী কুইজে এই প্রশ্নটা রেখেছিলাম অনেক আগে, যথারীতি অনেক উত্তর ভুল ছিলো! পরে যখন সঠিক উত্তর বলেছিলাম এমন হাংগামা শুরু হলো!কোনভাবেই উনারা মানতে রাজি ছিলেন না! উনারা শরীয়তের কোন উৎস থেকে শিখেন নি বরং লোকমুখে শুনেই এ শিক্ষায় অটল রয়েছেন! আকিদার অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি নিয়ে লিখার জন্য শুকরিয়া! Good Luck
307590
০৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৮:২৩
শেখের পোলা লিখেছেন : সঠিক তথ্য নিয়ে আলোচণার জন্য ধন্যবাদ৷
307591
০৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৮:৩১
জোনাকি লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান।
307596
০৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:৫২
রফছান খান লিখেছেন : ভালো লিখেছেন। সংক্ষিপ্ত লেখাটি যুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়েছে। ধন্যবাদ
307597
০৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ১০:০৫
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। খুবই সমৃদ্ধ লেখা। কিন্তু আপনি কখনোই জন্মান্ধকে আলোর ধারণা দিতে পারবেননা। কুকুর কে লাল রং চেনাতে পারবেন না। দোয়া করি তথাকথিত বিজ্ঞান- মনস্ক রা তাদের অন্ধত্ব ঘুঁচিয়ে আলোর পথে পাড়ি দেবেন। সংগ্রহে রাখলাম, ধন্যবাদ।
307610
০৭ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:২৭
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : বরাবরের মতই তথ্য সমৃদ্ধ ও শিক্ষণীয় লেখার জন্য জাযাকাল্লাহু খায়ের Good Luck Good Luck
307623
০৭ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০১:২৮
আফরা লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান।
307630
০৭ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০২:০০
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
308289
১১ মার্চ ২০১৫ রাত ০৪:৩২
ফারুক হোসেন লিখেছেন : 2:115

পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
১০
308290
১১ মার্চ ২০১৫ রাত ০৪:৩৯
ফারুক হোসেন লিখেছেন : ৪১:৫৪

শুনে রাখ, তারা তাদের পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহে পতিত রয়েছে। শুনে রাখ, তিনি সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।
১১
308291
১১ মার্চ ২০১৫ রাত ০৪:৪২
ফারুক হোসেন লিখেছেন : ৪:১২৬
যা কিছু নভোন্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমন্ডলে আছে, সব আল্লাহরই। আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।
১২
308292
১১ মার্চ ২০১৫ রাত ০৪:৪৭
ফারুক হোসেন লিখেছেন : ৫০:১৬
আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
১৩
322603
২৬ মে ২০১৫ সকাল ১১:০৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ আপনার প্রত্যেকটা লেখা খুবই তথ্যপূর্ণ এবং য়ুক্তিপূর্ণ। আল্লাহ আপনার সকল প্রচেষ্টা কবুল করুক এবং সব সময় সম্মানিত করুন
২৭ মে ২০১৫ সকাল ০৫:৩৬
263987
এলিট লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখা থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। জাজাকাল্লাহ খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File