অভিজত রায় হত্যার দায় স্বীকারকারী এই "আনসার বাংলা" কারা ?
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:১০:০০ রাত
মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাটা, অভিজিত রায় এক সন্ত্রাসী হামলায় র্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন। সেই সাথে গুরুতর আহত হয়েছেন তার স্ত্রী। এই হত্যা হবার পর নিউজ, ব্লগ, ফেসবুক টুইটার ইত্যাদি মাধ্যমে একটাই কথা - এই হত্যার জন্য দায়ী মৌলবাদীরা। যদিও মৌলবাদী কথাটার আসল অর্থ ভিন্ন। সবাই যেটা বোঝাতে চাইছে তা হল ইসলামিক জঙ্গি বা ইসলামিক নামধারী সন্ত্রাসী। এই ধারনার যথেস্ট যুক্তিগ্রাহ্য কারনও আছে। অভিজিত রায় ধর্মের বিরুদ্ধে, বিশেষভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতেন। শুনেছি, এজন্য নাকি অনেকবার হত্যার হুমিকীও দেওয়া হয়েছে তাকে। কে তাকে হত্যা করেছে এটা কেউ নিশ্চিত না হলেও বেশিরভাগ লোকই ধারনা করে বসে আছে যে এটা ইসলামিক ব্যানারধারী সন্ত্রাসীর কাজ।
এসব জল্পনা কল্পনার মধ্যেই খবর পাওয়া গেল যে, ওই হত্যাকান্ডের মাত্র দুই ঘন্টা পরে নাকি "আনসার বাংলা ৭" নামের একটি সংগঠন এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এমনিতেই ধারনা ছিল ইসলামিক সন্ত্রাসী, এবার তো স্বীকারই করে নিল। আর যায় কোথায়, মুক্তমনারা ঝাপিয়ে পড়ল ইসলামিক সন্ত্রাসীদের গুস্টি উদ্ধার করতে। যদিও অভিজিত রায়ের হত্যার বিরুদ্ধে, মুক্তমনাদের প্রতিবাদ সভা পন্ড হয়েছে, কার কাছে মাইক গেল আর কে গান গাইল এই নিয়ে সৃস্ট হট্টগোলে।
যাই হোক, এই লেখার বিষয় হল, ওই সংগঠন কারা? আসলে এটা সঠিক জানা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। অনেক সময় এমন হয়। একটি হত্যাকান্ডের পরে কোন একটি ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার পেজ বানিয়ে প্রশাশনকে বিভ্রান্ত করে। এই ধরনের পেজে অনেক আসামঞ্জস্যতা থাকে। আমি শুধু বিষয়টির অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরছি। এর পরে বিষয়টা বোঝার দায়িত্ব আপনার।
১। এই খুনটি হয়েছে কিন্তু এমন সময় যখন বইমেলা চলছিল। বইমেলা একটা উতসবের মতন। বইমেলাতে বিভিন্ন ধরনের পুলিশ প্রহরার ব্যাবস্থা থাকে। তাছাড়া এখন পেট্রোল বোমার মৌসুম চলছে। সঙ্গত কারনেই নিরাপত্তা আরো জোরদার। এমন সময় টিএসসি এর মতন যায়গায় এসে কাউকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেছে। লুকিয়ে, বা দূর হতে গুলি করে নয়, সামনে এসে কুপিয়ে খুন করে, নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেছে। এমন কাজ করার মতন সাহসী বা ক্ষমতাবান সংগঠন বাংলাদেশে কয়টি আছে? মানুষ কোনদিন নামও শোনেনি তেমন সংগঠনের (আনসার বাংলা ৭) পক্ষে এটা করা কিভাবে সম্ভব? ওই স্থানে খুন হওয়াটা অস্বাভাবিক এর চেয়ে আরো অস্বাভাবিক খুনির নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়াটা।
২। এবার আসি দায় স্বীকার প্রসঙ্গে। কিভাবে দায় স্বীকার করেছে? তারা টুইটার বার্তাতে এটা জানিয়েছে। (চিত্র দেখুন)। যদিও সরাসরি "আমরা করেছি" এমন বলেনি, বলেছে "করা হয়েছে"। তবুও যৌক্তিকভাবেই, এটাকে দায় স্বীকার ধরে নেওয়া যায়। একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হত্যা করার পরে টুইটারে দুই রকমের বার্তা পাঠাতে পারে। এক - "করা হয়েছে"। দুই - "আমরা করেছি বা দায় স্বীকার করছি"। দুই রকমের কেন? কারন, প্রথমটা (করা হয়েছে) টুইটারে দেওয়া হয় নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের কাছে সংবাদটি পৌছানোর জন্য। দ্বিতীয়টা (দায় স্বীকার করছি) সাধারনত দেওয়া হয় সরকার, মিডিয়া, পুলিশ এদের জন্য। যাতে সবাই জানে খুন তারাই করেছে। এমন যে হতেই হবে, বা এমনটা যে নিয়ম তা নয়। তবে অফিসিয়ালি দায়ভার স্বীকার করার টুইটার বার্তা সাধারনত অন্যরকম থাকে। এই টুইটার বার্তাটা হয়েছে নিজেদের সদস্যের কাছে দেওয়া বার্তার মতন। মজার ব্যাপার এই বার্তাটা লাইক করেছে ৭ মাত্র জন আর রিটুইট (শেয়ার) করেছে মাত্র ৫ জন। ওই সংগঠনে সদস্য কতজন তা কে জানে !!
৩। যে বা যারা এই দুটি টুটার বার্তা দিয়েছে তারা হয়ত পরে চিন্তা করেছে, কোন ছবি তো দিলাম না, মানুষ অভিজিত রায়কে চিনবে তো? সঙ্গে সঙ্গে তখনই অভিজিত রায়ের ফেসবুক থেকে নিয়ে ছবি পোস্ট করেছে। এর পরে হয়ত আবার চিন্তা করেছে অভিজিত মারা গেছে এটা মানুষ বিশ্বাস করবে তো? তখন আরো একটি ছবি (মৃতদেহ) পোস্ট করেছে। এর পরেও থেমে থাকেনি। আরো দুটি পোস্ট করেছে। এর একটিতে তারা অভিজিত রায়ের শেষ ফেসবুক স্টাটাস এর লিঙ্ক দিয়েছে। এই ছয়টি পোস্ট হয়েছে প্রায় একই সাথে (এক ঘণ্টার ভেতরে)। এখানে ভাববার বিষয় হল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন কি এভাবে এলোমেলো ছয়টা পোস্ট করে, নাকি তারা ভেবে চিন্তে যুতসই একটাই পোস্ট দেয়? তাছাড়া যাকে হত্যা করেছে তার ফেসবুকে শেষ কি স্টাটাস ছিল সেটা শেয়ার করতে খুনীরা আগ্রহী কেন?
৪। ওখানেই শেষ নয়। ওই ছয়টি পোস্ট দেবার পর থেকে ওই পেজটি অভিজিত রায়কে নিয়েই মেতে আছে। ওরা কি তার খুনী নাকি ভক্ত, সেটাই বোঝা দুস্কর। তাছাড়া এই হত্যাকান্ডের যে সব ছবি তারা পোস্ট করেছে তার সবই অন্যের কাছ থেকে শেয়ার করা। এমনকি রক্তমাখা ছবিগুলো ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের কাছ থেকে শেয়ার করেছে। দেখে যেটা মনে হচ্ছে তা হল - আনসার বাংলা -৭ হল, এমন এক সন্ত্রাসী সংগঠন যারা, এক নাস্তিক হত্যা করে আরেক নাস্তিকের কাছ থেকে তার ছবি ধার করে। নিজেদের মুরোদ হয় না কোন ছবি তোলার। আরেকটা চিন্তার বিষয় হল, মাত্র ১৪ ঘন্টা আগে, আনসার বাংলা -৭ সংগঠনটি আসিফ মহিউদ্দিন ও অভিজিত রায় দুজনেরই টুইটার পেজ ফলো করা শুরু করেছে। অভিজত রায় খুন হয়েছেন ২০ ঘন্টা আগে। দেখুন, জিনিসটা কতখানি বেমানান। তাকে বাস্তবে ফলো করে, খুন করেছে। এর ২ ঘণ্টা পরে হত্যার দায়ভার স্বীকার করেছে। ৬ ঘন্টা পরে আবার সেই মৃত ব্যাক্তিকেই টুইটারে ফলো করছে। মৃত ব্যাক্তির পেজ ফলো করার কি আছে? তাছাড়া একই সঙ্গে আসিফকে ফলো কেন?
৫। আনসার বাংলা -৭ এই পেজটি থেকে অভিজিত রায় সংক্রান্ত পোস্টগুলি বাদ দিলে পেজটি একটি বিদেশী পেজ হয়ে যায়। এখানে বাংলা তেমন কিছুই নেই। বিশ্বের কোথায় কোন ইসলামী জঙ্গি কোথায় কি করেছে - এসব দিয়েই ভরপুর। এই পেজটি দেখে মনে হয় যে এটি বানানো হয়েছিল আন্তঃজাতিক ইসলামী জঙ্গীবাদ দেখানোর জন্য। এবং এদের কালেকশনও ভালো। তবে বেশীরভাগ পোস্টই শেয়ার করা। এদের নিজেদের কোন ধরনের কর্মকান্ড খুঁজে পাওয়া গেল না।
এসব অসামঞ্জস্য দেখে মনে হচ্ছে এই " আনসার বাংলা -৭ " জিনিসটার পেছনে বেশ বড় ষড়যন্ত্র আছে। একটি মহল, দেশে জঙ্গিবাদ আছে এটা প্রমানে ব্যাস্ত। অভিজিৎ রায়ের হত্যা তাদেরকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে। জঙ্গিবাদ আছে এটা প্রমান করতে পারলে দেশে রাজনৈতিক কি সুবিধা হয় সেটা বলার প্রয়োজন নেই। তবে যেটা বলা প্রয়োজন সেটা হল, কিছু প্রবাসী নাস্তিকের বেশ সুবিধা হয়। অনেকেই এই কারন দেখিয়ে উন্নত বিশ্বে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারেন। তবে যাই হোক - এই টুইটার পেজ বানানোটা একেবারে কাঁচা হাতে হয়েছে। আমার মতন ক্ষুদ্র প্রানীই এতগুলো অসঙ্গতি খুজে পায়। এটা কোন ঝানু গোয়েন্দার হাতে পড়লে তারা এক নজর দেখেই আসল-নকল সবই বুঝতে পারবে। এমন ঝানু গোয়েন্দা আমাদের দেশে অনেক আছে। কিন্তু যে সম্ভাবনাটা উকি দিচ্ছে সেটা হল - সাগর রুনীর মতন এই হত্যার রহস্যটাও বোধ হয় রহস্যই থেকে যাবে। অভিজিৎ রায় বেঁচে থাকলে হয়ত, তার যুক্তি বিদ্যাটা কাজে লাগিয়ে "আনসার বাংলা - ৭" এর আরো অনেক অসামজস্যতা খুজে পেতেন।
এখনও সন্তস্ট হতে পারেন নি? আপনি "আনসার বাংলা -৭ " কে চিনেই ছাড়বেন। দেখুন, এমন নাম না জানা সংগঠন তো কেউই চিনে না। তবে আমি এমন একজন লোকের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি যিনি "আনসার বাংলা -৭" চিনেন, তাদের স্বভাব জানেন এমনকি তাদেরকে স্বচক্ষে দেখেছেনও। তিনি আর কেউ নন, আপনাদের সবার চেনা নাস্তিক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন। আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? নীচে দেখুন
আসিফ মহিউদ্দিনের এই লেখাটা রিটুইট (শেয়ার) করেছে "আনসার বাংলা -৭ "। এই দু লাইনের বাংলা অর্থ = তাদের (আনসার বাংলা) ফেসবুকে অনেক একাউন্ট ও পেজ আছে। ওরা কোন পরওয়া করে না। এমনকি মৃত্যুরও ভয় পায় না। তাদের কয়েকজনের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে।
আসিফ মহিউদ্দিন যখন তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন তাহলে আর দেরী না করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এই সন্ত্রাসী সংগঠনের হোতাদের ধরা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে।
আনসার বাংলা -৭ টুইটার লিঙ্ক - https://twitter.com/AnsarBn_7
আসিফ মহিউদ্দিন টুইটার লিঙ্ক - https://twitter.com/IamAsifM
আপডেটঃ আমার এই লেখাটা পোস্ট করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আনসার বাংলা -৭ এর সেই টুইটার পেজটি বন্ধ দেখতে পাচ্ছি। কেন বন্ধ সেটা তারাই জানে। তবে আপনি সেই পেজটির (Cached copy ) - এখানে দেখতে পারেন
বিষয়: বিবিধ
৩৩৮৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ সুন্দর বিশ্লেষণের জন্য।
বিশ্লেষণ মুলক লেখনী টা পড়লাম! শুরু থেকেই এ সব হত্যাকান্ড বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দেয় যার জবাব কখনই পাওয়া যায় না!
বর্তমান আন্দোলন কে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে শাসকদের কুট চাল হতে পারে!!
যাই হওক পরে দেখা যে সেই মুক্তমনা শিক্ষকটি একটি ছাত্রীকে ধর্ষনের জন্য তার বাসায় আটকে রেখেছিল। এটা খবর পেয়ে ছাত্রীটির ছেলে বন্ধরা মুক্তমনা শিক্ষকটি কে হত্যা করে। আমার মনে হয় নিজের মেয়ের মত ছাত্রীদের কে ঘরে আটকে রেখে ধর্ষন করা কেবল মাত্র মুক্তমনা দের ক্ষেত্রেই সম্ভাব।
http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/8349/Emrul/63405#.VllbeV6dcxg
মন্তব্য করতে লগইন করুন