আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে কেন
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৫৯:৪১ সন্ধ্যা
কোরআনে বলা আছে, আল্লাহ মানুষকে শুধুমাত্র ইবাদত করার জন্য সৃস্টি করেছেন। মানুষ ছাড়া আল্লাহর অন্যান্য সৃস্টিও আল্লাহর ইবাদত করে। ফেরেশতারা আল্লাহর কুদরত স্বচক্ষে দেখে আল্লাহর ইবাদত করে। মানুষকে জান্নাতে রাখলে মানুষও স্বচক্ষে দেখে আল্লাহর ইবাদত করতে পারত। হয়ত আরো বেশী করতে পারত। সেটা না করে আমাদেরকে এই দুনিয়ার বেড়াজালে ফেলে ইবাদত করতে বলার দরকার কি? দুনিয়াতে মানুষের হরেক রকমের চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা পুরন করেই তো দিন চলে যায়, ইবাদত করবে কখন? তাছাড়া মানুষকে যেহেতু "শুধুমাত্র" ইবাদত করার জন্যই বানানো হয়েছে। এই সব মানুষকে এক যায়গায় রেখে ইবাদত শুরু করিয়ে দিলেই তো হোত। চাবি দেওয়া খেলনার মতন, অনন্তকাল আল্লাহর নাম জপ করতে থাকত। তা না করে, দুনিয়াতে পাঠানো, কর্মের স্বাধীনতা দেওয়া, পাপ পুন্যের পরীক্ষা নেওয়া, মৃত্যুর পরে জীবিত করা, কেয়ামতের পরে বিচার করা, জান্নাত ও জাহান্নামে পাঠানো - এসবের কি দরকার।
হ্যা, আল্লাহ আমাদেরকে শুধুমাত্র ইবাদত করার জন্যই সৃস্টি করেছেন। তিনি কেন আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তার সঠিক উত্তর একমাত্র তিনিই জানেন। তার পরেও আমরা আমাদের স্বল্পবুদ্ধিতে দুনিয়াতে পাঠানোর কিছু যৌক্তিকতা খুজে পাই। সেটাই আজ এখানে তুলে ধরব। বিষয়টা বুঝতে হলে, আল্লাহর মর্যাদা ও ক্ষমতা কিছুটা আন্দাজ করা প্রয়োজন। যদিও এটা আন্দাজ করাটাও আমাদের ক্ষমতার বাইরে।
সম্পুর্ন মহাকাশ ও এর বাইরে যা আছে সবকিছুরই সৃস্টিকর্তা তিনি। আপনি যেমন কোন বিল্ডিং এর ফ্লাটে বসে থেকে, বিল্ডিংটির আকার বা আকৃতি দেখতে পান না। বিল্ডিংটা কেমন দেখতে সেটা জানতে হলে গেট থেকে কয়েক ফুট বাইরে গিয়ে উপরে তাকাতে হবে। আরো দুরে গেলে আরো ভালো দেখা যাবে। ঠিক তেমনি আমরাও মহাকাশের ভেতরে আছি। একটু দূরে গিয়ে দাড়ালে মহাকাশ পুরোটা না দেখতে পেলেও এটা দেখতে কেমন তা জানা যাবে। এর জন্য আমাকে কতদুরে গিয়ে দাড়াতে হবে জানেন? ১০০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। আলো এক সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার যায়। এই গতিতে গেলে চাদে যেতে দুই সেকেন্ডের কম সময় লাগবে। সুর্যে যেতে সময় লাগবে ৮ মিনিটের কিছু বেশী। অথচ যেখানে গিয়ে দাড়ালে মহাকাশের আকারটা দেখা যাবে, সেখানে আলোর গতিতে যেতে ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) বছর লাগবে। বিজ্ঞানীদের ধারনামতে, মহাকাশের বয়সই নাকি এর চেয়ে কম। এই মহাকাশ ও তার বাইরেও যা কিছু আছে সবই আল্লাহর সৃস্টি। আল্লাহর সৃস্টির মাহত্মই ঠিকভাবে বুঝতে পারছি না। আল্লাহর মর্যাদা ও ক্ষমতা কিভাবে বুঝব?
যাই হোক, অসীম ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সৃস্টির কায়দা আলাদা। আমরা যেমন একটি যন্ত্র বানাই একটি বিশেষ কাজ করার জন্য। দাবা খেলার জন্য বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে একটা কম্পিউটার বানানো হয়েছে। সেটাকে আজ পর্যন্ত কেউ হারাতে পারেনি। ওই যন্ত্রের কাজ দাবা খেলা। ওটা দাবাই খেলে। বিভিন্ন কল কারখানাতে যন্ত্র দিয়ে কাজ করানো হয়। সেই যন্ত্র যেই কাজের জন্য বানানো হয়েছে যেই কাজই করে। এর বাইরে কিছু করেনা বা করার ক্ষমতা নেই। এমন জিনিস তো আমরাই বানাতে পারি। সর্বশক্তিমান আল্লাহ সৃস্টির কায়দা আলাদা। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের উদ্দেশ্য। তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন সব কিছু করার ক্ষমতা। আমাদেরকে দিয়েছেন যা খুশি তাই করার স্বাধীনতা। তবুও আমরা ইবাদতই করে যাব। চাবি দেওয়া পতুল আমরা বানাই। যেই উদ্দেশ্যে পুতুল বানাই, পুতুলকে শুধু সেই ক্ষমতাটাই দেই, পুতুল শুধু সেই কাজই করে। আল্লাহর বানানো চাবি দেওয়া পতুল (মানুষ) সব ক্ষমতা দেওয়া থাকার পরেও যেই উদ্দেশ্যে (ইবাদত) বানানো হয়েছে সেই কাজই করে। এখানেই আল্লাহর কুদরত।
ইবাদত কারী এই প্রানী, মানুষের প্রতি আল্লাহর ভালবাসা অসীম। তিনি মানুষকে জান্নাতেই রাখতে চান। সব মানুষ একসাথে জান্নাতে মিলে মিশে থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। কিন্তু যেহেতু মানুষের অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে। একজন আরেকজনকে হত্যা করতে পারে, আরেকজনের সম্পত্তি দখল করতে পারে। সারা দুনিয়ার মানুষকে যদি জান্নাতে রাখা হয়, তাহলে এরা একে অপরের সাথে হানাহানি শুরু করবে। একজন আরেকজনের যায়গা দখল করবে, মারামারি খুনো খুনি করবে, আরেকজনের হুরকে ধর্ষন করবে। জান্নাতকে আর জান্নাত রাখবে না। এই সমস্যার মাত্র দুটি সমাধান আছে। এক, সব মানুষের খারাপ কাজ করার ক্ষমতা বন্ধ করে দেওয়া দুই, খারাপ কাজ করবে এমন মানুষকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া।
প্রথম সমাধানটি নিলে অর্থাৎ মানুষের খারাপ কাজ করার ক্ষমতা বন্ধ করে দিলে মানুষ তো কলের পুতুলের মতন হয়ে গেল। খারাপ কাজ করার ক্ষমতাই নেই। ভালো কাজ তো করবেই। এমন ভালো কাজ করার লোক তো জান্নাতে ভালো হয়ে চলবেই। আল্লাহর কুদরত কোথায় থাকল? আল্লাহর ক্ষমতা এখানেই যে, তিনি খারাপ কাজ করতে পারার ক্ষমতাওয়ালা মানুষ দিয়েই জান্নাত পরিপুর্ন করবেন। জান্নাতে সেই সব মানুষ থাকবে যারা খারাপ কাজ করতে জানে কিন্তু করবে না। আল্লাহ তাদেরকে বাধ্য করবেন না। তারা নিজের ইচ্ছেতেই করবে না।
তাহলে ২য় সমাধানটি নেওয়া যায়। যারা জান্নাতে খারাপ কাজ করবে তাদেরকে জান্নাতে ঢুকতে না দেওয়া। আল্লাহ আগে থেকেই জানেন এমন হতভাগ্য কারা। তাই তিনি পারতেন সবাইকে জান্নাতে রেখে ওই লোকগুলিকে বের করে দিতে। কিন্তু এমন করলে তো অবিচার করা হোত। কারন তারাই তখন আল্লাহকে বলত - আমি যেই অপরাধ এখনও করিনি সেই অপরাধে আমাকে বের করে দিচ্ছো? আমি ভবিষ্যতে কবে জান্নাতের পরিবেশ নস্ট করব সেই আশঙ্কায় আমাকে আজ কেন বের করে দিচ্ছ? কাজেই সুবিচারের জন্যই জান্নাতে ঢোকানের আগে সবাইকে একটা পরীক্ষার সম্মুখিন করার দরকার আছে। দুনিয়ার এই ৬০-৭০ বছর আয়ু পরকালের জন্য কিছুই না। জান্নাতের একটা ভোজন করতেই এমন সময় লাগবে। আদম ও হাওয়াকে যখন দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল তখন দুনিয়া বেহেশতের মতনই ছিল। এই দুনিয়া যারা নস্ট করেছে বা এখনো করছে, তাদেরকে জান্নাতে ঢোকালে জান্নাতও নস্ট করে ফেলবে। ওদেরকে বাদ দিয়ে বাকী সবাইকে জান্নাতে রাখার জন্যই এই দুনিয়া, এই পরীক্ষা ও আসন্ন শেষ বিচার।
এতক্ষন সবই আমার মনগড়া যুক্তির কথা বললাম । এগুলো ইসলাম সমর্থিত কোন ধারনা নয়। তবে ইসলামে কম বেশী যা বুঝেছি তা এর স্বপক্ষে যায়। আল্লাহ বেশীরভাগ বান্দাকেই জান্নাতে নিবেন । বাছাই করা ঈমানদার, প্রথমেই জান্নাতে যাবে। অনেকে সাজা ভোগ করার পরে জান্নাতে যাবে। খুব অল্প সংখক হতভাগ্য বান্দা জান্নাতে ঢুকতে পারবে না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, ওই হতভাগ্য যেন আমাদেরকে হতে না হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৮০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এটা অনেক শুনেছি । এর ব্যাপারে ক্বুরআনে কোন কিছু হিন্টস্ দেওয়া আছে কি ?
বেহেশতে যারা যাবে সেখানে তারা চিরকাল থাকবে আর দোযখে যারা যাবে তারাও সেখানে থাকবে চিরকাল । এরকমও বলা আছে যে যতদিন আকাশ ও পৃথিবী এক হয়ে না যাবে বা সূঁচের ছিদ্রের ভেতর দিয়ে উট যেতে পারবে ।
মানুষ ও জ্বিন উভয়ই দ্বারা আল্লাহ নরক পূর্ণ করবেন । এদের ইবাদত ঐচ্ছিক আর বাকীদের ইবাদত বাধ্যতামূলক । প্রত্যেকের নিজ নিজ তসবীহ দেওয়া আছে এবং বতারা তা সর্বাবস্থায় পড়তে থাকে যেটা মানুষ বুঝতে পারে না । হযরত দাঊদ (আঃ) এর সাথে পশু পাখি ও পাহাড় সমূহ তসবীহ্ পাঠ করতো । মানুষ ও জ্বীন ছাড়া আর কারোরও বিচার হবে না । ফেরেশতারা আছেন এবং থাকবেন আল্লাহর আদেশ পালনে সদা রত এবং আল্লাহর প্রশংসা সূচক তসবীহ পালনে রত।
আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া জান্নাত থেকে বিতাড়িত হন শয়তানের প্ররোচনায় পা দিয়ে ।
পরকালে আল্লাহ মানুষের (জান্নাতবাসীর)মন থেকে খারাপ জিনিস দূর করে দেবেন । সেখানে তারা শান্তি ছাড়া আর বাহুল্য কোন কথা শুনবে না ।
ঐ সময়ে তো শয়তানের কোন সুযোগই থাকবে না জান্নাতে প্রবেশ করে মানুষকে প্ররোচিত করার অন্যায় করতে । দুনিয়াতে মানুষ তো অন্যায় করতো শয়তানেরই প্ররোচনাতেই।
আরও বলা আছে যে প্রথম যুগের থেকে অনেক এবং শেষের যুগের দিকে কিছু অংশ জান্নাতে প্রবেশ করবে ।
জাহান্নামকে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন তুমি পূর্ণ হয়েছ কি ? সে বলবে আরও আছে কি ? এতে কাফেররা ভয় পেয়ে যাবে আরও।
(আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুন , আল্লাহই সর্বজ্ঞানী)
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
পৃথিবীর আকৃতির বিষয়ে আপনার আল্যা কি বলেন? নাকি তিনি জোকার লায়েকের আন্ডা বিজ্ঞানে সীমাবদ্ধ।
আমিন।
http://www.bd-today.net/blog/blogdetail/detail/10385/sunday/58432#.VPvNTo4s1Ko
মন্তব্য করতে লগইন করুন