বিশ্বের সবচেয়ে ব্যায়বহুল ১০টি বস্তু (চিত্র সহ)

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৪৯:৩৭ রাত



মানুষের কৌতুহল ও চাহিদার শেষ নেই। কিছু তারা বানায় প্রয়োজনে, কিছু বানায় কৌতুহলে, গবেষনা করার জন্য। এর জন্য প্রচুর ব্যয় তো আছেই। এই লেখাতে দেওয়া হয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যায়বহুল দশটি বস্তুর তালিকা। এখানে মুল্যমান বিলিয়ন ডলারে দেওয়া আছে। এক বিলিয়ন ডলার হল ১০০ কোটি ডলার যা কিনা বাংলাদেশের প্রায় ৭৭০০ কোটি টাকার সমান।



১০। ওরসান্ড সেতু (Oresund Bridge) - ৬ বিলিয়ন ডলারঃ এটাকে ব্রিজ বা সেতু বলা হলেও এটা আসলে আংশিক টানেল অর্থাৎ মাটির নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ। এই ব্রিজটি সুইডেন ও ডেনমার্ক দেশ দুটিকে যুক্ত করেছে। এতে আছে দুই লাইনের রেলওয়ে লাইন ও চার লাইনের মহাসড়ক। এটা ইউরোপের সবচেয়ে লম্বা এই ব্রিজটি প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৩ মিটার (৭৭ ফুট) চওড়া। ২০০০ সালে এটার নির্মান কাজ শেষ হয়। খরচ হয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলার।



৯। লার্জ হারডন কোলাইডার (Large Hadron Collider) - ৬ বিলিয়ন ডলারঃ এটাকে সংক্ষেপে LHC বলা হয়। এটা মুলত একটি গবেষনাগার। এটা বিশ্বের সর্বোচ্চ এনার্জি এক্সালেটর (world’s largest and highest-energy particle accelerator) বিজ্ঞানীদের ধারনা ের থেকে পদার্থবিদ্যা ও প্রকৃতির মূল বিষয়ের অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড এর বর্ডারে, জেনেভার কাছে, মাটির ১৭৫ মিটার (৫৭৪ ফুট) গভীরে, ২৭ কিলোমিটার লম্বা একটা চক্রাকার টানেল বা সুড়ঙ্গ এটি। নির্মান কাজ শেষ হয়েছে ২০০৮ সালে। খরচ হয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলার।



৮। ফিউসন রয়েক্টরের গবেষনা (Experimental Fusion Reactor ) - ৬.৫ বিলিয়ন ডলারঃ এটাকে সংক্ষেপে বলা হয় ITER ( International Thermonuclear Experimental Reactor) এটিও গবেষনার বস্তু। এর নির্মান কাজ শেষ হতে আরো এক বছর লাগবে (২০১৬ সাল) । বলা চলে, বিশ্বের সব গবেষক দেশগুলি যৌথভাবে এই কাজে হাত লাগিয়ে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের এই রিয়াক্টর বানানো কাজ করছে। কোন দেশ আছে এই কাজে? আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপান, চায়না, দক্ষিন কোরিয়া এমনকি ভারতও।



৭। ওলকিলুওতো পারমানবিক শক্তি কেন্দ্র ( Olkiluoto Nuclear Power Plant) - ৭.২ বিলিয়ন ডলারঃ ফিনল্যনাডের একটি দ্বীপ, ওলকিলুওতো । এখানেই আছে এই পারমানবিক শক্তি কেন্দ্র। ফিনল্যান্ডের দুটি পারমানবিক শক্তি কেন্দ্রের মধ্যে এটি একটি। এটার কাজ শেষ হবার কথা ছিল ২০১২ সালে । যদিও এর কিছু অংশের কাজ এখনো বাকী আছে।



৬। আলাস্কা পাইপ লাইন (Alaska Pipeline) - ৮ বিলিয়ন ডলারঃ যুক্তরাস্ট্রের আলাস্কা অংরাজ্যটি মুল ভুমি থেকে আলাদা। ওটা কানাডার ওইপাশে। ১২২ সেন্টিমিটার (৪৮ ইঞ্চি) ব্যাসের এই পাইপ লাইন ১২৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। একটি বেসরকারী এই পাইপ লাইনের মালিক। অনেকের হয়ত জানা আছে যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উতপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৩ সালে তেলের দুস্প্রাপ্যতার কারনে দেশটিতে যখন তেলের উচ্চমুল্য হয়ে গিয়েছিল তখন এই পাইপ লাইনের কাজ শুরু হয়। পাইপলাইন বানানো শেষ হয় ১৯৭৭ সালে।



৫। বিমান বহনকারী নৌযান (CVN-78 Class Aircraft Carrier ) - ৮.১ বিলিয়ন ডলারঃ এমন যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ আরো আছে। কিন্তু এটি নতুন ডিজাইন ও অনেক আধুনিক ব্যাবস্থা থাকবে এতে। এতে থাকবে তড়িতচুম্বকীয় পদ্ধতীতে বিমান প্রক্ষেপন ব্যাবস্থা (Electromagnetic Aircraft Launch System) আরো থাকবে আকর্ষনীয় ডিজাইন যাতে বেশী বিমান রাখা যায় ও কম লোকবল লাগে। বলাবাহুল্য, এটি যুক্তরাস্ট্রের প্রজেক্ট। এ বছরেই (২০১৫ সালে) এর কাজ শেষ হবার কথা আছে।



৪। জেমস বে প্রোজেক্ট (James Bay Projec) - ১৩.৮ বিলিয়ন ডলারঃ এটি কানাডার কুইবেকে অবস্থিত, একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (hydroelectric power stations)। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি এত বড় যে, এটি যতখানি জায়গা দখল করে রেখেছে তা প্রায় বাংলাদেশের সমান। ১৩ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ১৯৭২ সালে।



৩। তিন জর্জ বাধ (Three Gorges Dam) - ২৫ বিলিয়ন ডলারঃ এই বাঁধটি রয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশের সান্ডোপিং শহরে। এই বাধটি জলবিদ্যুৎ উতপন্ন করে। বিশ্বের যে কোন ধরনের বিদ্যুৎ উতপাদন কেন্দ্রের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড়। বাধটির মুল কাঠামো বানানো শেষ হয়য় ২০০৬ সালে। এর পরে শিপ লিফটিং, বিদ্যুৎ উতপাদন ইত্যাদি সবকিছু বানিয়ে শেষ করতে ২০১১ গড়িয়ে যায়।



২। ইতাইপু বাঁধ (Itaipu Dam) - ২৭ বিলিয়নঃ এটিও একটি জলবিদ্যুৎ উতপন্নকারী বাঁধ। ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে এর বর্ডারে পারানা নদীর উপরের এই বাঁধ। ওখানে ইতাইপু নামে একটি দিপ আছে যা থেক এই নামটি আসে। চাছাড়া ওখানকার ভাষায় ইতাইপু অর্থ - পাথরের শব্দ। ব্রাজিলের বিদ্যুৎ চাহিদার ১৯% ও প্যারাগুয়ের বিদ্যুৎ চাহিদার ৯০% মেটায় এই ইতাইপু বাঁধ। এই পর্যন্ত দুনিয়ার বুকে বানানো সবচেয়ে ব্যায়বহুল (২৭ বিলিয়ন ডলার) এই স্থাপনাটি বানানো শেষ হয় ১৯৮৪ সালে।



১। আন্তঃজাতিক মহাকাশ কেন্দ্র ( International Space Station) - ১৫৭ বিলিয়ন ডলারঃ উপরে যে সব স্থাপনার কথা বলেছি সেগুলো সব যোগ করলেও মোট ১১০ বিলিয়ন ডলারের বেশী হয় না। ওদিকে এই স্পেস স্টেশন বানাতে খরচ হয়েছে ১৫৭ বিলিয়ন ডলার। এটা এত বিশাল ব্যয় যে এই টাকা খরচ করলে ইউরোপ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত, আটলান্টিক মহাসাগরের নীচ দিয়ে টানেল (সড়ক ও রেল সহ) বানানো যাবে। এটা মহাকাশের একটি স্টেশন যেখানে বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা গিয়ে কিছুদিন থেকে গবেষনা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিলে এই স্থাপনাটির অর্থের যোগান দিয়েছে। ১৯৯৮ সালে কাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে এটা সম্পুর্ন ব্যাবহারের উপযোগী হয়। এই স্টেশনটি ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাবহার উপযোগী থাকবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা।

উল্লেখ্য যে এর আগেও (১৯৭৩ সালে ) ১০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এমনই একটি মহাশুন্য স্টেশন বানানো হয়েছিল যার যার নাম ছিল স্কাইল্যাব (skylab)। ১৯৭৯ সালে বৈদুতিক গোলযোগের কারনে আগুন ধরে ধংশ হয়ে পৃথিবীতে আছড়ে পরে এই স্কাইল্যাব। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যায়বহুল ওই দুর্ঘটনাটিতে ৯ জন মহাকাশচারী নিহত হয়।

বিষয়: বিবিধ

২৫২৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

304010
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:২৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
ব্রিজ ও ড্যামগুলি অবশ্যই মানুষের জন উপকারি হয়েছে।
304029
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৪৯
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : অসাম অসাম Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
304074
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৪:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : অবাক করা বিষয় বটে৷
304932
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:২৫
মানবাধিকার চা্ই লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File