ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি এক নয় - নেতারা আমাদের বোকা বানাচ্ছে

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০২:৩২:৪৭ রাত

(প্রত্যেকটি তথ্য আমি কোথায় পেয়েছি তার লিঙ্ক এই লেখার শেষে দেওয়া আছে।)

বিশ্বে প্রায় ৪২০০ টি ধর্ম রয়েছে। ২০১২ সালের সমীক্ষা মতে বিশ্বের ৫৯% লোক ধার্মীক, ২৩% ধার্মীক নয় ( কিন্তু বিশ্বাস করে) এবং ১৩% লোক নাস্তিক (যার কোন ধর্ম বিশ্বাস নাই)। বাকিরা কি করে তা জানা যায়নি। এতে এই বিষয় স্পস্ট যে সারা বিশ্বে ৮২% লোকের ধর্ম বিশ্বাস রয়েছে। যতই প্রযুক্তিতে উন্নত হোক, বিজ্ঞানীরা "সৃস্টিকর্তা নেই" এই কথা প্রমানে ব্যাস্ত থাকুক, মিডিয়া যতই চাপাবাজি করুক, ধর্মকে যতই গোড়ামী বলা হোক না কেন এখনো বেশির ভাগ লোকই ধর্ম বিশ্বাস করে।

কয়েক হাজার ধর্ম থাকলেও পরিচিত মাত্র কয়েকটি। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী লোক (৩৩%) খৃস্টান ধর্মের অনুসারী এর পরে রয়েছে ইসলাম ধর্ম (২০%), হিন্দু (১৩%), চাইনিজ স্থানীয় ধর্ম (৬%), বুদ্ধ ধর্ম (৬%), বাকীরা অন্যন্য ধর্ম। বাংলাদেশে প্রায় ৯০% মুসলমান, ৮% হিন্দু বাকীরা অন্যন্য ধর্ম। এই ছিল ধর্ম সম্পর্কে একটি ছোট পরিসংখান। এবার আসল কথায় আসি।

বিষয়টা বুঝতে হলে সর্বপ্রথম আমাদেরকে দুইটা জিনিসের সংগা খুব ভাল ভাবে বুঝতে হবে। আমার কথায় কান না দিয়ে নাস্তিকতা (Atheism) এবং ধর্ম নিরপেক্ষ (Secularity) সম্পর্কে (বিদেশী) ইংরেজী ডিকশনারী দেখুন।

Atheism is, in a broad sense, the rejection of belief in the existence of deities. In a narrower sense, atheism is simply the absence of belief that any deities exist.

অর্থ - ব্যাপক অর্থে, নাস্তিকতা হল উপাস্য (ইশ্বর) এর অস্তিত্বর বিশ্বাসকে প্রত্যাখান করা। বিশেষ অর্থে, উপাস্য আছে এই বিশ্বাস না থাকা।

Secularity is the state of being separate from religion, or not being exclusively allied or against any particular religion.

অর্থ - ধর্ম নিরপেক্ষতা হলো ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন এক অবস্থা, অথবা কোন বিশেষ ধর্মের আওতায় না থাকা বা বিপক্ষে থাকা।

সহজ কথায়, যে ইশ্বর বিশ্বাস করে না সে নাস্তিক, আর যার কোন ধর্ম নাই সে ধর্ম নিরপক্ষ। আপনারা কি নাস্তিকতা আর ধর্ম নিরপেক্ষতার পার্থক্য খুজে পেয়েছেন? এ দুটো যে লাউ আর কদু এটা এতক্ষনে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন। যারা ধর্ম নিরপেক্ষ রাস্ট্র চায়, তাদেরকে প্রশ্ন করুন তারা নাস্তিক রাস্ট্র চায় কিনা। তারা জবাব দিবে, "কই না তো"। তার মানে তারা লাউ চায়, কদু চায় না। তাদেরকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাস্ট্রের উদাহরন দিতে বলুন। তারা যে সব রাস্ট্রের উদাহরন দিবে, সেগুলো সবই গনতান্ত্রিক দেশ। আমদের এই গনতান্ত্রিক দেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ বানানোর চেস্টা করা ঠিক যেন মরাকে আবার মারার মতনই।

দেশের মানুষ আসলে চায় ধর্মীয় সম্প্রীতি, কিন্তু মুখে বলে ধর্ম নিরপেক্ষ। আর এটা নিয়েই নেতারা আমদের ভুল বোঝায়, বোকা বানায়। নেতারা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষ আর ধর্মীয় সম্প্রীতি একই জিনিস। সম্প্রীতির কথাই যদি ধরা হয় তবে ভারতের চেয়ে আমাদের দেশে এখনো অনেক বেশী ধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে। তাছাড়া ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য রাস্ট্র ব্যাবস্থার চেয়ে দেশের মানুষেরই ভুমিকা বেশী। সৈদি আরবে গির্জায় গেলে, ভারতে প্যাগোডায় গেলে বা আমেরিকায় মসজিদে গেলে কেউ কাউকে মারে না। অস্ট্রেলিয়ায় মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় (আমি সহ) মুসল্লীরা রাস্তা আটকে দিয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে। গাড়ীগুলো দাড়িয়ে থাকে। বাজে কথা বলা তো দুরের কথা, কেউ বিরক্তও হয় না। কারন সবাই সবাইকে নির্বেঘ্নে ধর্মীয় কাজ করতে দেয়। আমাদের দেশেও নামাজ পড়তে, পুজা করতে কেউ কাউকে বাধা দেয় না।

আসলে এগুলো সবই রাজনীতি আর জনগন হল খেলার পুতুল। ভারতবর্ষ মুসলমানেরা ৬৫০ বছর রাজত্ব করেছে, এর পরে ইংরেজরা ১৯০ বছর রাজত্ব করেছে। কখনো হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা বাধে নি। কিন্তু ভারত ছেড়ে যাবার আগে ইংরেজরা এই দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে গেছে, যার মাসুল এখনো ভারতকে দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সেই ঘটনার পুনরাবৃতি হচ্ছে। নেতারা চেস্টা করছে ধর্ম নিরপেক্ষ বলে বলে, কিছু বিচ্ছিন্ন মারামারি দেখিয়ে দেশকে এক নাজুক পরিস্থিতিতে আনতে। তাহলে ক্ষমতায় টিকে থাকা সহজ হয়। আমরা যদি তাদের ফাদে পা দেই তবে এ ভুলের মাসুল আমদেরকে বংশ পরম্পরায় দিয়ে যেতে হবে।

লিঙ্কসমুহ -

http://en.wikipedia.org/wiki/Religion

http://en.wikipedia.org/wiki/Atheist

http://en.wikipedia.org/wiki/Secularity

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File