ওরা এত বোকা কেন ?
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৫ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:২৪:৪৩ রাত
হরতাল আবরোধ ইত্যাদিতে জনগনের জীবনের নিরাপত্তা যখন ব্যাহত ঠিক সেই সময়ে খালেদা জিয়ার পুত্রের মৃত্যু হল মালয়েশিয়াতে। এমনই এক সময়ে বালির ট্রাক দ্বারা অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে, তাকে সান্তনা দিতে গেলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনিতেই এই দুই নেত্রীর মধ্যে কথাই হয় না বলা চলে। তাদের দুজনের শেষ দেখা হয়েছিল শেখ হাসিনার স্বামী বিশিস্ট বিজ্ঞানী ডঃ ওয়াজেদ এর মৃত্যুতে। এর পরে একবার তাদের দুজনের মধ্যে ফোনে কথা হয়েছিল যদিও সেটা তেমন সৌহার্দ্যপুর্ন ছিল না। দেশের মানুষ আশা করেছিল এবার হয়ত দুই নেত্রীর মধ্যে কথা হবে, হয়ত এভাবেই শুরু হবে কোন সমঝতা।
কিন্তু বিধি বাম। খালেদা জিয়া যেমন পারেননি বালির ট্রাকের বাঁধা পারিয়ে জনগনের মাঝে আসতে। ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও পারেননি লোহার গেটের সীমানা পেরিয়ে খালেদা জিয়াকে সান্তনা দিতে। যথারিতি এ নিয়েও দুই পক্ষ থেকে পরস্পর বিরোধী সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা এমনকি বুদ্ধিজীবীরাও বলছে যে এখানে কোন রাজনীতি ছিল না। এক মা এসেছিলেন আরেক মাকে সান্তনা দিতে। কিন্তু তাকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। ওদিকে বিএনপি এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে এটা ছিল এক সাজানো নাটক। প্রধানমন্ত্রী আসার আগেই নাকি খালেদা জিয়ার সহকারী জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। তাই এখন দেখা করা যাবে না। দেখা করার উপযুক্ত সময়টা পরে জানানো হবে। তবুও প্রধানমন্ত্রী ওই সময়তেই চলে এসেছেন যাতে দেশের মানুষের কাছে এটা দেখানো যায় যে শেখ হাসিনা দেখা করতে এলেও খালেদা জিয়া দেখা করেননি।
যারা শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপকে সাজানো নাটক বলছেন, যারা এই দেখা করতে যাওয়াটাকে রাজনীতি বলছেন - তাদের উদ্দেশ্যেই আমার এই লেখা। আওয়ামী লীগ চালাকী করলে আপনারা এত বোকামী কেন করেন? একজন প্রধানমন্ত্রী যখন ওই বাসার সামনে আসেন তখন তার সাথেই আসে কয়েক শত লোক। এছাড়া উতসুক জনতার ভীড় তো আছেই। তিনি আসার আগে সেই এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অর্থাৎ, প্রধানমত্রী গোপনে আসতে পারেন না। তিনি যেখানেই যান, ইচ্ছে না থাকলেও সেখানে হাজার লোক এমনিতেই জড়ো হয়ে যায়। এমন অবস্থায় তিনি সেই গেটের সামনে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর ছবিও এসেছে মিডিয়াতে। এর পরে তিনি ফিরে গেছেন । এসব যখন হচ্ছিল - তখন বিএনপি এর নেতা কর্মীরা কি করেছেন?
নিউজ হয়েছে - শেখ হাসিনা সান্তনা দিতে গেলেও খালেদা জিয়া তার সাথে দেখা করা তো দুরের কথা, ওই বাড়ীতে ঢুকতেও দেননি।
বিএনপি এর বোকামীটা এখানেই। অন্দরমহলের ঘটনা কেউই জানি না। এখানে দুটি সম্ভাবনা আছে। এক খালেদা জিয়া সত্যই ইঞ্জেকশন এর প্রভাবে ঘুমিয়ে ছিলেন। অথবা তিনি জেগেই ছিলেন কিন্তু পুত্র শোকেই হোক বা রাজনৈতিক বিরোধীতার কারনেই হোক, তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলেন না। দেখাটা করলে ভালো হোত। দেখা করতে না চাইলেও, এই দুই ক্ষেত্রেই বিষটিয়ে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে পরিচালনা করা যেত।
খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে থাকলেঃ অন্দর মহল থেকে দায়িত্বশীল কেউ এসে শেখ হাসিনাকে সন্মান জানিয়ে ভেতরে নিয়ে যেতে পারত। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ও ক্যামেরা বাড়ির ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে শুধু শেখ হাসিনার সঙ্গে তার খুব ঘনিস্ট সহচরদেরকেই ওই বাড়িতে দেওয়া যেত। এর পরে শেখ হাসিনাকে একেবারে স্বচক্ষ দেখিয়ে দেওয়া যেত যে খালেদা জিয়া ঘুমাচ্ছেন।
তখন নিউজটা এমন হোত - সান্তনা দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা দেখলেন খালেদা জিয়া ইঞ্জেকশন এর প্রভাবে ঘুমাচ্ছেন, তাই তাদের মধ্যে কোন কথা হয়নি।
খালেদা জিয়া জেগে থাকলেঃ একইভাবে শেখ হাসিনাকে ওই বাড়িতে ঢুকিয়ে ২-৩ মিনিট বসিয়ে রেখে এর পরে অন্দরমহল থেকে সংবাদ আনা যেত - খালেদা জিয়া (ইঞ্জেকশন এর প্রভাবে) এখন দেখা করার মতন অবস্থায় নেই। উনি দেখা করতে পারবেন আরো এক ঘন্টা পরে। শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী। ঊনার অনেক কাজ আছে। কাজেই এক ঘন্টা বসে থাকার সময় তার হোত না। তিনি ফিরে যেতেন।
তখন নিউজটা এমন হোত - সান্তনা দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বাড়ীর ভেতরে গেলেও সময় স্বল্পতার কারনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়নি।
আসলে উপরের কোনটাই করতে হোত না। একজন দায়ীত্বশীল লোক এসে গেটে শেখ হাসিনাকে সালাম দিয়ে যদি বলত "ম্যাডাম, আপনি নিজে এসেছেন, আমরা খুব খুশি। খালেদা ম্যাডামও এজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু উনি তো ইঞ্জেকশন এর প্রভাবে এখন ঘুমাচ্ছেন। আপনি সাংবাদিক ও ক্যামারা বাইরে রেখে আপনি কিছু একান্ত সহচর নিয়ে ভেতরে আসুন। আমাদের নেত্রী কোথায় ঘুমাচ্ছেন সেটা আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।"
এই কথা শুনেই শেখ হাসিনা ব্যাপারটা বুঝতে পারতেন। তিনি ভেতরেই ঢুকতেন না। বলতেন - "না, থাক। এমনিতেই খালেদা জিয়া পুত্রশোকে কাতর। ঘুমের মধ্যে তাকে বিরক্ত করব না। আমি এখন চলে যাচ্ছি। উনাকে জানাবেন, তার পুত্রের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।"
তখন নিউজ হোত - ইঞ্জেকশন এর প্রভাবে খালেদা জিয়া ঘুমাচ্ছিলেন। তাই সান্তনা দিতে গিয়েও শেখ হাসিনা বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ না করে সান্তনা বার্তা দিয়ে ফিরে গেছেন।
এই সামান্য বিষয়টাই ঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে না। এমন বুদ্ধি নিয়ে দেশের এঁকটি বৃহত্তম দল বিএনপি কারা চালায় আর কিভাবে চলে সেটা আসলে এক রহস্য। একটি মৃত্যুকে ঘিরেও যেভাবে রাজনীতি ও কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে, সেটার কিছুই হোত না যদি বিএনপি এই বিষয়টাকে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে পরিচালনা করত। বোকামী তারাই করে , সেই বোকামীর থেকে সুবিধা পায় আওয়ামী লীগ। বিএনপি এর প্রতি অনুরোধ - এখন সময় এসেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও চালাকী নিয়ে কথা না বলে আগে নিজেদের বোকামী শোধরানো নিয়ে বেশী কথা বলুন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন