বিমান হারায় কিভাবে

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:৫৬:৫৯ রাত



দক্ষিন পুর্ব এশিয়াতে মালয়েশিয়ার কোম্পানী Air Asia বেশ জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তা হয়েছে সুলভ মুল্যে মানসম্মত সেবার জন্য। এছাড়াও, মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য মুল্যহ্রাসে টিকিট পাওয়া যায়। যদিও এর জন্য ওত পেতে থাকতে হয়, সবার কপালে জোটে না। দু-একবার এই বিমানে চড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। আশা করি ভবিশ্যতেও হবে। এদেরই একটি বিমান সম্প্রতি ইন্দোনেশীয়া থেকে সিঙ্গাপুর যাবার পথে হারিয়ে গেছে। এটা একদিকে বেদনার ও অন্যদিকে অত্যান্ত ভয়ের। এমন বিপদ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।

বিমান দুর্ঘটনা জিনিসটা তো বিমান আবিস্কারের শুরু থেকেই আছে। হারিয়ে যাওয়াটাও নতুন কিছু নয়। বহু বিমান হারিয়ে যাওয়ার উদাহরন আছে। ৫০ বছর পরে হারিয়ে যাওয়া বিমানের ধংশাবশেষ পাওয়া গেছে এমন উদাহরনও আছে। কিন্তু এমনভাবে বিমান হারাতো যেই যুগে যখন সারা শহরে দু-একজনের বাসায় টেলিভিশন ছিল, সারা অফিসে একটি টেলিফোন থাকতো, তাও আবার বড় সাহেবের রুমে। তখন রেডিও ছিল ব্রিফকেসের সাইজের। সেই আমলে বিমান হারাতো। এখনকার যুগে বিমান হারানোটা খুব একটা চোখে পড়ে না।



এখনকার স্যাটালাইট এর যুগে রেডিও টিভি থাকে পকেটের ভেতরে। বেশী দূরে যেতে হবে না। বাংলাদেশেই র‍্যাব অনেক সন্ত্রাসীকে ধরেছে মোবাইল ট্রেস করে, অর্থাৎ মোবাইলের অবস্থান খুজে বের করে । এই যুগে রয়েছে GPS (Global Positioning System) যেটা আমরা গাড়ীতেই বেশী দেখি। এই যন্ত্রে গাড়ির অবস্থান ও রাস্তার ম্যাপ খুজে নির্দিস্ট গন্তব্যের নির্দেশনা পাওয়া যায়। GPS জিনিসটা প্রথম যখন বাজারে এসেছিল, তখন এটা কিভাবে কাজ করে এ নিয়ে আমাদের বন্ধু মহলে বিতর্কের অন্ত ছিল না। আর কিছুই না, যন্ত্রের মধ্যে একটা সেন্সর থাকে যেটা স্যাটালাইট সিগন্যালে ধরা পড়ে। ওই সিগন্যাল কোথা থেকে আসল সেটা সফটওয়ারে হিসাব নিকাশ করে ম্যাপের মধ্যে ওই যন্ত্রটির অবস্থান দেখাতে পারে। প্রথম দিকে GPS বেশ ব্যায়বহুল ছিল। এখন তো বেশীরভাগ স্মার্ট ফোনেই GPS আছে। বিমানে GPS আছে অনেক আগে থেকেই। অনেক বিমানে তো প্রত্যেক যাত্রীর সীটের স্ক্রিন যেটাতে মানুষ মুভি দেখে, সেই স্ক্রিনেই GPS এর ডিসপ্লে দেখা যায়। বিমানটি দুনিয়ার মানচিত্রের কোথায় অবস্থান করছে, কোন এলাকার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে সেটা লাইভ দেখা যায়।



ছবিঃ তিমির গায়ে GPS সেন্সর (tracker)

এতক্ষন তো বললাম সাধারন মানুষ এর GPS ও স্যাটালাইট প্রযুক্তি ব্যাবহার। গবেষকেরা তো আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফী ব ডিসকভারী চ্যানেলে এমনটা হয়ত দেখে থাকবেন। কোন গবেষক একটা পাখী বা সামুদ্রিক প্রানী এর গায়ে ছোট একটা যন্ত্র (সেন্সর) লাগিয়ে দিল। এর পরে নিজের কম্পিউটারে দেখছে যে সেই প্রানীটি দুনিয়ার কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সেন্সর ব্যাবহার করে উন্নত বিশ্বের পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী। স্যাটালাইট এর ব্যাবহার এই যুগে এমন উন্নত হয়েছে যে স্যাটালাইট ব্যাবহার করে আপনি বিশ্বের কোথায় থাকেন, কি করেন, কোথায় কোথায় যান, কার সাথে দেখা করেন ইত্যাদীর ছবি ও ভিডিও তুলে সেটা আবার সরাসরি টিভিতে সম্প্রচার করা যায়। জিনিসটা অনেক ব্যায়বহুল ও নিরাপত্তার খাতিরে সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে। কিন্তু এমনটা করা সম্ভব। আমেরিকার সেনাবাহিনী কোন এলাকাতে যুদ্ধে নামার আগে স্যাটালাইট ব্যাবহার করে ভালো করে এলাকাটা চিনে নেয় ও কোথায় তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে সেটা দেখে নেয়।

বলছিলাম বিমান হারানোর প্রসঙ্গে। এখনকার উন্নত প্রযুক্তিতে বিমান হারানোটা কম দেখা যায়। আগে যেমন মেলা বা গরুর হাটে গিয়ে মানুষ হারিয়ে যেতো। এখন মোবাইল ফোন থাকাতে এমন হারানোটা সাধারনত দেখা যায় না। তার পরেও দুর্ঘটনা বলে কথা। মোবাইল হারিয়ে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে তখন মানুষটিও সাময়িকভাবে হারিয়ে যেতে পারে। বিমানের ক্ষেত্রেও হয়ত এমনটি ঘটে। এতকিছু থাকার পরেও বিমান হারিয়ে যায়। কোন একটা সমস্যার কারনে খুজে পাওয়ার যন্ত্রটি হয়ত কাজ করে না। এমন ঘটনা এই মালয়েশিয়া ও তার আশেপাশের দেশগুলোতেই বেশী ঘটে। এক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট লোকজনদের দক্ষতাও নিয়েও প্রশ্নের অবকাশ আছে।



ছবিঃ GPS সেন্সর (tracker)। এই যন্ত্রটা সেখানেই থাকুক না কেন, এট খুজে বের করা যায়।

এই দেশগুলোর বিমান সংস্থাগুলোর ভেবে দেখার সময় এসেছে। প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি আর কি কি পদ্ধতি ও প্রযুক্তি গ্রহন করলে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানও খুজে পাওয়া যাবে সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে এই ব্যাবস্থা আছে। বিমান সংস্থাগুলোর দরকার এই ব্যাবস্থাগুলো গ্রহন করা। একাধিক বিকল্প ব্যাবস্থা রাখার কথাটাও ভেবে দেখতে পারে। যাতে একটা কজ না করলে অন্য একটি কাজ করতে পারে। সমুদ্রের একটি তিমি মাছের গায়ে সেন্সর লাগিয়ে, সেই তিমিটি কোথায় আছে সেটা যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা যায় তাহলে একটা বিধ্বস্ত বিমানের অংশ কোথায় পড়ে আছে সেটা খুজে বের করা যাবে। এজন্য খুজে পাওয়ার ব্যাবস্থাটা ও সেই ব্যাবস্থাটা নস্ট হলে বিকল্প ব্যাবস্থা এগুলো সবই আগে থেকে বিমানে রাখতে হবে। তাহলে আর মাসের পর মাস হারানো বিমানকে খুজতে হবে না।

একটি বিমান শুধু জানবাহন নয়। এর সঙ্গে রয়েছে কয়েকশত মানুষের জীবন। বিমান দুর্ঘটনার চেয়ে বিমান হারিয়ে যাওয়াট আরো বেশী ভয়ঙ্কর। কারন মানুষ জানতে পারে না যে ওই বিমানের যাত্রীদের ভাগ্যে কি ঘটেছে। অজানা ভয় হল সবচেয়ে বড় ভয়। আরো মানুষের জীবন হারানোর আগেই যদি বিমান সংস্থাগুলো এই ব্যাবস্থা গ্রহন করে তাহলে এমন দুর্ভাগ্য আরো কম ঘটবে বলে আশা করা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৭১৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298016
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:১৬
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
298029
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২৪
হতভাগা লিখেছেন : মনে হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিস্তার এশিয়াতে হয়েছে
298046
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
298146
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : জিপিএস বা ট্র্যাকার যে ব্যবস্থাই ব্যবহার করা হোকনা কেন তার কিছু সিমাবদ্ধতা আছে। সমুদ্রের অতি গভিরে কোন ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল কাজ করেনা। সমুদ্রতলে সার্চিং এর জন্য তাই সোনার ব্যবহার করা হয়। একই ভাবে অনেক উচ্চতায় যদি দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও এই সিষ্টেম ঠিক মত কাজকরবেনা। তবে মালেয়শিয়ান এয়ারলাইন্স এর ঘটনা খুবই রহস্যজনক! এয়ার এশিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য আকস্মিক বিদ্যুত ঝড়ে পরার শেষ রেকর্ড পাওয়া গেছে।
298376
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২৮
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এতোসব প্রযুক্তি থাকতে বিমানের মত বিশাল আকৃতির একটা জিনিস হারিয়ে যাওয়া অনাকাংশিক্ষিত এবং অবিশ্যাস্যও বটে। বিমান হারিয়ে গেছে নাকি হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অনেক তথ্য সমৃদ্ধ লিখাটি পোস্ট করার জন্যো ধন্যোবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File