কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে ? (পর্ব ২)
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:২৫:২৫ রাত
(পর্ব-১ এখানে) জীব দেহের ক্ষয় পুরন করে খাবার। এই খাবার সব সময়ে আরেকটি জীব থেকে আসে। গবেষনাগারে হয়ত স্বর্ন বা হীরা উতপন্ন করা যায়। কিন্তু খাবার বানানো যায় না। কোন প্রানীই খাবার তৈরি করতে পারে না। একমাত্র গাছ পারে। কিভাবে গাছ এটা করে সেটা আগের প্যারাতে বলেছি। তবে ব্যাতিক্রম কিছু গাছ আছে যেগুলো প্রানী ধরে খেতে পারে। এদের পাতা ফুল ইত্যাদি দিয়ে বিশেষ ফাদ পাতা থাকে। এই ফাদে পোকা মাকড় এমন কি ব্যাং, ইদুর এমন ছোট ছোট প্রানী আটকা পড়ে। এই প্রানীগুলো ওই গাছের খাবার। প্রানীখেকো গাছের কথা সবাই জানেন। কিন্তু এই গাছের খাবার হজম করার পদ্ধতিটা নিয়ে কখনো ভেবেছেন কি?
মানুষ সহ অন্যান্য প্রানী খাদ্য গ্রহন করে। এই খাদ্য তার পাকস্তলীতে যায়। সেখানে বিভিন্ন জৈব রস সেই খাবারের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। আমাদের দেহ, এই প্রক্রিয়াতে খাবারের থেকে শক্তি সংরহ করে। আর অপ্রয়োজনীয় অংশটা বর্জ্য পদার্থ হিসাবে শরীর থেকে নির্গত হয়। আপনি আস্ত একটি আঙ্গুর (না ভেঙ্গে) গিলে খেলেন। আপনার পাকস্তলী তখন সেই আঙ্গুরকে ভেঙ্গে গলিয়ে এর থেকে রস বের করে নিবে। এটাই সাধারনত হজমের পদ্ধতি। এটা এক প্রকার রাসায়নিক পরির্তন। রাসায়নিক পরিবর্তনের একটি সহজ উদাহরন হল - একটি কাগজ পুড়িয়ে ছাই বানানো। এই ছাই কিন্তু সম্পুর্ন আলাদা জিনিস। এখানে কাগজ বলে আর কিছুই নেই। ঠিক তেমনি আমাদের খাওয়া খাবারগুলোও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে সম্পুর্ন অন্য একটি (বর্জ্য) জিনিস হয়ে শরীর থেকে নির্গত হয়। প্রানী খেকো গাছের আমাদের মতন এমন পদ্ধতি থাকতে পারতো। এরা এক একটা করে পোকা মাকড় খেতো আর এই গাছের শরীর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য বের হবে। তেমন হলে ওই গাছ কিন্তু সব সময় বর্জ্যের ভেতরেই থাকতো। কারন, যে কোন প্রানী এক স্থানে বর্জ্য ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। গাছ তো সেটা পারে না। তাই ওই গাছের জন্য বর্জ্য নির্গত না করেই হজম করার ব্যাবস্থা আছে। যে ফাদ দিয়ে ওরা পোকা ধরে ওটাই ওদের পাকস্তলী বলা যায়। একটা পোকাটা ফাদে আটকে গেলে ওই গাছ পোকাটাকে একটা নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত আটকে রেখে হজম করে। এর পরে ফাদ খুলে যায়। মরা পোকাটি ওখানে পড়ে থাকে। পরে একসময় পোকাটি ওখান থেকে নীচে পড়ে যায়। এটাই হল বর্জ্য উতপন্ন ছাড়াই খাবার হজম করার পদ্ধতি যেটা না হলে ওই গাছের চলতো না।
এতক্ষন দুই রকমের পাকস্তলী বা খাবার হজমের কথা বলেছি। এবার বলছি তিন রকমের ফুসফুস এর কথা। আগের পর্বে বলেছি, আমরা বাতাসের সমুদ্রের তলায় বাস করি। ওদিকে মাছ বা অন্য জলজ প্রানী বাস করে পানির সমুদ্রের ভেতরে। বাতাসে ও পানি উভয়তেই অক্সিজেন আছে। সেই অক্সিজেনকে আলাদা করে দেহের ভেতরে নেওয়ার কাজটি করে আমাদের এই ফুসফুস বা মাছের ফুলকা। এছাড়াও উভচর প্রানির ফুসফুস বাতাস ও পানি এই দুই যায়গাতেই কাজ করে। একই ফুসফুস এর তিন রকমের মডেল রয়েছে। যেই প্রানীর যেমন দরকার তেমনই দেওয়া রয়েছে। এর কোন ব্যাতিক্রম কখনো হয় না। এমন একটি যন্ত্র আমরা বানাতে পারি যা বাতাস কিংবা পানি থেকে অক্সিজেন সংরহ করবে। কিন্তু সেই যন্ত্রটি কত ছোট করে বানানো সম্ভব। আমার মনে হয়, বিজ্ঞানের এই স্বর্ন যুগেও, ওই যন্ত্রটি একটি টেনিস বলের সাইজের বানানো যাবে না। অথচ এমন যন্ত্র ছোট বড় সব প্রানীর দেহে আছে। একটি ব্যাং এর দেহের ফুসফুস বড়জোর একটি সিমের বিচির সাইজের হবে। আরো ছোট প্রানী মাছির ফুসফুস তো চোখেই দেখা যাওয়ার কথা নয়।
কোন একটা বস্তু কিভাবে বাতাসে ওড়ে (বা ভাসে) এর উপরে বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক লেখাপড়া আছে। এটাকে এরোডাইনামিক্স (Aerodynamics) বলা হয়। এর উপরে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পর্যন্ত আছে। এমন ইঞ্জিনিয়ার বিমানের ডিজাইন করেন। এমনভাবে ডিজাইন করেন যেন বিমানটি বাতাসে ভাসতে পারে। কোন জিনিসের ওজন, এর উপরে বাতাসের চাপ, জিনিসটার গঠন, জিনিসটার গতি ইত্যাদি সবকিছু এরোডাইনামিক্স এর সুত্র মেনে চলে তবেই তা বাতাসে ভাসে। পাখিও এই সুত্র মেনে চলে। ওড়ার আগে বা মাটিতে নামার পড়ে খানিকটা দৌড়ে নেয়। অথবা গতি খুব কমিয়ে দিয়ে কোন গাছের ডালে বসে পড়ে। ওড়ার সময় ডানা ঝাপ্টানোর বিশেষ কায়দা আছে। ওড়ার সময় ডানে বায়ে ঘোরার জন্য আছে পাখির লেজ। এগুলো সবই এরোডাইনামিক্স এর সুত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। পাখির দেহের কাঠামোটাও কিছুটা বিমানের মতন করে ওড়ার উপযোগী করে বানানো। পাখির হাড়ও ফাঁপা ও হালকা হয়। কোন পাখি পেছনে উড়তে পারে না। সবচেয়ে ছোট পাখি হামিং বার্ড বাতাসে ভেসে ফুল থেকে মধু খাওয়ার সময় নিজের সুবিধার্থে সামান্য একটু পেছনে যেতে পারে। কিন্তু মাছির ওড়াটা সম্পুর্ন অন্য রকমের। মাছির দেহের কাঠামো, ডানার আকার, ইত্যাদি ওড়ার উপযোগী নয়। এর পরেও মাছি, ডানে, বায়ে, আগে, পিছে, যে কোন দিকে প্রায় সমান গতিতে উড়তে পারে। মাছি এরোডাইনামিক্স এর সুত্র মেনে চলে না। তাহলে কিভাবে ওড়ে ? সেটা এখনো রহস্য। এরোডাইনামিক্স সুত্র না মেনে, রহস্যময় ভাবে উড়তে পারা আরো একটি প্রানি আছে - প্রজাপতি।
আমাদের শরীরের কোথাও আঘাত লাগলে আমরা ব্যাথা পাই। সবাই জানেন যে আমরা এই ব্যাথা কিভাবে পাই। ওই স্থান থেকে স্নায়ু আমাদের মস্তিস্কে সংকেত পাঠায়। আমাদের মস্তিস্ক সেটাকে ব্যাথা বলে জানায়। এ কারনেই আমরা ব্যাথা অনুভব করি। ব্যথার অষুধ বা ইঞ্জেকশন এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে আমাদের ব্যাথা কমায়। ইদানিং বড় অপারেশনও লোকাল এনাস্থেসিয়া করে করা হয়। অর্থাৎ শরীরের যে যায়গায় অপারেশন করতে হবে সেই যায়গায় ইঞ্জেকশন দিয়ে অনিভুতিহীন করে দেওয়া হয়। তখন কাটা ছেড়া করলে ব্যাথা লাগে না। এটাও ওই স্নায়ুকে অকেজো করার এক পদ্ধতি। আপনার হয়ত মনে হতে পারে যে এই ব্যাথা মানুষের শরীরে না থাকলে বোধ হয় ভাল হোত। আমরা অনেক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতাম। আসলে ব্যাথা হল আমাদের জীবন রক্ষাকারী একটা জিনিস। ব্যথা না থাকলে বেকায়দা চাপ দিয়ে নিজের আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলতে পারতেন। পিছলে পড়ে গিয়ে শরীরে আভ্যন্তরীন কোন অঙ্গ ক্ষতি হয়ে গেলেও বুঝতে পারতেন না। বেকায়দা দাঁড়িয়ে বা বসে সহজেই শরীরে যে কোন হাড় ভেঙ্গে ফেলতে পারতেন। এমন ভারী বোঝা বহন করতেন যাতে আপনার হাড় ভেঙ্গে যেত। আমরা ব্যাথার কারনেই আমাদের বোঝা বইবার ক্ষমতাটা আন্দাজ করতে পারি। এই ব্যাথার কারনেই শরীরের কোন যায়গায় সমস্যা সেটা বুঝে তার চিকিতসা করাতে পারি। আমি নিজে একবার প্রচন্ড কানে ব্যাথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার দেখে বলল কানে ইনফেকশন হয়েছে। আমাকে কিছু ওষুধ দিল, আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে গেলাম। এই ব্যাথা না থাকলে আমার সমস্যাটা বুঝতেই পারতাম না। কানে পচন ধরে, ক্যান্সার হয়ে আমি মারা যেতাম। ব্যাথা আমাদের জীবন রক্ষাকারী একটা নেয়ামত।
যে কোন একটি জিনিস দেখে আপনি কিভাবে চিনেন? ধরুন, আপনার সামনে একটি চা এর কাপ, একটি গ্লাস, একটি ফুলদানী ও একটি ছাইদানী রাখা হল। আপনি যখন চায়ের কাপটি দিকে তাকান তখন সেই কাপ হতে প্রতিফলিত আলো আপনার চোখে পড়ে। চোখ তখন আপনার মস্তিস্কে খবর পাঠায়। আপনার মস্তিস্ক তখন আপনার সারা জীবনের জমা করা স্মৃতির মধ্যে খুজে বের করে জিনিসটা কি। এর পরে আপনি বুঝতে পারেন যে ওটা একটা চায়ের কাপ। এই চায়ের কাপটি যদি একেবারে অনুন ডিজাইনের হয় যা আপনি আগে কখনো দেখেননি তবুও আপনার মস্তিস্ক হিসাব নিকাশ করে ওটাকে চায়ের কাপই বলবে, ছাইদানী বলবে না। ওই চারটা জিনিস আপনার সামনে এনে রাখার পরে এগুলোকে চিনতে আপনার এক সেকেন্ডও সময় লাগে না। এই সময়ের মধ্যেই আপনার মস্তিস্কের সফটওয়ার আপনার সারা জীবনের স্মৃতি সার্চ করে ওই চারটে জিনিসের নাম বের করে ফেলেছে। কয়েক হাজার মানুষের চেহারা সংরক্ষিত আছে আপনার মস্তিস্কে। সংরক্ষিত আছে কয়েক শত মানুষের নাম। আপনার নিখুতভাবে মনে আছে ১০-২০ বছর আগের অনেক স্মৃতি। আমার এই লেখাটা পড়ার জন্য আপনি মস্তিস্কে সংরক্ষিত বাংলার বর্নমালা স্মরন করছেন অক্ষর চেনার জন্য। এর পরে আপনার মস্তিস্কে সংরক্ষিত বিশাল শব্দ ভান্ডার প্রতি মুহুর্তেই সার্চ করে চলেছেন আমার লেখা প্রতিটি শব্দ বোঝার জন্য। এখানেই শেষ নয়। বাক্যগুলোর অর্থ বুঝতে মস্তিস্কে সংরক্ষিত "বাংলা ভাষা" সফটওয়ার ব্যাবহার করছেন। এর পরেও আবার ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কথার মর্মার্থ নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে, চিন্তা করে বের করছেন। এত কিছু করে, তবেই আপনি এই লেখাটা পড়তে পারছেন - ও বুঝতে পারছেন।
কম্পিউটার চালিত যন্ত্র, টাইপ করা বা ছাপানো অক্ষর লেখা পড়তে পারে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কতটুকু বোঝে? কিছুই বোঝে না। আমারা যেমন আরবী পড়তে পারি কিন্তু কিছুই বুঝি না। ঠিক তেমন। লেখা পড়ে বোঝার মতন যন্ত্র আছে তবে সেটার কার্যক্ষমতা খুবই সীমিত। তাছাড়া বিভিন্ন কথার মর্মার্থ বা অন্তঃনিহিত অর্থ বোঝার ক্ষমতা একটা যন্ত্রের কখনোই হবে না। বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল ও রহস্যময় যন্ত্রই হচ্ছে আমাদের মস্তিস্ক। এটা তো আর অন্য যন্ত্রের মতন পয়সা দিয়ে কিনতে হয় না। জন্ম থেকেই এটা আমরা বিনামুল্যে পাই। তাই এর কদর বুঝি না। এটা আমাদের কাছে নেয়ামতও মনে হয় না।
কম্পিউটার যন্ত্রটি বানানো হয়েছে মানুষের মস্তিস্ক অনুকরন করে। কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে তার সামান্য ধারনা পেলে আমরা বুঝতে পারব যে প্রতি মুহুর্তে আমাদের মস্তিস্ক কি জটিল কাজ করে চলেছে। কম্পিউটার যন্ত্রটির রয়েছে ইনপুট আউটপুট ও প্রসেসর। ইনপুট হচ্ছে কীবোর্ড, মাউস ইত্যাদি। আউটপুট হচ্ছে মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি। আর প্রসেসিং করে ওই বাক্সটি। এই বাক্সের মধ্যে রয়েছে প্রসেসর, ROM, RAM ও Storage (হার্ড ডিস্ক) । মুল প্রসেসিং এর কাজটি করে ওই প্রসেসর। ROM হল সেই ধরনের মেমোরী যা কম্পিউটার কখনো ভোলে না। Storage এ সব তথ্য জমা থাকে। আর RAM হল অস্থায়ী মেমোরী যেখানে না এনে কম্পিউটার আপনাকে কিছুই দেখাতে পারে না। আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আপনার কম্পিউটার এর অস্থায়ী মেমোরী র্যামে এনে এই লেখাটি আপনার মনিটরে দেখাতে পারছে।
আমাদের মস্তিস্কের ক্ষেত্রেও জিনিস্টা কিছুটা একই রকমের। আমাদের ইনপুট হল চোখ, কান, নাক ইত্যাদি। আউটপুট হল কথা, অঙ্গ প্রতঙ্গের নড়াচড়া ইত্যাদি। আর প্রসেসিং করার বাক্স হল মস্তিস্ক। আপনি দেখলেন একটি গাড়ী দ্রুত বেগে আপনার দিকে আসছে। এটা হল চোখের মাধ্যমে ইনপুট। আপনার মস্তিস্ক এই তথ্যটা প্রসেস করে নিল। আপনি নিজেকে বাচাতে দুই পা পিছিয়ে গেলেন। এটা হল আপনার অঙ্গ প্রতঙ্গের মাধ্যমে আউটপুট। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হল- আপনার নাম কি? (কানের ইনপুট)। উত্তর দিলেন - আমার নাম আব্দুল্লাহ। (মুখের আউটপুট) । মানুষের আছে অস্থায়ী মেমোরী (RAM) । যেমন এই লেখাটা আপনি পড়ছেন অস্থায়ী মেমোরীতে রেখে। এর যেই কথাটা পছন্দ হবে সেটা আপনি স্টোরেজ এ রেখে দিবেন (মনে রাখবেন) যাতে পরে মনে করতে পারেন। আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় অমুক ব্যাক্তির ফোন নম্বর কত। তখন আপনি বলেন - দাঁড়াও মনে করে নেই। এই মনে করাটা হল তথ্যাটা আপনার স্টোরেজ (হার্ড ডিস্ক) থেকে অস্থায়ী স্মৃতিতে (র্যাম) টেনে নিয়ে আসা। কিছু স্মৃতি বা তথ্য আছে যেটা মানুষ কখনোই ভোলে না (রম) । যেমন যত বড় স্মৃতিভ্রস্ট বা পাগল হোক না কেন সে খাবার মুখে ঢুকাতে হয় নাকি নাকে ঢুকাতে হয় এই তথ্যটা কখনোই ভুলবে না। কম্পিউটার এর মটন সব কিছু থাকার সাথে সাথে মানুষের মস্তিস্কে যে জিনিস্টা বেশী আছে সেটা হল বোধ শক্তি। যেটা কোন যন্ত্রের কখনো হবে না। যেমন খরগোশ ও কচ্ছপের ওই দৌড় প্রতিযোগীতার গল্পটি পড়ে মানুষের মস্তিস্ক তার বোধ শক্তি দিয়ে যেটা বোঝে তা হল - ধীরগতিতে চলেও অধ্যাবসায়ী ব্যাক্তি সফল হয়। একটি যন্ত্র, যত উন্নতই হোক না কেন, সেটা কিন্তু কখনোই গল্পটির এই মুল শিক্ষাটি বুঝবে না।
মানুষ বা অন্য যে কোন স্তন্যপায়ী প্রানীর মস্তিস্ক হল জেলীর মতন জলীয় একটা জিনিস। এর কোথায় প্রসেসর, কোথায় র্যাম আর কোথায় বা রম? এর প্রসেসিং কিভাবে হয়। এটা কিভাবে ফাইল ট্রান্সফার করে। কিভাবে কোন স্মৃতি মনে রাখে। কিভাবেই বা এই মস্তিস্কে বোধ শক্তি, বিবেক, ভালোবাসা, ঘৃনা, কুটনীতি, রাজনীতি, সততা, দুর্নীতি ইত্যাদি থাকে? এমন জেলীর মতন দেখতে মাত্র দেড় কেজি ওজনের একটা বস্তুতে এত কিছু কিভাবে থাকে? এই নেয়ামত অস্বীকার করার কি কোন উপায় আছে?
ছোট একটা গল্প বলে আজকের মতন শেষ করব। এক লোকের দুটি ঘড়ি ছিল। একটা বন্ধ আরেকটা প্রতিদিন আধা মিনিট স্লো চলে। সে আধুনিক একটি যন্ত্রকে জিজ্ঞেস করল - কোন ঘড়িটি ব্যাবহার করব? যন্ত্রটি হিসাব নিকাশ করে তাকে যা বলল সেটা হল - যে ঘড়িটা প্রতিদিন আধা মিনিট স্লো চলে সেটা প্রতি ১৪৪০ দিন পর পর ১২ ঘণ্টা স্লো হবে অর্থাৎ সঠিক সময় দেখাবে। আর যেই ঘড়িটা বন্ধ আছে সেটা প্রতিদিন দুইবার সঠিক সময় দেখাবে। তাই বন্ধ ঘড়িটি ব্যাবহার কর।
মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে করা উন্নত বুদ্ধির যন্ত্রের, বুদ্ধির নমুনা হল এই। মানুষের বুদ্ধি যে কত বড় নেয়ামত সেটা সঠিকভাবে অনুধাবন করাটা আসলেই আমাদের বুদ্ধিতে কুলায় না। কোন নেয়ামত অস্বীকার করার উপায় নেই। সুবহান আল্লাহ। ( চলবে --------- )
বিষয়: বিবিধ
১৬১৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
খুবি সমৃদ্ধ পোস্ট। আরো লিখুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন