দেশের সবচেয়ে বড় রাজাকারের দল
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:২১:৩৩ রাত
শুরুতেই অপ্রসঙ্গিক দুটি কথা বলে নিচ্ছি। আপনি হয়ত জানেন, ভারতের মুসলিমের সংখা বাংলাদেশের চেয়ে বেশী। না, এতে মোটেও অবাক হবার কিছু নেই। ভারতের জনসংখা ১২০ কোটি। এর ১৫% অর্থাৎ ১৮ কোটি মুসলমান রয়েছে ভারতে। বাংলাদেশে এত লোকই নেই। এমনই আরেকটি মজার তথ্য হল, চীনে ইংরেজীতে কথা বলতে পারা লোকের সংখা আমেরিকার চেয়ে বেশী। ভারত ও চীন উভয় দেশের ক্ষেত্রে এই মজার ঘটনার কারন একটাই - ওই দুটি দেশের লোকসংখা অত্যান্ত বেশী। এর একটা ক্ষুদ্র অংশই অনেক বড়।
এবার আসি রাজাকার প্রসঙ্গে। আমরা তো বাংলায় আগে পিছে না দেখেই যে কোন লোককে রাজাকার বলে বসি। আসলে রাজাকার শব্দের অর্থ "সেচ্ছাসেবী"। এটা ছিল একটা আধা সামরিক বাহীনি। এদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, এদের পরিচয়পত্র পর্যন্ত ছিল। যুদ্ধের সময় একজন মনে মনে চিন্তা করল যে সে স্বাধীনতার বিরোধীতা করবে ব্যাস অমনি সে রাজাকার হয়ে যায়নি। রাজাকার হতে হলে তাকে ওই দলের সদস্য হতে হয়েছে। এমন আরো অনেক দল ছিল যেমন শান্তি বাহীনি, আল বদর, আল সামস ইত্যাদী। সব দলের ভুমিকা একই ছিল - মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা। সকল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকার নয়। এরা কেউ আল বদর, কেউ আল শামস। কিন্তু আমরা গড়ে সবাইকেই রাজাকার বলে জানি। অনকে যেমন যে কোন মোটর সাইকেলকে "হোন্ডা" বলে। ঠিক তেমনি আমরা যে কোন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীকে রাজাকার বলি।
এই বাহীনিগুলো গড়া হয়েছিল পাকিস্তান বাহীনিকে সাহায্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার জন্য। কিন্তু সেই যুদ্ধে পাকিস্থান বাহীনিরা যুদ্ধের নামে গনহত্যা আর ধর্ষন করেছে। ওদে সাহায্যকারী এই বাহীনিগুলোও তাদের সাথে একই কাজ করেছে। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। হাতে অস্ত্র থাকলেই খুন করা যায় না। এর জন্য খুনী মানষিকতা থাকতে হয়। এই লেখা যারা পড়ছেন তাদের বেশীরভাগ লোকই চোখের সামনে কাউকে খুন হতে দেখলে জ্ঞান হারাবেন। রাজাকার বাহীনিতে যোগ দিয়েছিল রাজ্যের সকল চোর, বদমাইশ, খুনী ও ধর্ষকেরা। কারন সেটা ছিল তাদের জন্য একটা লোভনীয় সুযোগ। মুক্তিযুদ্ধ করলে তো কস্ট করে জীবনের ঝুকি নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু রাজাকার হলে তো পাকীস্তান বাহীনির আশ্রয়ে থেকে হত্যা, ধর্ষন আর লুটপাট করা যাবে। এই সুযোগটা খারাপ লোকেরা হাতছাড়া করেনি। ওদিকে ভালো লোকেরা জীবনের ঝুকি নিয়েই মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে।
এই রাজাকারেরা কখনো কল্পনাই করেনি যে বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। হয়ত ভারতের সাহায্য না থাকলে স্বাধীনতা এত দ্রুত আসত না। মাত্র ৯ মাসেই যখন মোড় ঘুড়ে গেল তখন কিন্তু রাজাকারেরা ছিল কোনঠাশা। তারা প্রানের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। অনেককে তো প্রকাশ্যেই হত্যা করা হয়েছে। যারা বেচে ছিল তারা বাচার তাগিদেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট জোগাড় করেছে। কেউ আবার কোন দলে যোগ দিয়েছে। কেউ কোন ক্ষমতাবানের ছত্রছায়াতে আশ্রয় নিয়েছে। এমন সময় ছিল ১-২ বছর। এর ভেতরেই বেচে যাওয়া রাজাকারেরা নিজের একটা গতি করে নিয়েছে। এমন একটা ব্যাবস্থা করেছে যাতে মানুষ তাকে আড়ালে রাজাকার বলে ডাকলেও সামনে কেউ সেটা বলতে সাহস পাবে না। এমন ব্যাবস্থা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল রাজনীতিতে যোগ দেওয়া। তাছাড়া, বড় ব্যাবসায়ীর খাতায় নাম লেখানো, মুক্তিযুদ্ধের নকল সার্টিফিকেট যোগাড়, রাজনৈতিক দলে নাম লেখানো - এগুলো সবই সহজে করা গেছে যুদ্ধের সময় লুটপাট করা ওই অর্থ দিয়ে। তাদের অনেকেই আমাদের আশেপাশে বড় আসনে বসে রয়েছে। তাদের টিকিটিও আমরা এখন ছুতে পারিনা।
-------- ছবিঃ প্রকাশ্যে রাজাকার হত্যা
এমন রাজাকারের জন্য কোন রাজনৈতিক দলটি ছিল সবচেয়ে বেশী নিরাপদ? হ্যা, ঠিক ধরেছেন। আওয়ামী লীগ। কস্ট করে যে কোন ফাক দিয়ে একবার আওয়ামী লীগে ঢুকে যেতে পারলেই হল। আওয়ামী লীগ যে আগা গোড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সেটা সবাই জানে । তাই এই দলের সদস্যকে কেউ রাজাকার সন্দেহ করবে না। হ্যা, প্রথম কদিন দলের লোকেরা এমন বলাবলি করবে , এর পরে ভুলে যাবে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তখনও জন্ম হয়নি। জামায়াত তখন নিষিদ্ধ ছিল। রাজাকারদের ঢোকার জন্য আওয়ামী লীগই ছিল সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। সরকারের দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট যেখানে কায়দা করে যোগাড় করা গেছে। সেখানে একটা রাজনৈতিক দলে কায়দা করে ঢোকাটা অসম্ভব নয়। সিলেটের একজন রাজাকার বরিশালে গিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে সেটা ঠেকানোর কি উপায় ছিল? হয়ত না জেনেই বহু রাজাকারকে আওয়ামী লীগ, দলে নিয়ে নিয়েছে। এসব রাজাকারদের অনেকে আবার পরবর্তীতে বিএনপি জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন দলে যোগ দিয়েছে। কিন্তু কোন রাজাকার জামায়াতে যোগ দেওয়ার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারন নেই। কারন জামায়াতে ঢুকতে গেলে বেশ কাঠ খড় পোড়াতে হয়, সময় দেওয়া লাগে , নিয়ম মানা লাগে। তাছাড়া জামায়াত এমনিতেই রাজাকারে দল নামে পরিচিত। ওই দলে যোগ দিলে তো নিজের গায়ের গন্ধ আরো প্রকট হয়ে যাবে। তার চেয়ে অন্য কোন দলে লুকিয়ে থাকাই ভাল।
হ্যা, এমন রাজাকার সকল দলেই কম বেশী লুকিয়ে আছে। জামায়াত দেশের একমাত্র দল যেখানে কোন রাজাকার লুকিয়ে নেই। তারা প্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল। এজন্য তারা এখনো রাজাকার নামটি বয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সেই দুর্নাম বয়ে বেড়াচ্ছে দলটির প্রবীন নেতারা। তরুন বা যুবক যারা এই দলে আছে তারা তো রাজাকার নয়। জামায়াতের রাজাকারের সংখা স্পস্ট। লুকানো কোন রাজাকার জামায়াতে নেই। আমরা ধরে নিতে পারি জামায়াতে ২৫% প্রবীন রয়েছেন, যাদেরকে আমরা রাজাকারে তালিকাতে ফেলতে পারি। ওদিকে দেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগ। দলের সদস্য সংখা বিবেচনা করলে আওয়ামী লীগের জনসংখা জামায়াতের অন্তত দশ গুন। আওয়ামী লীগের ভেতরে যদি ৫% লুকানো রাজাকার থেকে থাকে তবে সেট হবে জামায়াতের রাজাকারের সংখার দ্বিগুন। আওয়ামী লীগে যদি ৩% লুকানো রাজাকার থেকে থেকে তাও সেটা জামায়াতের রাজাকারের চেয়ে বেশী। ৩% অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে ৩ জন রাজাকার লুকিয়ে থাকাটা মোটেও অসম্ভব নয়।
শুরুতে ভারত ও চীনের ব্যাপারে যে তথ্য দিয়েছি সেক্ষেত্রে দেশ দুটির কোন ভুমিকা নেই। ওসব অদ্ভুদ ব্যাপার সম্ভব হয়েছে তাদের বিশাল জনসংখার কারনে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও রাজাকার ব্যাপারটিতে দলটির কোন ভুমিকা নেই। দলটি জনসংখা অনেক বড়। তাই এই দলের মাত্র ৩% (লুকানো) রাজাকারই জামায়াতকে ছাড়িয়ে যায়। আর এমনটা যদি সত্যিই হয় তবে - আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় রাজাকারের দল।
বিষয়: বিবিধ
২৫৭৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
https://www.facebook.com/lokmanelectronics
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন