ডারউইনের বিবর্তনবাদ – এটা কি কোন বৈজ্ঞানিক সত্য?
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:১৪:৫২ রাত
Discovery ও National Geography নামক টিভি চ্যানেল দুটি সবার কাছেই বেশ পরিচিত। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষামুলক প্রামান্যচিত্রের জন্য চ্যানেল দুটি বিশ্ব বিখ্যাত। অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত, প্রায় একই ধরনের আরো একটি চ্যানেল আছে –History। যারা এই History চ্যানেলের অনুস্টান দেখেছেন বা নিয়মিত দেখেন তারা হয়ত Ancient Aliens (প্রাচীন ভীন-গ্রহবাসী) নামক ধারাবাহিক অনুস্টানটির সাথে পরিচিত। এই অনুস্টানের বিষয়বস্তু এর নামের মধ্যেই নিহীত আছে। দুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের আনাচে কানাচে থেকে খুজে খুজে ভীন-গ্রহবাসী আগমনের পক্ষের তথ্য, উপাত্ত জোগাড় করে। এর পরে ওদের বাছাই করা কিছু বুদ্ধিজীবি বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করে দর্শককে বুঝিয়ে দেয় যে ভীন-গ্রহবাসী দুনিয়াতে এসেছিল। তারা আমাদের বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে গেছে। এমনকি এও বলেছে যে, ভীন-গ্রহবাসীরাই দুনিয়াতে মানুষ জাতিকে পাঠিয়েছে।
ঐ অনুস্টান যারা দেখেছেন তারা জানেন, সবকিছুর মধ্যেই তারা ভীন-গ্রহবাসীর অবদান খুজে পায়। পিরামিড, প্রাচীন স্থাপনা, প্রাচীন গ্রন্থ , অমুক প্রানী, তমুক জানবাহন ইত্যাদি সবকিছুই ভীন-গ্রহবাসীদের অবদান। ওদের দেখানো তথ্য, যুক্তি সবই খুবই পোক্ত। অস্বীকার করার বা মেনে না নেওয়ার উপায় নেই। অমুক গুহার মধ্যে, খোদাই করে আকা, আধুনিক হেলিকপ্টার, প্লেন, ইত্যাদীর ছবি পাওয়া গেছে। তমুক যায়গায় হাজার বছর আগের বানানো বিমানের মডেল পাওয়া গেছে। বিমান আবিস্কার হয়েছে মাত্র ১০০ বছর আগে। তাহলে হাজার বছর আগের মানুষেরা কিভাবে বিমানের সঠিক মডেল বানালো? অমুক স্থাপনা বানাতে যে প্রযুক্তি দরকার হয় তা আবিস্কার হয়েছে ৩০০ বছর আগে, তাহলে হাজার বছরের আগের মানুষ সেটা কিভাবে বানালো? অমুক যায়গায় মাটির নিচে মানুষের মাথার লম্বা খুলি পাওয়া গেছে যা ভিন-গ্রহবাসীর বলে মনে হয়। এমন সব অবিশ্যাস্য (কিন্তু সত্য) তথ্য। এর পরে আলোচকেরা বলে – এমন কি হতে পারে যে ভীন-গ্রহবাসীরা এসে এই সব করেছে?” – Is it possible ? ………. এভাবে বলে। সরাসরি না বলে আপনার কাছে প্রশ্নটি তুলে দেয়। - এটা কি ভীন-গ্রহবাসীর কাজ হতে পারে?
এই বিষয় নিয়ে একটা অনুস্টান হলে কথা ছিল। কিন্তু অনুস্টানটি ধারাবাহিক, প্রতিটি পর্ব ১ ঘন্টা। এ পর্যন্ত ৮২টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এই পর্যন্ত অনুস্টানে যা দেখানো হয় সেটা যদি বই আকারে প্রকাশ করতে হয় তাহলে একটা ছোটখাট লাইব্রেরী বানানো যাবে। এই এক লাইব্রেরী বইয়ের মুল কথা হল – প্রাচীন কাল থেকে আমাদের সভ্যতা, প্রযুক্তি এমনকি দুনিয়াতে মানুষ জাতির আগমনও, ভীন-গ্রহবাসীদের অবদান। ওদের এই থিওরীটার নাম হল – Ancient Alien Theory
ওই অনুস্টহানের কথা শেষ। এখন বলছি অন্যন্য বইয়ের কথা। কাছাকাছি ধরনের আরো অনেক ভিন্ন থিওরী আছে। এক থিওরীতে বলা হয় যে ভীন গ্রহবাসীরা অনেক আগে দুনিয়াতে এসে তাদের জিন ও ডিএনএ এর পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ তৈরি করে। আরেক থিওরী আছে, লক্ষ বছর আগে মহাকাশ থেকে এক উল্কা এসে পড়ে, সেখান থেকে মানুষস সহ সকল প্রানী তৈরি হবার মুল প্যাকেজটি দুনিয়াতে আসে। আরেক থিওরী আছে যে ভীন-গ্রহবাসীদের একটা পরীক্ষামুলক প্রজ়েক্ট হল আমাদের এই দুনিয়া। ভীন-গ্রহবাসীরা আমাদের দুনিয়াতে বিভিন্ন ছদ্যবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ওরা আমাদের দুনিয়া নিয়োন্ত্রোন করে চলছে। হলিউডের সিনেমার নির্মানকারীরা তো এই থিওরী ফুলিয়ে ফাপিয় বেহস কয়েকটি নামকরা সিনেমা বানিয়েছে। থিওরীর কোন অভাব নেই। এতক্ষন যে সব থিওরীর কথা বললাম সেগুলো কিন্তু কোন চাষা ভুষার কথা নয়। এসব থিওরীর প্রবক্তারা সবাই আন্তঃজাতিক মানের বিজ্ঞানী অথবা বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক। এমন বিজ্ঞানীর অভাব নেই, থিওরীরও অভাব নেই।
এতক্ষন থিওরী কথাটা অনেকবার বললেও এগুলোর সঠিক নাম হল – হাইপোথিসীস। হাইপোথিসীস হল যুক্তিসঙ্গত একটা ধারনা যা এখনো প্রমান করা যায়নি। নিউটনের সুত্র, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, এটা প্রমানিত। আর্কিমিডিসের সুত্র, কোন জিনিস কিভাবে পানিতে ডোবে বা ভাসে, এট প্রমানিত। বাতাসে ২১% অক্সিজেন আছে, প্রমানিত। মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ কি, সেটা প্রমানিত। প্রানী কোষে ডিএনএ এর কাজ কি, প্রমানিত। ইত্যাদি অনেক প্রমানিত বৈজ্ঞানিক বিষয় আছে । কিন্তু এতক্ষন ভীন-গ্রহবাসী নিয়ে যা বললাম তা প্রমানিত নয়। তথ্য ও যুক্তি যদিও ভীন-গ্রহবাসী থিওরীর পক্ষে যায়, কিন্তু সেটা প্রমানিত নয়। আর কোন বিষয় প্রমানিত না হলে, বিজ্ঞানে তার কোন স্থান নেই।
বহুল প্রচলিত ডারউইন এর বিবর্তনবাদ তত্বটি এমনই এক থিওরী – যার কোন প্রমান নেই। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময় চার্লস ডারউইন এই তত্ব প্রদান করেন, উনার তত্ব অনুসারে এক প্রানী হতে লক্ষ বছরে বিবর্তন হয়ে অন্য প্রানী তৈরি হয়েছে । এই প্রক্রিয়াতেই অবশেষে বানর থেকে মানুষ তৈরি হয়েছে। ব্রিটেনের এই বিজ্ঞানী সারা দুনিয়ার বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যোগাড় করেন। এর পরে তিনি তার এই বিবর্তনবাদ সিদ্ধান্তে আসেন এবং এ বিষয়ে বই লেখেন। তার বইতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন যুক্তি ও ব্যাখ্যা। কিন্তু কোথাও কোন প্রমান নেই। ওই বইটির লেখা পড়ে যদি ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিওরী মেনে নিতে হয় তবে ওই ভীন-গ্রহবাসী থিওরী কেন মানবেন না? ডারউইন তো লিখেছিলেন একটা বই ওদিকে তো ভীন-গ্রহবাসী থিওরী তো পুরো একটা লাইব্রেরী।, তাও আবার অডিও ভিডিও সহ। কোথায় দেড়শ বছর আগের ডারউইনের বিজ্ঞান মেনে বসে রয়েছেন অথচ আরো আধুনিক ভীন-গ্রহবাসী থিওরীর এর বিজ্ঞান মানছেন না কেন?
ওই বইটি ডারইন দেড়শ বছর আগে না লিখে আজকে লিখলে ওই ভীন-গ্রহবাসী থিওরীর মতনই লিখত – "এটা কি সম্ভব ?----যে বিবর্তনের মাধ্যমে সবকিছু তৈরি হয়েছে” আর তা না হলে, প্রমান না করে এমন আজগুবী থিওরী দেরার জন্য তার নামে মামলা/জরিমানা হয়ে যেত। এই মামলা/জরিমানার ভয়েই হিস্ট্রি টিভি চ্যনেলে বুদ্ধিজ়িবিরা তাদের থিওরী বলার সময় Is it possible ? ------ এমনভাবে বলে। তাছাড়া এই আমলে থাকলে ডারউইন আরো অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে তার ওই বইটা একটু অন্যভাবে লিখত।
এখন কথা হল, এই প্রমান না হওয়া থিওরী সারা বিশ্বে এক প্রকারের বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে ছড়িয়ে পড়ল কিভাবে। কারন প্রচারেই প্রসার। দেড়শ বছর আগে, মানুষ সহ সব প্রানী কিভাবে দুনিয়াতে এসেছে সে ব্যাপারে তেমন কোন থিওরী ছিল না। ডারঊইন সাহেব অনেক তথ্য ও উপাত্ত জোগাড় করেছেন, অনেক যুক্তি ও ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছেন। তার যুক্তিপুর্ন কথাগুলো তখনকার বিজ্ঞানীদের পছন্দ হয়েছে, বেশীর ভাগ বিজ্ঞানীই এটা মেনে নিয়েছে। তাছাড়া এই থিওরী প্রতিস্টা করা গেলে ধর্মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো যায়। ব্যস সেভাবেই এই থিওরী প্রচার ও প্রসার হয়েছে, হচ্ছে। ডারউনের থিওরীর চেয়ে অনেক বেশী তথ্যবহুল ও যুক্তিগ্রাহ্য এই ভীন-গ্রহবাসী থিওরী। ডারউইন তখন না জন্মে এখন জন্মালে তার দেওয়া থিওরীটা ভীন-গ্রহবাসী থিওরীর নীচে চাপা পড়ে যেত।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ একটি যুক্তিগ্রাহ্য ধারনামাত্র। এটা কোন প্রমানিত বিষয় নয়। এমন আরো অন্তত দশটা থিওরী বিজ্ঞান জগতে প্রচলিত আছে। ডারউইনের থিওরীটি সবচেয়ে পুরাতন ও সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত হয়েছে। যার ফলে এটাকে অনেকেরই বৈজ্ঞানিক সত্য বলে ভুল করেন। ডারউইন নিজে কখনো তার থিওরী প্রমান করেন নি। আজ পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী এটা প্রমান করতে পারেনি। সবাই সপক্ষে ব্যাখ্যা ও যুক্তি দিয়ে এই থিওরী আরো বিখ্যাত করছে মাত্র। মুক্তমনা নামধারী বড় বড় পন্ডিত নাস্তিকেরা এই থিওরী নিয়ে যে লাফালাফি করে সেটা দেখার মতন। অথচ তারা জানেন না বা জেনেও বলেন না যে – ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিওরীর কোন প্রমান নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওরে ভাই, দর্শক আকর্ষনের জন্যে বা ব্যবসায়ের জন্যে এসব চ্যানেল বিরাট সব কান্ড করে। আর নাস্তিকতার দিন শেষ হয়ে আসার কারনে নানান বিষয় আকড়ে তারা নিজেদেরকে এবং অনুসারীদের আটকে রাখার চেষ্টা করছে। এসব বিজ্ঞানীদের কিছু কথা শুনে হাসাহাসি করা ছাড়া আর কিছু করতে ইচ্ছা হয়না। এরা প্রাচীন কথা বলছে,অথচ এর চাইওে প্রাচীন..আরও পূর্বে এবং আরও পূর্বের বিষয় বাদ দিচ্ছে। ঘটনার পেছনের ঘটনা বর্ণনা করছে কিন্তু সর্ব প্রথমের ঘটনার খবর নেই বা এড়িয়ে যাচ্ছে বা গাজাখুরি কথা বলছে.....ঘটনার যে পর্যায়ে এসে একটি সুশৃঙ্খল ও মহা শক্তির প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে,সেখানে বিগব্যাং বলে কথা শেষ করে। ওরে চাচা, একবার বল না রে...তার পেছনে কি???
মন্তব্য করতে লগইন করুন