আই টি উপদেস্টার বেতন ও বিশ্ব রেকর্ডের হাতছানি
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০২ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৪১:৪১ রাত
বর্তমানে বহুল সমালোচিত মন্ত্রী জনাব আব্দুল লতিফের হজ বিষয়ক উক্তি সবারই জানা আছে। এ নিয়ে টানা হেচড়া কম হচ্ছে না। এসবের আড়ালে তার আরো অনেক কথা চাপা পড়ে গেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী পুত্র জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এর ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন – আপনারা জয়কে নিয়ে এত মাতামাতি করেন কেন? জয় কে? এক পর্যায়ে তিনি নাকি এও বলেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয় আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে মাসে ২ লাখ ডলার (১ কোটি ষাট লক্ষ টাকা )বেতন হিসাবে বাংলাদেশ সরকার থেকে পেয়ে থাকে। এটা জয়ের মাসিক বেতন। লতিফ সিদ্দিকী নিজেই এই বেতন অনুমোদন এবং সাইন করেন।
এই কথাটা কতখানি সত্য বা মন্ত্রী এই কথাটা আদৌ বলেছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করার উপায় আমারদের কাছে নেই। কারন আমরা বেশীরভাগ লো্কই সেই কথাটা নিজের কানে শুনিনি এবং এই টাকার লেনদেনও নিজের চোখে দেখিনি। এগুলো সবই পাওয়া যায় মিডিয়ার কল্যানে। যে ঘটনা দেখিনি বা জানিনা সেই বিষয়ে বোকার মতন অহেতুক বদনাম করব না। তাছাড়া, বড় মানুষের তো বড় বেতন হবেই। দেশের প্রধানমন্ত্রীর আই টি বিষয়ক উপদেস্টা। তার বেতন তো লাখ ডলার হবেই। তাই, আজ বরং উজ্জ্বল ভবিশ্যতের সম্ভাবনার কথা বলব।
কোটি ডলার আয় করে এমন মানুষ দুনিয়াতে অনেক আছেন। এদের বেশীর ভাগই ব্যাবসায়ী। এছাড়া এমন কোটি ডলার আয় করেন আন্তঃজাতিক মানের খেলোয়াড়, সঙ্গীত শিল্পী ও সিনেমার তারকারা। এদের আয় একেবারে কল্পনার অতীত। সবচেয়ে এগিয়ে আছে খেলোয়াড়। বেশ কয়েকজন নামকরা খেলোয়াড়ের বাতসরিক আয় কয়েক শত মিলিয়ন ডলার (এক মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) । সঙ্গীত শিল্পী মাইকেল জ্যাক্সন একবার ইংল্যান্ডে একটি দুই ঘন্টার কন্সার্টে ২০ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। হলিউডে বেশ ককেজন তারকা আছেন যারা একটি সিনেমাতে ১০-২০ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পান। চাকরী করে লক্ষ/কোটি ডলার বেতন পান এমন মানুষও আছে। এরাও আসলে তারকা কোম্পানীর বড় কর্মকর্তা। যেমন এপেল, ওরাকল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফী ইত্যাদি কোম্পানীর কর্মকর্তা।
এতক্ষন বললাম বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের মানুষদের কথা। এরা, বিশ্ব সেরা ব্যাবসায়ী, খেলোয়াড়, শিল্পী ও বিশ্ব সেরা কোম্পানীগুলোর কর্মকর্তা। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, এদের মধ্যে এমন কেউই নেই যার আয়ের উতস সরকারী তহবিল। এদের সবার আয়ের উতস বেসরকারী। সরকারী উৎসে আয়ের একটা নিয়ম নীতি আছে। একজনের সাথে আরেকজনের আয়ের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য হয় না। যুগ যত উন্নত হোক না কেন, বিদেশ সম্পর্কে আমাদের ধারনা এখনো সেই আগের মতনই আছে। দেশের মানুষ চিন্তা করে, আমেরিকাতে একজন শ্রমিক যদি মাসে ২ লাখ টাকা আয় করে তাহলে একজন উচ্চ শিক্ষিত অফিসার তো অন্তত মাসে ২০ লক্ষ টাকা আয় করার কথা। এটা সম্পুর্ন ভুল ধারনা। শ্রমিক ২ লাখ টাকা পেলে, অফিসার পায় ৪ লাখের নীচে। পার্থক্য অবশ্যই বিশাল, তবে সেটা আকাশ পাতাল নয়। আমেরিকাতে সরকারী বেতন কেমন হয়, এর একটা ধারনা দিচ্ছি।
সরকারী বা বেসরকারী চাকরীতে সবসময় বেতন হিসাব করা হয় বাতসরিক। সরকারী চাকরীতে সবচেয়ে বেশী বেতন হল ডাক্তার (সার্জেন) তাদের বাতসরিক আয় বছরে আড়াই লক্ষ ডলার। তার মানে, মাসে ২০ হাজার ডলার। হ্যা, এটা সবচেয়ে বেশী বেতন। আমেরিকাতে সেরা বেতনের তালিকাতে আই টি পেশা রয়েছে। পেশটি হল ইনফরমেশন সিস্টেম ম্যানেজার যার বাতসরিক বেতন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার। এটা দেশের সর্বোচ্চ বেতন না হলেও, আই টি পেশাতে এটা সর্বোচ্চ বেতন। মাসে ১১ হাজার ডলার। আই টি কন্সাল্টেন্ট বা উপদেস্টা বেতন পায় আরো কম , বছরে ৭০ হাজার ডলার (মাসে ৬ হাজার ডলার)। এগুলো সবই গড় বেতনের তালিকা। এর কম বেশী হতে পারে কিন্তু পার্থক্যটা আকাশ পাতাল হবে না। আমেরিকাতে একজন দক্ষ আই টি উপদেস্টার বেতন কত? বাড়িয়েই ধরছি – মাসে ১০ হাজার ডলার।
এখন আসি কোন রাস্ট্রপ্রধান এর আই টি উপদেস্টার ব্যাপারে। একজন আই টি উপদেস্টার কি কি কাজ করে। একজন রাস্ট্র প্রধানের আই টি উপদেস্টা কোন কাজে লাগে। বুয়েট এর কোন অভিজ্ঞ প্রফেসর কেন এই পদের জন্য নেওয়া হল না। এই সব জটিল বিষয়ে না গিয়ে সহজে বিষয়ে আসি। রাস্ট্র প্রধানের আই টি উপেদেস্টা তো অবশ্যই একজন সেরা আই টি বিশেষজ্ঞ। সেই কারনে তার বেতনও সাধারন আই টি দক্ষদের চেয়ে বেশী হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার কোন আই টি উপদেস্টা আছে কিনা জানিনা। যদি থাকে তাহলে তার বেতন কত হতে পারে? যে পেশায় সাধারন বেতন মাসে ১০ হাজার ডলার সেই পেশাতে প্রেসিডেন্ট এর আই টি উপদেস্টা কত গুন বেশী বেতন পাবেন? ২ গুন, ৩ গুন, ৫ গুন, ১০ গুন – কত গুন? আমেরিকাতে আকাশ পাতাল ব্যাবধানে বেতন দিলে খবর আছে। ওটা গনতন্ত্রের দেশ। বারাক ওবামা তার আই টি উপদেস্টাকে সাধারন বেতনের ১০ গুন বেশী বেতন দিলেও সেই বেতন হবে মাসে ১ লক্ষ ডলার যা কিনা আমাদের মন্ত্রী মহাদায়ের বর্ননা করা বেতনের অর্ধেক। অনেকে হয়ত বলতে পারেন আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের তুলনা হয় না। হ্যা, কথা ঠিক। আমেরিকার সাথে তুলনা করেই অর্ধেকের বেশী বানানো যাচ্ছে না। অন্য কোন দেশের সাথে তুলনা করলে বেতন সমান হবে?
এখানে তিনটি সম্ভাবনা আছে
এই সংবাদটি ভুয়াঃ এমন অনেক ভুয়া সংবাদ আমরা আগেও পেয়েছি। সাংবাদিকেরা ভুল তথ্য দিলে আমাদের এ ব্যাপারে কি বা আর করার আছে।
মন্ত্রীর তথ্য ভুলঃ এমন অনেক ভুল তথ্য আমরা আগেও পেয়েছি। কোন মন্ত্রী তাও আবার নিজেদের দলের মন্ত্রী, ভুল তথ্য দিলে আমাদের এ ব্যাপারে কি বা আর করার আছে।
বিষয়টি সত্যঃ এটি বিশ্বের সরকারী কোন উপদেস্টা পদে সর্বোচ্চ বেতন। অন্তত আই টি সেক্টরে এটা সর্বোচ্চ। আমরা যেমন বড় পতাকা বানিয়ে , বেশী লোক জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছি। তেমন আরেকটি রেকর্ডও আমরা করতে পারি এই বেতনের ব্যাপারে। গিনেস বুকে এমন রেকর্ডের জায়গা থাকলে আমরা এর জন্য আবেদন করতে পারি। World record for highest paid IT consultant । পিছিয়ে পড়া দেশে আই টি সেক্টরে এমন একটি অর্জন বিশ্বের দরবারে দেশের মুখ উজ্জল করবে। তাছাড়া এ থেকে এটাও বোঝা যাবে যে আমাদের দেশ সত্যই ডিজিটাল হয়েছে। সবচেয়ে বড় সুখের বিষয় হল –আর কেউ নন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নাতী নিজেই এমন গৌরভ অর্জন করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন।
সংবাদ সুত্রঃ http://www.bdmonitor.net/newsdetail/detail/200/93025
আমেরিকাতে সর্বোচ্চ বেতনের তালিকাঃ http://www.usnews.com/news/articles/2013/03/29/the-10-highest-paid-jobs-in-america
বিষয়: বিবিধ
২৮৮৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেতো বিপদে পড়েছে জয়কে নিয়ে মন্তব্য করাতে-
তা না হলে-
ইসলামের অবমাননা তো সরকারী কর্মসূচী-ই এখন,
এতে কারো কিছু হয়না!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
শাসন যন্ত্রের শক্তিমত্বায় বিভোর হয়ে কি পরিমান স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বাংলাদেশে- তার একটি ছোট্ট উদাহরণ এটা।জনতার কামাই লুটে খাওয়ার মহৌৎসব চলছে যেন।
বিশ্লেষণ ধর্মী সুন্দর পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
Thanks for sharing.
কিন্তু উপদেষ্টা এখনও পর্যন্ত কিকি উপদেশ দিয়েছেন তাতো জানতে পারলামনা!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন