ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:৪৫:৩৪ রাত
এক ব্লগার ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে ব্লগার আবু সাইফ ভাই অত্যান্ত সুন্দর একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এতে অনেকের অনেক ধরনের সন্দেহ দূর হয়েছে। উনি দেখিয়েছেন যে , ইসলাম মানুষের জীবন সহজ করেছে। উনি দেখিয়েছেন যে কি কি বিশেষ সমস্যা থাকলে বা কোন কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ জায়েজ। জন্ম নিয়ন্ত্রণ ইসলামে ঢালাওভাবে জায়েজ নয়, বিশেষ কারনে জায়েজ। আমাদের আশেপাশের তো দেখা যায়, ইসলামিক ব্যাক্তি সহ সবারই ২-৩ জন সন্তান আছে। এদের সবারই কি ঐ বিশেষ সমস্যাগুলি আছে? দেশের সব লোকের তো একসাথে ওই সমস্যাগুলো থাকতে পারে না। এটা দিবালোকের মতন সত্য, মানুষ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পরিবার ছোট রাখার জন্যই জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ সমস্যা বা কারণগুলি শুধুমাত্র বিশেষ ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। সারা দেশের লোক পরিবার ছোট রাখতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে । তাদের আর কোন বিশেষ কারন নেই।
অর্থাৎ- সেই প্রশ্ন গুলো কিন্তু থেকেই গেল।
- ইসলামে জায়েজ নয় এমন কাজ (জন্ম নিয়ন্ত্রণ) করে আমরা কি পাপ করছি?
- এই পাপ করা বাদ দিলে তো আমার ঘরে ১০-১২ জন ছেলে মেয়েতে ভরে যাবে। আমি এত বড় সংসার কিভাবে চালাব?
- জন্ম নিয়ন্ত্রণে বাধা দিয়ে আমার সংসার বড় বানিয়ে দিয়ে ইসলাম আমার জীবন সহজ করছে নাকি কঠিন করছে?
আসুন, প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজে দেখি। জন্ম নিয়ন্ত্রণ করাটা তো অনেক পরে, “জন্ম নিয়ন্ত্রণ” কথাটাই অনৈসলামিক ও অবাস্তব। কেউ কি কোনদিন “মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ” বলে কোন কথা শুনেছেন? জন্ম ও মৃত্যু দেবার মালিক আল্লাহ, এর কোন নিয়ন্ত্রণ হয় না। একজনের যখন জন্মানোর কথা তখন জন্মাবে, যখন মরার কথা তখন মরবে। এর আবার নিয়ন্ত্রণ কি?
জন্ম ও মৃত্যু এই দুটি হল দুনিয়াতে প্রবেশ ও প্রস্থান। একটি ৫ বছরের শিশু যখন প্রশ্ন করে – বাচ্চাটি কোথা থেকে এল? তখন তাকে কিন্তু আমরা আসল কথাটি না বলে অন্য কিছু বলে বুঝ দিয়ে রাখি। অনেকে এও বলে যে হাসপাতালে বাচ্চা কিনতে পাওয়া যায়। কারণ, বাচ্চা কিভাবে হয় , সেই প্রক্রিয়াটি ৫ বছরের শিশুকে বললে সে বুঝতেই পারবে না। ওই প্রক্রিয়া বোঝার মতন ক্ষমতাই শিশুটির নেই। সৃস্টির বিশাল রহস্যের ব্যাপারে আমাদের জ্ঞানও ওই ছোট শিশুটির মতন। কিভাবে একজন মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানো হয় সেটা বোঝার মতন ক্ষমতা আমাদের নেই। শিশুটি যেমন জানে যে হাসপাতালে বাচ্চা কিনতে পাওয়া যায়। আমরাও তেমন জানি যে নারী-পুরুষের মিলনে বাচ্চা জন্ম হয়। আমরা জানি, কয়েক ফোটা পানি থেকে একজন পরিপূর্ণ মানব শিশু তৈরি হয়। আসলে এর পেছনে কি জটিল প্রক্রিয়া আছে, কি বিশাল সৃস্টি রহস্য আছে, সেটা আমরা জানিই না। সেটা জানলে আমরা “জন্ম নিয়ন্ত্রণ” কথাটাই বলতাম না। জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা এই নিয়ন্ত্রণ করার চেস্টা করি মাত্র। কত মানুষ এত চেস্টা করেও একটি সন্তান লাভ করতে পারছে না। আবার কত মানুষ ইচ্ছা না থাকলেও সন্তান লাভ করছে। তাছাড়া, জন্ম নিয়ন্ত্রণের সামগ্রী সব সময় কাজ করে না। জন্ম বন্ধ করার একমাত্র সম্পূর্ণ কার্যকর পদ্ধতি হল – অস্ত্রপচার করে বন্ধা হয়ে যাওয়া। এটা আসলে ইচ্ছে করে প্রতিবন্ধী হয়ে যাবার মতন একটা ব্যাপার। এটা কোন নিয়ন্ত্রণ নয়। এটা হল ধংস করা।
বোঝা গেল যে জন্ম ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা এর চেস্টা করি মাত্র। হ্যা, এই চেস্টা করাটা ইসলামে হারাম। জন্ম বা দুনিয়াতে পাঠানো ব্যাপারে ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর কাছে। সেই জন্মকে নিয়ন্ত্রণ করার চেস্টা করার অর্থ হল আল্লাহর সাথে পাল্লা দেওয়া (নাউজুবিল্লাহ)।
এই সামান্য ব্যাপারটি কোরআন ও হাদিস নিয়ে রিসার্চ করার আগেই বোঝা যায়। এক কথায় – জন্ম নিয়ন্ত্রণ হারাম। একটি হারাম কাজ প্রতিকুল পরিবেশে বা বাধ্য হয়ে করার অনুমতি থাকে। উদাহরণ স্বরূপ- কোন অসুস্থ ব্যাক্তির রোগ মুক্তির জন্য যদি কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার এমন কোন ওষুধ দেয় যাতে হারাম কিছু (যেমন মদ, হারাম পশুর চর্বি) মিশ্রিত আছে এবং সেটাই যদি একমাত্র চিকিতসা হয় তাহলে সেই ব্যাক্তির জন্য সেটা খাওয়া যায়েজ। তেমনি বিভিন্ন প্রতিকুলতায় বা বাধ্য হয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণের চেস্টা করাটাও গ্রহণযোগ্য। কোন কোন পরিস্থিতিতে এমন করা যায়েজ সেটার একটা তালিকা আবু সাইফ ভাই দিয়েছেন। তালিকাটা আরো দীর্ঘ হতে পারে। কিন্তু আমরা সেসব খুটিনাটি আলোচনায় না গিয়ে আমাদের মুল সমস্যায় ফিরে আসি।
এটা স্পস্ট যে এই হারাম জন্ম নিয়ন্ত্রণ কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই আমাদের দেশে ঢালাওভাবে করা হচ্ছে। যার কাছে পরামর্শের জন্য যাবেন , সে বলবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ হারাম। অথচ নিজেই সেটা করছে। আর যে ইসলামের নিয়ম মানছে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ করছে না, তার বড় সংসারের অভাব আর দুর্দশাও সবার চোখে পড়ে। মানুষ তাহলে কি করবে? ইসলামের নিষেধ মেনে দুর্দশা ঘাড়ে নিবে নাকি ইসলামের নিষেধ অমান্য করে সুখী পরিবার গড়বে? এটাই আমাদের মূল সমস্যা। জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যত প্রশ্ন ওঠে তার মুল কারণও এটি।
আল্লাহ দুনিয়া বানিয়েছেন। সেই দুনিয়াতে মানুষকে পাঠিয়েছেন। দুনিয়াতে মানুষ কি অনেক বেড়ে গেছে? এক গবেষনায় বেরিয়েছে যে আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের সমান সাইজের একটি ৪তলা দালান বানাতে পারলে , সারা দুনিয়ার মানুষকে ওই দালানে রাখা যাবে। টেক্সাস এর আকার বাংলাদেশের প্রায় ৪গুন। অর্থাৎ, ৪টি বাংলাদেশে সমান সাইজের ৪তলা দালানের ভেতরে সারা দুনিয়ার মানুষ রাখা যাবে। বাকী দুনিয়া খালি পড়ে থাকবে। এত বড় দালান বানানো সম্ভব নয়। তুলনা করার জন্যই বলা। এই তুলনা থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে দুনিয়ার জনসংখা আসলে মোটেই বেশী নয়। জনসংখা বেশী মনে হয় কারণ আমরা সমানভাবে সব যায়গায় থাকি না। কোন ছোট যায়গায় কোটি লোকের বসবাস, আবার বড় যায়গায় কয়েক হাজার লোক থাকে। আল্লাহ দুনিয়া বানিয়ে, এখানে মানুষকে পাঠিয়েছেন। মানুষ সেই দুনিয়াকে ভাগ করে দেশ বানিয়েছে। বানিয়াছে সীমানা। এক দেশ হতে সহজে যাওয়া যায় না। বাংলাদেশে ১৫ কোটি লোকের বসবাস, ওদিকে বাংলাদেশের ৫০ গুন বড় দেশে অস্ট্রেলিয়াতে লোকসংখা মাত্র ২ কোটি। মানুষ চাইলেও সমানভাবে ছড়িয়ে ছটিয়ে থাকতে পারছে না। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া কঠিন। আরো কঠিন সেখানে স্থায়ীভাবে থাকা। বরিশাল থেকে যেভাবে সহজে লঞ্চে উঠে ঢাকায় যাওয়া যায়, সেভাবে অন্য কোন দেশে সহজে যাওয়া গেলে জনসংখার সমস্যা থাকত না। হ্যা, রিজিকের মালিক আল্লাহ। কিন্তু সেই রিজিক তিনি সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে রেখেছেন। আমাদের সমাজে যেমন অল্প কিছু মানুষ প্রচুর সম্পদ দখল করে বসে ক্ষমতাবান হয়েছে । ঠিক সেভাবেই বিশ্বের অনেক দেশ এভাবে ক্ষমতাবান হয়েছে বড় যায়গা দখল করে।
মোট কথা, আল্লাহ আমাদেরকে এই গোটা দুনিয়াতে থাকতে দিয়েছেন । কিন্তু আমরা বন্দি হয়ে আছে ছোট এক দেশে। আমাদের জনসংখা বাড়বে আর আমরা এই দেশে বন্দি হয়ে থাকব। আমরা সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে থাকতে পারলে পরিবার ছোট করার চিন্তাই মাথায় আসত না। বাংলাদেশে ২টি সন্তান যথেস্ট। চীনে একটির বেশী সন্তান হলে জরিমানা। ওদিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে সন্তানের জন্য বিভিন্ন ভাতা দিয়ে মানুষকে উতসাহিত করে বেশি সন্তান উতপাদন করতে। আমি নিজে এমন অনেককে দেখেছি যার ৪-৫ টি বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাদের ভাতাতেই তার সংসার চলে যায়, নিজেকে কিছু করতে হয় না। আমাদের অর্থ সম্পদ সঠিক ভাবে বন্টন হয় না। যায়গা সঠিক ভাবে বন্টন হয় না। কাজেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বড় সংসার চালানো যায় না। আমাদের হাত পা বাধা। আমাদের পরিবার ছোট করার চেস্টা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
ইসলামের নিয়ম কানুন বানানো হয়েছে ইসলামিক সমাজ, ইসলামিক দেশ তথা ইসলামিক দুনিয়ার জন্য। চোরের হাত কেটে দেওয়াটা ইসলামের নিয়ম। বাংলাদেশে কিন্তু এই নিয়ম চালানোর উপায় নেই। কারন অনেক মানুষের দারিদ্রতা এত বেশী যে বাধ্য হয়ে চুরি করতে হয়। ইসলামিক নীতিমালা সঠিকভাবে পালন করে যে দেশে, সেই দেশে কাউকে চুরি করতে হবে না। এজন্যই, যে চুরি করে তার এত বড় শাস্তি। ইসলামিক নীতিমালা পালন করা দুনিয়াতেও কাউকে পরিবার ছোট করার চিন্তা করতে হবে না। কাউকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে না। আমারা এমন নিয়ন্ত্রণ করি কারন আমরা না পারছি দুনিয়াতে ছড়িয়ে যেতে, না পারছি দুনিয়াকে ইসলামিক বানাতে। তাই বাধ্য হয়ে , জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। আমাদের হাত পা বাধা।
উপসংহারঃ জন্ম ও মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। মানুষ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, চেস্টা করে মাত্র। এই নিয়ন্ত্রণ করার চেস্টা করাটাই হারাম । কিন্তু বিশেষ কারণে এমন করা যায়েজ আছে। আল্লাহর দুনিয়াতে মানুষ ইচ্ছেমতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারলে জনসংখা কোন সমস্যা হোত না। আমারা ১৫ কোটি লোক, একটি ছোট দেশে বন্দি হয়ে আছি। এখানে লাগামহীনভাবে জনসংখা বাড়ালে আমাদের দারিদ্রতাই বাড়বে। আমাদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ যায়েজ কিনা সেই ফতোয়া কোন ইসলামী বিশেষজ্ঞ দিতে পারবেন। তবে, আমার মতন বিশেষভাবে অজ্ঞ ব্যাক্তির কথা হল – পরিবেশ ও পরিস্থিতির চাপে পড়ে, বাধ্য হয়েই আমরা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর মতন হারাম কাজ করছি। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
বিষয়: বিবিধ
৩৮৩৮ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"পরিবেশ ও পরিস্হিতির চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই জন্ম নিয়ন্ত্রণের মতো গর্হিত কাজ বাংলাদেশে করতে হচ্ছে।"
এ হিসেবে তা জায়েয বলেই প্রতিয়মান হয়।
যুক্তিভিত্বিক সুন্দর আলোচনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনার কথায় যুক্তি আছে৷ আবার আল্লাহ বলেন,' তোমাদের স্ত্রীগন তোমাদের শস্যক্ষেত্র৷সেখানে এস যেমন খুশী'৷ অনেকে মনে করেন যেহেতু শস্যক্ষেত্র অতএব, এস নয়, ফষল আন যেমন খুশী৷আরবীতে আনো বলতে, ই'তে বলতে হয়৷ যার অর্থ হয় নিয়ে এস৷ তাই যদি হয় তবে বিষয়টির জন্য ফাঁক রাখা হয়েছে৷ এখন দেখতে হবে সহীহ হাদিশ৷
পরিবেশ ও পরিস্থিতির চাপে পড়ে, বাধ্য হয়েই আমরা, জন্ম নিয়োন্ত্রন এর মতন হারাম কাজ করছি। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। যে কোন ব্যাপারে আমার জানার কৌতুহল একটু বেশী আপনার কাছে আমি আর একটু জানতে চাচ্ছি ।
এই আমরা বাধ্য এই বাধ্য বলতে আমি আমাদের দুনিয়াবী লোভ লালসা বুঝতেছি এখন এই যে দুনিয়াবী লোভ লালসায় মত্ত হয়ে আমরা হারাম কাজে লিপ্ত হচ্ছি এখন যারা ইসলামকে মানেন না আমি তাদের কথা বলছি না । আমরা মানে ধরেন আমিই ইসলামের অন্যান্য দিক গুলো আমি ফলো করছি শুধু এই একটা জায়গায় হারাম কাজে লিপ্ত এখন এই এই হারামে লিপ্ত থাকার কারনে আমার অন্যান্য আমল গুলো কি নষ্ট হবে ?জানি আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করতে পারেন ।
আমি এটাই জানতে যাচ্ছি আপনার দৃষ্টিতে এটাকে কি ভাবে দেখেন ?
সীমাবদ্ধতা আছে অনেক,সে আমিও জানি! কিন্তু আপনার উপরের কথাটি বলে যদি আল্লাহর কাছে পার পাওয়া যায়, তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু পার পাওয়া যাবে কি????
স্রোতের বিপরীতে দাড়ানোই আমাদের কাজ! শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও আমরা সব করে যাচ্ছি, যার ফল স্বরুপ অত্যাচার নির্যাতন সয়ে যাচ্ছি। জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দেয়া কি আমাদের কাজ?????
যদি , তবে কেন অসুস্থতা ব্যাতিরেকে অন্য কোন কারণে তা ফলো করব? স্ত্রী যদি রাজি না হয়, তাতে আপনাকে জবাব্দিহি করতে হবে বলে মনে হয়না, তবে আপনি যদি বিনা কারণে শুধু সামাজিকতার দোহাই দিয়ে, মান সম্মান রক্ষার ভয়ে সন্তান না নেন, তার জন্যো কি কি আপনাকে জবাব্দিহি করতে হবেনা? ব্যাখ্যা করবেন দয়া করে।
আপনার আলোচনা অনেক ভাল লেগেছে। এবং আমি খুশি হয়েছি আমার লিখার জবাব দেয়ার চেষতা করেছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ,। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
যদিও আপনার বিশ্লেষণ অনেক ব্যাপক ও গভীর, কিন্তু উপসংহারে এসে হোঁচট খেলাম, একমত হতে পারলাম না বলে দুঃখিত!
আপনি বলেছেন-
আমার বোধগম্য হলোনা যে কেন আপনি এমন বিপরীত উপসংহার টানলেন!
অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবও তাঁর প্রথম লেখায় জন্মনিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে এবং শেষের লেখায় জন্মনিয়ন্ত্রণের সপক্ষে বলেছেন- সেটাই আপনাকে প্রভাবিত করেছে কিনা ভাবছি!
তাঁর পরের লেখাটি জামায়াত-শিবিরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে- বিশেষতঃ ছাত্রী ও মহিলা জামায়াতে, যার কারণে আজ গাজী সালাউদ্দিন ও আফরা দের মত অনেককেই প্রশ্ন করতে দেখা যায়
যাহোক, মূল কথা ওজর নিয়ে!
কোনটি ওজর হিসেবে গ্রহনযোগ্য এবং কোনটি নয় তা আল্লাহতায়ালা-ই ভালো জানেন! মানুষকে শান্ত করার জন্য যদি ওজর খাড়া করা হয় তবে তা ডাহা মিথ্যা, এজন্য আখেরাতে পস্তাতে হবে! তখন এ পার্থিব সুখ-সুবিধার আকাঙ্খা ও সামাজিক স্ট্যাটাস কাজে আসবেনা- যদিও এটাই এখন অনেকের কাছে অগ্রাধিকারযোগ্য!
তবে ওজরের সত্যাসত্য যাচাই করা অপরের কাজ নয়- যার যার নিজেদেরই করতে হবে আদালতে আখেরাতে জবাবদিহিতার জন্য!
যে দারিদ্র ও বাধ্য হওয়ার কথা বলা হয়েছে সেটা ওজর হিসেবে গ্রাহ্য নয়!
হয়তো জীবনযাপনের মান ভালো হবেনা, হয়তো খুব কষ্ট ও দারিদ্রের মধ্য দিয়ে সন্তানদের বড় করতে হবে! স্ট্যাটাস ও সামাজিকতায় অনেক কিছুই করা সম্ভব হবেনা!
আমার বাস্তব পর্যবেক্ষণ দিয়ে দেখেছি ও দেখছি- দু-তিন হালি সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করা পরিবার কিভাবে এলাকার মানুষের কাছে "আদর্শ পরিবার" হয়ে উঠেছে! ছেলেমেয়েরা ৮/৯বছর বয়স থেকেই স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করতে শিখেছে, তথাকথিত লোকলজ্জা আর সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে কাজ শিখেছে- কাজ করেছে এবং শিক্ষা ও চরিত্রের সম্পদে বিত্তশালী হয়েছে! একসময় যখন তারা নিজেরাই সংসারী হয়েছে, বাবা-মাকে দুনিয়াতেই জান্নাত দিয়েছে!
আসল সমস্যা দারিদ্র নয়- আসল সমস্যা শিক্ষা ও মানসিকতায়! তথাকথিত স্ট্যাটাস ও শহুরে ভোগবিলাসী সভ্যতাই আমাদের এমনতর মানসিকতা তৈরী করেছে!
কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া এমন ক'জন ছেলে-মেয়ে পাওয়া যাবে যারা নিজে উপার্জন করে নিজের খরচ চালায় এবং সংসারে দেয়!
নেই কি? অবশ্যই আছে, আমি জানি!
এসব ছেলে-মেয়ে [কারো ভাই-বোন-সন্তান] যখন ছুটিতে বাড়ি যায়, খুব সামান্য কিছু নিয়ে যায় বাবা-মা ও ভাই-বোনদের জন্য, কিন্তু তাতে যে ভালোবাসা মেশানো থাকে তা স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়েরা কল্পনাই করতে পারেনা!
দারিদ্রকে খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে- তা না হলে জীবনকে, মানুষকে বুঝতাম না হয়তো!
অধিক সন্তান সমস্যা নয়- বরং সম্পদ! আমাদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে! অ-নে-ক অ-নে-ক সন্তান চাই, যারা শুধু মুখ ও পেট নিয়ে জন্মায়না, সাথে একটা মাথা এবং দুটো হাতও থাকে!
রিজকের দায়িত্ব নিজ হাতে না নিয়ে বরং আল্লাহর আদেশপালন, পার্থিব কর্তব্যপালন ও সন্তানদের সচ্চরিত্র শিক্ষাদানে মনোনিবেশ করলেই যেমন সংসারে সুখ-স্বচ্ছলতা আসবে তেমনি মুসলমানদেরও প্রকৃত কল্যান ও বিজয় আসবে!
আল্লাহতায়ালা বলেন-
যে আল্লাহর সীমাসমূহ লংঘন করবে সে নিজেই নিজের ওপর জুলুম করবে৷
হে সাক্ষীরা, আল্লাহর জন্য সঠিকভাবে সাক্ষ দাও৷ যারা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে তাদের জন্য উপদেশ হিসেবে এসব কথা বলা হচ্ছে৷ যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন৷ এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না৷
যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট৷ আল্লাহ তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন৷
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার কাজ সহজসাধ্য করে দেন৷
এটা আল্লাহর বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন৷ যে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার গোনাহসমূহ মুছে ফেলবেন এবং তাকে বড় পুরস্কার দেবেন৷
সুরা তালাক ১ম রুকু
দারিদ্রের আশংকায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না৷ আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও৷ আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ৷ সুরা ইসরা ৩১আয়াত
দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো৷
প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যাবে না৷ সুরা আনআম ১৫১আয়াত
দালিলিক সুন্দর আলোচনার জন্যে জাযাকাল্লাহ আপনাকে।কিতাবের নাম মনে নেই আমার- ইমাম গাজ্জালীর মতে-সৌন্দর্য বজায় রাখতেও জন্ম নিয়ন্ত্রণ বৈধ।
এ ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি......।
আমার মনে হয় এসবি ব্লগের মত এ ব্লগেও কিছু মুফতী, মুহাদ্দিস ব্লগীং করলে ভালো হতো। :
অধিক সন্তান সমস্যা নয়- বরং সম্পদ! আমাদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে! অ-নে-ক অ-নে-ক সন্তান চাই, যারা শুধু মুখ ও পেট নিয়ে জন্মায়না, সাথে একটা মাথা এবং দুটো হাতও থাকে!
এই কথায় এসে থেমে গেলাম, এই কথাটির জন্যোই যেন অপেক্ষা করছিলাম!!!!আপ্নাকে অনেক ধন্যবাদ সাইফের বাবা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন