অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনার সমাহার
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩০:০৯ রাত
কোন কারন ছাড়া, অনাকাঙ্ঘিত ভাবে যে ঘটনাগুলি ঘটে তাকে কাকতালীয় বলে। সামান্য কাকতালীয় ঘটনা সবার জীবনেই ঘটে। যেমন, আপনি একটা জিনিসটি সারাদিন খুজে পেলেন না। হটাত দেখলেন সেই জিনিসটি, কোন কারন ছাড়াই, কেউ আপনার জন্য নিজে থেকেই নিয়ে আসল। এমন কাকতালীয় ঘটনা স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুত কিছু কাকতালীয় ঘটনা ঘটে যেটা একেবারে বিশ্বাস করাই কঠিন। বিশ্ববিখ্যাত এমন কিছু কাকতালীয় ঘটনার সমাহার আছে এই লেখাতে।
লিঙ্কন ও কেনেডী – বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কাকতালীয় ঘটনা হল আমেরিকার এই দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট, আব্রাহাম লিঙ্কন ও জন এফ কেনেডী। এদের ঘটনাটা হয়ত অনেকেই জানেন। এটা দিয়েই শুরু করছি
-কেনেডী (Lincoln) ও লিঙ্কন (Kennedy) এই দুটো নাম লিখতে ৭টি অক্ষর লাগে
-লিঙ্কন কংগ্রেস এ নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৮৪৬ সালে, কেনেডী হয়েছিলেন ১৯৪৬ সালে (ঠিক ১০০ বছর পরে)
-লিঙ্কন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৮৬০ সালে, কেনেডী হয়েছিলেন ১৯৬০ সালে (ঠিক ১০০ বছর পরে)
-দুজনেই নাগরিক অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন
-দুজনের স্ত্রী ই হোয়াইট হাউজে থাকাকালীন সময়ে সন্তান হারান
-লিঙ্কনের সেক্রেটারীর নাম ছিল কেনেডী আবার কেনেডীর সেক্রেটারীর নাম ছিল লিঙ্কন
-দুজনকেই শুক্রবারে হত্যা করা হয়
-দুজনকেই মাথায় গুলি করা হয়
-লিঙ্কন ফোর্ড কোম্পানীর থিয়েটারে নিহত হন আর কেনেডী নিহত হয় ফোর্ড কোম্পানীর গাড়ীতে
-দুজনের হত্যাকারীই দেশটির দক্ষিন এলাকার অধিবাসী
-দুজনেরই পরবর্তী ক্ষমতাশীনও দক্ষিন এলাকার অধীবাসী
-লিঙ্কন এর পরে ক্ষমতায় আসেন এন্ড্রু জনসন, কেনেডির পরে ক্ষমতায় আসেন লিন্ডন জনসন। এই দুই জনসনের জন্মসাল যথাক্রমে ১৮০৮ ও ১৯০৮ (ঠিক ১০০ বছর)
-লিঙ্কন ও কেনেডীর হত্যাকারী দুজনেরই নাম ১৫ অক্ষরের
-লিঙ্কনের হত্যাকারী থিয়েটার থেকে পালিয়ে গুদামে লুকিয়ে থেকে ধরা পরে। কেনেডীর হত্যাকারী গুদাম থেকে পালিয়ে, থিয়েটারে লুকিয়ে থেকে ধরা পড়ে।
-এই দুই হত্যাকারীকেও বিচারের আগেই অজ্ঞাত লোকেরা হত্যা করে
অভিশপ্ত গাড়ীঃ ১৯৫৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে, জেমস ডীন তার নিজের গাড়ী (Porsche) চালানোর সময়, দুর্ঘটনায় মারা যান। এই ঘটনার পরে, সেই গাড়ীটি আরো অনেক দুর্ভোগ বয়ে আনে।
-দুর্ভাগা গাড়িটি টেনে গ্যারেজে আনার পরে এর ইঞ্জিন খুলে পরে। এতে এক মোটর ম্যাকানিক এর পা পিস্ট হয়ে যায়।
পরে একসময় দুজন আলাদা ব্যাক্তি গাড়িটির ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ কিনে, নিজেদের রেসিং কারে লাগানোর জন্য। এই দুজনে, একই “কার রেস” এ নিহত হয়।
-জেমস ডীনের হতভাগ্য সেই গাড়ীটি একসময় সম্পুর্ন ঠিক করে এক গ্যারাজে রাখা হয়। একদিন সেই গ্যারেজ আগুন লেগে পুড়ে যায়।
-পরে দুর্ভাগা এই গাড়িটিকে এক প্রদর্শনীতে (ঝুলিয়ে) রাখা হয়। সেখান থেকে গাড়িটি পড়ে গিয়ে এক কিশোরের কোমর ভেঙ্গে দেয়।
-এর পরে গাড়ীটিকে একটি ট্রাক বহন করে আরেক শহরে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ট্রাকটি, একটি দোকান ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে যায়।
-সবশেষে রহস্যজনকভাবে ১৯৫৯ সালে গাড়ীটি কোন কারন ছাড়াই ভেঙ্গে ১১ টুকরো হয়ে পড়ে। এ সময় গাড়ীটিকে, স্টিলের তৈরি এক বিশেষ প্লাটফর্মের উপরে দাড় করিয়ে রাখা ছিল।
অপেক্ষমান বুলেটঃ হেনরী জিগল্যান্ড, ১৮৮৩ সালে তার প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। মেয়েটি এই দুঃখে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনাতে মেয়েটির ভাই দিশেহারা হয়ে যায়। প্রতিশোধ নিতে, সে জিগল্যান্ডকে খুজে বের করে, প্রথমে তাকে গুলি করে, এর পর নিজেকে গুলি করে মারা যায়। ভাই বোন দুজনেই মারা গেলেও অবিশ্বাস্যভাবে বেচে যায় জিগল্যান্ড। বুলেটটি তার গায়ে সামান্য আচড় কেটে, পাশের একটি গাছের ভেতরে গেথে যায়। জগল্যান্ড নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে। মনে করে যে সে মৃত্যুকে এড়াতে পেরেছে।
কয়েক বছর পরে কোন এক অজানা কারনে জিগল্যান্ড নিজেই বিশাল সেই গাছটি (যেটাতে বুলেটটি গেথে ছিল) কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। গাছটির কান্ড (দেহ) এত বড় ছিল যে সেটা না কেটে, ডিনামাইট ব্যাবহার করে গুড়িয়ে ফেলাটা বেশী সহজ মনে হয়। এই কাজটি করার সময়, সেই ঐতিহাসিক বুলেটটি উড়ে গিয়ে জিগল্যান্ডের মাথার ভেতরে ঢুকে যায়। এতে জিগল্যান্ড প্রান হারায়।
মার্ক টোয়াইন ও হ্যালির ধুমকেতুঃ আমেরিকার বিখ্যাত উপন্যাসিক মার্ক টোয়াইনকে অনেকেই চিনেন। হ্যালির ধুমকেতু তো এর চেয়ে বেশি পরিচিত। এই ধুমকেতুটি প্রতি ৭৫ বছর পর আকাশে দেখা যায়। মার্ক টোয়াইন জন্মগ্রহন করেন ১৮৩৫ সালে। সেই বছর আকাশে হ্যালির ধমকেতু দেখা গিয়েছিল। এর পরে ৭৫ বছর পরে ধমকেতুটি আবার দেখা যায় ১৯১০ সালে। এই বছরই মার্ক টোয়াইন মারা যান। মৃত্যুর এক বছর আগে এ ব্যাপারে তিনি ভবিশ্যতবানীও করেছিলেন। বলেছিলেন – আমি এসেছিলাম হ্যালির ধুমকেতুর সাথে। আগামী বছর সেই ধুমকেতু আবার আসছে, হয়ত আমাকে নিয়ে যেতে।
হোটেলে ফেলে যাওয়া বস্তুঃ ১৯৫৩ সালে টিভি রিপোর্টার ইভর কাপসিনেট, রানী ২য় এলিজাবেথের উপরে একটি ফিচার করতে লন্ডন যান। সেখানে এক হোটেল রুমে কিছু ফেলে যাওয়া পোষাকের একটি প্যাকেট পান। দেখা যায় সে প্যাকেটের উপরে হ্যারী হানিন এর নাম লেখা আছে। হ্যারী ছিলেন সেই সময়ের একজন বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড়, এবং কাপসিনেটের বেশ ভাল বন্ধু। এত লোক থাকতে, সে নিজেই বন্ধুর ফেলে যাওয়া আবিস্কার করে অবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে এই মজার ঘটনাটি তাকে জানাবে। কিন্তু কয়েকদিন পরে তার আসল অবাক হবার পালা। বন্ধু হ্যারীর একটি চিঠি তার ঠিকানায় আসে। সেই চিঠিতে লেখা ছিল যে, হ্যারী প্যারিসের এক হোটেল রুমে কাপসিনেট এর নাম লেখা একটি টাই খুজে পেয়েছে।
টাইটানিক এর ভবিশ্যতবানীঃ টাইটানিক জাহাজের পরিনতির কথা আমরা সবাই জানি। যে জাহাজটি কখনোই ডুববে না বলে ধারনা করা হয়েছিল, সেই জাহাজ ১৯১২ সালে, প্রথম যাত্রাতেই মাত্র ৪ দিনের মাথায় বরফ খন্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গেল। পর্যাপ্ত লাইফ বোট না থাকায় অধিকাংশ যাত্রীই মারা যায়। ২২০০ যাত্রীর মধ্যে ১৫০০ যাত্রী মারা যায়। এই ঘটনার ১৪ বছর আগে ১৮৯৮ সালে, মরগান রবার্টসন নামক এক লেখক এমন ঘটন সম্বলিত এক কাল্পনিক উপন্যাস লেখেন। সেই উপন্যাসের নাম ছিল “ফিউটিলিটি”। এই উপন্যাসে একটি জাহাজ ডোবার ঘটনা রয়েছে, যা কিনা প্রায় হুবহু টাইটানিক এর বাস্তব ঘটনার মতন। ।উপন্যাসের জাহাজ়ের নাম ছিল টাইটান, যা কিনা টাইটানিকের খুব কাছাকাছি নাম। উপন্যাসের জাহাজ় ডুববে না বলে ধারনা করা হয়েছে, বাস্তব টাইটানিকেও তাই। উপন্যাসের জাহাজ় ডোবে এপ্রিল মাসে। বাস্তব টাইটানিকও ডোবে এপ্রিল মাসে। উপন্যাসের জাহাজ়ে যাত্রী ছিল ৩০০০, বাস্তব টাইটানিকের যাত্রি ছিল ২২০০। উপন্যাসের জাহাজ়ে লাইফ বোট ছিল ২৪টি। বাস্তব টাইটানিকে লাইফ বোট ছিল ২০টি। বইটি পড়ে মনে হয় যেন এতে টাইটানিক ডোবার ভবিশ্যতবানী করা হয়েছে।
বাল্যকালের বইঃ আমেরিকান মহিলা উপন্যাসিক “এনে পারিশ” একবার ফ্রান্সে এক পুরাতন (ব্যবহার করা) বইয়ের দোকানে ঘোরাঘুরি করছিলেন। হটাত তার চোখে পড়ে একটি শিশুতোশ বই “জ্যাক ফ্রস্ট ও অন্যান্য গল্প”। এই বইটি বাল্যকালে তার প্রিয় বই ছিল। তিনি বইটি কিনে নিলেন। এর পরে আমেরিকাতে ফিরে এসে তার স্বামীকে বইটি দেখিয়ে বাল্যকালের স্মৃতি চারন করছিলেন। হটাত দেখতে পেলেন বইটির ভেতরের পাতায় তার নিজের নাম ঠিকানা লেখা রয়েছে। অর্থাৎ এটা তার নিজের ছোটবেলার সেই বইটি।
রাজার ছায়াঃ ১৮০০ সালের শেষের দিকে ইটালীর মনজা অঞ্চলের রাজা “উম্বারটো” একদিন আর দলবল নিয়ে এক রেস্টুরেন্টে আসলেন। রাজাকে দেখে রেস্টুরেন্টের মালিক নিজেই অর্ডার নিতে আসল। লোকটি আসার পরে রাজা অবাক হয়ে দেখলেন যে লোকটির চেহারা, শারিরীক গঠন এসব দেখতে রাজার মতন। আগ্রহী হয়ে রাজা তার আরো খোজ খবর নিলেন। এতে বেরিয়ে আসল অবিশ্বাস্য তথ্য। রাজা ও রেস্টুরেন্ট মালিক দুজনের জন্ম তারিখ একই – ১৪ই মার্চ ১৮৪৪। দুজনেই একই শহরে জন্মেছিলেন। দুজনেরই স্ত্রীর নাম মার্গারেট ছিল। রাজা যেদিন ক্ষমতালাভ করেন, সেই দিনেই রেস্টুরেন্টটি উদ্ভোদন করা হয়েছিল। সবশেষে ২৯ জুলাই ১৯০০ সালে , রহস্যজনকভাবে গুলিতে নিহত হন রেস্টুরেন্টের মালিক। একই দিনে, এই খবর শুনে রাজা দুঃখ প্রকাশ করার সময়, জনতার ভীরের মধ্য থেকে এক হত্যাকারী তীর মেরে রাজাকে হত্যা করে।
অশুভ ২১ তারিখঃ ফ্রান্সের রাজা ১৬তম লুইস যখন বালক ছিলেন তখন জোতিসী তাকে বলেছিল, ২১ সংখাটি তার জন্য অশুভ। তিনি যেন ২১ তারিখে সবসময় নিরাপত্তার জন্য সাথে গার্ড রাখেন। এই কথা শুনে লুইস আত ভয় প্যেছিলেন যে তিনি প্রতি মাসের ২১ তারিখে সকল কার্যকলাপ বন্ধ করেন। এর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৭৯১ সালে ফ্রান্স বিপ্লবের সময়, ২১ জুন এ রাজা লুইস ও তার রানীকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরে ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে ফ্রান্সের রাজতন্ত্র বাতিল হয়ে গনতন্ত্র শুরু হয়। এর পরে ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারীতে রাজা লুই এর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
জমজ ভাইঃ আমেরিকাতে, শিশু অবস্থাতেই দুজন জমজ ভাই পৃথক হয়ে যায়। এর পরে দুরের শহরে দুটি পৃথক পরিবারের পালক পুত্র হিসাবে তারা বড় হয়। কোন পরিবার এবং জমজ ভাই দুইজন একে অন্যের কথা জানত না। ৪০ বছর বয়সে সেই জমজ ভাই দুজন একে অপরকে খুজে পায়। না, ঘটনা এখানে শেষ নয়, বরং এখানে শুরু। তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় অবিশ্বাস্য তথ্য। পালক পরিবার দুটি একে অপরকে না চিনেও দুজনের নামই জেমস রেখেছিল। দুজনেই সামরিক প্রশিক্ষন গ্রহন করে। দুজনেই ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং ও কাঠ মিস্ত্রির কাজে ভাল। দুজনের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল লিন্ডা। দুজনেরই পুত্রের নাম এলান। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে দুজনের বিচ্ছেদ হয়। দুজনেই ২য় বিয়ে করে। দুজনেরই ২য় স্ত্রীর নাম ছিল বেইটি। দুজনেরই কুকুরের নাম ছিল টয়।
http://www.eliteweb.tk
,
বিষয়: বিবিধ
১৭৭২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন