ইহুদী বুদ্ধি – গাজায় আক্রমন ও বিশ্বকাপ বানিজ্য

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৬ জুলাই, ২০১৪, ০৩:১০:৫৭ দুপুর



এই লেখাতে আমি যা লিখেছি তার কোন প্রমান আমার কাছে নেই। আমি শুধু দুই আর দুই যোগ করে চার বানিয়েছি। বলেছি সম্ভাবনার কথা। তাছাড়া ইহুদীদের যে কুটবুদ্ধি, তাতে এমনটা হওয়া অবাস্তব কিছু নয়। ইহুদী বুদ্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার আগের লেখাটা পড়তে পারেন - ইহুদী বুদ্ধি আর এর পেছনের ফন্দি

একটা জিনিস আপনারা সবাই হয়ত খেয়াল করেছেন যে – গাজায় হামলার খবর, ছবি ইত্যাদি যেভাবে ফলাও করে এবার প্রচার হচ্ছে, তেমন ফলাও করে আগে কখনো প্রচার হয়নি। আপনি হয়ত যুক্তি দিতে পারেন যে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির কারনে এমন হয়েছে। এই কয় দিনের হামলায় খবর পাওয়া গেছে যে সর্বোচ্চ ২০০ লোক মারা গেছে। এট আবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু এর চেয়ে বেশী লোক মারা গেছে মিশরে। এর চেয়ে বেশী মুসলমান মারা গেছে বার্মায়। ইজরাইলের আক্রমনে অনেক বেশী লোক মারা গেছে লেবাননে , সিরিয়াতে। আফগানিস্থানে, ইরাকে এর চেয়ে বেশী লোক মারা যাচ্ছে বছরে পর বছর। ওদিকে গাজায় আক্রমনের ১-২ দিনের মধ্যেই মিডিয়া ও ফেসবুক ২০০ নিহত লোকের জন্য যে কান্নাকাটি করেছে – তেমন কান্নাকাটি গত ১০ বছরে , লক্ষ নিহত লোকের জন্য কেউ করেনি। এমন আক্রমন ওখানে আগেও অনেক হয়েছে কিন্তু এবার প্রচার হয়েছে সবচেয়ে বেশী। মোটেও ভাববেন না যে এই প্রচার করেছে মুসলমানেরা। মুসলমানেরা করলে আগেও করত। ব্যাপারটা কি? এই ঘটনা এত ব্যাপকভাবে কারা প্রচার করল?

বিভিন্ন অভিনব কায়দায় ব্যাবসা করার প্রায় সকল পদ্ধতি ইহুদীদেরই আবিস্কার করা। শুধু আবিস্কার করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, সেটা প্রতিস্টিতও করেছে। যেমন, ব্যাঙ্ক, ক্রেডিট কার্ড যেগুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে একেবারে সম্পুর্ন নিয়োন্ত্রনে নিয়ে এসেছে। এমনকি ইদানিং ওরা যুদ্ধ থেকেও বিভিন্ন কায়দায় ব্যাবসা করার পদ্ধতি বের করেছে । ইহুদীদের আবিস্কার করা এমনই একটি পদ্ধতি হল খেলায় বেটিং।(বাজি ধরা)। অমুক দল তমুক দলের সাথে যে কোন একটি খেলা খেলবে। কোন দল হারবে, কোন দল জতবে এর উপরে ভিত্তি করে বাজি ধরা হয়। হয় আর্থিক লেনদেন। না, বাজি ধরাটা ইহুদীরা আবিস্কার করেনি। ওরা এই বাজি ধরার ব্যাবসাটাকে আন্তঃজাতিক মানে প্রতিস্টিত করে ছেড়েছে। এটা এখন শেয়ার বাজার বা ডলার লেনদেন এর মতনই আইনসিদ্ধ ও ব্যাপক ব্যাবসা।

এই ব্যাবসার পেছনে সবচেয়ে বড় লেভেলে যারা কাজ করে তারা অতি ক্ষমতাশীল। এতই ক্ষমতাশীল যে তারা একটি আন্তঃজাতিক খেলার দলকে কিনে ফেলে। আন্তঃজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন খেলোয়াড়কে কিনে ফেলে। ওদেরকে বাধ্য করে তাদের ইচ্ছা আনুযায়ী পাতানো খেলা খেলতে। সেই পাতানো খেলার ফলাফলের উপরে বাজি ধরার ব্যাবসায় সফলতা নির্ভর করে।

এই বেটিং ব্যাবসার সবচেয়ে নীচের স্তরে আছে সাধারন জনগন – সাধারন ক্রেতা। উন্নত বিশ্বে প্রায় প্রতিটি মদের বারে বা দোকানের সাথে রয়েছে TAB। একজন সাধারন ক্রেতা এমন ট্যাবে গিয়ে যে কোন খেলার জন্য অল্প বেশী যে কোন পরিমান টাকা বাজী ধরতে পারে। এটা জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত। যে লোকটি বাজি ধরবে, সে ট্যাব এর কাউন্টারে গিয়ে টাকা জমা দিলে তাকে একটি রিসেপ্ট (ক্যাশ মেমো) জাতীয় কাগজ দেওয়া হয়। যদি খেপার ফলাফল ওই ক্রেতার পক্ষে যায়, তবে সেই ব্যাক্তি ট্যাবে গিয়ে তার বাজিতে জেতা টাকা নিয়ে আসতে পারে।

এই বাজি ধরাটা শুধু হার জিতের উপরেই নয়, স্কোরের উপরেও নির্ভর করে। যেমন কোন ব্যাটস ম্যান কত রান করবে, এর উপরে বাজি। কে কত রানে আউট হবে, এর উপরে বাজি। কে কতটি গোল দিবে তার উপরে বাজি। কোন দল কতটি গোল খেয়ে হারবে, এর উপরে বাজি। এর হাজার রকমের প্রকারভেদ আছে। ধরুন, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলা। অস্ট্রেলিয়ার জেতার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এজন্য বাজির টাকাটাও সেভাবে সাজানো হয়। যেমন যদি আপনি “বাংলাদেশ জিতবে” এই পক্ষে বাজি ধরেন তবে বাংলাদেশ জিতলে আপনি ৩ গুন বেশী টাকা পাবেন। আরো কঠিন ফলাফলের জন্য আরো বেশী লাভ দেওয়া হয়। যেমন আপনি যাদি “বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারাবে” এই পক্ষে বাজি ধরেন – তবে বাজি জিতলে আপনি ১০ গুন বেশী টাকা পাবেন। আরো কঠিন ফলাফল – যেমন বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে ১০০ রানে সবাইকে আউট করে দিবে – এর পক্ষে বাজী জিতলে আপনি হয়ত ২০ গুন বেশী লাভ পাবেন। মোট কথা যত কঠিন বা অসম্ভব ফলাফল – সেই পক্ষে বাজি জিতলে লাভ তত বেশী। যারা এই ট্যাবের মুল হোতা তাদের ব্যাবসাটা কিছুটা বীমা (Insurance) এর মতন। সারা বছর বীমা কোম্পানী টাকা পাচ্ছে। কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কোন দুর্ধটনা ঘটলে তখন কোম্পানীর অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। ক্ষতিও হয়। তেমনি, খেলাতে স্বাভাবিক ফলাফল হলে বেটিং এর ব্যাবসায়ীদের সমস্যা হয় না। কিন্তু অস্বাভাবিক ফলাফল তাদের অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি বয়ে আনে।

এবারের আসি মুল কথায়। ব্রাজিল, জার্মানীর কাছে খেলায় হারতে পারে এটা অনেকেই মনে করেছিল। সেই খেলায় ২-৩ টা গোল হলে বিষয়টা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সেখানে গোল হয়েছে ৭-১। প্রথমার্ধের ৬ মিনিটে হয়েছে ৪ টি গোল। এটা অস্বাভাবিক নয়, একেবারে অসম্ভব ফলাফল। কাজেই এই ফলাফলের জন্য, বেটিং ব্যাবসার আয়োজকদের – অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। যাকে বলে একেবারে দিশেহারা। এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য একটাই উপায় আছে। সেটা হল বেটিং এর উপরে থেকে কয়েকদিনের জন্য লোকজনের চোখ সরিয়ে নেওয়া। এতে করে বেটিং কমে যাবে ও তারা তাদের মতন বাজার নিয়োন্ত্রন করে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে।

এ কারনেই শুরু হল – গাজায় হামলা। সেই সাথে মিডিয়া আর ফেসবুক। নিহত ২০০ লোককে ওরা এমনভাবে বার বার দেখাতে লাগল যেন মানুষের মন নাড়া দিয়ে ওঠে। গত দশ বছরে লাখো লোক নিহত হওয়াতেও মানুষ এমন আবেগ আপ্লুত হয়নি। ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্যে বমা মারা হয়েছে , এতে বড়দের সাথে শুশুরাও মারা গেছে। কিন্তু মিডিয়া ও ফেসবুকে, সবসময় চোখের সামনে দেখা যায় শিশুদের লাশ। এসব দেখে, পশ্চিম বিশ্বের ইসলাম বিদ্বেষী লোকেরাও এবার ফিলিস্তিনী ফান্ডে টাকা দিয়েছে। ওই কয়েকদিন ট্যাবে গিয়ে বাজি ধরে ফুর্তি করার মতন মানষিক অবস্থা সাধারন মানুষের ছিল না। বিশ্বকাপে এক ধরনের ভাটা পড়ে গিয়েছিল। এটাই ছিল ইহুদীদের উদ্দেশ্য। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরে, ইজরাইলের যুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে গেছে। তাই তারা যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবও দিয়েছে। বন্ধ করতে পারছে না করন হামাস যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়। সমস্যা নেই – এর পরে আরেক ফন্দি বের করে যুদ্ধ বন্ধ করে দিবে। ফন্দিতে ওরা ওস্তাদ।

অনেকেই ফেসবুকে বা বিভিন্ন ব্লগে ফিলিস্থিনীদের পক্ষে লিখেলেখি করছেন। অনেকে তাদের ছবি দেখাচ্ছেন। তাদের অসহায় অবস্থাকে তুলে ধরছেন। নিঃসন্দেহে এটা মহত উদ্যোগ। এমন মহৎ ব্যক্তিদের কেউ কেউ হয়ত আমাকে নির্দয় বা পাগল বলে বসতে পারেন। তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি – ইসরাইলের হাতে প্রতি বছর এমনিতেই ২-৩ শত ফিলিস্থিনি নিহত হয়। আপনার এই মহত উদ্যোগ এতদিন কোথায় ছিল? আর এখন হটাত করে কেন উদয় হল? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর খুজে পেলেই আমার বক্তব্য বুঝতে পারবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭১২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

245192
১৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
245206
১৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৫
হতভাগা লিখেছেন : বিশ্বকাপে ভয়াবহ বেটিং হচ্ছে বলে সেখান থেকে নজর ফিরিয়ে নিতে গাজায় হামলা !

আমার তা মনে হয় না , বরং বিশ্বকাপের আড়ালে তারা ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি নিশ্চিন্হ করে দিতেই এটা করতে চেয়েছিল - যদিও সাকসেসফুল হতে পারছে না ।

এখানে স্মতর্ব্য যে , ২০১১ এর ৬ই সেপ্টেম্বর মেসিরা বাংলাদেশে এলো নাইজেরিয়ার সাথে খেলার জন্য । ঐ সময়ে মনমোহনও এসেছিলেন । ''তিস্তা নিয়ে এবার একটা কিছু হবেই '' এরকম একটা হাইপ করা হয়েছিল ।

পরে মমতা আসনে নি বলে চুক্তি হয় নি । মানুষকে খেলা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে সে সময়ে ভারতের দাবীগুলো মেনে নেওয়া হয়েছিল , কিন্তু নিজেদেরটার কথা বলাই গেল না ।
১৬ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:১১
190471
এলিট লিখেছেন : আমি প্রথমেই বলেছি যে আমার কাছে কোন প্রমান নেই। এসব অনুমান মাত্র। আপনার বক্তব্যটাও অনুমান। এবং যুক্তিযুক্ত। কিন্তু যেই অংশটা বোধগম্য হচ্ছে না যেটা হল
- বিশ্বকাপের খেলা এর আগেই জমে উঠলেও কেন ব্রাজিল হারের পরে গাজায় হামলা শুরু হল?
- বিশ্বকাপ খেলা এর আগেও অনেকবার হয়েছে। তখন ইসরাইল এই আক্রমনের সুযোগ নেয়নি কেন?
১৬ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২০
190503
হতভাগা লিখেছেন : গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা শুরু হয়েছে ৭ই জুলাই (সোমবার) থেকে

http://epaper.prothom-alo.com/index.php?opt=view&page=7&date=2014-07-09

আর ব্রাজিল - জার্মানীর খেলা ছিল ৮ই জুলাই (মঙ্গলবার)।

http://epaper.prothom-alo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2014-07-09



বিমান হামলা খেলার আগেই শুরু হয়েছিল ।

গত ২ বিশ্বকাপে তো ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালেই আউট হয়েছিল - তখন ইসরায়েল বসে ছিলো কেন ?

নিজদেশে সেমি ফাইনালে ব্রাজিলের মত টিম সমমানের জার্মানের কাছে ৭ গোল খাবে খেলা পাঁতিয়ে ? ওরা না হেক্সার স্বপ্ন দেখছিল !



245216
১৬ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:২০
সাদাচোখে লিখেছেন : অনুমান নির্ভর গাল-গল্প আড্ডার জন্য নিঃসন্দেহে ভাল।

কিন্তু ফ্যাক্টস ও ফিগার নির্ভর আপনার লিখা এই ব্লগের ভাইবোনদের বেশী ভাল লাগে বলে আমার ধারনা। চিন্তা করার জন্য ধন্যবাদ - তারপর ও।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File