ইসলামে নিয়ত পড়ার নিয়ম নেই !!
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৮ জুলাই, ২০১৪, ১০:০৭:৫৩ সকাল
অনেকেই হয়ত শিরোনাম দেখে চমকে উঠবেন। অনুরোধ করব, আগে পুরো ব্যাপারটি বুঝে নিন। এর পরে সিদ্ধান্ত আপনার। আসুন আমরা দেখে নেই, নিয়ত কি জিনিস, এর গুরুত্ব কতখানি এবং নিয়ত পড়ার পদ্ধতি আছে কিনা।
নিয়তঃ এর অর্থ উদ্দেশ্য (intention)। মানুষ সাধারনত উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ করে না। কোন কাজের উদ্দেশ্যকে নিয়ত বলে। এই কথাটি উর্দু, হিন্দি এমনকি বাংলাতেও প্রচলিত রয়েছে। একই কাজ, ভিন্ন ব্যাক্তি ভিন্ন্ উদ্দেশ্যে করতে পারে। একই স্কুলে সব ছাত্ররাই আসে। কারো উদ্দেশ্য থাকে প্রথম হওয়া, কারো উদ্দেশ্য থাকে পাশ করা, আবার কারো পাশ করার উদেশ্য নেই, বাবা মা স্কুলে পাঠিয়েছেন তাই হাজিরা দেয়। ইসলামে নিয়ত অত্যান্ত গুরুত্বপর্ন। তাহলে কেন বলছি “নিয়ত পড়ার নিয়ম নেই” ? কারন, নিয়ত একটি করার জিনিস, পড়ার জিনিস নয়।
নিয়ত জিনিসটি ভলোভাবে বুঝতে পারব যদি জিনিসিটিকে প্রশ্নের দাগ নম্বরের সাথে তুলনা করি। আচ্ছা, খোলসা করে বলছি। ধরুন, একটি পরীক্ষায় দশটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যেই দাগ নম্বর, সেই প্রশ্নের উত্তর। অর্থাৎ “১” লিখে তারপরে এক নম্বর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। “২” লিখে এর পরে দুই নম্বরের উত্তর --- এভাবে চলতে থাকবে। কেউ যদি দাগ নম্বরে “৩” লিখে আর উত্তর দেয় ৭ নম্বর প্রশ্নের, তখন সেই ছাত্র ওই প্রশ্নের জন্য কত নম্বর পাবে? হ্য, একেবারে শুন্য পাবে। যতই ভালো লিখুক না কেন। আচ্ছা, কেউ যদি কোন দাগ নম্বর না দিয়েই প্রশ্নের উত্তর দেয় তখন কত পাবে? তাতেও শুন্য পাবে। সঠিক দাগ নম্বর না দিলে বা দাগ নম্বর অনুপস্থিত থাকলে শুন্য পেতে হয়। এর পেছনে যুক্তিটি হল - ৭ নম্বর প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি কিন্তু ৩ নম্বর প্রশ্নের জন্য সম্পুর্ন ভুল উত্তর। আবার দাগ নম্বর না দিলে বোঝা যায়না যে এটি কোন প্রশ্নের উত্তর। কাজেই দাগ নম্বর ভুল হলে উত্তর গ্রনযোগ্য হয় না। শুন্য পেতে হয়।
আমরা দুনিয়াতে এসেছি পরীক্ষা দিতে। আমাদের পুরো জীবনটাই একটা পরীক্ষা। আমরা এই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া নিয়ম কতখানি মেনে চলি সেটাই হল পরীক্ষা। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই সেই পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর। আর প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য (নিয়ত) হল সেই প্রশ্নের দাগ নম্বর। বাড়ির বাইরে পা বাড়ালেন, উদ্দেশ্য কি সিনেমা হলে যাওয়া নাকি অফিসে যাওয়া। অফিসে কাজ করছেন, একজন ক্লায়েন্ট এর সাথে কথা বলছেন। উদ্দেশ্য কি তাকে যথযত সুযোগ দেওয়া , নাকি তার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া। বড় সাহেবের সাথে দেখা করতে যাবেন - উদ্দেশ্য কি তাকে অফিসের গুরুত্বপুর্ন কোন তথ্য দেওয়া, নাকি অযথা সহকর্মীর নামে দুর্নাম করা। অফিসের বসের বাসায় বড় ইলিস মাছ পাঠালেন - উদেশ্য কি তাকে আপ্যায়ন করা নাকি প্রমোশনের তদবির। এমন ভাবে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজেই একটি ভালো/মন্দ উদ্দেশ্য থাকে। এই উদ্দেশ্যটাই নিয়ত।
মুসলমানের পুরো জীবনটাই ইবাদাত। তার পরেও আমরা ইবাদত বলে যা বুঝি, যেমন নামাজ রোজা ইত্যাদি পালন করার জন্যও নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।
উদাহরন ১ - এক ব্যাক্তি নিয়মিত রোজা রাখে। রোজার মাসে এক রাতে সে হটাত করে সামান্য অসুস্থ হল। বুঝতে পারছে না, পরদিন রোজা রাখতে পারবে কিনা। রাতে সবার সাথে সেহেরী খেল। তখনও সে জানেনা যে এই শরীর নিয়ে রোজা রাখতে পারবে কিনা। পরদিন সকালে সে কিছুই খায়নি। পানিও না। সকাল ১০ টার সময় সে বেশ সুস্থ বোধ করল। এখন বুঝতে পারছে যে, সারা দিন না খেয়ে থাকাটা সে সহ্য করতে পারবে। তখন সে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিল। রোজা রাখল। সন্ধ্যায় সবার সাথে ইফতারী করল। এই ব্যাক্তির রোজাটা কিন্তু গ্রহন যোগ্য নয়। কারন এখানে সে প্রশ্নের দাগ নাম্বার দেয়নি। অর্থাৎ নিয়ত করেনি। রোজা শুরু হয় সুর্য উদয়ের আগে থেকে। এই শুরু হবার আগেই লোকটিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে রোজা রাখবে কিনা। সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, অর্থাৎ নিয়ত করেনি। সারা দিন না খেয়ে থেকেও তার রোজাটি হল না শুধুমাত্র নিয়তের অভাবে। এর থেকেই বোঝা যায় যে “নিয়ত করা” কত গুরুত্বপুর্ন।
উদাহরন ২ - নামাজী এক ব্যাক্তি, এক দুপরে ফাইল ছাড়ানোর জন্য, এক অফিসের এই টেবিল ওই টেবিল ঘুরে দিশেহারা। এতটাই দিশেহারা যে সে নামাজ পড়ার অবকাশ এখনো পায়নি। সাথে ঘড়ি নেই। ওই দালানে আজানও শোনা যায় না। তবে লোকটি আন্দাজ করেছে যে, যোহরের ওয়াক্ত শেষের দিকে আর আসরের ওয়াক্ত আসবে আসবে করছে। এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে যেতে গিয়ে দেখল, ১৫-২০ জন লোক একটি ছোট ঘরে জামাতে নামাজ পড়ছে। লোকটি দেখল এই তো সুযোগ। সে সঙ্গে সঙ্গে জামাতে দড়িয়ে গেল। নামাজ শুরু করার আগে সে ভাবছে “আচ্ছা এটা কি যোহর নাকি আছরের নামাজ হচ্ছে? যাই হোক, যে কোন একটা তো হবে, আমি জামাতে শরিক হই” - আল্লহু আকবর। এখানে কিন্তু লোকটির নামাজ গ্রহনযোগ্য নয়। কারন সে জানে না, কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। অর্থাৎ জানেনা কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়ছে। নামাজ শুরু করার আগে এটা জানতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সে অমুক ওয়াক্তের নামাজ পড়ছে। এটাই নিয়ত।
উপরের দুটি উদাহরনে দেখা গেল “নিয়ত করা” গুরুত্বপুর্ন। হ্যা, নিয়ত করতে হবে। পড়ার কিছু নেই। আমরা এক মন্ত্র মুখস্ত করে বসে আছি “নাউয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি ------ “। এমন কোন মন্ত্র ইসলামে নেই। সহী হাদিস তো দুরের কথা - জাল হাদিসেই নেই। কোন ইবাদত করার আগে, সিদ্ধান্ত নিন - আপনি কি করতে যাচ্ছেন। এটাকেই “নিয়ত করা” বলে। এখানে পড়ার কিছু নেই। আপনি যদি কখনোই সিদ্ধান্ত না নেন, অথবা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন তবে আপনার নিয়ত হবে না। আর নিয়ত না হলে ইবাদত গ্রহন যোগ্য হয় না। আপনার উদ্দেশ্য ও সিদ্ধান্তকেই নিয়ত বলা হয়। অমন শেখানো মন্ত্র পড়ে নিয়ত করা ইসলামে নেই। এটা নতুন আবিস্কার করা কাজ যাকে বিদাত বলা হয়।
বিষয়: বিবিধ
২৩২৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিরোনামই তো যথেষ্ঠ। আমাদের দেশে নামাজ শিক্ষা নামে যে চটি বইগুলো বাজারে পাওয়া যায়, তাতে লেখা নিয়তগুলোর সাইজ দেখলে ভিমরি খেয়ে পড়তে হয়। আর নামাজি ভাইদের দেখা যায় নিয়ত পড়তে পড়তে তাকবিরে উলা মিস করেন। আফসোস।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে মুখে নিয়ত করার কোন শায হাদিসও বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এটি কোনক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয়।
এটি কোন নতুন ফাতওয়া নয়, এটিই প্রকৃত নিয়ম।
এটা একান্তই সত্য যে ইসলামের নামে আমাদের সমাজে অনেক ভূল প্রচলিত আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলামের যে কোন বিধান নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমে কুরআন খেকে দলীল নিতে হবে, কুরআনে না থাকলে হাদীস থেকে; এমনকি যঈফ হাদীস হলেও তা কিয়াসের উপর প্রাধান্য পাবে। যদি এ দুটি বর্তমান না থাকে তাহলে আসারে সাহাবা থেকে রেওয়াতে থাকতে হবে। তাও না থাকলে, এ বিষয়ে উম্মাহর মধ্যে ইজমা থাকতে হবে। আর তাও না থাকলে উপরোক্ত যে কোন দলীলের ভিত্তি সমসাময়িকতা বা সাদৃশ্যতার ভিত্তিতে কিয়াস করতে হবে।
মুখে নিয়্যত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এমন একটি দলীলও কেউ দেখাতে পারবে না। এমনকি কোন মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস, মুজাদ্দিদ, মুফতি বা আলেমও এটিকে জরুরী বলবেন না।
সুতরাং না করাটাই কি ভালো নয়?
মন্তব্য করতে লগইন করুন