পরোকালের সবকিছুই দুনিয়ার মতন কেন
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৫১:৪৪ রাত
প্রশ্নটি বেশ কয়েকবার শুনেছি। পরে অবশ্য এর উতস খুজে পাওয়া গেছে। নাস্তিকদের আদর্শ ব্যাক্তি, অশিক্ষিত মাতব্বরের প্রশ্ন এটি। আশে পাশে বিভিন্ন পুরাতন প্রশ্ন বার বার শুনে যখন অস্থির। তখন একটি অন্য ধরনের প্রশ্ন পাওয়া গেল। ইসলামে পরকালের যে বর্ননা আছে তার প্রায় সবই দুনিয়ার জিনিস। জাহান্নামে রয়েছে আগুন, পাথর, কাটাযুক্ত গাছ। জান্নাতে রয়েছে সোনা রুপার ইটের দেয়াল, রয়েছে গাছ পালা, ফল মুল, নদী, পাখী এমনকি দুধ, মদ ইত্যাদিও রয়েছে। পরোকাল তো অন্য জীবন, অন্য জগত। সেখানে অন্য জিনিস থাকবে। সব কিছু দুনিয়ার মতন কেন?
এটা একটা মারাত্মক প্রশ্ন। এই কারনে যে এই প্রশ্নটি করে তারা দেখাতে চায় যে ইসলাম ধর্ম কোন মানুষের বানানো। পরোকাল বলে যা কিছু আছে সবই মানুষের বানানো। কাজেই মানুষের চেনা জানা জগতের বাইরে কোন বস্তুর বর্ননা নেই। আসুন আমরা দেখে নেই আসলেই পরোকালে দুনিয়ার চেনা জিনিসের বাইরে কিছু আছে কিনা।
আল্লাহ কোরআনকে যেখানে সংরক্ষিত করে রেখেছেন সেটাকে লাওহ মাহফুজ (সংরক্ষিত স্থান) বলা হয়। এটা দেখতে কেমন এবং এখানে কোরআন কিভাবে সংরক্ষন করা আছে সেটা কিন্তু আমাদের কাছে অজানা। আমরা যদি বিষয়টি কল্পনা করি তবে আমাদের চোখের সামনে বিভিন্ন ধরনের চিত্র ভেসে উঠতে পারে। আমাদের সব চিন্তা কিন্তু আমাদের দুনিয়াতে যা দেখি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আসলে কিভাবে কোরআন সংরক্ষিত আছে সেটা আমরা জানি না। বললেও আমরা বুঝব না। কারন সেই সংরক্ষন পদ্ধতিটি আমাদের কাছে অজানা। এটি দুনিয়ার মতন নয়।
রাসুল (সা) মেরাজে গিয়েছিলেন বোরাক নামক একটি প্রানীর পিঠে চড়ে। সেই প্রানীটি কিন্তু আমাদের দুনিয়াতে নাই। এটি কেমন দেখতে বা বৈশিস্ট কি সেটা বোঝা আমাদের সাধ্যের বাইরে। এটাও কিন্তু দুনিয়ার প্রানী থেকে আলাদা। এর পরেও আমাদেরকে বোঝাতে বলা হয়েছে যে সেটা ঘোড়ার/গাধার মতন দেখতে একটি প্রানী। আমরা ঘোড়া চিনি তাই ঘোড়ার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে উর্ধ জগতের প্রানী আর দুনিয়ার প্রানী একই হয়ে গেল। আমরা উর্ধ জগতের প্রানী চিনি না তাই আমদের চেনা একটি দুনিয়ার প্রানীর নাম বলা হয়েছে। উর্ধ জগতের প্রানী দুনিয়ার প্রানীর মতন নয়।
উপরে দেওয়া ছবিটি দেখুন।
একটি ছবি হল ট্যাবলেট পিসি (Tablet PC) যা সংক্ষেপে ট্যাব (Tab) নামে পরিচিত। এপেল (Apple) কোম্পানীর ট্যাবলেটের নাম আই প্যাড।(iPad) । অনেকে যেমন যে কোন মোটর সাইকেলকে “হোন্ডা” বলে। তেমনি অনেকে সব ট্যাবলেটকেই আইপ্যাড বলে। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় Samsung এর Galaxy Tab
অপর ছবিটি হল স্লেট ও চক পেন্সিল। এটা দিয়েই সাধারনত বাচ্ছারা প্রথম লিখতে শেখে। এখনকার বাচ্চারা অনেক আধুনিক। কিন্তু আমরা সবাই এটা ব্যাবহার করেছি। তাই সবাই এটা চিনি।
কয়েক বছর আগে যখন আমি দেশে ট্যাবলেট নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার জেলা শহরের মানুষের কাছে তখন এই জিনিস একেবারেই নতুন। তারা জিনিসটির বিভিন্ন কর্মক্ষমতা দেখে মুগ্ধ। ওরাই এই জিনিসটার নাম দিল “স্লেট”। যতই বলি যে এটাকে ট্যাবলেট বলে কিন্তু ওরা স্লেট বলেই সাচ্ছন্দ বোধ করে। আপনি হয়ত একটি সাইকেলকে মোটর সাইকেলের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। হয়ত নৌকাকে জাহাজের সাথে তুলনা করতে পারেন। কিন্তু স্লেটের সঙ্গে ট্যাবলেটের কোন তুলনাই হয় না। কারন, স্লেট হল একটি ছোট সাইজের ব্লাক বোর্ড আর ট্যাবলেট হল ছোট সাইজের একটি কম্পিউটার।
পরোকালের প্রত্যাকটি বিষয় তেমনি। রূপক অর্থে - আমরা দুনিয়াতে স্লেট চিনি, আর পরোকালে আছে ট্যাবলেট। এক জিনিস নয়। কিন্তু আমাদের বোঝানোর জন্যই বিভিন্ন বর্ননায় দুনিয়ার জিনিসের সাথে তুলনা দেওয়া হয়েছে। পরোকালের আগুন, গাছ, ফল, নদী, দুধ, মদ ইত্যাদি সবই দুনিয়ার জিনিস থেকে আলাদা।ও অতুলনীয়।
জাহান্নামের আগুনের জুতা পরানো হলে মাথার ঘিলু ফুটতে থাকে। জাহান্নামের জাক্কুম গাছের কাটাযুক্ত ফল খেলে পেটের নাড়ীভুড়ী বের হয়ে যায়। জান্নাতের নদী শুন্যে ভেসে প্রবাহিত হয়। ফল খাওয়ার ইচ্ছে করলে গাছ নিজে ঝুকে পড়ে। এগুলো তো শুধু আমাদের চেনা জানা জিনিসের মতন জিনিসের বর্ননা। এ ছাড়াও অগনিত এমন অনেক জিনিস পরোকালে আছে যা আমরা চিনিও না, জানিও না।, বললেও বুঝব না। পরোকালের কোন কিছুই দুনিয়ার মতন নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন