যে বিশ্ব রেকর্ড গুলো কেউ ভাঙ্গতে চায় না

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৬ জুন, ২০১৪, ১১:৫৫:১৬ রাত



বিশ্ব রেকর্ড করতে কে না চায়? বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত দৌড়বিদ, সবচেয়ে বড় বাড়ি, সবচেয়ে বড় গিটার , সবচেয়ে বেশী ডাক টিকিট এর সংরহ ইত্যাদি স্বাভাবিক রেকর্ড অনেক রয়েছে। এগুলো ইর্ষনিয় রেকর্ড। সবাই এমন রেকর্ডধারী হতে চায়। কিন্তু কিছু অস্বাভাবিক রেকর্ড রয়েছে যেগুলো আসলে কেউই কামনা করে না। তেমন কিছু রেকর্ডের সমারহ আছে এই লেখাতে।

ঘুর্নীঝড়ের কবলে পড়ে সবচেয়ে দূরে ছিটকে পড়া (৩০০ মিটার)

যুক্তরাস্ট্রের মিশৌরী রাজ্যের ছোট শহর ফোর্টল্যান্ড। আপনারা জানেন যে ওসব দেশে ভ্রাম্যমান ঘর রয়েছে। একটি বাসের মধ্যে ঘর যাতে সব রকমের আসবাব পত্র, বিছানা, রান্নাঘর ইত্যাদি থাকে। ২০০৬ সালে, এক বৃদ্ধ মজিলার এমনই একটি ভ্রাম্যমান ঘরে বসেছিলেন। সাথে ছিল তার ছেলে এবং বেড়াতে আসা তার নাতী, ১৯ বছরের তরুন ম্যাট সুটার।

এর মধ্যেই প্রচন্ড ঝড় শুরু হল। ঝড় দেখে ম্যাট জানালা, দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই শোনা গেল ঝড়ের প্রচন্ড গর্জন। মনে হচ্ছে যেন ১০-১২ টা যুদ্ধ বিমান তাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। ঘুর্নী ঘড় তাদের ওই ঘরে আঘাত হানল। ঘরটির দরজা, জানালা কাগজের মতন ছড়ে গেল, ছাদ উড়ে গেল। ঘরটি ডিগভাজি খেতে লাগল। ঘুর্নী ঝড়টি ম্যাটকে তুলার মতন ঊড়িয়ে নিয়ে গেল। ম্যাট উড়ে গিয়ে দুরের এক মাঠে গিয়ে পড়ল। এই দুরত্ব ছিল প্রায় ৪০০ মিটার (১৩০০ ফুট) যা কিনা ৪টি ফুটবল মাঠের সমান। ম্যাট সহ এই পরিবারের সবাই সামান্য আহত হয়ে সেই যাত্রায় বেচে যায়।

ঘুর্নিঝড়ের কারনে দূরে ছিটকে পড়ে, প্রানে বেচে যাওয়ার এমন অভিজ্ঞতা যুক্তরাস্ট্রে আরো কয়েক জনের আছে। যেমন ১৯৫৫ সালে দক্ষিন ডেকোডার একটি বালিকা তার ছোট ঘোড়া সহ ৩০০ মিটার (১০০০ ফুট) দূরে ছিটকে পড়ে। ১৯৯৯ সালে ওকলাহোমাতে একটি শিশু ৩০ মিটার (১০০ফুট) দূরে ছিটকে পড়ে। তবে এখন পর্যন্ত এই রেকর্ডটি ম্যাট এর দখলে। আশা করি কেউই এমন রেকর্ড করতে চান না।

সবচেয়ে উতপাদনশীল পরিবার (৮৭ সন্তান)

দুই শত বছর আগের কথা। রাশিয়ায়, ১৭০৭ সালে জন্মগ্রহন করেন জনাব ফেওডর ভাসিলেভ। তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে বাবা হওয়া শুরু করেন। তার দুই জন স্ত্রী ছিলেন। এই পরিবারের সর্বমোট সন্তান জন্মেছে ৮৭ জন। এক সাথে দুই সন্তান (জমজ) হয়েছে ২২ বার। এক সাথে তিন সন্তান হয়েছে ৯ বার। এর সাথে চার সন্তান হয়েছে ৪ বার। এর মধ্যে ২টি সন্তান শৈশবেই মারা যায়। অর্থাৎ, সবশেষে তাদের সন্তান ছিল ৮৫ জন। অসামান্য এই ঘটনার জন্য ভসিলভ বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এমনকি সেই সময়ের রাজা , রানী ব্যাক্তিগত ভাবে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

সবচেয়ে উতপাদনশীল মহিলার রেকর্ডটি ধরন করে আছেন ভসলভের প্রথম স্ত্রী। দুঃখের বিষয়, সবাই তাকে মিসেস ভসিলভ হিসাবে সবাই চিনে। তার আসল নাম এখন হারিয়ে গেছে। তিনি ২৭ বার গর্ভবতী হন এবং ৬৯ জন সন্তান জন্ম দেন। ভসিলভের ২য় স্ত্রী অনেক পিছিয়ে আছেন। তিনি ৮ বার গর্ভবতী হন এবং ১৮ জন সন্তানের জন্ম দেন। এগুলো সবই ১৭০০ সালের ঘটনা। আমার ধারনা, এসব রেকর্ড আর কেউই কখনো ভাঙ্গতে পারবে না।

সবচেয়ে বেশী ওজনের মানুষ (৬৩৫ কেজি)

সবচেয়ে বেশী ওজনের পুরুষ ও মহিলা দুটোই আমেরিকাতে। এতে অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই। ওই দেশে, মোটা মানুষের হার বিশ্বের সবচেয়ে বেশী, ৩৪%।

জ়ন ব্রাউয়ার মিনক ছিলেন ওয়াশিংটনের অধিবাসী। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তার ওজন ছিল ১৩৫ কেজি। এর পরে ওজন বাড়তে বাড়তে এক সময় ওজন ৬৩৫ কেজি পর্যন্ত হয়। এত বেশী ওজনের কারনে তার শরীরে হার্টের সমস্যা, পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয়। সেটা ছিল ১৯৭৮ সাল। চিলিতসার জন্য তাকে হাসপাতালে নিতে ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি ও ১২ জন কর্মী প্রযোজন হয়। হাসপাতালে খাট বিছানা পাশাপাশি রেখে তার জন্য বিছানা বানানো হয়েছিল। সেই খাটে তার দেহটিকে গড়িয়ে ঠিকভাবে শুইয়ে দেবার জন্য ১৩ জন লোক প্রয়োজন হয়। সেভাবেই শুয়ে তিনি ২ বছর। ডাক্তারেরা ধারনা করেছিল যে তার দেহে ৪০০ কেজি চর্বি ছিল।

হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই তিনি জেনেট নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেন। জেনেটের ওজন ছিল মাত্র ৫০ কেজি। স্বামী-স্ত্রীর ওজনের সর্বোচ্চ ব্যাবধান এটি। এটাও আরেকটা রেকর্ড। ১৯৮০ সালে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। এই সময় তিনি ৪১৯ কেজি ওজন হারিয়েছিলে। সর্বোচ্চ ওজন হারানোর জন্য এটাও আরেকটা রেকর্ড। কিন্তু তার শরীর হয়ত এত বড় ওজনের ব্যাবধান মেনে নিতে পারেনি। মাত্র তিন বছর পরে, ৪১ বছর বয়েসে তিনি মারা যান।

ফ্লোরিডার অধিবাসী, রোজালী ব্রাডফোর্ড, ছিলেন সবচেয়ে বেশী ওজনের মহিলা। উনার সর্বোচ্চ ওজন হয়েছিল ৫৪৪ কেজি। মুলত প্রথম সন্তান এর জন্মের পরেই ওনার ওজন দ্রুত বাড়তে শুরু করে। ওজনের সমস্যার জন্য, এক সময় তিনি অনেকগুলি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেস্টাও করেন। কিন্তু অত্যাধিক ওজনের করনে, সেই ট্যাবলেটে কাজ হয়নি। এর পরে এক সময়, ওজন কমাবার গুরু রিচার্ড সায়মনের সান্নিধ্যে এসে বিভিন্ন ডায়েট ও ব্যায়াম শুরু করেন। তার প্রথম ব্যায়াম ছিল হাতে তালি দেওয়া। এক বছরের মধ্যে তার ওজন ১৯০ কেজি কমে যায়। শেষ পর্যন্ত তিনি সর্বমোট ৩১৭ কেজি ওজন হারান। এটা মহিলাদের সর্বোচ্চ ওজন হারানোর রেকর্ড। ১৯৯২ সালে, যখন তার ওজন ১৩৫ কেজি ছিল তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ও মনোবিজ্ঞানের ডিগ্রী লাভ করেন। এর পরে সারা দেশে ভ্রমন করে বিভিন্ন সভা, সমিতিতে, অনুস্টানে, বক্তব্য দিয়ে মানুষকে ওজন কমানোয় উতসাহিত করাটা ছিল তার কাজ। তিনি ২০০৬ সালে , ৬৩ বছর বয়সে মারা যান।

সবচেয়ে বেশী পাথর , কিডনীতে (লাখের উপরে)

ভারতের আধিবাসী, ধনরাজ ওয়াদিল (৪৫) ছয় মাস জাবত পেটের ব্যাথায় ভুগছিলেন। বিভিন্ন চিকিতসার পরে অবশেষে ২০০৯ সালে ডঃ আশিষ প্যাটেল আবিস্কার করেন যে ধনরাজের কিডনীতে পাথর রয়েছে। এন্ডোস্কোপ ও স্ক্যলপেল ব্যাবহার করে এই পাথর অপসারন করতে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। পাওয়া যায় ছোট ছোট বিভিন্ন আকারের (১ মিলি মিটার - ২।৫ সেন্টিমিটার) অগনিত পাথর। আকারে খুব ছোট হওয়তে, এই পাথর গুনে শেষ করতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। গুনে দেখা গেল ১,৭২,১৫৫ টি পাথর। হ্যা, এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার পাথর। আর এগুলো সবই পাওয়া গেছে ধনরাজের বাম কিডনীতে। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ১৪,০৮৯ টি পাথর যা অন্য এক রো গীর কিডনীতে পাওয়া গিয়েছিল।

দ্রুততম গতির দুর্ঘটনায় বেচে যাওয়া (৫৮৬ কিমি/ঘন্টা)

ক্যম্পবেল পরিবার তাদের গতির জন্য বিখ্যাত। ম্যালকম ক্যাম্পবেলের ১৩ টি দ্রুত গতির রেকর্ড ছিল। ৯টি ছল গাড়ি চালানোর এবং ৪ টি ছিল পানিতে, অর্থাৎ স্পিড বোট চালানোর। তারই সুযোগ্য পুত্র ডোনাল্ড ক্যাম্পবেলও কম যায় না। তার ছিল ডাঙ্গায় ও পানিতে ৮ টি রেকর্ড। যদি কেউ তার বা তার বাবার রেকর্ড ভাঙ্গতে পারত তবে সে আবার নতুন রেকর্ড করার চেস্টা করত। এটাই ছিল তার পেশা, নেশা।

১৯৬০ সালে এমনই এক রেকর্ড ভাঙ্গার চেস্টা করতে গিয়ে স্পিড বোট এর নিয়োন্ত্রন হারিয়ে দুর্ঘটনাতে পড়েন। তখন তার গতি ছিল ঘন্টায় ৫৮৬ কিলো মিটার। মাথা ও কানের পর্দা ফেটে গেলেও সে যাত্রায় তিনি প্রানে বেচে যান। কয়েক মাস পরে সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসেন ও গাড়ী ও স্পীড বোটের জগতে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে আবার এক স্পীড বোটের দুর্ঘটনাতে ডোনাল্ড প্রান হারান। এই সময় তার গতি ছিল ঘন্টায় ৪৮০ কি মি।

সবচেয়ে বেশী হাড় ভাঙ্গা

রবার্ট ক্রেইগ ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মোটর সাইকেল এর খেলা দেখাতেন। বিপদজনক ভাবে মোটর সাইকেল চালানো, জাম্প করা ইত্যাদি ছিল তার খেলা। এই খেলা দেখাতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ১৮ বার দুর্ঘটনায় পড়েন। এতে তার শরীরের মোট ৩৫ টি হাড় এর ৪৩৩ যায়গায় ভেঙ্গে যায়। না, সব একদিনে ভাঙ্গেনি। ১৮টি ঘটনার সর্বমোট পরিসংখান এটি।

তার শরীরে ভাঙ্গেনি এমন কোন হাড়ের নাম আমি জানিনা। মাথার খুলি, নাক,চোয়াল,গলার হাড়, দুটো হাত, দুই কবজি, দুটো গোড়ালী, পায়ের আঙ্গুল, কি ভাঙ্গেনি তার শরীরে। কোমর ভেঙ্গেছে তিন বার। এমনকি তার বুকের পাজরের এমন কোন হাড় নেই যেটা কখনো ভাঙ্গেনি।

উপরে বর্নিত এমন ধরনের রেকর্ড আসলে কেউ করতে চায়নি। এমনটা হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন রেকর্ড থেকে রক্ষা করুন

বিষয়: বিবিধ

১২৫৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239263
২৭ জুন ২০১৪ রাত ১২:৪৫
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
239299
২৭ জুন ২০১৪ সকাল ০৫:২৩
রাইয়ান লিখেছেন : এরকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ও রেকর্ডের মুখোমুখি যেন আর কাউকে কোনদিন হতে না হয় , আল্লাহ মাফ করুন আমাদেরকে .... It Wasn't Me!
239353
২৭ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৪০
হতভাগা লিখেছেন : http://en.wikipedia.org/wiki/Martín_Palermo

International Career দেখুন ।

এই রেকর্ডও কেউ করতে চাইবে না ।
244416
১৩ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
মোহাম্মদ রিগান লিখেছেন : সুন্দর

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File