রিজিকের মালিক আল্লাহ - তাহলে আমাদেরকে রোজগার করতে হয় কেন?

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১০ জুন, ২০১৪, ০২:৩৩:১০ রাত



শত বছর আগের এই প্রশ্নটি ইদানিং অনেক মুসলমান ভাইকে বিভ্রান্ত করছে। যত বড় ধার্মিক লোক হোক না কেন সে যদি ঘরে বসে জপ করে “আল্লাহ, খাবার দাও”, এতে সে কিন্তু খাবার পাবে না। তাকে যে কোনভাবে নিজের খাবার জোগাড় করেই খেতে হবে। তাহলে যে খাবার আমাদেরকে পরিশ্রম করে যোগাড় করতে হচ্ছে সেটাকে কেন আল্লাহর দান বলছি। আল্লাহর দান হলে সেটা তো আসমান থেকে পড়বে। অথবা সেটা হতে হবে উন্মুক্ত। যেমন আলো, বাতাস ইত্যাদি। যা আমাদেকে কস্ট করে যোগাড় করতে হয় না। খাবার আল্লাহর দান হলে সেটা কেন কস্ট করে যোগাড় করতে হয়?

খাবার কি জিনিস?

খাবার হল শক্তির এক রূপ। এটা প্রানী দেহের জ্বালানী। খাবার সব সময় অন্য কোন প্রানী দেহ থেকেই হয়। একটু ভেবে দেখুন, কোন প্রানী বা উদ্ভিদ এর দেহ থেকে আসে না, এমন কোন খাবার দুনিয়াতে নেই। বিজ্ঞান এর এই স্বর্নযুগে গবেষনাগারে হয়ত স্বর্ন বা হীরা বানানো সম্ভব। কিন্তু এক টুকরো খাবার বানানো সম্ভব নয়। কারন একটাই, বিজ্ঞান দিয়ে প্রানী বানানো যায় না। খাবার আসে প্রানী দেহ থেকে। কাজ়েই বিজ্ঞান দিয়ে খাবার বানানো যায় না। দুনিয়ার সব প্রানী আল্লাহর তৈরি। কাজ়েই এই খাবার এর একমাত্র যোগানদাতা আল্লাহ।

খাবার খাওয়ানো কাকে বলে?

অমুক বন্ধু সেদিন আমাকে খাওয়ালো। এখানে কিন্তু ওই বন্ধু আমার মুখ খুলে হাত দিয়ে আমার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেয়নি। বন্ধু এমন কিছু ব্যাবস্থা করেছে যাতে আমি খেতে পারি। ওটা আমাকে নিজেই নিয়ে খেতে হবে। আল্লাহ আমাদের খাবারের ব্যাবস্থা করে রেখেছেন বিভিন্ন প্রানী ও উদ্ভিদ তৈরি করে। সেগুলো আমাকেই সংরহ করে খেতে হবে।

খাবার কি আমাদের জন্য যথেস্ট?

সারা দুনিয়াতে অগনিত প্রানী রয়েছে। তাদের সবার জন্যই খাবার যথেস্ট। খাবার যথেস্ট কিনা এই সমস্যা একমাত্র মানুষের মাঝে দেখা যায়। দুনিয়ার মানুষ ও তাদের বাসস্থান সমস্যা এর উপরে গবেষনা করে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি মজার তথ্য দিয়েছে। আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রদেশ টেক্সাস যার আকার বাংলাদেশের দ্বিগুন এর মতন। সেই টেক্সাস সাইজের একটি চার তলা দালান বানাতে পারলে সেই দালানে সারা বিশ্বের সমস্ত লোককে রাখা যাবে। এই মানুষই যারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে ছটিয়ে রয়েছে। কোথাও অল্প যায়গায় অনেক বেশী মানুষ থাকে। কোথাও অনেক বড় যায়গায় খুবই অল্প সংখক মানুষ থাকে। কল্পনায় সারা দুনিয়ার মানুষকে সেই টেক্সাস দালানে রাখার পরে এবার কল্পনা করুন সারা দুনিয়ার খাবার একসাথে রাখবেন। খাবার বলতে প্রানী ও উদ্ভিদ। সারা দুনিয়ার সব গরু, মহিষ, ছাগল, হাস, মুরগী, পাখী, হরিন, উট ইত্যাদি। হারাম প্রানী ধরলে এই তালিকা আরো বড় হবে। এসব প্রানী সবগুলোকে এক যায়গায় রাখুন। সারা দুনিয়ার সব মাছ এক যায়গায় রাখুন। সকল উদ্ভিদ এক যায়গায় রাখুন। কোটি কোটি একর জমির শশ্য এক যায়গায় রাখুন। যে খোয়াড়ে ওই সব প্রানী রাখবেন, যে গোলায় ওইসব শশ্য রাখবেন - সেটা টেক্সাস থেকে শতগুন বেশী বড় হবে। আসলে দুনিয়াটাই একটা খাবারের কারখানা। এখানে আমাদের খাবারের যোগান রয়েছে আমাদের চাহিদার চেয়ে হাজার গুন বেশী।

আমাদেরকে কস্ট করে রোজগার করতে হয় কেন?

দুনিয়াতে কোন প্রানী খাবারের অভাবে মারা যায় না। কোন প্রানী যদি মুক্ত থাকে তবে ঠিকই সে তার খাবার খুজে নেয়। একমাত্র মানুষ খাবারের অভাবে মারা যায়। কোথাও দেখা যায় খাবার এর প্রাচুর্য। কোথাও দেখা যায় মানুষ অনাহারে রয়েছে। এর দুটি কারন। একটি হল, একজন মানুষ আরো হাজার মানুষের খাবার আটকে রাখে। অপর কারনটি হল, মানুষকে একটি নির্দিস্ট সীমানার (দেশ) মধ্যে আটকে রাখা হয়।

জঙ্গলে একটি বাঘ দৌড় ঝাপ করে হরিন শিকার করে। এর পরে তার যতটুকু লাগে সেটুকু খেয়ে বাকিটুকু রেখে চলে যায়। এর পরে শেয়াল এসে যতটুকু লাগে খায়, বাকিটা রেখে চলে যায়। এর পরে শকুন এসে খায়। এর পরে পোকা মাকড় খায়। অবশেষে হরিনের কঙ্কাল পড়ে থাকে। সেটা খাওয়ারও পোকা রয়েছে। লক্ষ্য করুন, সে যার খাবার খেয়ে বাকীটা রেখে চলে যায়। মানুষের মধ্যে এই পদ্ধতি নেই। মানুষ আরো হাজার লোকের খাবার মজুত করে, অর্থাৎ আটকে রাখে। এই খাবার কিছু অংশ ছাড়িয়ে আনতে হলে তাকে কিছু বিনিময় দিতে হয়। এই বিনিময়টা হল টাকা, একটা কাগজ যেটা পরিশ্রম করার পরে পাওয়া যায়। খাবারে মজুতদারের মতন টাকারও মজুতাদার রয়েছে। একজন মানুষ কোটি কোটি টাকা জমিয়ে রাখেছে। যেটা সে সারা জীবনে শেষ করতে পারবে না। নিজেও ভোগ করতে পারবে না আবার অন্যকে দেয়ও না। সারা দুনিয়ার ৯০% সম্পদ রয়েছে মাত্র ১০% মানুষের হাতে। আল্লাহ সবার জন্য খাবার ঠিকই দিয়ে রেখেছেন, কিন্তু একজন মানুষ অন্য হাজার জনের খাবার আটকে রেখে তাদেরকে অনাহারে রাখে।

জঙ্গলে দেখা যায় কোন পশুর পাল স্থান ত্যাগ করে। হাজার হাজার পশুর পাল সেই এলাকায় পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় জঙ্গলের অন্য প্রান্তে যায়। কয়েক শত কিলোমিটার এই পথ তারা মাসব্যাপী হেটে অতিক্রম করে। হ্যা, পথিমধ্যে বিভিন্ন প্রানীর আক্রমন্য তাদের দলের কিছু প্রানী নিহত হয়। কিন্তু তাদেরকে স্থান ত্যাগ করতে বাধা দেবার কেউ নেই। কোথাও খাবারের অভাব হলে তারা অন্যখানে চলে যেতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা অনেক জটিল। আমরা দেশ বানিয়ে রেখেছি। এভাবে দেশ বানিয়ে আমরা আসলে মানুষকে নির্দিস্ট স্থানের মধ্যে আটকে রাখছি। কাজেই যে দেশে খাবারের অভাব রয়েছে সেই দেশের মানুষেরা ইচ্ছেমতন খাবারের প্রাচুর্যের দেশে যেতে পারছে না। আর যারা সহজে অন্য দেশে যেতে পারে তারা ওই মজুতকারী দলের লোক।

আলো, বাতাস, পানি, খাবার ইত্যাই সবই আল্লাহ তৈরি করেছেন। এগুলো তৈরি করার সাধ্য আমাদের নেই। তিনি দুনিয়াতে আমাদের জন্য খাবার (প্রানী রূপে) ছড়িয়ে রেখেছেন। যা রেখেছেন সেটা আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে হাজার গুন বেশী। বৃস্টির মতন আসমান থেকে খাবার ফেলার দরকার নেই। আমরা নিজেরাই খাদ্য ও স্থানের অসম বন্টন করে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছি। প্রধানত মজুত করার কারনেই আমাদেরকে প্ররিশ্রম করে (আয় করে) খাবার খেতে হয়। ৩০ বছর আগে পানি কিনে খেতে হোত না। এখন পানি মজুত করার পদ্ধতি চালু হয়েছে বলে পানিও কিনে খেতে হয়। আলো, বাতাস ইত্যাদি বিনামুল্যে পাওয়া যায় কারন এগুলো মজুত করার পদ্ধতি এখনো আবিস্কার হয়নি।

পাদটীকাঃ পান বোতলে ভরে বিক্রি করার এই যুগান্তকারী আইডিয়াটা বের করেছিল কোকা কোলা কোম্পানী। ওদিকে সম্প্রতি চাইনিজ এক কোম্পানী কোকের ক্যানের মতন বাতাসের ক্যানও বাজারজাত করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

233086
১০ জুন ২০১৪ রাত ০২:৫৩
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ । অনেক দিন পর যে ভাই। ভালো তো?
১০ জুন ২০১৪ রাত ০৩:০৬
179753
এলিট লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ। হ্যা, ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন তো? অনেকদিন লেখালেখি করা হয়না। কিন্তু প্রতিদিন এই ব্লগের লেখা পড়ি। আপনাদের সাথেই থাকি।
233111
১০ জুন ২০১৪ সকাল ০৭:৪৪
চক্রবাক লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ Tongue
১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৩
180619
এলিট লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
233121
১০ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:২৩
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : হা মানুষরা নিজেরাই নানা গন্ডি দিয়ে নিজেদেরকে আটকে রেখেছে।
উদাহরনগুলোও বেশ ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।
১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৪
180620
এলিট লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
233155
১০ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৫৭
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : আপনার চমৎকার লেখাটি পডে অনেক কিছু জানতে পারলাম । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে Rose
১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৪
180622
এলিট লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
233165
১০ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০৯
মাটিরলাঠি লিখেছেন : রিজিকের মালিক আল্লাহ। তাহলে আমাদেরকে রোজগার করতে হয় কেন?

আল্লাহ বলেছেনঃ
"নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।"
 
"Verily We have created man into toil and struggle" (আলকুরআন,৯০:৪)

একটি উক্তিঃ "God gives every bird its food, but He does not throw it into its nest." -J. G. Holland

জাজাকাল্লাহু খাইরান।

১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৪
180623
এলিট লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
233175
১০ জুন ২০১৪ সকাল ১১:২৫
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : চমৎকার ও শিক্ষনীয় পোষ্ট, এক বিচারে সেরা প্রবন্ধ। অনেক জানলাম ফলে অনেক ধন্যবাদ।

পোষ্টটি ষ্টিকি করা হউক।
১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৫
180624
এলিট লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
233191
১০ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
জাগো মানুস জাগো লিখেছেন : Nice extraordinary explanation. Jazakallah khair.
১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৫
180625
এলিট লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
233299
১০ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : Very important post for human beings. Everybody should the valuable reasons of creation of almighty Allah. Thank you brother for coming up after long time. Plz continue to write more.
১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৫৬
180627
এলিট লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। লেখা চালিয়ে যাবার চেস্টা করব। দোয়া করবেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File