বাঙ্গালী সংস্কৃতি কোনটা?

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:৪২:০৩ রাত



বাংলা নববর্ষে, একদিকে একটি শ্রেনী দেশীয় সংস্কৃতির নামে পান্তা-ইলিশ, মঙ্গল যাত্রা, মুখোশ বা মুর্তি মিছিল ইত্যাদি করছে। অন্যদিকে স্বল্প সংখক মানুষের একটি শ্রেনী এসবকে অন্যদেশীয় বা অন্যধর্মীয় সংস্কৃতি বলে বর্জন করছে বা করতে বলছে। এর মাঝামাঝিও কিছু মানুষ আছেন। তারা নিজেরা এসব করেনও না আবার এগুলোর বিপক্ষেও তারা নন। সবাই শান্তিতে থাকলেই খুশি। অন্যেরা যাই করুক না কেন তাতে যদি কারো কোন ক্ষতি না হয় তবে আর সমস্যা কি?

সংস্কৃতি কথাটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই শব্দটি আংশিক অর্থে ব্যাবহার করতে করতে আমরা এর অর্থই পালটে ফেলেছি। সংস্কৃতি শব্দটির অর্থ ব্যাপক। কিন্তু আমরা সংস্কৃতি শব্দটি বলতে সামাজিক বা দেশীয় সংস্কৃতি বুঝিয়ে থাকি। এই সংস্কৃতি আসলে কি? কোন সমাজের রীতিনীতি, কর্মকান্ড ও কোন ধারনাকে ওই সমাজের সংস্কৃতি বলে। এর উদাহরন এভাবে দেওয়া যেতে পারে।

দেশের কোন আইনে এই কথা লেখা নেই যে বাবার সামনে সিগারেট খাওয়া যাবে না। বড় ভাইকে নাম ধরে ডাকা যাবে না। শিক্ষককে তুই বলে সম্মোধোন করা যাবে না। এগুলো কিন্তু সমাজের রীতিনীতি। আবার অনেক কিছু আছে যেগুলো রীতিনীতি নয় কিন্তু সামাজ়ে প্রচলিত কর্মকান্ড। যেমন ঢেকিতে ধান ভানা, মসলা বাটা, জাল দিয়ে মাছ ধরা, কামার কুমারের শিল্প , হাডুডু খেলা, যাত্রা, পালাগান ইত্যাদি। সামাজিক ধারনার মধ্যে পড়ে বাবা মা ভাই বোন সবাইকে নিয়ে যৌথ পরিবারে বাস করা। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে কোন সমাজে যেটা প্রচলিত রয়েছে সেটাই সেই সমাজের সংস্কৃতি। এর মধ্যে শিল্প সঙ্গীতও রয়েছে। কিন্তু আমরা শিল্প সঙ্গীতকে ঢালাওভাবে সংস্কৃতি বলে জানি। সঙ্গীত শিল্পীকে সংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব বলে জানি।

বাঙ্গালীর সংস্কৃতি কোনটা সেটা বুঝতে গেলে প্রথমে দেখতে হবে বাঙ্গালী কারা। আমরা বাঙ্গালী বলে জ়ানি বাংলাদেশ ও কোলকাতার অধিবাসীদেরকে। এটার তুলনা করা চলে দক্ষিন ভারতের তামিলনাড়ুর তামিল জাতি ও শ্রীলঙ্কার তামিল জাতির সাথে। তামিলনাড়ু নামটিও আমাদের দেশের মতন যার অর্থ হল তামিলদেশ। এই দুই অঞ্চলের তামিলদের মধ্যে অনেক কিছুতে মিল থাকলেও তারা পুরোপুরি এক জাতি নয়। না, রাস্ট্র কিংবা সামাজিকতা কোন পার্থক্য নয়। তারা একই নামের আলাদা দুটি জাতি যাদের মধ্যে মিল অমিল দুটোই রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেরও একই অবস্থা। এরা একই নামে ভিন্ন দুই জাতি। কোলকাতা কাছে হওয়াতে অনেকেরই ওখানে যাবার সুযোগ হয়েছে। বেশীরভাগ লোকই স্থলপথে যায়। স্থল বন্দরের একটি গেটের দুই পাশে বাংলাদেশ ও ভারত। ওই গেটটি পার হলেই দেখতে পারবেন আপনি অন্য এক ভুবনে এসেছেন। সেখানে সবকিছুই আলাদা। শতাধিক পশ্চিমবঙ্গবাসীর মাঝে আপনি দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনাকে দেখেই চেনা যাবে যে আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন।

মিলের কথাটা অনেকবার বলছি কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা জানেন আসলে কোন মিলই নেই। আপনি নিজেই খুজে দেখুন এই দুই বাঙ্গালীর কোন কিছু হুবহু একরকম পান কিনা। কার্জত এই দুই বাঙ্গালী জাতির সবকিছুই আলাদা। কাজেই ওদের সংস্কৃতি ও আমাদের সংস্কৃতি আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে থাকলেই সেটা বাঙ্গালী স সংস্কৃতি হয়ে যাবে না। সেটা হবে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি । আবার বাংলাদেশে চালু থাকলেই সেটা বাঙ্গালী সংস্কৃতি হবে না। সেটা হবে বাংলাদেশী সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি এর মধ্যে ধর্ম একটা বড় প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশে যেমন টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা হয় তেমনি ওদের দেশেও হিন্দু ধর্মীয় বড় সমাবেশ হয়। এ দুটোই একই ধরনের দুই দেশিয় আলাদা দুটি সংস্কৃতি। এর কোনটাই বাঙ্গালী সংস্কৃতি নয়।

আমরা বেশ কিছু সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমদানী করে, কিছুটা পরিবর্তন করে, আমাদের সমাজে ঢুকিয়ে দিয়েছি। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে বিয়ের গায়ে হলুদের অনুস্টান। একই গায়ে হলুদ এই দুই দেশেই আলাদা, সুম্পুর্ন এক নয়। তাহলে কোন গায়ে হলুদলে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলবেন? পশ্চিমবঙ্গেরটা নাকি আমাদেরটা? এর কোনটাই বাঙ্গালী সংস্কৃতি হয়। একটা পশ্চিমবঙ্গীয় অপরটি বাংলাদেশী সংস্কৃতি।

তাহলে বাঙ্গালী কারা? আর বাঙ্গালী সংস্কৃতি কোনটা? অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমরা কেউই নিখাদ বাঙ্গালী নই। আমরা মিশ্র। আমাদের পুর্ব পুরুষেরা বিভিন্ন দেশ হতে বাংলাদেশে এসেছিল। আমরা মিশ্র একটি জাতি। সঠিক বাঙ্গালী যদি কেউ থেকে থাকে তা হলো উপজাতীরা। ওরা হাজার বছর ধরে ওদের সমাজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ওরা আসল বাঙ্গালী হলে ওদের সংস্কৃতিও আসল বাঙ্গালি সংস্কৃতি। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয় । যুক্তরাস্ট্র, অস্ট্রেলীয়া ইত্যাদী দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি বলতে ওরা উপজাতীয় সংস্কৃতি বোঝে। অলিম্পিক বা অন্য কোন আন্তঃজাতিক ক্রীড়া অনুস্টানে তারা উপজাতীয় সংস্কৃতি কে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। ওদিকে আমাদের ডিজিটাল দেশে উপজাতীয় সংস্কৃতি যেটা কিনা আমাদের নিজস্ব সেটা অবহেলিত হয়ে আছে আর অন্য দেশেরটা ধমুধামের সাথে চলছে।

বটগাছের তলায় বসে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পান্তা-ইলিশ খাওয়া, মুখে রঙ মেখে বা মুখোশ পরে মুর্তি নিয়ে মিছিল করা এগুলো কোনটাই বাঙ্গালী সংস্কৃতি নয়। এটা হল বিনোদনের জন্য একটা মেলা বা উতসবের আয়োজন করা। উদ্দেশ্য একটাই - ব্যাবসা। নববর্ষ বা সংস্কৃতি এগুলো উছিলা মাত্র। বড় নেতা ও বড় ব্যাবসায়ীরা আসলে জানে যে জনগন কি চায়। জনগন চায় আনন্দ ফুর্তি ও বিনোদন। নেতারা তো বিনোদন সারা বছর দেয়। আর ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন আয়োজন করে মানুষের পকেট থেকে টাকা খসিয়ে বিনোদন দেয়। ব্যাবসায়ীরা আছে ব্যাবসার ধান্দায়, জনগন আছে বিনোদনের ধান্দায়। ওরা “বাঙ্গালী সংস্কৃতি” কথাটা বলে বিষয়টি গ্রহনযোগ্য করার চেস্টা করে।

বিষয়: বিবিধ

১৬২৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

207993
১৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০২:৪০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : সুন্দর বিশ্লেষন! ভালো লাগলো! Good Luck
208055
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৩১
ভিশু লিখেছেন : ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
Rose Rose Rose
208118
১৫ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:০৭
চোথাবাজ লিখেছেন : যেটা পাকি সংস্কৃতি না

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File