প্রথম প্রেসিডেন্ট কে ছিলেন - এটাও আমরা জানি না
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০২:১৮:৫১ রাত
সেই ব্রিটিশদের পদ্ধতি। divide and rule , জনগনকে বিভক্ত করে শাশন করা। জনগন যখন বোকা হয় তখন রাজনীতিবিদেরা এভাবেই ফায়দা নেয়। এতকাল শুনে এসেছি স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে দ্বন্দ। এই এক ইস্যুতে সারা দেশের লোক দুই ভাগে বিভিক্ত। এখন শুরু হয়েছে কে প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এই নিয়ে দ্বন্দ। যথারীতি আগের মতনই দুই দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দুই রকমের কথা। সমর্থকেরাও কম যায় না। তারাও এই দুই পক্ষের কথায় সায় দিয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছে এটা ঠিক, কেউ বলছে ওটা ঠিক। আসলে কোনটা ঠিক বা বেঠিক এটা সমর্থকেরা ভাবে না। সমর্থকের কথা হল, আমার নেতা যেটা বলেছে সেটাই ঠিক। এর পরে সেটা সামাল দেবার জন্য যুক্তি তর্ক, ইতিহাস ইত্যাদি যোগাড় করে।
এটা সত্যই লজ্জাজনক যে ৪৩ বছর পেরিয়ে যাবার পরে আমরা এখনো স্বাধীনতার ঘোষক বিষয়ে একমত হতে পারলাম না। আরো বেশী লজ্জাজনক যে, কে প্রথম রাস্টপতি ছিল এটাও এখন দ্বন্দের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আর কয়দিন পরে হয়ত মুক্তিযুদ্ধ কত সালে হয়েছে সেটাও দ্বন্দের বিষয়ে পরিনত হবে।
স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে অনেক রকমের পরস্পর বিরোধী যুক্তি ও তথ্য রয়েছে। বিষটির গভীরে গিয়ে আমরা আরো গুলিয়ে ফেলি। সেই ঘোষনার রেকর্ড রয়েছে এবং সেটা সবাই শুনেছে। ওই ঘোষনাতে জিয়াউর রহমান নিজের নাম বলে এর পরে বলেছিলেন যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষনা করছেন। একটি কথা এর চেয়ে স্পস্ট আর কি হতে পারে? জিয়াউর রহমান, শেখ মুজিবর রহমানে পক্ষ থেকে এই ঘোষনা করেছিলেন। এটা এমনই একটি সহজ বিষয়। এই সহজ বিষটাকে আমরা রাজনীতির প্যাচে জটিল করে ফেলছি। স্বাধীনতার ধোষনার পেছনে কি কারন আছে, উনাকে কে নির্দেশ দিয়েছিল, এই ঘোষনা কে তার কাছে পৌছেছিল, এত লোক থাকতে জিয়াউর রহমান কেন ইত্যাদি গবেষনা করেই চলছি। ওদিকে রেকর্ড করা স্পস্ট কথাটির অর্থ বুঝছি না। এর পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ ছাড়া আর কিছুই নেই। জিয়াউর রহমানকে ঘোষক মানলে তো তাকে মুক্তিযুদ্ধের একটি বড় কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিতে হয় - এটা আওয়ামী লীগ কখনো করবে না। ওদিকে আবার জিয়াউর রহমান “বঙ্গবন্ধুর পক্ষে” স্বাধীনতার ঘোষনা করেছিলেন এটা মেনে নিলে তো বঙ্গবন্ধুর অধীনস্ত থাকাটা স্পস্ট হয়ে যায় - এটা বি এন পি কখনো করবে না। এ দুটি দলই কিন্তু তাদের নিজেদের দাপট দেখানোর জন্য ও অপর দলকে ছোট করার জন্য এটা করে। আর সমর্থকেরা, না বুঝেই, আমার নেতা যেটা বলেছে সেটাই ঠিক। ভাবখানা এমন যেন ওই দল সমর্থন করার আগে বোধশক্তি সব জলাঞ্জলী দিয়ে এসেছে।
এই ঘোষোক এর নাম নিয়ে তো অনেক বছর জাতীকে বিভক্ত করা হয়ে গেল। এখন নতুন একটা ইস্যু দরকার। এ কাদনেই এখন রাজণীতির বাজারে নতুন আমদানী হয়েছে “দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে ছিল”। একই ভাবে দই দলই তাদের প্রয়াত নেতার নাম বলছে। এটা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে কিছু মজার তথ্য দেখতে পেলাম। না বাংলাদেশী কোন ওয়েব সাইটে নয়। বিখ্যাত ওয়েব সাইট উইকিপেডিয়াতে। ওদের তথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে একই সাথে দুই জন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওদের কি দোষ। ওরা তো আর এসে দেখে যায়নি। আমাদের কাছ থেকে যা শোনে তাই লেখে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহামানকে বলা হচ্ছে। এটা একেবারেই হাস্যকর। জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের ৬ নাম্বার প্রেসিডেন্ট। তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতার ৬ বছর পরে। এ ব্যাপারে আর কোন কথা বলা প্রয়োজন নেই। ব্যাপারটি খুবই স্পস্ট। বি এন পি আবার যুক্তি দেয়, এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুরোপুরি স্বাধীন হয়নি। তার সাথে সুর মেলাতে গেলে এটা বলতে হয় যে - বাংলাদেশ এখণো পুরোপুরি স্বাধীন হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দেশের প্রেসিডন্ট ছিলেন। এটা একটু জটিল আকার ধারন করেছে। উইকিপেডিয়াতে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শেখ মুজিবর রহমান এর নাম দেওয়া আছে। ওই সময়ে উনার শাশন আমল ছিল ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারী ১৯৭২ পর্যন্ত। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা হয়েছে ঠিক ওই একই সময়ে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। উনিও আওয়ামী লীগের এজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। একটি দেশের প্রেসিডেন্ট কি এমন কোন পদবী যেখানে একই সাথে দুজন ব্যাক্তি থাকতে পারেন? এছাড়া ওই সময়ে তো শেখ মুজিবর রহমান দেশেই ছিলেন না। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে যে একজন স্থায়ী প্রেসিডেন্টের অবর্তমানে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তেমন হলে তো শেখ মুজিবর রহমান দেশে ফেরার পরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে তার চেয়ে অন্তত একদিন বেশী প্রেসিডেন্ট থাকতেন। কিন্তু তা তো হয়নি। স্থায়ী প্রেসিডেন্ট ও অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের আয়ুস্কাল একই ছিল। এখানে গোজামিলটা কোথায়?
শেখ মুজিবর রহমান, আন্দোলনের জন্য ডাক দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে নজিরবিহীনভাবে ঐক্যবধ্য করতে পেরেছিলেন। এই আন্দোলন তার হাতছাড়া হয়ে যায় পাকিস্তান বাহীনির হাতে উনি ২৫ এ মার্চ রাতে গ্রেফতার হবার পরে। উনাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওদিকে, দেশের আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদির উপরে তখন তার কোন নিয়োন্ত্রন ছিল না। দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার পরে একটা অস্থায়ী রাস্ট কাঠামোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শেখ মুজিবর রহমান দেশে থাকলে উনি এই অস্থায়ী রাস্ট্রপতি হতেন। উনি ছিলেন না তাই সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাস্ট্রপ্রতি হয়েছিলেন। আসলে শুধু রাস্ট্রপতি নয়, রাস্ট্রটিই তখন অস্থায়ী ছিল। তখনো বাংলাদেশকে স্বাধীন রাস্ট্র বানানোর যুদ্ধ চলছিল। আস্থায়ী রস্ট্রে স্থায়ী রাস্ট্রপতি হয়না।
অনেক সময় এমন হয় যে বড় নেতা বন্দী হলে পরবর্তী নেতারা হাল ধরে। এক সময় মুক্ত হবার পরে বড় নেতা দেখে যে পরিস্থিতি বদলে গেছে। যে তখন অবসর গ্রহন করে। শেখ মুজিবর রহমান এর ক্ষেত্রে তেমন হয়নি। ১৯৭২ এ দেশে ফিরে আসবার পরে দেশের জনগন তাকে নজীরবিহীনভাবে বরন করেছে। তাছাড়া উনার বিকল্প নেতাও দেশে আর জন্মায়নি। তার এই জনপ্রিয়তায় তখন ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী লীগের কাছে বাংলাদেশের রাস্ট্রক্ষমতায় মুজিবর রহমানকে বসানো ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। আসলে এর পরে থাকেই শুরু হয় মুজিবর রহমানের শাশন আমল। উনি কখনো প্রধানমন্ত্রী শাশিত সরকার আবার কখনো প্রেসিডেন্ট শাশিত সরকার গঠন করেছেন। এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেই রাস্ট্রপ্রধান থেকেছেন, কখনো প্রেসিডেন্ট হয়ে কখনো প্রধানমন্ত্রী হয়ে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম । অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বলে উনাকে প্রথম না মানতে চাইলে তাহলে প্রথম প্রেসিডেন্ট মানতে হবে উনার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আবু সায়ীদ চৌধুরীকে। কিন্তু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। জিয়াউর রহমান তো কখনোই না।
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এর তালিকা দেখুন
বিষয়: বিবিধ
১৮৫৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজকে দেখি,ছেলের কথা সমর্থন করে বক্তব্য রাখলেন খালেদা জিয়া। মা-ছেলের ইতিহাস জ্ঞান জাতীয় পদক পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।
ধন্যবাদ।।
তার চেয়ে আজব তাদের নেতা-নেতি
That is why we looking our freedom after long 43 years!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন