রচনা - রাজনীতিবিদ | সময় ৩০ মিনিট | পুর্নমান ২০
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২৫ মার্চ, ২০১৪, ০৬:১৭:৪৩ সন্ধ্যা
মজা করে রচনাটি লিখেছি - তবে এমন রচনা পাঠ্য বইয়ে থাকলে ভালো হত। রচনা লিখে খাতা জমা দিয়ে দিয়েছি। এখন এটা পড়ে নম্বর দেবার দায়ীত্ব আপনার।
ভুমিকাঃ দুই হাত, দুই পা ও দুই চোখ বিশিস্ট অবিকল মানুষের মতন দেখতে এক প্রকারের প্রানীর নাম রাজনীতিবিদ। এই প্রানীটি রাজনীতি বা রাজার নীতি অবলম্বন করে সবসময় রাজা হতে চায় অথবা অন্ততপক্ষে রাজার আশেপাশে থাকতে চায়। নিন্দুকেরা বলে, রাজনীতিবিদেরা নাকি শুক্রানুর মতন। কয়েক মিলিয়ন শুক্রানু থেকে মাত্র একটি শুক্রানু হতে মানুষ জন্ম নেয়, তাও আবার সব সময় নয়। তেমনি ভাবে মিলিয়ন রাজনীতিবিদ এর মধ্যে মাত্র একটি মানুষ পাওয়া যায়। তাও আবার কপাল ভালো থাকলে। এই প্রানীটিকে কোন দেশের মানুষই ভালো বলে না। উন্নত বিশ্বে এই প্রানীটির কিছুটা অনুন্নত প্রজাতির দেখতে পাওয়া যায়। মিথ্যা বলা ও ক্ষেত্র বিশেষে সরকারী অর্থ আত্মসাধ এর বেশী কোন রাজনীতিবিদসুলভ আচরন তাদের মধ্যে পাওয়া যায় না। এই প্রানীটির সবচেয়ে উন্নত প্রজাতি বাস করে এই উপমহাদেশে আর এদের সবচেয়ে বড় অভয়ারন্য আছে বাংলাদেশে। এই রচনাতে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
চেনার উপায়ঃ তাদেরকে চেনার সবচেয়ে বড় উপায় হল, তাদের মিস্টির মতন গুন। হ্যা, মিস্টি যেখানেই নিয়ে যান, এর চারিদিকে মাছি ভন ভন করবেই। ঠিক তেমনি রাজনীতিবিদ যেখানেই যাক, সাথে পিছে “অমুক ভাই জিন্দাবাদ” বলার লোক সব সময় ভন ভন করে। কথা শুনেও এই প্রানীটি চেনা যায়। তাদের কথায় দেশের সবচেয়ে বড় উপকার করে তার দল আর দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু তাদের বিরোধী দল। এছাড়া কোন মঞ্চে, যে স্বরে তারা ভাষনে দেয় সেটা শুনেও রাজনীতিবিদ চেনা যায়। তাদেরকে চেনার আরেকটি উপায় হল, তাদেরকে ভোটের আগে আগে দেখা যায়। ভোটের পরে তারা আত্মগোপন করেন।
শ্রেনীবিভাগঃ রাজনীতিবিদ বিভিন্ন শ্রেনীর হয়ে থাকে। তবে সাধারনত এদেরকে তিন শ্রেনীতে ভাগ করা হয়ে থাকে।
১। স্বভাবগত ২। ফায়দাগত ৩। বংশগত
দেশের সবচেয়ে বেশী রাজনীতিবিদ এই “স্বভাবগত” শ্রেনীতে পড়ে। এদের স্বভাবটাই এমন যে রাজনীতিবিদ হওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই। কারো বাল্যকালে যদি বিশেষ গুনাবলি দেখা যায়, যেমন, অকারনে মিথ্যা বলার প্রবনতা, কোন কারন ছাড়া ঝগড়া, অপরের অধিকার হরন, নিজেই সব সময় ঠিক, নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো, আত্মসাধ ইত্যাদি। তখন ধারনা করে নেওয়া যেতে পারে যে সে বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হবে। যদিও এই স্বভাবগুলির গোপন ব্যাবহার শিখতে না পারলে সে কখনো প্রমোশন পেয়ে বড় রাজনীতিবিদ হতে পারে না। এই “স্বভাবগত” শ্রেনীটা হচ্ছে রাজনীতিবিদের সবচেয়ে নীচু গোত্র। এদের শিক্ষা দিক্ষা তেমন থাকে না।
“ফায়দাগত” শ্রেনীটা মাঝামাঝি শ্রেনী। এরা সাধারনত শিক্ষিত হয়। এর আসলে অন্য কোন পেষায় নিয়োজিত ছিল। সমাজে ভালো একটা প্রতিস্টা ছিল। হটাত এক সময় রাজনীতির ফায়দাটা বুঝতে পারে। তখন এর রাজনীতিতে আসে। শিক্ষিত ও প্রতিস্টিত হওয়ার কারনে এরা “স্বভাবগত” শ্রেনীর উপরে অবস্থান করে এবং সকল বিদ্যা খুব অল্প সময়ে শিখে নিতে পারে। সাবেক ছাত্রনেতারাও এই শ্রেনীতে পড়ে। এরা সবচেয়ে ঝানু রাজনীতিবিদ। এরা প্রমোশন পেয়ে অনেক উপরে যেতে পারে।
“বংশগত” শ্রেনীটি হচ্ছে সবচেয়ে উন্নত শ্রেনী। এরা শুরুই করে বড় থেকে। রাজনীতির মাঠে নামার আগে তারা ভাজা মাছটি উলটে খেতে জ়ানেন না। পরে অবশ্য বোঝা যায় মাছ ও মাছের কাটা তো দুরের কথা প্লেটটিও খেয়ে ফেলেন। এই উপমহাদেশে বংশীয় রাজনীতি বেশ চালু আছে। এ কারনেই আমরা রাস্ট্রপ্রধান পদে বেশীরভাগ সময় বংশগত রাজনীতিবিদ দেখতে পাই। এই বংশগুলির নতুন প্রজন্ম , কোন রাখ ঢাক ছাড়াই সক্রিয় হয়ে উঠেছে দল ও দেশকে উত্তরাধিকার সুত্রে পাবার জন্য।
স্বভাব ও চরিত্রঃ একজন রাজনীতিবিদের উদ্দেশ্য কেবল দুটি। ক্ষমতায় আরোহন ও বিরোধী দল দমন। এই দুই উদ্দেশ্য সফল করতে এমন কোন কাজ নেই যা তারা করেন না। এর জন্য দেশ বিক্রি হোক, মানুষ না খেয়ে থাকুক, দেশে খুনাখুনি হোক এতে তাদের কিছু আসে যায় না। ইদানিং আবার যুক্ত হয়েছে আরেকটি উদ্দেশ্য - টাকার তিমি হওয়া। এতে তাদের স্বভাব আরো বেশী জটিল হয়ে উঠেছে। তবে যাই করুক না কেন - উনাদের চরিত্র সব সময় ফুলের মতন পবিত্র থাকে।
গুনাবলীঃ একজন রাজনীতিবিদের গুনাবলী বলে শেষ করা যাবে না। প্রথম গুন হল নির্লজ্জভাবে মিথ্যা বলা। এমনভাবে মিথ্যাটা বলতে হবে যেন জনগন গালি নয় বরং তালি দেয়। এর পরে যে গুনাবলী থাকতে হবে তা হল বিরোধী পক্ষকে সব আজেই দোষারোপ করা। আজ মেঘলা কেন, আকাশে কেন সুর্য দেখা যাচ্ছে না এটার জন্য বিরোধী পক্ষ দায়ী। বিরোধী পক্ষের অন্যায় ধরা পরলে সেটা নিয়ে দিরোধী দলের গুস্টি উদ্ধার করতে হবে। ওদিকে নিজেদের অন্যায় ধরা পড়ে গেলে তখন সেটাকে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র বলতে হবে । বিভিন্ন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জনগনের কাছে ভোট চাইতে হবে। এবং পরে এগুলো ভুলে যেতে হবে। ইতিহাস নিজের মতন বদলাতে যানতে হবে। নিজেকে দেশপ্রেমিক জাহির করার জন্য কথায় কথায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এর কথা বলতে হবে। এর সাথে দলের বংশীয় হাই কমান্ড এর স্নেহভাজন হবার জন্য দেশ এর সব ভালো কাজের কৃতিত্ব মরহুম হাই কমান্ড নেতাকে দিতে হবে। নিজে সরকারী দলে থাকলে বলতে হবে হরতাল দেশের ক্ষতি করে। কিন্তু বিরোধী দলে থাকলে বলতে হবে হরতাল হল গনতান্ত্রিক অধিকার।
দেশের কিছু জিনিয়াস রাজনীতিবিদেরা এই সব গুনাবলীকে ছাপিয়ে নিজেদের কিছু গুনাবলী প্রদর্শন করে দৃস্টান্ত স্থাপন করেছেন। যেমন নিজের মিছিলে নিজ়েরাই বোমা মেরে বিরোধী দলের উপরে দোষ চাপানো। হটাত করে দেশে সংখালঘু অত্যাচার এর শুরু করা। হটাত করে দেশে মুসলিম জঙ্গী আবিস্কার করা। যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার শুধূমাত্র বিরোধী দলেই খুজে পাওয়া। ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন খাতে সরকারী টাকা আত্মসাধ, টাকার পাহাড় বানানো, সরকারী পদবী দলীয়করন করা, টেন্ডারবাজী, হল দখল ইত্যাদি গুনাবলী না থাকলে রাজনীতিবিদের সন্মান থাকে না।
অপকারীতাঃ দেশের যত রকমের অশান্তি, মারামারি, অস্ত্রবাজী, চাদাবাজী, টেন্ডারবাজী, হরতাল, ভোটকেন্দ্র দখল, মিছিলে গুলি, জেল জরিমানা, গুম , হত্যা ইত্যাদি সব ধরনের অপকর্মের পেছনে রয়েছে রাজনীতিকে অপব্যাবহার করা রাজনীতিবিদেরা । এরা না থাকলে দেশের ক্রাইম কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। রাজনীতিবিদিদের জন্য সংখালঘু নির্যাতিত হচ্ছে। দেশে জঙ্গী দেখা যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও দেশে রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীও খুজে পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি মানুষ মুরগীর ব্যাবসা ছেড়ে দিয়ে নিজেরা স্বানামধন্য ঘাতক দালাল নির্মুলকারীর হয়ে যাচ্ছে।
উপকারীতাঃ এই একই বিষয় আবার আমাদেরকে উপকারও করছে। দেশের ৯০% ক্রাইম এর দায়ভার যাচ্ছে রাজনীতিবিদের উপরে। এভাবে তারা মাত্র কয়েক হাজার মানুষ মিলে, দেশের ১৫ কোটি মানুষের পাপ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিচ্ছে।
উপসংহারঃ রাজনীতিবিদদেরকে এত দোষ দিলেও এদেরকে যারা তৈরি করে তাদেরকে জনগন বলে। জনগন হচ্ছে ভেড়ার মতন নিরীহ এমং নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন প্রানী। নিজের কোন ভাল মন্দ বিচার নেই। সবাই যা করে তারাও তাই করে। এই জনগনই রাজনীতিবিদকে তৈরি করে। একজন সৎ স্কুল শিক্ষক ও সনামধন্য সন্ত্রাসীর মধ্য থেকে জনগন সন্ত্রাসীকেই নেতা হিসাবে পছন্দ করে। কারন তাদের ধারনা - নরম লোক দিয়ে রাজনীতি হয় না। এই জনগনই মিথ্যা আশ্বাস শুনে রাজনীতিবিদিদের ভোট দেয়। এই জনগনই তাদের আশে পাশে মাছির মতন ঘুর ঘুর করে, এই জনগনই দুশ্চরিত্র রাজনীতিবেদকে “ফুলের মতন পবিত্র” বলে। জনগনের ভেতর থেকেই রাজনীতিবিদ বের হয়। যেমন হয় জনগন - তেমনই হয় তার রাজনীতিবিদ
বিষয়: বিবিধ
১৮৫৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটু তথ্য যোগ করা দরকার। বংশগত রাজনিতিবিদ শুধু উপমহাদেশে না বড়বড় দেশগুলিতেও আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন