ইসলামের অবমাননা এবং আসিফ মহিউদ্দিন বনাম শফিউর রহমান ফারাবী

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৩:৩৫ দুপুর



এই দুইজনকে বাংলা ব্লগিং জগতের সম্পুর্ন বিপরীত মেরুর সনামধন্য দুজন তারকা বললে হয়ত বাড়িয়ে বলা হবে না। যাদেরকে সবাই চিনে তারাই তো তারকা। শাহবাগের ব্রান্ড গায়ে লাগিয়ে নির্দ্বিধায় বছরের পর বছর বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুকে ইসলামের দুর্নাম গেয়ে বেড়িয়েছে এই আসিফ। শুনেছি তার আসল নাম নাকি প্রদ্যুত কুমার ভৌমিক। যাই হোক, সে যে ধর্মের হোক বা ধর্মহীন হোক না কেন ইসলাম নিয়ে টানা হেচড়া না করলে কোন সমস্যা ছিল না। যদিও এটাই তাকে বিখ্যাত করেছে। আহত হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। এর পরেও তার জ্ঞান থেমে নেই। শোনা যাচ্ছে এই মহাজ্ঞানী নাকি এখন জার্মানীতে আছে।

ওদিকে ফারাবী আলোচনায় আসে ফেসবুকে মন্তব্য করে। আসিফ এর সহযোদ্ধা দুই নাম্বার মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রাজীব নিহত হবার পরে ওই আক্রমনাত্মক মন্তব্য করার অপরাধে ফারাবীকে জেলে যেতে হয়েছিল। যদিও ওর চেয়ে বেশী আক্রমনাত্মক মন্তব্য আমি প্রায়ই দেখতে পাই। এগুলো দেখার কেউ নেই। মন্তব্য তাকে আলোচনায় নিয়ে আসলেও সে বিখ্যাত হয়ছে গ্রেফতার হওয়ার পরে।

হাজার অমিল থাকলেও এদের দুজনের মাঝে একটা মিল আছে। তা হল, এদেরকে নিজ নিজ প্রতিপক্ষই বিখ্যাত বানিয়েছে। আসিফ যাই লেখুক না কেন, এটা নিয়ে ইসলাম প্রেমীরা যদি মাতামাতি না করত তবে সে বিখ্যাত হত না। ওদিকে ফারাবী যাই লেখুক না কেন, সেটা নিয়ে দল প্রেমী প্রশাশন যদি টানা হেচড়া না করত তবে সেও বিখ্যাত হোত না।

যাই হোক মুল কথায় আসি। সম্প্রতি ইসলাম নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করে ও আপত্তিকর ছবি দিয়ে আসিফ ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছে। এরই সমালোচনায় ফারাবী টুডে ব্লগে একটি লেখা লিখেছে। ইসলামের অবমাননা হলে মুসলমানের গায়ে জ্বালা হবে এটা স্বাভাবিক। এজন্যই ফারাবী ওই লেখাটি লিখেছেন। উনার হয়ত আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল সেটা হল ইসলামের নামে দেওয়া অপবাদ যুক্তির মাধ্যমে অপসারন করা। সেই আজটি উনি অত্যান্ত সুন্দর ভাবে করতে পেরেছেন। কিন্তু মজার বিষয়, ফারাবীর কারনেই আমি এবং আমার মতন অনেকেই আসিফের ওই ফেসবুক পোস্টটি দেখেছে। এদের মধ্যে হয়ত কেউ লাইক দিয়েছে আবার কেউ হয়ত আসিফকে গালাগালি করেছে। ওই পোস্টে আমি দেখেছি – হাজার হাজার মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য রয়েছে। যারা আসিফের ওই পোস্ট লাইক করেছে বা আসিফকে বাহবা দিয়েছে তাদের সম্পর্কে আমি কিছু বলছি না। কিন্তু যারা ওই পোস্টে আসিফকে গালি দিয়েছে বা হত্যার হুমকি দিয়েছে, তারাই আসিফের উপকার করছে। বিশ্বাস করবেন কিনা যানিনা, আসিফ আসলে এইটাই চায়। আচ্ছা, বুঝিয়ে বলছি।

আন্তঃজাতিক আইনে শরনার্থী অধিবাসন (রিফিউজি) বলে একটি জিনিস আছে। ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনীতি, এই তিনটি কারনের যে কোন একটির জন্য কেউ যদি তার নিজ দেশে জীবন বিপন্ন হবার আশঙ্কায় থাকে তবে সে অন্য কোন দেশে আজীবন থাকার আবেদন করতে পারে। রাজনৈতিক কারনটা দেখানো সহজ বিধায় বহু বাংলাদেশী, উন্নতে দেশে এই আবেদন করে। সফল হওয়া না হওয়া পরের ব্যাপার। এমন রাজনৈতিক কারন দেখিয়ে হাজার আবেদন পত্র জমা হয়, তাই এতে সফল হবার সম্ভাবনাও কম। ওদিকে ধর্মের কারন দেখিয়ে আবেদন করে হাতে গোনা কয়েকজন। এদের বেশীর ভাগই ইসলাম নিয়ে বাজে কথা লেখার লেখক। এখানে সফল হবার সম্ভাবনা বেশী। অপরদিকে এটা যদি দেখানো যায় যে, তার লেখা পড়ে লোকজন তাকে খুন করতে চায়, তাহলে তো কথাই নেই। আমি যেভাবে বলছি, বিষয়টা এতো সহজ নয়। বিভিন্ন আইন ও আদালতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবে মুল বিষয় এটাই।

আসিফ নাকি জার্মানীতে আছে। সেখানে ধর্মীয় কারনে আশ্রয় চাওয়া তার জন্য বিচিত্র নয়। সে তো বাংলাদেশে একজন প্রতিস্টিত ইসলাম বিরোধী। এখন তাকে প্রমান করতে হবে যে তার ইসলাম বিরোধী লেখালেখির জন্য তার জীবন বিপন্ন হবার আশঙ্কা রয়েছে। এর জন্য ওই একটি পোস্টই যথেস্ট। ওখানে অনেকেই তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। আর অকথ্য ভাষায় গালাগালীর তো অভাব নেই। সে জার্মানে এটা দেখাতে পারবে। এক্ষেত্রে সাপোর্টের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সমালোচনাকে সে দলিল হিসাবে দেখাতে পারে। এমনকি ফারাবীর ওই লেখাটিও আসতে পারে। এভাবে তার জার্মানে আজীবন থাকার সুযোগ মিলেও যেতে পারে। এখানে আসিফের সবচেয়ে বড় বাধা হল তার সমর্থক যারা পোস্টটি লাইক করেছে বা তাকে বাহবা দিয়েছে। এবার আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে আসিফের বিরোধীরাই আসিফের সবচেয়ে বড় উপকার করছে। যারা তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে তারা তার সবচেয়ে বড় উপকারকারী। যারা ফারাবীর মতন সমালোচনা লিখছে তারা ছোট উপকারকারী।

আসলে এমন ইসলাম বিরোধীদের ইসলাম প্রেমীরাই তারকা বানায়। ইসলামকে ভালোবেসে এদের বিরোধীতা ও সমালোচনা অবশ্যই করবেন। তবে দয়া করে দুটি জিনিস মাথায় রাখবেন।

- তাদের কোন পোস্টে কোন প্রকারের মন্তব্য (কমেন্ট) করবেন না (গায়ে যতই জ্বালা করুক না কেন)

- তাদের নাম উল্লেখ করে কোন সমালোচনা লিখবেন না

তাহলে কি করবেন? তাদের কোন পোস্ট এর বিষয়বস্তু নিয়ে নিজেই ইসলাম সমর্থিত একটি পোস্ট দিন ফেসবুকে অথবা কোন ব্লগে। অবশ্যই তার নাম ইল্লেখ করবেন না। যেমন লিখতে পারেন, “সেদিন এক ইসলাম বিরোধীর লেখায় এই জিনিস পেয়েছি, আজ তার উত্তর এভাবে দিচ্ছি” ইত্যাদি। এতে ইসলামের প্রতি আপনার দায়ীত্ব পালনও হবে আবার ওই ইসলাম বিরোধীকে তারকা বানানো বা তার উপকার করাটাও বন্ধ হবে। ইসলাম বিরোধীদের ফেসবুক বা ব্লগ পোস্টে মন্তব্য করলে তার পেজের ভ্যালু বেড়ে যায়। সে বেশি উতসাহিত হয়। ইসলাম বিরোধী কথা লিখলে গালাগালি হলেও, কয়েক হাজার কমেন্টস। মন্দ কি? আমাদের তরুন সমাজের এক অংশ কিন্তু এর লোভেই ধীরে ধীরে নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। মোট কথা যে যাই লিখুক না কেন, আপনি কোন মন্তব্য করবেন না। প্রয়োজন হলে নিজে অন্য একটা পোস্ট দিয়ে তার নাম উল্লেখ না করে তার জবাব দিন। কিন্তু ভুলেও তার পোস্টে কোন মন্তব্য করে বা তার বদনাম করে কোন লেখা লিখে তাকে তারকা বানাবেন না। তার উপকার করবেন না। কোন সাড়া না পেলে একদিন এমনিতেই এসব বন্ধ হয়ে যাবে। আমি নিজেই দেখেছি, অনেক নব্য নাস্তিক, কয়েকদিন ইসলাম বিরোধী বেশ লেখালেখি করেছে। কেউ তাকে পাত্তা না দেওয়ায় সে এমনিতেই লেজ গুটিয়ে ফেলেছে। হ্যা, ওদেরকে একেবারে পাত্তাই দিবেন না।

আসিফের লেখা একটি ফেসবুক পোস্ট এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে। সে লিখেছিল

“আল্লাহর কোন ক্ষমতা নেই। আমি তো ফেসবুকে কমেন্ট করতে পারি। আল্লাহ এখানে একটি কমেন্ট করে দেখাক তো। আনাল হক, আমিই আল্লাহ।” (নাউযুবিল্লাহ)

অনেক চেস্টা করেও, এই লোকটির জ্ঞানবুদ্ধির তুলনা ভাল কিছুর সাথে করতে পারছি না। একটি গল্প মনে পড়ে গেল। একদিন এক কুকুর রাস্তায় একদল ভেড়ার পাল দেখে তাদেরকে বলছে “দেখেছ, আমি আমার মালিকের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমতাবান”। ভেড়া বলল “কিভাবে”। কুকুরটি বলল “আমি এই রাস্তায় লাইট পোস্টে এক ঠ্যাং উচু করে মুতে দিতে পারি, রাস্তার মাঝখানে হাগু করতে পারি, মালিক এটা করে দেখাক তো। আমিই বেশী ক্ষমতাবান”। ভেড়ার দল এটা শুনে “ঠিক কথা, ঠিক কথা” বলে মাথা নাড়াতে নাড়াতে চলে গেল। আসিফ ও তার সমর্থকদের দশা কিছুটা এমনই।

ওদেরকে ঘেউ ঘেউ করতে দিন। ওদের পোস্টে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। ওদের নাম না উল্লেখ করে ওদের মতবাদ এর বিরুদ্ধে নিজে পোস্ট দিন। সাড়া না পেলে ঘেউ ঘেউ এমনিতেই থেমে যাবে। দয়া করে সাড়া দিয়ে ওদের তারকা বানাবেন না বা ওদের উপকার করবেন না।

বিষয়: বিবিধ

৩০২২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

180244
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:০৪
বিডি রকার লিখেছেন : আসিফ আর ফারাবির অন্যতম বৈশিষ্ট হল - দুইজনেই বহুরূপী চরিত্রের অধিকারী ! এবং দুজনের মাথা পুরোপুরি ঠিক নেই ... Yawn Yawn MOney Eyes It Wasn't Me!
180256
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৮
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ।
আপনার পোষ্টের সাথে সহমত।
180269
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২১
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
180275
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
শেখের পোলা লিখেছেন : সঠিক যুক্তি৷ ধন্যবাদ৷
180309
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
আবু আশফাক লিখেছেন : সুন্দর পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
180310
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
অজানা পথিক লিখেছেন : সহমত। কমেন্টস করে প্রতিবাদ করাটাকে অঅমিও অনুচিৎ মনে করি
180391
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১৩
সঠিক ইসলাম লিখেছেন :
বিডি রকার লিখেছেন : আসিফ আর ফারাবির অন্যতম বৈশিষ্ট হল - দুইজনেই বহুরূপী চরিত্রের অধিকারী ! এবং দুজনের মাথা পুরোপুরি ঠিক নেই ..


১০০% সত্য !
180526
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:৫৮
শিকারিমন লিখেছেন : চমত্কার লিখেছেন। সত্যি ই আমাদের সব কিছু মাথায় রেখে বিরোধিতা করা উচিত।
যেমনি ভাবে আমরা তসলিমা নাসরিন এর ব্যাপারে বিরোধিতা করতে গিয়ে তাকে অনে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
188213
০৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৬:৫৮
আহসান সাদী লিখেছেন : চমৎকার বলেছেন আপনি। এই কথাটাগুলোই আমাদের উপলব্ধিতে আসা উচিত।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

জাযাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File