মুসলিমেরা কেন জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে?

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:২১:৩৫ সকাল



এই কথাটি আমার মতন অনেকেই ছোট বেলা থেকে শুনে ও জেনে আসছেন। মুসলিমেরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে। এটা মুসলমানেরা স্বীকার করে এবং সান্তনার জন্য এটাও বলে যে ইহুদী নাছারাদের জন্য দুনিয়া হল সর্গ স্বরূপ। মুসলমানেরা এই ক্ষনস্থায়ী জীবনে পিছিয়ে আছে তো কি হয়েছে পরোকালে ঠিকই তারা ইহুদীদেরকে পেছনে ফেলে জান্নাতে চলে যাবে।

অপ্রাসঙ্গিক হলেও বোঝানোর স্বার্থে দেশের সাম্প্রতিক একটি বিষয় বলছি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার পরে দেশের স্বরাস্ট্র মন্ত্রী ২ দিনের মধ্যে দোষীদেরকে গ্রেফতার করার কথা বললেন। পরে দেরী দেখে জনমনে প্রশাশনের ব্যার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, এক সময় মন্ত্রী বলেন “সরকার মানুষকে বেডরুমে নিরাপতা দিতে পারে না”। হটাত কথাট শুনে মনে হয়, ঠিকই তো, সরকার নিরাপত্তা দিবে রাস্তায়, বাজারে, বেডরুমে নয়। আসলে বিষয়টি সম্পুর্ন উল্টো। সরকার বা প্রশাশনের ব্যার্থতার জন্যই সন্ত্রাস এখন রাস্তা থেকে একেবারে বেডরুমে ঢুকে পড়েছে। সঠিক কথাটি হবে “এই সরকারের শাশন আমলে মানুষ বেডরুমেই নিরাপদ নয়, রাস্তায় তো আরো নিরাপত্তাহীন”।

মুসলমানেরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে – এটা এমনই একটা ভুল বোঝনো, বিভ্রান্তকারী কথা। সঠিক কথাটি হবে “বিশ্বের যে অঞ্চলের মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে আছে, সেই অঞ্চলে মুসলমান জনবসতি কম”। এবার একটু মিলিয়ে দেখি।

মুসলিমেরা যদি পিছিয়ে থাকে, তবে কারা এগিয়ে আছে? উত্তরঃ অমুসলিমেরা। এই অমুসলিমদের কত প্রকারের ধর্ম আছে সে বিষয়ে কোন ধারনা কি আছে? জাতিসঙ্ঘের তথ্য মতে বিশ্বে ধর্ম আছে ৪ হাজারের উপরে। এরা কিন্তু সবই অমুসলিম। ইউরোপ আমেরিকাতে সাইন্টোলজি নামক এক ধর্ম আছে। অনেকে হয়ত নামও জানে না। আমারিকাতে ১৯৫২ সালে রন হাবার্ড নামক এক ব্যাক্তি এই ধর্মের প্রবর্তন করেন। সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটি লোক আছে এই ধর্মের অনুসারী। নামকরা অনেক তারকাও আছেন। আমি এদের উপাশনালয় দেখেছি। এখন যদি গননা করেন যে বিশ্বের কতজন সাইন্টোলজিস্ট বিজ্ঞানী আছে তাহলে হয়ত ২-৩ জনও পাবেন না। এবার কি আপনি বলবেন যে সাইন্টোলজী ধর্মের অনুসারীরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে, সারা বিশ্বে মাত্র কয়েক জন। না, এটা বলবেন না। কারন এই ধর্মের অনুসারীর সংখা কম। এদের বিজ্ঞানীও কমই হবে।

এ তো গেল খুচরা ধর্মে। বিশ্বে প্রধান ধর্ম মাত্র ৫ টি। খ্রিস্টান (৩৩% - ২০০ কোটি), মুসলমান (১৯% - ১২০ কোটি), হিন্দু (১৩% - ৮১ কোটি) , চাইনিজ আদি ধর্ম (৬% - ৩৮ কোটি), বৌদ্ধ (৫% - ৩৫ কোটি)। বাকিরা সব অন্যান্য খুচরা ধর্মের অনুসারী অথবা নাস্তিক। মুসলমানেরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে কিনা সেটা বিচার করতে গেলে মুসলমানদেরকে অন্য যে কোন একটি ধর্মের সঙ্গে তুলনা করতে হবে। তা না করে আমরা ১৯% মুসলমানদেরকে এক দলে আর বাকী ৮১% সব ধর্মের লোককে আর এক দলে রেখে গননা করছি যে কাদের কয়টি বিজ্ঞানী আছে। মানে এক দলে মুসলমানেরা একা আর অপর দলে বিশ্বের সব ধর্ম। এমন অসম বিচারে শুধু বিজ্ঞানী নয়, মুসলমানদের সবকিছুই কম পাওয়া যাবে। ৮১ কোটি হিন্দুর মধ্যে কতজন বিজ্জানী আছে? একদিকে হিন্দু আর অন্যদিকে সারা বিশ্ব রেখে তুলনা করুন। এখন কি মনে হচ্ছে যে হিন্দুরা জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে? একই তুলনা অন্য সকল ধর্ম নিয়ে আলাদা আলাদা করে করে দেখুন। আরো ভালো করে বুঝতে পারবেন।

আসলে কোন ধর্মের মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে বা পিছিয়ে নেই। এমন আগে পিছে আছে কোন দেশ, কোন জাতী। বিজ্ঞানে উন্নত যে সব অঞ্চল রয়েছে সেই সব অঞ্চলেই বেশি বিজ্ঞানী জন্মায়। দুই তিনশত বছর আগে ইউরোপ ছিল বিজ্জানে উন্নত, একশত বছর আগে রাশিয়া, জাপান এখন হয়েছে আমেরিকা। বিশ্বের সব বিজ্ঞানী এখন আমারিকাতেই পাওয়া যায়, হোক সে অন্য দেশের নাগরিক। বিভিন্ন দেশ ও জাতীর মধ্যে সেই ধরনের পরিবেশ রয়েছে যাতে করে মানুষ তার মেধার বিকাশ করতে পারে। ২-৩ টা দেশে লেখা পড়া করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দেখেছি যে বাংলাদেশীরা আসলেই মেধাবী। কিন্তু আমরা সঠিক সুযোগ ও পরিবেশের অভাবে ইউরোপ আমেরিকার মতন বেধাটাকে কাজে লাগাতে পারি না। তাই আমাদের দেশে ওদের মতন অত বিজ্ঞানী খুজে পাওয়া যায়না।

মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশী তেলের খনি রয়েছে। এই তেল বিক্রি করে ওই দেশগুলো ধনী দেশের খাতায় নাম লিখিয়েছে। এখন আমি যদি বলি যে মুসলমানেরা যেখানে থাকে সেখানে মাটি খুব ভাল হয়, মাটিতে বেশি খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। আমার এই কথাটা হাস্যকর হবে। মুসলমানেরা বসবাস করলে তেলের খনি হয় না, বরং যেই অঞ্চলে তেলের খনি রয়েছে সেই অঞ্চলে মুসলমান জনবসতি বেশী। ঠিক একইভাবে, মুসলমানেরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে নেই, বরং যেই অঞ্চলের লোকেরা জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে আছে সেই অঞ্চলে মুসলমান জনবসতি কম।

জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে বাস করেও মুসলমানদের মধ্যে বহু জ্ঞানী- বিজ্ঞানী রয়েছে। অনেকে আবার বলে যে মুসমান বিজ্ঞানী খুজতে কয়েকশত বছর পেছনে যেতে হয় কেন? তা তো হবেই। ওই সময়েই বিশ্বে বিজ্ঞানী ছিল যারা মানব জাতিকে নিঃর্স্বাথ ভাবে তার আবিস্কার দিয়ে গেছে। এখন তো আমরা বিল গেটস , স্টিভ জবস বা ফেসবুকের মালিক (মার্ক) এদের মতন ব্যাবসায়ীকে বিজ্ঞানীর খাতায় নাম দিয়েছি। ব্যাবসা তো সবই অমুসলিমদের হাতে। মুসলিম জ্ঞনী-বিজ্ঞানী এর একটি তালিকা এখানে দেখতে পারেন

বিষয়: বিবিধ

২২১৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

174858
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৩৫
শেখের পোলা লিখেছেন : সরল সঠিক যুক্তি৷ চমৎকার, ধন্যবাদ৷
174871
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৭:৩৯
চেয়ারম্যান লিখেছেন : হেভ এ লুক দিস সাইট
http://www.muslimheritage.com/
174879
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:১০
আল সাঈদ লিখেছেন : খুবই যুক্তিযু্ক্ত বিশ্লেষণ। ভালো লাগলো
174893
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
হতভাগা লিখেছেন : ভাল লিখেছেন । মুসলমানদেরকে বিজ্ঞানের ব্যাপারে আরও এগিয়ে আসতে হবে , কারণ তাদের কাছেই বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়ে সবচেয়ে বড় ও মূল্যবান বইটি আছে ।
174949
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
আহমদ মুসা লিখেছেন : মুসলমানরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে নেই এবং কখনো ছিলও না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যেখানেই যুদ্ধ বিগ্রহের ও মানব সৃষ্ট বিপর্যয়ের ফলে জনবসতি ও কোন সমাজবদ্ধ মানবগোষ্টী ভয়াবহ অস্থিত্ব সংকটে পড়ে বিলিন হয়েছে সেখানেই দলিত ও নির্যাতিত সম্প্রদায় জুলুমবাজ কায়েমী স্বার্থের ধ্বজাধারীদের দ্বারা কালক্রমে নিশ্চিহ্ন হয়ে নিজস্ব সকীয়তা হারাতে হয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, মুসলমানদের সামরাজ্যে বিস্তৃতির ফলে যেসব ভৌগলিক অঞ্চলের জনবসতিতে শিক্ষা দিক্ষা ও সভ্যতায় মুসলমানদের আগমের পূর্বে পিছিয়ে ছিল সেসব এলাকাতে সভ্যতার যেমন উন্নতি হয়েছে তেমনি শিক্ষা দীক্ষায়ও মানুষ উন্নতির শিখরে উঠেছিল। আর যেসব এলাকা মুসলমানদের সামরাজ্যে থেকে হাতছাড়া হয়ে পড়েছিল অথবা মুসলমানদের পতন ঘটেছে সেখানে একদিকে যেমন মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে অন্যদিকে সভ্যতা ও শিক্ষা দীক্ষায়ও চরম অবনতি ঘটিয়েছে। আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। বৃটিশরা আসার আগে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ সভ্যতা, শিল্প-সাংস্কৃতি ও শিক্ষা দীক্ষায় পৃথিবীর সেরা জাতি হিসেবে বিবেচিত হতো। অথচ ইংরেজরা আসার পর তাদের সাম্রাজ্যে ঠিকিয়ে রাখার স্বার্থে সাত আটশো বছরের ঐতিহ্যবাহী সোনালী যুগের সমস্থ ব্যবস্থাকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করে দিয়ে লুটপাটের মাধ্যমে চাড়াঁ বানিয়ে ছাড়লো।
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:০৫
202421
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : মুসা ভাই আপনার সাথে সম্পুর্ণ একমত
174963
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর গুরুত্বপুর্ন পোষ্টটির জন্য। জ্ঞান বিজ্ঞানে কেউই কখনও পিছিয়ে ছিলনা। ১৯৯১ সালে প্রবল ঘুর্নিঝড়ে চট্টগ্রাম উপকুলিয় অঞ্চলে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু একেবারে সমুদ্রের ধারে অবস্থিত কিছু কুঁড়েঘর নষ্ট হয়নি। এর কারন ছিল পুর্বপুরুষদের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে সেই ঘরগুলি বিশেষ ধরনের দোচালা ছাউনি দেয়া হয়েছিল। যার কারনে বাতাস কেটে বেরিয়ে গেছে। এভাবে প্রত্যেক এলাকাতে চিকিৎসা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য স্থানিয় কিছু জ্ঞান ও প্রকৃতির দান কে ব্যবহার করা যায়। একটু ভাল করে দেখলেই বুঝা যাবে যে সকল জিনিস কে দেখিয়ে এগুলিতে মুসলিমদের কোন অবদান নাই বুঝান হয় তার বেশিরভাগই মুলত বিলাসদ্রব্য।
174981
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:২৮
ঈগল লিখেছেন : ধন্যবাদ এলিট ভাই। প্রাসঙ্গিক একটি লিখা। গতকালও এই সম্পর্কে একজন ভাই পোস্ট দিয়েছিলেন। মুসলিমরা মূলত পিছিয়ে আছে তাদের দ্বীনি চেতনা থেকে। তারা আদর্শিক দ্বন্দে ভূগছে। বুঝে উঠতে পারছে না তাদের কি কর উচিত।
175859
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
জারা লিখেছেন : খুবই চমৎকার যুক্তি বিশ্লেষন। ভালো লেগেছে।
175915
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : চমৎকার বিশ্লেষন।
১০
178248
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৪৭
অজানা পথিক লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File