বিয়ের গল্প ঃ চতুর্থ
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:০০:০৩ রাত
বিয়ে নামক দিল্লির লাড্ডু খেয়ে বা না খেয়ে পস্তাননি এমন লোক খুজে পাওয়া কঠিন। তার পরেও এই লাড্ডুর প্রতি আমাদের আগ্রহ কখনোই কমছে না। বিয়ে কেউ করে পরিবারের পছন্দে, কেউ করে নিজের পছন্দে। মজার ব্যাপার ফলাফলে খুব একটা পার্থক্য দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ইত্যাদি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমার বেলায় এসব কিছু ছিল না। কিন্তু তার পরেও এটা ছিল দুরহ এক কাজ। কারন আমার বিয়ের কনে ইন্দোনেশিয়ান। আল্লাহর রহমতে কিভাবে এটা সমাধান হল সেই কাহিনীই লিখেছি আজ।
বিদেশী কোন নারীকে বিয়ে করেছে এমন উদাহরন পাওয়া যাবে দেশের প্রতিটি জেলাতেই। এসব বিয়ের মাত্র একটি ব্যাবস্থাই রয়েছে। তা হল বাংলাদেশের কোন ছেলে বিদেশে থাকাকালীন সময়ে কোন মেয়ের সাথে পরিচয় হয় এবং শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা পুরো ভিন্ন ছিল। আমি বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়া গিয়ে বিয়ে করে বউকে সাথে করে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। এ ধরনের ঘটনা আমার জানামতে এই প্রথম, অন্তত বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে।
আমি অস্ট্রেলিয়া থাকাকালীন সময়ে ২০০৭ সালে রীনার সঙ্গে অনলাইনে আমার পরিচয় হয়। কঠিন পরিশ্রমের আজ করার পরে অবসর সময়ে ক্লান্তি দূর করার জন্য অনলাইন চ্যাটিং একটি ভাল পদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেয়েদের সঙ্গে রসের আলাপ করা কে না পছন্দ করে? এভাবেই একদিন রীনাকে পেয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে আমাদের পরিচয় গাড় হল। আমি সারা দিন কি করেছি, সে সারা দিন কি করেছে এটা একে অপরকে বলা যেন এক অলিখিত চুক্তি ছিল। এর পরে একদিন কিভাবে যেন আমরা একে অপরকে পছন্দ করা শুরু করলাম। ইন্দোনেশিয়া দেশটি অস্ট্রেলিয়ার কাছে হওয়া সত্বেও কখনো সেখানে যাওয়াটা হয়ে ওঠেনি। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ চার বছর। এ চার বছরে আমরা অনেকবার ঝগড়া করার পরে আলাদা হতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। আর আমরা দুজনে শুধু স্বপ্নের জাল বুনেছি - কিভাবে বিয়ে করব, কিভাবে ঘর সংসার করব। কেন জানিনা, আমার মনে কখনো “এটা কি ঠিক হচ্ছে?” এই প্রশ্ন কখনো জাগেনি। আমার মনে যেটা চলছিল সেটা হল “ওকে ছাড়া আর কাকে বিয়ে করব?
ইন্দোনেশিয়াতে বসবাস করেনা এমন বিদেশীদের জন্য ইন্দোনেশিয়ার কোন মেয়েকে বিয়ে করা সেদেশের আইন অনুযায়ী কঠিন। এমন কঠিন আইন বানানোর কারনও রয়েছে। ইন্দোনেশীয়াতে মেয়েদের সংখা বেশী। তাছাড়া এখানকার মেয়েরা বাংলাদেশ-ভারত এর মেয়েদের মতন পরিবার কেন্দ্রিক। তাই অতীতে অনেক বিদেশী (ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য), হটাত এসে ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে বিয়ে করেছে। কিছুদিন সেদেশে মেয়েটির সঙ্গে থেকেছে। এর পরে বউকে পরে নিয়ে যাবে বলে নিজের দেশে ফিরে গেছে। তাদের আর কোন খোজ পাওয়া যায়নি। খোজ পাওয়া গেলেও তারা তালাক এর ব্যাবস্থা করেছে। এভাবে কোন মেয়ের জীবন নস্ট যাতে না হয়, সেজন্য ইন্দোনেশিয়ার কোন মেয়েকে বিয়ে করতে হলে অনেক ধরনের আইন, ছাড়পত্র দলিল ও ফর্মালিটির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে করে সহজে ওই মেয়েটিকে ছেড়ে যাওয়া বা তালাক দেওয়া যায় না। যে বিদেশী ওই দেশে বসবাস করে না, তার জন্য নিয়ম আরো কড়া। এত সব ভ্যাজাল দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে রীনা বাংলাদেশে আসবে ও আমরা বিয়েটা বাংলাদেশে করব। তখনো পর্যন্ত কিন্তু আমরা একে অপরকে সামানা সামনি দেখিনি।
২০১১ সালে মার্চে আমি দেশে ফিরি। এর আগে অস্ট্রেলিয়াতে আমার বস, বাঙ্গালী ভাবীকে দেশে ফোন করে আমার বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলি। আমার বাবা মা আমাকে সারা জীবন স্বাধীনতা দিয়েছে, এবারও দিলেন। তারা খুশি মনে রীনাকে বিয়ে করার অনুমতি দিলেন। তারা ফোনে রীনার সঙ্গে (বিয়ের বিষয়ে নয়) সামান্য কথাও বলেছেন। ওদিকে রীনা সহজে তার মাকে রাজী করাতে পারলেও তার বাবা বেকে বসলেন। অনেক কাঠ খড় পোড়ানোর পরে তার বাবা রাজী হলেন। তবে শর্ত হল আমাকে ওখানে গিয়ে বিয়ে করে আসতে হবে। উনি একমাত্র মেয়েকে একা বাংলাদেশে পাঠাবেন না। ঊনি বিয়ের জন্য নিজেও সঙ্গে আসবেন না। তার ভাষায়, “তার নিজের দেশে কি ছেলের অভাব পড়েছে নাকি তার মেয়ে এত ফেলনা হয়েছে যে তাকে বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে দিয়ে আসতে হবে? ইচ্ছে থাকলে বাংলাদেশ থেকে ছেলে আসুক তার মেয়েকে বিয়ে করতে।“ একজন মেয়ের বাবা হিসাবে তার কথাও ঠিক আছে।
আমি এখন কি করি। বিভিন্ন প্রেম কাহীনিতে দেখা যায় পরিবার, সমাজ ইত্যাদি বিয়েতে বাধা দেয়। আমাদের ক্ষেত্রে এমন কোন বাধা নেই। আমাদের ক্ষেত্রে আছে চ্যালেঞ্জ - পারলে বিয়ে করে নিয়ে আস তো দেখি। আমাদের আর কোন উপায় রইল না। তখন থকেই আমরা খোজ খবর নেওয়া শুরু করলাম যে কি কি কাগজ পত্র লাগে। এর মধ্যে হটাত রীনা যে কোম্পানীতে চাকরী করে সেই কোম্পানী ওকে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে সাত দিনের একটি ট্যুরে পাঠাচ্ছে। আমি নিজে এক সময় ব্যাঙ্গালোরের কাছের শহর মাদ্রাজে ছাত্র ছিলাম। কাজেই ব্যাঙ্গালোরকে আমার কাছে বেশ নিকটে মনে হল এবং মনস্থির করলাম যে ওকে দেখার এই সুযোগ হাতছাড়া করব না। রওনা হলাম ব্যাঙ্গালোরের উদ্দেশ্যে। একদিন সকালে আমি ব্যাঙ্গালোরে উপস্থিত হয়ে রীনাকে (ইন্দোনেশিয়াতে) ফোন দিলাম। সেও আর কিছুক্ষন পরে রওনা হবে। সেদিন রাত্রে ১২ টার সময় রীনা ব্যাঙ্গালোরে পৌছাল। এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করতে কোম্পানীর লোক এসেছিল। ওখানেই তার সঙ্গে আমার দেখা হল। হ্যা, দীর্ধ চার বছর পরে এটাই আমাদের প্রথম সাক্ষাত। ব্যাঙ্গালোরে ওই সাত দিন খুব ভাল কেটেছিল। বিশেষ করে ওর কোম্পানীর লোকদের আন্তরিকতা আমি কখনো ভুলব না। আমি হলাম ইন্দোনেশিয়ার ম্যডামের বয়ফ্রেন্ড তাও আবার অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত। আমাকে তারা যে কত বড় স্যার মনে করেছে তা কে জানে। যাই হোক যথা সময়ে যে যার দেশে ফিরে এলাম। একটাই প্রাপ্তি যে এখন বলতে পারব যে আমরা একে অপরকে দেখেছি। এতে করে সবার কাছে আমাদের বিয়ের কারন কিছুটা গ্রহনযোগ্য হবে। না দেখেই বিদেশী কাউকে বিয়ে করার কথাটা মানুষের কাছে অনেক সময় ফাইজলামী মনে হয়।
যাই হোক শুরু হলে বিয়ে করতে যাবার যুদ্ধ। ইন্দোনেশিয়াতে, বাংলাদেশ এম্ব্যাসী থেকে রীনাকে ছাড়পত্র নিতে হয়েছে। ওখানে আমাদের বাংলাদেশী অফিসার ভাইয়েরা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখেছে। কেউ অন্যকে ডেকে এনে দেখিয়েছে। সবার মনে একই প্রশ্ন - ঘটনাটা কি? এই মেয়েটি ওই ছেলেটিকে বিয়ে করবে কেন যে কখনো ইন্দোনেশিয়াতে আসেই নি। এছাড়াও ওই দেশের আলাদা ৪ টি সরকারী অফিস থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়েছে। সবখানে একই প্রশ্ন। এদিকে আমাকে বাংলাদেশে যে সব যায়গা থেকে কাগজপত্র সংরহ করতে হয়েছে তা হল, পুলিশ, ডিসি অফিস, স্বরাস্ট্র , পরররাস্ট্র মন্ত্রনালয় ইত্যাদি। সবখানে আমাকেও বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অফিসের দুর্নীতির কথা নাইবা বললাম। এর পরে আমাকে ছাড়পত্র দিয়েছে ইন্দোনেশীয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাস। সব কিছু করে আমি এখন তৈরি। এখন ভিসা নেবার পালা। আমার বাড়ি খুলনাতে। আমি ঢাকায় রওনা হবার আগে, ইন্দোনেশীয়ার এম্ব্যাসীতে ফোন করে কিছু খোজ খবর নিতে চাইলাম। ফোনে অপর প্রান্তের ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কিজন্য ইন্দোনেশিয়াতে যাবেন?” আমার উত্তর “বিয়ে করতে”। শুনে ওই ভদ্রলোক অবাক হয়ে গেলেন। পরে পরামর্শ দিলেন যে আমি যেন ঢাকায় এম্ব্যাসীতে গিয়ে বিয়ের কথাটা না বলি। কারন তাহলে ওরা ভিসা দিবে না। আমি সাধারন টুরিস্ট ভিসাতে ওখানে গিয়ে বিয়েটা করে আসতে পারব। আমি রাজী হলাম।
ঢাকায় ইন্দোনেশিয়া এম্ব্যাসীতে গিয়ে ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করলাম। উনি আমার সঙ্গে আরো কিছু কথা বললেন। এর পরে ভেতরে গিয়ে উনার বসের সঙ্গে কথা বললেন। এর পরেই শুরু হল কানাঘুষা। শেষ পর্যন্ত বিষয়টা সমাধান দিলেন সবচেয়ে বড় বস। উনি বললেন যে আমরা প্রথমে বিয়ের জন্য বিশেষ ভিসার চেস্টা করব, একান্ত না হলে শেষে টুরিস্ট ভিসা দিব। শুরু হল ঢাকা-জাকার্তা ফাইল চালাচালি। ওদিকে কিন্তু ইন্দোনেশিয়াতে বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে, লোকজনকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে - বর আদৌ আসতে পারবে কিনা সেটা তখনো বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে আমার প্লেনের টিকেটও করা আছে। খুলনায় গিয়ে অপেক্ষা করছি জাকার্তা থেকে ঢাকায় ছাড়পত্র আসার জন্য। এর পরে ঢাকা অফিস আমাকে ভিসা দিতে পারবে। সময় ফুরিয়ে আসছে। অপেক্ষার সময় বড়ই কস্টকর। অবশেষে একদিন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা অফিস রীনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকল। তারা প্রায় দুই ঘন্টা ওর সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেস্টা করেছে যে ও কেন আমাকে বিয়ে করতে চায়। অতঃপর ওরা ছাড়পত্র ঢাকাতে পাঠাল। আমি ঢাকাতে ফোন করে জানালাম যে আমি আসছি। আমি বিয়ের জন্য কেনা টুকিটাকি জিনিসপত্র সহ ব্যাগ গুছিয়ে, খুলনাতে আমার পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, ঢাকা রওনা হলাম। ওখান থেকে ইন্দোনেশিয়া রওনা হব। তখনো কিন্তু আমার ভিসা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমি ভিসা পেয়েছি সেইদিন বিকালে, যেদিন রাত্রে আমার ফ্লাইট ছিল। আর একটু দেরী হলেই মিস হয়ে যেত।
ইন্দোনেশীয়া পৌছানোর পরেও এয়ারপোর্টে আমাকে একটি ইন্টারভিউয়ের পরে তারপরে ওদেশে ঢুকতে দিয়েছে। রীনা অনেক্ষন ধরে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই রাতে রীনার পরিবারের সঙ্গে রওনা হলাম ওদের গ্রামের বাড়ীতে। জাকার্তা শহরে বিদেশী বর এর বিয়ে এর আয়োজন কস্টসাধ্য ও ব্যায়বহুল। এছাড়া নানানজনের নানা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হবে। এজন্য ওরা বিয়ের আয়োজনটা করেছিল ওদের গ্রামের বাডীতে। রীনার নানা গ্রামের মোড়ল। ওখানে মোট ৫-৭ দিন ছিলাম। আমাদের বিয়ের সংবাদ আশেপাশের কয়েক গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ কয়দিনে কয়েকশ লোক আমাকে দেখতে এসেছিল। আমি মোটেও লাজুক নই। তাই ডেকে ডেকে সবার সঙ্গে কথা বলি। এজন্য সবাই আমাকে বেশ পছন্দও করেছিল। রীনার বাবা মা মনে করেছিল যে বিদেশ থেকে আসা ছেলে এমন হয় তা এ জানে। আল্লাহর রহমতে , আমার সঙ্গে কথা বলে তারা আমাকে পছন্দ করেছেন।
আমাদের দেশের বিয়ের সময় যেমন কাজী গতবাধা কয়েকটি বাক্য বলে “অমুকের ছেলে, অমুক নাম, অমুকের মেয়েকে বিয়ে করছে - ইত্যাদি”। সবকিছু কাজীই বলে, বর ও কনে শুধু কবুল বলে। ওদের দেশে এমন নয়। এখানে আমাকে ওই পুরো ৫-৭ লাইনের গতবাধা কথাটি নিজেকেই বলতে হবে এবং তা মাইকে শোনা যাবে যেন সবাই শোনে আমি কি বলছি। ওখানে কাজী (সরকারী অফিসার) উপস্থিত থাকবে। গ্রামে ইংরেজী জানা কাজী পাওয়া যাবে না। কাজেই আমাকে কথাগুলো ইন্দোনেশীয়ান ভাষাতেই বলতে হবে। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হল - আমি যদি কথাগুলো সঠিকভাবে বলার জন্য সর্বোচ্চ ৩ বার চেস্টা করতে পারব। এ পরেও যদি আমি সঠিকভাবে না ভলতে পারি তবে আইন অনুযায়ী ওই দিন বিয়ে হবে না - আবার নতুন দিন ধার্য্য করতে হবে। এই ভয়ে আমি ওই কথাগুলো কাগজে লিখে ২ দিন ধরে মুখস্ত করেছি। সবাই খুব দুঃচিন্তায় ছিল, আমি বলতে পারি কিনা। আল্লাহর রহমতে কথাগুল আমি একবারেই বলতে পেরেছি। আমার কবুল পড়ার ভিডিও দেখুন – (১ মিনিট)
ভিডিওটি এখানে না দেখা গেলে ইউটিউবে দেখুন
এটা সত্যিই একটা অন্য রকমের বিয়ে যেখানে বর একা এক পক্ষে আর সবাই কনে পক্ষে। বিয়ের পরদিন আমরা ইন্দোনেশীয়াতে জোগজা ও বালিতে হানিমুনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সাত দিন পরে বউকে নিয়ে ফিরে এলাম বাংলাদেশে। ঢাকাতে আমার ভাই, কাজিন, ভাবী ওরা এয়ারপোর্টে আমাদেরকে রিসিভ করেছে। এত লোক দেখে রীনা তো বেজায় খুশী। পরদিন খুলনায় রওনা হলাম। গিয়ে দেখি আমাদের ঘর বাড়ী রঙ চং করে বেশ সুন্দর করেছে। এখানে এবার শুরু হল রীনার পালা। ঢাকাতে অনেক বিদেশী দেখা যায় কিন্তু খুলনাতে ততটা নয়। তাই প্রথম এ সপ্তাহ, প্রতিদিন প্রায় দুই শত লোক ওকে দেখতে এসেছে। প্রথমে একজন আসে, দেখে যায়। এর পরে সে আরেকজনে নিয়ে আবার আসে। এরপরে সেও আরো বড় দল নিয়ে আসে এভাবে চলতেই থাকে। আর ছোট বাচ্চাদের ১০-১৫ জনের একটি দল তো বাসাতে সব সময় থাকত। ছোট করে একটা রিসিপশন (বৌভাত) এর আয়োজন করতে গিয়ে সেটা জনসংখার জন্য শেষ পর্যন্ত সেটা বড়ই হয়ে গেল।
বাংলাদেশে এসে রীনার বেশ মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। মাছের বাজার, মাছের ঘের, কাদা যুক্ত মাঠ, ভ্যান গাড়িতে চড়া, নৌকা চড়া, ফুচকা, চটপটি, ফালুদা খাওয়া ইত্যাদি অনেক অভিজ্ঞতাই তার হয়েছে। অনেকে বিদেশী কাউকে অনেক কিছু করতে দেয় না। আমি কোন কিছুই বাধা দেইনি।
দুজন দুই দেশের হওয়াতে অনেক সময় নিজেদের মধ্যে অনেক মতের আমিল হয় ঠিকই, কিন্তু এর একটি ভাল দিকও রয়েছে। নতুন বউকে শশুর বাড়ির লোকেরা প্রথমে একটু বাজিয়ে দেখে, ভুল ধরে ইত্যাদি। রীনার বেলায় এসব কিছুই ছিল না। ও শুধু দু একটা বাংলা শব্দ ভুল উচ্চারনে বললেই আমার পরিবারের লোক জন খুশি হয়ে যায়। আমার মা একটু হেসে কথা বললেই আমার বউ খুশি হয়ে যায়। বউ শাশুড়ির আন্তরিকতার কমতি নেই। আমার বউ যে ভালো লোক তা নয়, কিন্তু বাংলাদেশি ধাচের পারিবারিক কুটনীতি সে বোঝে না (হয়ত ওদের দেশেরটা বোঝে)। কাজেই সবাই ওর কাছে ভাল, সেও সবার কাছে ভাল। বাবা মা বিয়েতে মত দিলেও একটু দ্বিধায় ছিলেন যে বিদেশী বউ, কেমন হয় তা কে জানে। কিন্তু আমার বউ যেভাবে সুন্দর করে আব্বা ও আম্মা বলে ডাকে এতেই আমার বাবা মা খুশি। আলহামদুলিল্লাহ।
মাঝে মাঝে আমি ও আমার স্ত্রী বলাবলি করি যে আমরা বুড়ো হলে একদিন হয়ত নাতী নাতনীর কাছে আমাদের এই বিয়ের গল্প করব। আজ আছি কাল নেই। কতদিন বাচব তা কেউ জানে না। তাই নাতী নাতনীর আগেই আপনাদেরকে গল্পটি বলে ফেললাম। আমাদের বিয়ের প্রায় আড়াই বছর চলছে। আল্লাহর রহমতে, ৬ মাস বয়সী আমাদের একটি ছেলে রয়েছে। সকলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন। সবাই ভালো থাকবেন। আস সালামু আলাইকুম।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৪০ বার পঠিত, ৫৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিয়ে করা দরকার। তাই না!!
আলান্গ্চা
এসব দেশে অনেক নারী চুল ঢেকে রাখে এবং পোষাক মার্জিত। ওদিকে আবার মিনি স্কার্ট পরা নারীর সংখাও কম নয়। মুসলিম জনবসতির দেশ হওয়া সত্বেও এখানে ইউরোপ আমারিকার চেয়ে উগ্র নাইট ক্লাব রয়েছে। এমনকি ডিপার্টপেন্টাল স্টোরেই সুন্দর করে বিয়ার সাজানো রয়েছে। যার যখন ইচ্ছা কিনে খেতে পারে। একজন কোন পথে যাবে এটা তার ইচ্ছা। কোন বাধ্য বাধকতা নেই। গনতন্ত্র।
আফ্রিকা খেকে এক ছেলে আসছে বাংলাদেশে তার পিতাকে খুজতে সে কিন্তু জানে না তার পিতার আসল নামকি তবে সে একটা কথা যানে যে তার পিতা নোয়াখালীতে থাকে।
নোয়াখালী আফ্রিকাতে......হা হা হা হা
আপনার ঘটনা শুনলাম....
আল্লাহ আপনাদেরকে ক্ষমা করুন আপনাদের অজানা ভুল গুলোকে। আমিন।
দাম্পত্য জিবনে সুখী হোন ...
আসলে এখনও মানতে পারছিনা নিজের চোখকে।
অভিনন্দন আপনাকে...
কিন্তু ঐ ছেলে তাকে ধোকা দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে! অথচ বিয়ের এক সপ্তাহ আগ পর্যন্তও তার সাথে প্রেমের অভিনয় করে গেছে! আমি মাঝে মাঝে ভাবি কি দোষ ছিল আমার বান্ধবীর? ঐ ছেলে ইসলামিস্ট ছিল। সে কেন এমন করল! সে একদিকে তার হবু স্ত্রীকে ধোকা দিল। অন্য দিকে আমার বান্ধবীকে। তার স্ত্রী নিশ্চয়ই কোন দিন জানবে না তার স্বামী কত বড় কঞ্জেনিটাল প্রতারক! পরে অবশ্যই সেই ছেলে জানিয়েছে বাস্তবতা নাকি আমার বান্ধবী আর তার বিয়ে মেনে নিত না! আচ্ছা মেনেই যখন নিতো না সে কেন প্রেম করতে এসেছিল আমার বোধগম্য হয় না।
আপনার পোষ্ট পড়ে ঐ ঘটনাটা মনে পড়ল। তাই একটু বেশি কথাই বলে ফেললাম। আবারো অভিনন্দন জানবেন।
জেদ্দায় একটা ইন্দোনেশিয়ান এয়ারলাইন্স "ইগল এক্সপ্রেস এ কাজ করার সুবাদে মালয়শিয়ান আর ইন্দোনেশিয়ানদের অন্দরমহলে ঢুকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। এরা হুবহু আমাদের মত। হাসিখূশী এক নিরীহ প্রাণি। মচুকি হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর ঢংটাই আলাদা।
উৎকর্ষতার এ যুগে আরব্য প্রেম লাইলী মজনুকে ডিঙ্গিয়ে ডিজিটাল প্রেমের কান্ডারী মি: এলিট দম্পতিকে অভিনন্দন। আন্তর্জাাতিক এ ভালবাসার মিনার হতে ভেসে আসা সুমধুর প্রেমের জয়গানে মুখরিত হোক হাজারো আহত হৃদয়। আপনাদের জীবন হোক চিরসবুজ আর সুন্দর। দুজনার দুজনার হয়ে গড়ে উঠুক নোংরা সভ্যতার উপর নতুন ভালবাসার মিনার যেখান থেকে পৃথিবীবাসী শিক্ষা নেবে
প্রেমের কোন সীমান নেই, গন্ডি নেই।
মনের গভীরে কুন্ডলী দিয়ে উঠা প্রেমের শান্ত লেলিহান শিখা বড়ই চোখ ধাধানো। আপনার রচিত এ অজেয় ভালবাসায় রচিত হোক আগামী প্রজম্মের নতুন সাহিত্য।...আরো লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিষ্ঠুর সময় আমাকেও কেড়ে নিল আপনার ভালবাসার আঙ্গিনা হতে। অতৃপ্ত হ্রদয়ে যাওয়ার সময় আশীর্বাদ রেখে গেলাম আপনার নবজাত শিশুর জন্য।
কে জানতো যে, আল্লাহ আপনার মাধ্যমে আমাদের সাথে ইন্দোনেশিয়ার এমন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করবে?
আশা করি ইন্দোনেশিয়ান ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ডালিম কুমার এর গল্প না জানলেও আগামীতে বাংলাদেশী এলিট রহমান এর গল্প জানবে এবং ছোট ছোট রাজকুমারীরা বাংলাদেশের রাজকুমারদের স্বপ্ন দেখবে।
আশা করি পরবর্তি লেখায় বিভিন্ন অফিসের দুর্নীতির কাহিনী গুলি জানাবেন । ধন্যবাদ ।
যাজ্জাকাল্লাহ খায়ের
ভাবির জন্য দেশি খাটি জলপাই আচার
ইন্দোনেশিয়ান মেয়েরা সহজ সরল মনের অধিকারী এবং পতিপ্রাণা । যাকে একবার মন দেয়, তাকে সহজে ভুলে না । তবে গড়পড়তা এদের শারিরীক শক্তি বেশি । ।
সরলা বলেই অন্যের ফুসলানোতে গলে যেতে পারে ।
এক চঞ্চলা, চপলা বিদেশিনীকে ঘরণী করায় আপনাদের দুজনকেই শুভেচ্ছা ।
তার মনে এত প্রেম এত আকর্ষন দেখে অবাক হচ্ছি,
আমাদের দেশে যে প্রেমের কাহিনী রয়েছে তা শ্রেফ দেহ প্রেম আর বাইরে গিয়ে উকি জুকি মেরে তার ঘরে গিয়ে মা বাবার সাথে মিথ্যা বলে পার পেয়ে যাওয়া
ব্যস বিয়ে আরেক জনকে করে তার অন্যজনের সাথে টাংকি মারা,
প্রেম মানে কি?
প্রেম মানে উকি জুকি নয়,
প্রেম মানে সত্যের জয়, যেমনটি আপনার জীবনে ঘটেছে,
অপূর্ব প্রেম কাহিনী , প্রেম মানে বাধা বিপদ,মানে কোন দেশের নিষদ্ধ সীমান্ত প্রাচীর,
আমি সাধারনত ব্লগে লেখা পড়তে সময় পায়না কিংবা লম্বা লেখার পড়ার প্রতি আমার অধৈর্য্য হয়, কিন্তু আপনার লেখাটি আমি এমন মনযোগ দিয়ে পড়েছি যেন আপনার লেখা এক লাইনো বাদ দেয়ার নয়, আপনি একজন দারুন ব্যক্তি নিজেকে জয় করেছেন , সংযুক্ত করেছেন প্রেমের নতুন অধ্যায়,
তবে ভাবীর জন্য কষ্ট হয় যখন ইচ্ছে তখন তার মা বাবাকে দেখতে যেতে পারবেন না
মন্তব্য করতে লগইন করুন