আওয়ামী লীগ, চলছে - চলবে
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:২১:২৪ রাত
শাহবাগের আন্দোলনের সময় হতে একের পরে এক খেলা দেখেই চলছি। কি হয়নি এই কয়েক মাসে। সবাই এসব দেখেছে ও বুঝেছে। এখন যে খেলাটা চলছে তা হল নির্দলীয় ও সর্বদলীয় সরকার নিয়ে টানা হেচড়া। দেশের দুই নেত্রী এখনো তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। ওদিকে এরশাদ এতদিন অনেক কিছু বলে শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থানে ফিরে এসেছেন। নির্বাচন নিয়ে দেশে এখনো চলছে অনিশ্চয়তা।
আমার ভাবতে অবাক লাগে, এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা খুব একটা কমেনি। অনেকে হয়ত আমার কথা মানবেন না। অনেকে বিভিন্ন সমীক্ষা ও তথ্য এর কথা বলবেন। ওগুলো সব অন্য লোকের কথা। ওসব বিশ্বাস করার আগে আপনি নিজে আপনার পরিচিত মহলে দেখুন। যাদেরকে আপনি আওয়ামী লীগ এর সমর্থক বলে অনেক আগে থেকেই চেনেন - তাদের কয়জন আওয়ামী লীগের কার্যকলাপে আস্থা হারিয়ে সমর্থন ত্যাগ করেছে? আমার পরিচিত মহলে তো এমন একজনও নেই। বরং আমি দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগ সমর্থন করে এমন অরাজনৈতিক ব্যাক্তিরা আওয়ামী রাজনীতিতে আসছে। তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেওয়ার জন্য দৌড় ঝাপ করছে। আর আওয়ামী লীগের সমর্থক এর কাছে তো সব সময় বিরোধী দলের দোষ এর ফিরিস্তি পাওয়া যায়, আর পাওয়া যায় ইতিহাস। চোখের সামনে এখন কি হছে, এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহ খুব একটা নেই। তারা সবাই শান্তি চায় এবং তার জন্যই আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়।
এই দেশে ক্ষমতায় গিয়ে সব দলই কম বেশী দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী করেছে। সৎ লোক আমাদের দশে বাটি চালান দিয়ে খুজতে হয় । তাই এদেশে একেবারে ধোয়া তুলসী পাতা নেতা আশা করাটা আসলে বোকামী। ওন্য দলের মতন এসব দোষ গুন সবই আওয়ামী লীগের রয়েছে। এর সঙ্গে বোনাস হিসাবে আরো একটা একটা জিনিস বেশী রয়েছে। সেটা হল মানুষকে ভূল বোঝানোর ক্ষমতা। এমন অসাধারন ক্ষমতা বিশ্বে আর একটি জায়গায় প্রায়ই দেখা যায়। সেটা হল মার্কিন পররাস্ট্র নীতিতে। আমেরিকান সরকার নিজের দেশের জন্য খুব ভালো হলেও আন্তরজাতিক নীতিতে তারা সারা বিশ্বকে ভুল বুঝিয়ে কোন একটি দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে। একদিকে আফগানিস্থানকে সন্ত্রাসী বলছে আর নিজ়েরাই আবার লক্ষ মানুষ হত্যা করছে। আওয়ামী লীগে দেখুন, নিজেদের দলে রাজার থাকলেও যুদ্ধাপরাধী শুধু অন্য দলে রয়েছে। নিজেদের সমর্থনে ১০০ জনের শাহাবাগী সমাবেশে থাকে পুলিশের পাহাড়া আর লক্ষ্ লোকের (হেফাজতে ইসলাম) সমাবেশে গুলি চলে। অনেক বলাবলি করে, আমারিকার এসব আসাধরন বুদ্ধি নাকি আসে ইহুদিদের মাথা থেকে। আওয়ামী লীগের বুদ্ধি যে কোথা থেকে আসে তা এখন সকলের কাছেই উন্মুক্ত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে আশা করেনি যে তারা কোনদিন ক্ষমতা হারাবে। তাই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যথাসাধ্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা হারাতে হল বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার কারনে। ১৯৯৬ তে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় চীরস্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। ক্ষমতার মেয়াদের শেষ মুহুর্তে, হাইকোর্টে দাবী করেছিল যেন মুজিব পরিবার আজীবন সরকারী নিরাপত্তা পায়। যদিও এই দাবী মানা হয়নি। এরপরে জনগনের দাবীর মুখে তত্বাবধায়ক সরকার এর অধীনে নির্বাচন দেওয়া হল। তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান শুরু করলেন গন হারে বদলী। এই বদলীর ফলে আওয়ামী লীগের সাজানো রাজনীতি এলোমেলো হয়ে গেল। আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটল। এমনকি বঙ্গভগ্নি শেখ হাসিনা বলেছিলেন - এবার সুক্ষ নয় বরং স্থুল কারচুপী হয়েছে। ক্ষেত রক্ষা করার জন্য আমি বেড়া দিলাম আর সেই বেড়াই আমার ক্ষেত খেয়ে ফেলল। পুরাতন সেই রেকর্ড বাজানোর অর্থ হচ্ছে, বঙ্গভগ্নির নির্দলীয় সরকার বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। উনি এক ভুল আবার করবেন না। এ কারনেই তার সংবিধান প্রীতি ও সর্বদলীয় সরকার এর রাজনীতি।
নির্দলীয় ও সর্বদলীয় সরকার আসলে কি এটা অনেকেই (আওয়ামী সমর্থক) বুঝেও না বোঝার ভান করেন। কেউ কেউ আবার রসিকতা করে লটারী বা অন্য কোন নির্বাচন ব্যাবস্থার কথা বলেন। আসলে নির্বাচন ব্যাবস্থা নিয়ে কারো কোন কথা নেই। সবার কথা ভোট কারচুপী নিয়ে। বিএনপি চাচ্ছে নির্দলীয় কোন ব্যাক্তিকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান করতে। পছন্দের ব্যাক্তির এক তালিকাও দিয়েছে তারা। অন্যদিকে আওয়ামী লিগের কথা হল, আমাদের অধীনে নির্বাচন করতে ভরসা পাচ্ছ না? ঠিক আছে সব দল আসো, সবাইকে সরকারের অংশ দিচ্ছে। তাহলে তোমরা খুশী তো?
নিজেদের মন্ত্রীদেরকে পদত্যাগ করিয়েছে। অন্য দলককে সরকারের অংশ দিয়ে খুশি করছে। কিন্তু মুল ক্ষমতা কিন্তু এখনো আওয়ামী লীগের কাছে আছে, থাকবে। আমাদের দেশে এক দলের কাছে মুল ক্ষমতা থাকলে সেখানে অন্য দল নির্বাচনে জিতবে এটা অসম্ভব। যেসব দল এখন আওয়ামী লীগের সর্বদলীয় সরকারের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে তারাও জানে যে এটা আওয়ামী লীগেরই সরকার। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পরে ওই সব দলের কাছে একটিই পথ খোলা থাকবে। আর তা হল আওয়ামী লীগের জোটে যোগ দেওয়া। এমন অবস্থাতে বিএনপিও ভেঙ্গে আওয়ামী লীগে অথবা আওয়ামী জোটের অন্য দলে যোগ দিবে। জামাত তো নিষিদ্ধ। তার মানে এদেশে সবই আওয়ামী লীগ হযে যাবে। এদেশে বাকশাল জোর করে আনতে হবে না - এমনিতেই এসে যাবে।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ করেছে এই দেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধু ওই দলেছিলেন বলেই সেটা একটা আদর্শ দল হবে এমন চিন্তা থেকে শত চেটা করেও আমরা বের হয়ে আসতে পারছি না। বঙ্গবন্ধু-স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে আবেগের কথা বলে এই দলটি গত ৪০ বছর ধরে আমাদেরকে আওয়ামী অন্ধ বানিয়ে রেখেছে। ওদিকে জিয়াউর রহমানের কথা বলে অন্ধ বানিয়ে রেখেছে বিএনপি। এসবের অন্ধ সমর্থন থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে যা চলছে তা চলতেই থাকবে।
বিষয়: রাজনীতি
১৬৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন