বিএনপি এর নীরবতার রহস্য

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:৩৭:১৭ সকাল

এ নিয়ে শুধু বিএনপি এর সমর্থক নয়, নিরপেক্ষ লোকেরও এক প্রকার ক্ষোভ রয়েছে। সাকা চৌধুরী যে ধোয়া তুলসী পাতা, তা নয়। কিন্তু তার মতন এমন একজন স্থায়ী নেতার ফাসীর আদেশে বিএনপি এর কাছ থেকে অনেকেই বড় প্রতিবাদ আশা করেছিল। সেটা না হওয়ায় অনেক গালমন্দ শুনতে হচ্ছে বিএনপিকে। শোনা গেছে অনেক নেতা নাকি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন সাংবাদিকের ভয়ে। যাদের ফোন খোলা তারাও সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কোন মন্তব্য করার সাহস পাচ্ছে না। এক সময়ের এত শক্তিশালী দলের এমন দুর্বল অবস্থানের রহস্য কি?

দেশে যে অস্থির পরিস্থিতি চলছে, তার কারনে আওয়ামী লীগের উপরে সাধারন মানুষ বিরক্ত। এছাড়াও এই সরকারের মেয়াদে তাদের আমলনামাও বেশ ভারী হয়েছে। দেশের এই অস্থির পরিস্থিতি দুর করতে কিন্তু বেশী কিছু করতে হবে না। মাত্র দুটি কাজ করলেই হবে।

১। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাবস্থা করা।

২। যুদ্ধাপরাধী বিচার বিষয়টি সচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য করা।

লক্ষ্য করুন, এই দুটি কাজ করলেই সারা দেশে অনেকাংশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই কাজ দুটো করতে ২৪ ঘন্টার বেশী সময় লাগে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটি করছে না। এর একটাই করন ক্ষমতা হাতছাড়া হবার ভয়। রাজনীতির সবচেয়ে প্রথম নিয়ম হল নিজেরা সবসময় ঝুকিমুক্ত থাকা। নির্দলীয় সরকার এর অধীনে নির্বাচন হলে জেতার কোন গ্যারান্টি নেই। তার উপরে আওয়ামী লীগের জনসমর্থনও কমে গেছে তাদের কার্জকলাপের কারনে। কাজেই আওয়ামী লীগ কখনোই নির্দলীয় সরকার এর ব্যাবস্থা করবে না। দেশের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। তারা নির্দলীয় সরকারের ঝুকি নিবে না।

ছোট দল হলেও সবচেয়ে শক্ত অবকাঠামোর দল জামায়াত। এই দলটিকে এখনই ধংশ করে দিতে না পারলে পরে ভবিশ্যতে একদিন এদের কাছেই পরাজিত হতে হবে। এই দুরদর্শীতা থেকেই শুরু হয়েছে জামাতের উপরে চাপ। দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাচ্ছে, ফাসী হয়ে যাচ্ছে শীর্ষ নেতাদের। এর কারনে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিষয়টি এত সমালোচিত। দেশের সবাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়। কিন্তু বিচারের নামে যে বিরোধী দল দমন হচ্ছে সেটা বুঝতে গেলে বুদ্ধিজীবি হতে হবে না।

ওদিকে বড় দল হলেও বিএনপি এর অবকাঠামো সবচেয়ে দুর্বল। সবচেয়ে উন্মুক্ত একটি দল এটা। এতে যোগ দেওয়া ও নেতা হওয়া সহজ। যার ফলে অনেকেই অন্য দলে সুবিধা না করতে পেরে এই দলটিতে যোগ দিয়েছে। এ ছাড়াও দলে রয়েছে আভ্যন্তরীন কোন্দল। জামায়াতের নেতাদের জন্য যেভাবে জামায়াত আন্দোলন করেছে সেভাবে আন্দোলোন বিএনপি করতে পারেনা বা করে না। প্রথম কারন হল ভয়। জামায়াতের কর্মীরা জীবনের মায়া করে রাস্তায় নামে না। কারন ধর্মীয় বিশ্বাস এর জন্য তাদের রয়েছে জীবন বাজী রেখে দল (জামায়াত) করার মানষিকতা। অপরদিকে বিএনপি এর রয়েছে দল বাজী রেখে জীবন (সম্পদ) গড়ার মানষিকতা। কাজেই জামায়াতের মতন কামানের সামনে তারা আন্দোলোন করতে পারে না।

এছাড়া, বিভিন্ন মিটিং করে আর টিভির টক শোতে বকবক করে বিএনপি বুঝতে পারছে যে আওয়ামী লীগের উপরে জনগন বিরক্ত। আমাদের দেশের জনগন তো পরিবার তন্ত্রে বিশ্বাসী। ঘুরে ফিরে এই দুই পরিবারের কাছেই আসবে। সতরাং বিএনপি এর ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশী। এই সম্ভাবনাকে নিশ্চয়তায় পরিনত করতে তাদের কেবল একটা জিনিস প্রয়োজন। আর তা হল নিরপেক্ষ ভোট এর ব্যাবস্থা। আমাদের দেশের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এই নিরপেক্ষ ভোট এর ব্যাবস্থা একমাত্র নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই সম্ভব। কাজেই এই নিরপেক্ষ সরকারের দাবী আদায় করতে পারলেই নিশ্চিত ক্ষমতা। ক্ষমতায় যাবার এমন সহজ সুযোগ থাকতে কে রাস্তায় গিয়ে কামানের সামনে আন্দোলন করবে? তাই খালেদা জিয়া যতই আল্টিমেটাম দিক না কেন, বিএনপি এর কোন নেতা কর্মী মাঠে নামেনি।

রাজনৈতিক দিক থেকে বিচার করলে, বিএনপি এর এই "আন্দোলন না করে" চুপ করে থাকাটা কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ। এভাবে আন্দোলন ছাড়া দলটি যদি ক্ষমতায় যেতে পারে তাহলে তো ভালো। না যেতে পারলেও ক্ষতি নেই। কারন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে বিএনপি এর অর্ধেক নেতা কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিবে। কিছু অন্যান্য দলে যোগ দিবে। বাকীরা শহিদ জিয়ার আদর্শ আওড়ানোর মধ্যেই তাদের কর্মসূচী সীমাবদ্ধ রাখবে। বিএনপি বলে উল্লেখযোগ্য কিছু থাকবে না। এ কারনেই বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যাচ্ছে না। খালি ফাকা আওয়াজ দিচ্ছে কর্মী ও সমর্থকদের মাতিয়ে রাখার জন্য। বিএনপি এর নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি যুদ্ধে যেতে রাজী নয়। কারন, বলা তো যায় না, কয়েক মাস পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিতেও হতে পারে।

এভাবেই চলতে থাকবে। আওয়ামী লীগ কখনোই নির্দলীয় সরকার ব্যাবস্থা দিবে না। বিএনপি ও ফাকা আওয়াজ বন্ধ করবে না। কিন্তু মাঠে নামবে না। এর পরে দেখবে যে বিএনপি কে বাদ দিয়েই নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। তখন দৌড়ে এসে নির্বাচনে যোগ দিবে। বিএনপি জিতলে তো ভালো। না জিতলে তাদের দলত্যাগের প্ল্যান তো আছেই। আসন্ন নির্বাচনে, ইচ্ছে না থাকলেও জামায়াত বিএনপি এর সমর্থন করবে। বিএনপি এর কাছ থেকেও জামায়াতের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ কাছ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার তুলনা হয়না।

যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন - আমাদের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হবে না। জনগন খানিকটা ব্যাডমিন্টনের বলের মতন। রাজনৈতিক দলগুলো খেলোয়ার । কেউ দেখেশুনে খেলে, কেউ বেপরোয়া খেলে। কিন্তু ব্যাট দিয়ে বলের গায়ে সজোরে আঘাত করতে কেউ ভুল করে না।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File