সবচেয়ে সৌভাগ্যবান খুনী

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৫:১৯:২৯ সকাল

(সতর্কতাঃ কুরুচীপুর্ন ঘটনা)

ঘটনাটি রুপকথার মতনই অবিশ্বাস্য। সাগাওয়া (Issei Sagawa) নামক এক জাপানী ব্যাক্তি ফ্রান্সে এক নারীকে খুন করে। এরপরে মরদেহর সঙ্গে যৌনকর্ম করে। এরপরে সে ওই মরদেহর মাংশ খায় কয়েকদিন জাবত। ওই অমানুষটি এখন দিব্যি মুক্ত একজন মানুষ। জাপানে সে এক প্রকারের হীরো বনে গেছে। এই কুরুচীপর্ন গল্পটি আমি কখনোই লিখতাম না, যদি তার ফাসী হতো বা অন্তত জাবত জীবন কারাদন্ড হতো। সে কি করেছে আর কি কায়দায় মুক্তি পেয়েছে সেটা জানতে চাইলে এই লেখার বাকী অংশ পড়ুন। তার ঘটনাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় "আইনের ব্যার্থতা" হিসাবে ধরা হয়।

সাগাওয়া এক ধনী জাপানী পরিবারে ১৯৪৯ সালে জন্ম নেয়। তার স্বাস্থ্য বরাবরই খারাপ ছিল। এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে তার উচ্চতা ৫ ফুটেরও কম ছিল। জাপানীরা খাটো হলেও সাধারনত এত খাটো নয়। ১৯৭৭ সালে ২৮ বছর বয়সে সে সাহিত্য বিষয়ে লেখাপড়া করতে ফ্রান্সের প্যারিসে পাড়ি জমায়। ১৯৮১ সালের ১১ই জুন ফ্রান্সে থাকাকালীন সময়ে সে রেনী (Renée Hartevelt) নামক ৩২ বছর বয়সী নারী সহপাঠীকে তার বাসায় দাওয়াত করে। মেয়েটি হল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে লেখাপড়া করতে এসেছিল। সাগাওয়া রেনীকে বলে যে তারা রাতে একসাথে পড়াশুনা করবে এর সাথে নৈশভোজন তো আছেই। অভাগা মেয়েটি সাগাওয়ার কথায় রাজ়ী হয়ে তার বাসায় যায়।

তারা দুজনে সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করত। মেয়েটিকে একটি কবিতা পড়তে দিয়ে ব্যাস্ত রেখে সাগাওয়া রাইফেল দিয়ে মেয়েটির ঘাড়ে গুলি করে। সাগওয়ার ভাষ্যমতে তখন সে নিজেও জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফেরার পরে দেখতে পায় যে মেয়েটি মরে গেছে। কোথায় যেন সে শিখেছিল যে সুন্দরী মেয়ের মাংশ খেলে স্বাস্থ্য ভালো হয়। তাই সে মাংশ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে সে মরদেহর সাথে যৌনকর্ম করার অপুর্ব সুযোগ (!) হাতছাড়া করেনি। এর পরে সে দুই দিন ধরে মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানের মাংশ খায়। সাগাওয়া এসবের ছবিও তুলেছিল। ধরা পড়ার পরে, সে পুলিশের কাছে এসব বিষয়ের বিস্তারিত বর্ননাও করেছে। সেই বর্ননা করে পাঠককে বিরক্ত করতে চাইনা। কৌতুহলীরা ওই অমানুষটার নাম লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে অনেক তথ্য পাবেন। দুই দিন পরে সে মরদেহটি এক লেকে ফেলতে গিয়ে ধরা খায়। পুলিশ তার বাসায় সার্স করে ফ্রীজে মেয়েটির মাংশ পায়।

গ্রেফতার হওয়ার পরে দুই বছর সে জেল খাটে বিচারের অপেক্ষায়। এর মধ্যে তার ধনী বাবা বসে থাকে নি। সে ফ্রান্সে গিয়ে দেশের সেরা আইনজীবি নিয়োগ করেছে। এছাড়া আরো নিয়োগ করেছে মানষিক চিকিতসক। বিভিন্ন মেডিকেল সার্টিফিকেট ও আইনের মারপ্যাচের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করেছে সাগাওয়ার বাবা। এর ফলে বিচারের রায় হয়েছে যে সাগাওয়া মানষীক ভাবে অসুস্থ। কোর্ট তাকে মানষিক হাসপাতালে ভর্তি করার আদেশ দেয় এবং বলে যে সে মানষিকভাবে সুস্থ হলে তখন তার বিচার করা যাবে। সে এখন বিচার করার অবস্থায় নেই।

মানিষিক হাসপাতালে থাকাকালীন সময় শুরু হয় তার বাবার আর এক কেরামতি। টাকার জোরে বিভিন্ন মিডিয়াতে তার ছেলের কথা প্রচার করতে বলে। মিডিয়া কখনোই তার খুনের পক্ষে কথা বলেনি। কিন্তু তার কথা এত বেশী প্রচার করেছে যে সবার মুখে মুখে তার নাম ছিল। মিডিয়ার কায়দায় বিভ্রান্ত হওয়া অনেক সাধারন মানুষ তাকে সুপারম্যান, ভিনগ্রহবাসী, অমর ইত্যাদী নাম দিয়েছে। এমন একজন খুনী হিরো হয়ে যাচ্ছে দেখে ফ্রান্স সরকার সাগাওয়াকে ফ্রান্স থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে পাঠানো হয় জাপানের মানষিক হাসপাতালে ।

নিজের দেশে, অর্থাৎ জাপানে কেরামতি দেখানো তার বাবার জন্য আরো সহজ ছিল। দেশের বাঘা বাঘা চিকিতসকের এক বোর্ড মিটিং ডাকা হয়। তারা সবাই পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে আসে যে সে মানষিকভাবে সুস্থ। তাদের ধারনা যে খুনের জন্য দায়ী সাগাওয়ার বিকৃত যৌনরুচী। ওদিকে সে সুস্থ প্রমানীত হওয়াতে জাপানের কোর্ট এই হত্যাকান্ডের বিচার করতে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেই বিচার করতে পারে না কারন এই মামলার কোন দললপত্র ফ্রান্সের সরকার জাপানকে দিতে রাজী হয়নি। কেন দেয়নি সেটা আজও রহস্য। যার ফলে জাপানের কোর্ট কোন বিচার করতে পারেনা। সে যেহেতু অসুস্থ নয় সেহেতু হাসপাতালও তাকে রাখতে পারে না। ১৯৮৬ সালের ১২ই আগস্ট সে বীরের মতন হাসপাতাল থেকে বের হয়।

তার এই জঘন্য অপরাধের পরে তার সাজা ছিল (বিচারের অপেক্ষায়) মাত্র ২ বছর জেল এবং ফ্রান্স ও জাপানের মানষিক হাসপাতালে ৩ বছর অবস্থান। ছাড়া পাওয়ার পরে সে জাপানেও এক প্রকার বিখ্যাত (কুখ্যাত) হয়েছে। মিডিয়াতে তার প্রচুর সাক্ষ্যাতকার রয়েছে। এমনকি টক শো তেও তাকে দেখা গেছে।

সাগওয়া ও রেনীর ছবি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

-

বিষয়: বিবিধ

১৯২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File