বিশ্বের একমাত্র স্বাধীন ও দেশপ্রেমিক রাস্ট্র।

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৯ জুলাই, ২০১৩, ০৫:২৩:১৬ বিকাল



আমাদের দেশে অনেক সময় ক্ষুদ্র কারনে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। উন্নত বিশ্বে জাতীয় পতাকা দিয়ে স্যান্ডেল, মোজা ও আন্ডারওয়ার বানালেও অবমাননা হয়না।

বিশ্বের অর্ধেকের বেশী দেশই যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। শত বছর ধরে অন্য দেশের অধীনে ছিল। এর পরে অনেক আত্ম ত্যাগ ও হাজারো লাখো জীবনের বিনিময়ে এসেছে তাদের স্বাধীনতা। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নিস্টুরতা কোনটাই কোনটার চেয়ে কম নয়। এর বেশীর ভাগ দেশই ব্রিটিশের অধীনে ছিল। এমনকি খোদ আমেরিকা, ব্রিটিশের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। এই যুদ্ধে আমেরিকা, ফ্রান্সের সহায়তা পেয়েছিল। ব্রিটিশের অধীনেই ছিল প্রায় অর্ধেক বিশ্ব। এছাড়াও আরো অনেক দেশের সাথে যুদ্ধ করে অন্যান্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতা অবশ্যই গৌরভের। কিন্তু আর কোণ দেশই আমাদের মতন স্বাধীনতা নিয়া ফালাফালি করে না। আমাদের কায়দা দেখলে মনে হয় একমাত্র আমরাই যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি আর অন্যান্য দেশ স্বাধীনতা এমনিতেই পেয়েছে।

যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা এই ব্যাপারটি ভালোভাবে বুঝতে পারছেন। আমি ইউরোপ অমেরিকার উদাহরন দিব না। অর্থনীতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত আফ্রিকার দেশগুলিতেও - স্বাধীনতা ও যুদ্ধ নিয়ে এত কথা হয়না। তাদের দেশ একসময় পরাধীন ছিল এখন স্বাধীন হয়েছে। যারা এই যুদ্ধ করেছেন তাদেরকে সবাই সন্মান জানায়। বিশেষ কোন দিবসে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ব্যাস এটুকুই। এর বেশী কিছু করতে, বুঝতে, বলতে বা শুনতে হয়না। আর আমাদের অবস্থা দেখুন পদে পদে বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও য্বাধীনতার নাম ভাঙ্গানো হচ্ছে। রাজনীতির মঞ্চে, চাকুরির কোটায়, বেতন ভাতায়। মজার ব্যাপার এই নাম ভাঙ্গানো লোকগুলোই সমাজে বেশী সন্মান পায়। নেতারা তো স্বাধীনতার অপবাবহার করেই - কিন্তু সাধারন জনগনও যেন এতেই খুশি। ভাব দেখে মনে হয় বিশ্বে আমরা একমাত্র স্বাধীন ও দেশপ্রেমিক রাস্ট্র।

এর প্রধান কারন হল আমরা স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম এর অর্থই যানি না। আমাকে ভুল বুঝবেন না - কারো জ্ঞানকে ছোট করে দেখছি না। আমাদের দেশের ব্যাবস্থা ও পরিবেশ এমন হয়েছে যে এই পরিবেশে থেকে ওই শব্দ দুটির অর্থ যানা যায় না। আমি ১৫ বছরেরও বেশী সময় বিভিন্ন দেশে থেকেছি। কিছুটা দেখেছি ওই সব দেশের স্বাধীনতা আর দেশপ্রেম। আপনাদের সাথে কিছু শেয়ার করব মাত্র।

স্বাধীনতাঃ নিরাপদে নিজের ইচ্ছেমতন যা খুশি (অন্যের ক্ষতি না করে) করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে। উন্নত বিশ্বে এই স্বাধীনতা আছে। স্বাধীনভাবে ব্যাবসা করুন কোন চাদাবাজি নেই। স্বাধীনভাবে কেনাকাটা করুন, কেউ ঠকাবে না। স্বাধীনভাবে খাবার খান, ফর্মালিন নেই। স্বাধীনভাবে কোন অফিসে যান, ঘুষ নেই। স্বাধীনভাবে ২৪ ঘন্টা রাস্তায় চলাফেরা করুন, ছিনতাইকারী নেই। এমনকি পুলিশের ক্ষমতা নেই আপনাকে জিজ্ঞেস করবে "এত রাতে রাস্তায় কি?" - কারন আপনি স্বাধীন, আপনার ইচ্ছেমতন যা খুশি করতে পারেন যদি অন্যের ক্ষতি না হয় বা তার স্বাধীনতার ব্যাঘাত না ঘটে। ভারতের কিছু কিছু শহরেও কিছটা স্বাধীনতা দেখতে পাওয়া যায়। স্বাধীনতা নিয়ে সারা বছর ফালাফালি করলেও আমাদের দেশে স্বাধীনতার লেশমাত্র নেই। আমরা মনে করি স্বাধীন হওয়া মানে পাকিস্তানের শাশক থেকে মুক্ত হওয়া। আমরা মুক্ত হয়েছি ঠীকই - কিন্তু এর পরে বাংলাদেশের (একই ধাচের) শাশকদের খপ্পড়ে পড়েছি। স্বাধীনতা কি জিনিস তা আমরা বুঝতেই পারছি না।

দেশপ্রেমঃ দেশপ্রেম হল দেশের সব মানুষ ও সম্পদ নিজের মনে করা। উন্নত বিশ্বে যেতে হবে না - বর্ডার পার হয়ে ভারতে গেলেই দেশপ্রেম দেখতে পারবেন। আমি নিজে দেখেছি, ছোট খাটো এক বন্যার সময় এক এলাকার সব দোকানদার নিজে থেকেই কম লাভে নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিস বিক্রি করছে যাতে বন্যা কবলিত মানুষ সহজে কিনতে পারে। আমি দেখেছি, ধারালো বস্তুর আচড় লেগে আন্তঃনগর ট্রেনের কয়েকটি সিটের চামড়া উঠে গিয়ে তুলা ফোম ইত্যাদি বেরিয়ে গেছে। এই ঘটনাতে ২০-২৫ জন সাধারন জনগন এমনভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে যেন এই সিটের মালিক তারা। আমদের ব্যাবসায়িরা দাম কমানোর আন্তরিকতা নিজের লোকের সাথে দেখাবে। ভারতের, ওরা দেশপ্রেমিক তাই দেশের সবাইকে নিজের লোক মনে করে। নিজের সোফার চামড়া উঠে গেলে আপনি দুঃখ প্রকাশ করবেন। ওরা দেশপ্রেমিক তাই দেশের সম্পদ, ট্রেনের সিটকে নিজের কেনা সোফা মনে করে, আর এর ক্ষতিতে দুঃখ পায়। দেশপ্রেমের এই বোধটুকুই আমাদের নেই।আমাদের পদ্ধতি হল - বন্যায় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জুলুম করা আর সরকারী মাল দরিয়ায় ঢালা। আমাদের দেশপ্রেম হল - লাল সবুজ পোষাক পড়া, পান্তা ইলিশ খাওয়া, সারারাত হিন্দি গান বাজিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া, কাউকে রাজাকার বলা, কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধিনতার কথা বলা, দু একবার বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া - ব্যাস , হয়ে গেল বড় দেশপ্রেমিক।

আমাদের রাজনৈতিক সমস্ত সমস্যার মুল হল আমাদের ওই দুটি শব্দের (স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম) অর্থ না জানা। কারন এ দুটির দোহাই দিয়েই নেতারা আমাদের ভুল বোঝায়। জাতীর জনক ও ঘোষক এর দন্দ চলে, স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে দুই দলে জনগনকে ভাগ করা যায়, ইত্যাদি। অন্যান্য দেশে এই ভুল বোঝানো যায় না কারন তাদের জনগন জাতির পিতা কে আর ঘোষক কে তা জানে আরো জানে ভিন্ন মতাদর্শ সত্বেও কিভাবে দেশের স্বার্থে এক হতে হয়।

আরেকটি গুন অন্য দেশের মানুষের মধ্যে রয়েছে - তা হল, তারা যে যেখানে যে অবস্থায় আছে তাতেই সুখি। আমাদের আছে আরো চাই আরো চাই মানষিকতা। এর ফলে আমরা দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারনা করি বা প্রতারিত হই। একটি ভালো দেশে, সারা দেশ এক পরিবারের মতন একে অন্যের প্রতি সহানিভুতিশীল এবং তারা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে না। যার ফলে সবাই শান্তিতে থাকতে পারে। আমরা নিজেকে শান্তিপ্রিয় দাবী করি কিন্তু শান্তিতে থাকার কোন উপায় নেই।

বিষয়: বিবিধ

২২৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File