বাংলাদেশে আসলে মুসলমানেরা সংখা লঘু
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২০ জুন, ২০১৩, ০৩:৩৭:১১ রাত
প্রায় বিশ বছর আগে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যেত বাংলাদেশে ৮০% মুসলমান রয়েছে। এর পরে দেখা যায় ৮৫%। এখন দেখা যায় মুসলমানের সংখা ৯০%। ধারনা করা হয় অনেক হিন্দু ভারতে সপরিবারে চলে যাওয়াতে এই পরিবর্তন হয়েছে। আমরা সংখা লঘু বলি হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, বা অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে। তাদের সম্মিলিত সংখা ১০% এর মতন।
আমাদের এই ৯০% মুসলমানদের মধ্য আসলে কতজন মুসলমান? না, আমি রাসুল (সাঃ) এর সাহাবীর মতন মুসলমান খুজছি না, আমি নিস্পাপ মুসলমান খুজছি না। আমি এমন মুসলমান খুজছি যে ছোট বড় পাপ করে কিন্তু ইসলামের খাতায় তার এখনো নাম আছে। শুধুমাত্র ইসলামের খাতায় নাম আছে এমন মুসলমান এদেশে কতজন?
একজন হিন্দু, সে হিন্দু ঘরে জন্মেছে, কোনদিন কোন মন্দিরে যায়নি, কোন দেবতাকে প্রনাম করেনি, কোনদিন পুজা করেনি। এর পরেও সারা জ়ীবন তার হিন্দুর খাতায় নাম থাকবে। এমনকি, হিন্দু ধর্ম অনুসারে এর জন্য পরোকালে কোন শাস্তি পেতে হবে না। একই ব্যাবস্থা খিস্টানের জন্যও প্রযোজ্য। সারা জীবন গীর্জায় না গিয়ে এবং সেই ধর্মের কিছু পালন না করেও খ্রিস্টান থাকতে পারবে এবং তাদের ধর্ম অনুযায়ী পরোকালে এর জন্য কোন শাস্তির ব্যাবস্থা নেই। ওসব ধর্মে নরক বা হেল এর ব্যাবস্থা রয়েছে তাদের জন্য যারা চুরি ডাকাতি খুন ধর্ষন ইত্যাদি করে। ধর্ম পালন না করলে কিছু হয় না।
ইসলাম ধর্ম এমন সহজ নয়। মুসলমান এর খাতায় নাম রাখতে গেলে অবশ্য পালনীয় কিছু কাজ আজীবন করে যেতে হবে। এমনকি যখন এই সব অবশ্য পালনীয় কাজ করা বন্ধ করে দেবে তখনই খাতা থেকে নাম কাটা যাবে। তখনই একজন অমুসলিম হয়ে যাবে। আসুন দেখে নেই কি কি কারনে মানুষ অমুসলিম হয়ে যায়। মুসলিম থকে অমুসলিম হয় দুটি কাজ করলে আর তা হল কুফুরী ও শিরকী করা। আমরা হয়ত মনে করছি সবাই এগুলো থেকে বেচে রয়েছি। কিন্তু ভালো করে বিষয়টি জানলে আমাদের ভুল ভাঙ্গবে।
কুফুরীঃ কুফুর কথার অর্থ অবিশ্বাস। যে কুফুরী করে তাকে কাফির বলা হয়। এটি মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। উদাহরন –
১। আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য না মানা।
২। রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহর মনোনীত বান্দা ও রাসুল না মানা।
৩। কোরআনের যে কোন একটি বানী না মানা।
৪। কোন ফরজ (অবশ্য পালনীয় কাজ) অস্বীকার করা।
৫। নামাজ না পড়া।
৬। কোন কুফুরী পোষাক বা সরঞ্জাম পরিধান করা (যেমন, কপালে তীলক, পৈতা, গলায় ক্রুশ)।
৭। আল্লাহ, রাসুল বা ইসলামের নামে কটুক্তি করা।
শিরকঃ শিরক কথার অর্থ অংশীদার। আল্লাহ একমাত্র উপাস্য। তার প্রতি আমাদের ইবাদত (উপাসনা) এর অংশ অন্য কাউকে দিলে শিরক করা হয়। শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। এতে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। উদাহরন-
১। পীরকে সিজদা করা। (এটা মনে করা যে পীর তাকে পরোকালে রক্ষা করবে - শিরক)
২। মাজারে সিজদা করা (এটা মনে করা যে মাজারে শায়ীত পীর তাকে ইহকালে সৌভাগ্য ও পরকালে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে - শিরক)
৩। মাজারে কোন কিছু চাওয়া (যেমন চাকুরী, সন্তান, সৌভাগ্য)
৪। মাজারে পশু পাখি নিয়ে দেওয়া – যেমন অনেকে দরগায় মুরগী মানত করে।
৫। ওরশ (পীরের মৃত্যুবাষিকী পালন করা) ওরশ কথার অর্থ বিবাহ বা বাসর বা মিলন। ওদের ধারনা - মৃত্যুর পরে ওদের পীর আল্লাহর সাথে মিলিত হয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ)। তাই মৃত্যুর দিনটিকে ওরশ বলা হয়।
৬। তাবিজ, কবজ, পানি পড়া, সুতা পড়া ইত্যাদি শিরক। পাথর ব্যাবহার করা শিরক।
উপরের অনেক কাজ আমাদের দেশে এত বেশি প্রচলিত যে এগুলো কুফুরী ও শিরকী তা বলার জন্য আমাকে হ্য়ত জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু এটি আমার কথা নয়। ইসলামের কথা। আমি এর প্রত্যেকটি বিষয়ের উপরে আলাদা আলাদা লেখা লিখব ইনশা আল্লাহ। তখন আমি কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামিক ব্যাখ্যা পেশ করব ইনশা আল্লাহ। ওসব এখন লিখে লেখাটি আর বেশি বড় করব না। তবে কয়েকটি বিষয় কিছুটা বুঝিয়ে দিচ্ছি।
নামাজঃ ইসলামের ফরজ কাজগুলি বাদ দিলে কবিরা গুনাহ হয় আর অস্বীকার করলে কাফির হয়। যেমন, পর্দা পালন না করলে কবীরা গুনাহ হয় আর অস্বীকার করলে কাফির হয়। ব্যাতিক্রম নামাজ। নামাজ বাদ দিলেই কুফুরী হয়। বেনামাজী মুসলমান নয়। অর্থাৎ নামাজ না পড়লে মুসলমানের খাতার থেকে নাম কাটা যায়।
কুফুরী পোষাকঃ আপনি হয়ত খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাস করেন না কিন্তু ফ্যাশন করার জন্য ক্রুশ গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ান। আপনার গলায় এটা দেখে অনেকে আপনাকে খ্রিস্টান মনে করবে। (যেমন আপনার হাতে পুলিশের ওয়ারলেস রেডিও থাকলে অনেকে আপনাকে পুলিশ মনে করবে।) তার মানে ওটা গলায় ঝুলিয়ে আপনি অনেকের কাছে নিজেকে অমুসলিম বলে এক প্রকার প্রচার করছেন। তাই এটা কুফুরী।
পীরঃ পীর আসলে এক প্রকারের ধর্মীয় শিক্ষক। আপনাকে বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা দিবে এবং আপনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। এই পর্যন্ত বিষয়টি ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচার হয়েছে “যার পীর নেই, তার পীর শয়তান”। পীর আপনাকে বিভিন্ন বালা মুসিবত থেকে দূর করার ক্ষমতা রাখে, আপনাকে সৌভাগ্য দিতে পারে এবং পরকালে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। এগুলো সব আল্লাহর ক্ষমতা। আল্লাহর ক্ষমতার অংশকে পীরের সঙ্গে অংশিদার করা হয়। কাজেই এটি শিরক। কোন ছেলে পরীক্ষায় পাশ করবে , বা কোন নিঃসন্তান মহিলা সন্তান চাইবে এজন্য পীর বড়োজোর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় – সবাই গিয়ে পীরের কাছে চায় (যেন আল্লাহ পীরকে এর এজেন্সী দিয়েছেন – নাউজুবিল্লাহ)। পীরও পানি পড়া, সুতাপড়া, কলম পড়া ইত্যাদী দিয়ে থাকে। অনেকে হয়ত মনে করে – সৌভাগ্য আল্লাহই দেন, পীরের পানি পড়া একটা উসিলা মাত্র। এটাও শিরক। আল্লাহ তার ইচ্ছেমতন আমাদের সৌভাগ্য দেন – আপনি যখন একটি পানি পড়া দিয়ে আল্লাহর সেই ইচ্ছা পরিবর্তন করতে চেস্টা করবেন তখন এটি শিরক হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে চাওয়ার একটি মাত্র উপায় – সেটি হল নিজে বা অন্য কেউ সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আপনি নিজে নিজের জন্য বা অন্যের জন্য দোয়া করতে পারেন। দোয়া করতে হবে সরাসরি - কোন ব্যাক্তি বা বস্তুর উসিলায় নয়। দোয়ার (আল্লাহর কাছে চাওয়ার) সময় কোন ব্যাক্তি বা বস্তু আপনার ও আল্লাহর মাঝে আসলেই এটা শিরক।
মাজারঃ মাজার হল পীরের কবর। অনেকের ধারনা পীর মরার পরে আরো শক্তিশালী হয়ে যায়। তখন তার আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকে। আপনাকে আরো বেশি সাহায্য করতে পারে। এজন্য অনেকে মাজারে সুতা বাধে, মানত করে, কোন কিছু চায় ইত্যাদি। এগুলো শিরক। অনেকে আবার সরাসরি পীরের কাছে চায়না কিন্তু মনে করে – মাজারে গিয়ে আল্লাহর কাছে চাইলেই আল্লাহ রাজী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এটাও শিরক। (কারনটি আগের প্যারাতে বলেছি)। কবরে শুয়ে থাকা ব্যাক্তির কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই – বরং আপনার ক্ষমতা আছে তার জন্য দোয়া করা। মাজারে গিয়ে আপনি তার জন্য দোয়া করলে সেই পীরের লাভ হবে। মাজারে আপনার কোন লাভ নেই। বরং শিরকে জড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
তাবিজঃ বাংলাদেশে সর্বাধিক প্রচলিত শিরক হচ্ছে তাবিজ। অনেক বড় বড় ইসলামের ডিগ্রীওয়ালা হুজুর এখনো এই সব তাবিজ দিয়ে থাকেন। সাধারন লোক – অনেকে যানেই না যে তাবিজ ব্যাবহার করা শিরক। তাবিজের শিরক দুই প্রকারের। এক- আপনি যদি মনে করেন এই তাবিজ আপনাকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে তবে এটি বড় শিরক। (বিপদে ফেলার ও রক্ষা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ)। দুই- আপনি মনে করেন রক্ষা আল্লাহই করেন তাবিজ উসিলা মাত্র, তবে এটি ছোট শিরক। কারন আপনি একটি বস্তু দিয়ে আল্লাহকে কোন কিছু করতে এক প্রকার বাধ্য করতে চাচ্ছেন। তাবিজে কোরআনের আয়াত লেখা থাকলেও সেটি শিরক। কোরআনের আয়াত পড়ে একজনের গায়ে ফু দেওয়া যায়েজ আছে – তাবিজ, পানি পড়া, কলম পড়া ইত্যাদি হারাম ও শিরক। একইভাবে, গাছের শিকড়, পাথর ইত্যাদি শরীরে ব্যাবহার করা শিরক। রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় নিজে আল্লাহর কাছে দোয়া করা বা অন্য (জীবিত) কাউকে দোয়া করতে বলা।
এখন নামাজ পড়া লোকের সংখা আগের চেয়ে বেশী। ৩০-৪০ বছর আগে তো বুড়ো ছাড়া কেউ নামাজ পড়ত না। তার পরেও আপনার আশেপাশে দেখবেন ৯০% মুসলিম জনবসতির বাংলাদেশে ৫০% নামাজ পড়ে না। আর ৩০% মুসলমান উপরে বর্নিত বিভিন্ন শিরক ও কুফরীতে বুঝে অথবা না বুঝে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মানে বাংলাদেশে খাতায় নাম আছে এমন মুসলিম এর সংখা ১০% হবে। আপনার গননা হয়ত আমার থেকে আলাদা হবে। তারপরেও আপনি আপনার আশেপাশে মুসলিমদের দেখুন। মুসলিমের খাতায় ১৫% এর বেশী পাবেন না।
মুসলমানেরা বাংলাদেশে আসলে সংখা লঘু। তাই তারা এমন কোনঠাসা। মুসলমানদের বিরুদ্ধে কটুক্তি, রাজনীতি, সান্ত্রাস ইত্যাদি করে মুসলমান নামধারী কিছু অমুসলিমরা। আর সারা দেশে এটিকে সমর্থনও দেয় তারা। মুসলমানেরা এইদেশে সংখালঘু। আর তাই তো ইসলামের নামে কটুক্তি করেও সবাই এদেশে পার পেয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
৪০০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন