নাসিরুদ্দিনের সোনার মোহর - সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৬ জুন, ২০১৩, ০৩:২৪:৩৫ রাত



নাসিরুদ্দিন হোজ্জার এই গল্পটা অনেকে হয়ত জানেন। সংক্ষেপে বলছি। একবার নাসিরুদ্দিন হাতে দুটি সোনার মোহর নিয়ে রাজপ্রাসাদের সামনে চিন্তিত মুখে বসে রয়েছে। রাজা তাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন "কি হোজ্জা কি করছ?" হোজ্জা বলেলেন চিন্তা করছি সোনার গাছটি কিভাবে যত্ন নিব। রাজা বললেন "তার মানে?"। নাসিরুদ্দিন বলল আমার হাতে যে দুটি মোহর দেখছেন এটা আমার গাছের মোহর। রাজা অবাক হয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলেন। হোজ্জা বলল, আমি একটি মোহর মাটিতে পুতেছিলাম সেই মোহর গাছে দুটি মোহর ধরেছে। এখন আমি এই দুটি মোহর আবার গাছ লাগাব। চারটে তো পাবোই, কিন্তু চিন্তা করছি কিভাবে যত্ন করলে আরো বেশী পাওয়া যাবে। এই বলে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা বিদায় নিয়ে চলে যাছিল।

রাজা ভীষন অবাক হলেন। তাকে থামিয়ে বললেন, আমি তোমাকে পাচটি মোহর দিচ্ছি। তুমি এগুলোর গাছও লাগাও। আচ্ছা বলে পাচটি মোহর নিয়ে নাসিরুদ্দিন চলে গেল। এক মাস পরে নাসিরুদ্দিন রাজার কাছে হাসি মুখে আসল। রাজাকে দশটি মোহর দিয়ে বলল, রাজামশাই আপনার মোহরের ফলন মাঝারী হয়েছে তাই পাচটিতে দশটি পেলেন। আমার বেশ ভালো হয়েছে আমি দুটিতে পাচটি পেয়েছি। রাজা তো বেজায় খুশি। এবার যাবার সময় নাসিরুদ্দিনকে ত্রিশটি মোহর দিলেন আর বললেন, এবার ভালো ভাবে যত্ন নিও। নাসিরুদ্দিন আচ্ছা বলে মোহরগুলি হাতে নিল।

এর পরে দেড় মাস যায়, দুই মাস যায় নাসিরুদ্দিনের দেখা নেই। রাজা তাকে ডেকে আনতে লোক পাঠালেন। লোকেরা তাকে রাজদরবারে নিয়ে এল। রাজা তাকে মোহরের কথা জজ্ঞেস করলেন। নাসিরুদ্দিন বলল, রাজা মশাই এবার অতি বৃস্টিতে গাছ মরে গেছে। রাজা বললেন, ঠিক আছে আমার আসল ত্রশটি মোহর ফেরত দাও। নাসিরুদ্দিন বলল, রাজা মশাই বীজ বপন করে গাছ জন্মেছিল সেই গাছ মরে গেছে। এখন আমি বীজ আপনাকে কিভাবে দিব? বীজ থেকে গাছ হয়ে সেই গাছ মরে গেছে। গাছের ফল হলে আপনাকে মোহর দিতে পারতাম।

রাজা এবার রেগে গেলেন। কি যা তা বলছ। গাছ বীজ ফল। মোহর কি আমের আটি নাকি? নাসিরুদ্দিন বলল - রাজা মশাই দুই মাস আগেই তো আপনাকে মোহর গাছের ফল দিয়েছি তখন তো একথা জিজ্ঞেস করেন নি। আজ গাছ মরে গেছে তাই একথা বলছেন। রাজা সবই বুঝলেন। বুঝলেন তার নিজের বোকামী হয়েছে। কিন্তু আত্মসন্মান রক্ষা করার জন্য চুপ থাকলেন আর নাসিরুদ্দিনকে চলে যেতে বললেন।

আমাদের দেশের এই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন কিছুটা এরকম হয়েছে। এই নির্বাচনে বিরোধী দলকে জিতিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমান করল। এখন বি এন পি এর তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী হালকা হয়ে যাবে। তাই আগামী সংসদ নির্বাচন আওয়ামী সরকারের অধীনে হবে আর তখন ফলাফলও তাদের পক্ষেই যাবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হারলে সরকারী দলের কিছুই যায় আসে না। তাদের সংসদ নির্বাচনে জেতা দরকার। বড় মাছটি ধরার জন্য ছোট মাছটি ছেড়ে দিল। যারা দাবা খেলতে পারেন তারা বিষয়টি আরো ভালো বুঝবেন। অনেক সময়ে, দাবা খেলার সময় প্রতিপক্ষের মন্ত্রী খাওয়ার জন্য নিজের নৌকাটা বলি দিতে হয়।

অনেকে হয়ত মনে করছেন আমি কোন ভালো জিনিস চোখে দেখি না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরেছে এর মধ্যে আবার তাদের রাজনীতি খুজছি। আপনি গত চার মাসের ঘটনা মিলিয়ে দেখুন। আপনিও রাজণীতির গন্ধটা পাবেন। দেশের বর্তমান অস্থিরতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুল কারন মাত্র দুটি। তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা ও জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধীর নামে বিচার করা। এ দুটি বিষয় নিয়ে দেশে এত তুলকালাম কান্ড হয়ে গেল। তারপরেও কিন্তু আওয়ামী লীগকে দমানো যায়নি। বরং আওয়ামী লীগ তাদের বিরোধী সবাইকে দমন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে যে বলছে সেই সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বন্ধ হচ্ছে। প্রতিবাদীকে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে। মিছিল ও সমাবেশে গুলি করে গনহত্যার রেকর্ড করেছে। এর পরে শিবির, বিএনপি, হেফাজত সবাই ঠান্ডা। প্রানের ভয় সবারই আছে। ওদিকে আবার শাহবাগকে দিয়েছে জামাই আদর। আওয়ামী লীগের অধীনে রয়েছে পুলিশ, মিডিয়া, বিচারক, শিক্ষক, মানবাধিকার সংস্থা, বুদ্ধিজীবি, দুর্নিতী দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি। হ্যা, এরা আওয়ামী লীগের অধীনে, সরকারের অধীনে নয়। (সরকারের অধীনে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারী, সরকারের দেওয়া দায়ীত্ব পালন করে, কোন দলের দেওয়া দায়ীত্ব নয়।) আওয়ামী লীগের আরো রয়েছে ৪০% সাধারন জনগন যারা অন্ধ আওয়ামী ভক্ত। জীবন থাকতে তারা আওয়ামী লীগ ছাড়বে না। এত কিছু তাদের অধীনে থাকতেও তারা একটিও সিটি কর্পোরেশনে জিততে পারল না এটা অবিশ্বাস্য।

সবাই ভাবছে - নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে। আসলে এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছে। এতে তারা জনগনের আস্থা অর্জন করতে চায় যাতে জনগন তত্বাবধায়ক সরকার দাবী না করে। তত্বাবধায়ক ছাড়া সংসদ নির্বাচন হলে তখন আওয়ামী লীগ আপনাদের দেখাবে কারচুপী কাকে বলে। বিএনপি তখন প্রতিবাদ করলে আওয়ামী লীগ (নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মতন) তাদেরকে এক কথায় থামিয়ে দিবে "আপনারা সিটি কর্পোরেশনে জিতলে তখন নিরপেক্ষ নির্বাচন আর সংসদ নির্বাচনে হারলে তখন কারচুপি হয়ে যায় তাই না?"

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে যে, এত কিছু যখন আওয়ামী লীগের দখলে তখন নাচের পুতুল বিচারক, বা নাচের পুতুল নির্বাচন কমিশনারের মতন একটি নাচের পুতুল তত্বাবধায়ক সরকার বসিয়ে দিলেই তো সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। সেই তত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জিতিয়ে দিবে। এখানে কবির একটি লাইন আছে "চুন খেয়ে গাল পুড়লে, দই দেখলে ভয় পায়"। অতীতে তারা একবার ক্ষমতা ছেড়ে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দিয়েছিলেন আর প্রতিটি সরকারী সেক্টরে আওয়ামী সমর্থক আমলাদের সেটিং ছিল। সে সেটিং ঠিক থাকলে আওয়ামী লীগের জয় ছিল নিশ্চিত। কিন্তু তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আমলাদের বদলী করার এক রেকর্ড গড়লেন। এতে আওয়ামী লীগের সাজানো সেটিং নস্ট হয়ে গেল আর নির্বাচনে তারা পরাজিত হল। এখনো আমার কানে বাজে নির্বাচনে হারার পরে দেশনেত্রী, গনতন্ত্রের মানস কন্যার সেই বানী "ক্ষেত রক্ষা করার জন্য বেড়া দিলাম, সেই বেড়াই আমার ক্ষেত খেয়ে ফেলল"। সেই ভয় আওয়ামী লীগের এখনো আছে। তারা ক্ষমতা কারো কাছে ছাড়তে ভরসা পায় না।

বিষয়: বিবিধ

২৩৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File