চলো আওয়ামী লীগ হয়ে যাই

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২০ মে, ২০১৩, ০১:৩২:৩৪ রাত

দেড় দশক আগে একজন বিদেশী ধনী (ডোনার) আমাদের এলাকার একটি স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি স্কুলে বেশ বড় অঙ্কের টাকা দান করেছিলেন যা দিয়ে একটি দোতালা স্কুল ভবন তৈরি করা হয়েছিল। অনেক কৌতুহলী এলাকাবাসীর মতন আমিও ওই পরিদর্শনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম। উনি স্কুলের বিভিন্ন এলাকা বেশ ঘুরে ফিরে দেখলেন। টিউবওয়েলের কাছে এসে তিনি দেখলেন, কলের গোড়ায় ও আশেপাশের এলাকা শ্যোওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। হাত দিয়ে ঘষে সেই সেওলা উঠিয়ে দেখালেন এবং জানালেন এগুলো পরিস্কার করতে হবে।

এই ঘটনাটা এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল। এমন ধনী ব্যাক্তি হাত দিয়ে এভাবে ময়লা শেওলা ধরলেন। অনেকে অনেক কথা বলাবলি করতে লাগল। অনেকের সাথে আমি নিজেও বলাবলি করতে লাগলাম। "ব্যাটা পাগল নাকি। হাত দিয়ে শেওলা ধরেছে আবার বলছে এগুলো পরিস্কার করতে হবে। আরে, চাপ কল এর আশে পাশে তো সব সময় পানি পড়ে। এখানে তো শেওলা হবেই। এখানে তো পিচ্ছিলা হবেই। পরিস্কার করলেও লাভ নেই। আবার শেওলা হবে।"

নিজে বিদেশে আসার পরে বিষয়টি বুঝতে পারলাম। গত বারো বছরে বিদেশে ছোট বড় অনেক কাজই করেছি। কোথাও অপরিস্কার দেখতে পাইনি। সারাদিন পানি পড়লেও এখানে শেওলা হয়না। কারন এখানে নিয়মিত পরিস্কার করা হয়। অন্য কিছু তো দুরের কথা, জুতার তলা কখনো ময়লা হয়না। পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আরো অনেক পার্থক্য বিদেশে দেখতে পেয়েছি যা দেশে থেকে বুঝতে পারিনি।

আমাদের দেশের সমাজটা হয়ে গেছে ঘুনে ধরা, শেওলা পড়া। আমরা অনেক ধরনের অপকর্ম দেখতে দেখতে এমন অভ্যস্থ হয়ে গেছি যে এগুলিই এখন স্বাভাবিক মনে হয়। পুলিশ তো ঘুষ নেবেই। সরকারী কর্মচারী তো দুর্নীতি করবেই। নেতারা তো ক্ষমতা লোভী হবেই। নেতারা তো মিথ্যা বলবেই। ছাত্রনেতা তো ক্যাডার হবেই। ছাত্র হোস্টেলে তো অস্ত্র থাকবেই। রাস্তায় তো ধুলা থাকবেই। শহরে জানজট তো থাকবেই। অন্ধকার গলিতে তো ছিনতাইকারী থাকবেই। জৌতুক তো দিতেই হবে। নারী তো নির্যাতিত হবেই। এমন হাজারো নিয়মিত অপকর্ম আমাদের কাছে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমি যদি একটি অন্ধকার গলিতে যাই এবং আমাকে যদি ছিনতাইকারীরা ধরে তবে সবাই আমাকেই দোষ দিবে। বলবে "তুমি বাপু এই অন্ধকারে ওই গলিতে কেন গিয়েছিলে?" বিষয়টা এমন যে, আমি ওই গলিতে গিয়ে অপরাধ করেছি, ছিনতাইকারীর কোন অপরাধ নেই। অন্ধকার গলিতে তো ছিনতাই হবেই।

আরো এক ধাপ এগিয়ে আছে আমাদের পুলিশ। দেশে রাতে ফিরতে দেরী হলে বাসা থেকে আমাকে ফোন করে সাবধান করে দেওয়া হয়। সাবধান করা হয়, ছিনতাইকারী তো অন্ধকার গলিতে ধরবে। কিন্তু পুলিশ রাতে ঘোরাফেরা করার জন্য যে কোন যায়গা থেকে ধরতে পারে। তাদের কথা মিথ্যা নয়। আমি কয়েকবার পুলিশের মুখোমুখি হয়েছি, যদিও কোন অঘটন ঘটেনি। হয়ত আমার এই লেখা পড়া অনেক পাঠক আমাকে বলছেন "এটা বিদেশ নয়, তুমি বাপু, এখানে কেন রাতে ঘোরাফেরা করবে?" হ্যা, অন্যায় আমারই। এই অস্বাভাবিক বিষয়গুলিকে স্বাভাবিক বলে এখনো মেনে নিতে পারিনি।

কয়েক শত বছর থেকে আমাদের কাছে একটি বিষয় খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দেশ যারা চালায় তারা রাজা। তারা জনগনের কেউ নয়। ছিলাম ব্রিটিশ এর খপ্পরে। এরপরে ছিলাম পাকিস্তানীদের খপ্পরে। গত চল্লিশ বছর ধরে আছি আমাদের দেশের নেতাদের খপ্পরে। এই মুহুর্তে রয়েছি আওয়ামী লীগের খপ্পরে। এরশাদের পদত্যাগের পরে একই মুদ্রার দুই পিঠ আওয়ামী লীগ ও বি এন পি পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসত। একদল ক্ষমতায় আসে, দুর্নীতি, সন্ত্রাস করে টাকার পাহাড় করে আর জনগন ভুগে মরে। চলে বিরোধী দলের সরকার পতন কর্মসুচী, হরতাল ও আন্দোলন। এরপরে ক্ষমতা বদল হয়। লাউ এর বদলে জনগন কদু পায়। একই ধারা চলতে থাকে। এর কোন শেষ নেই।

আওয়ামী লীগের কার্জকলাপ আমার পছন্দ না হলেও একটি বিষয়ে তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হবে। তারা আওয়ামী লীগ ও বি এন পি এর একের পরে এক ক্ষমতায় আসার খেলা বন্ধ করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থেকে যাবে। আর বিরোধী কোন দল তারা বাচিয়ে রাখবে না। এর জন্য যা করার দরকার করবে। যত নীচে নামতে হয় নামবে। কিন্তু কিছুতেই, ক্ষমতা ছাড়বে না।

সন্ত্রাস ও দুর্নীতি সব দলই আগে পরে করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের এবারের আমলনামা, আগের সবার চেয়ে অনেক বেশী ভারী হয়ে গেছে। শেয়ার বাজার, বিডিয়ার বিদ্রোহ, সাগর রুনী, ইলিয়াস আলী, বিশ্বজিত, সুরঞ্জিত রায়, ডেসটিনি, হলমার্ক, পদ্মা সেতু, যুদ্ধাপরাধীর নামে অবিচার, শাহবাগ নাটক, মিছিলে হত্যা, মসজিদে গুলি, রানা প্লাজা, হেফাজতের কর্মীদের হত্যা। এত অপকর্ম এর আগে কেউ করতে পারেনি। সবাই দেখছে, শুনছে, বুঝছে - কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের এই শেওলা পড়া চেতনাতে এগুলো স্বাভাবিক মনে হয়।

জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখা কোন নতুন কিছু নয়। সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে, আগে পরে এমন হয়েছে। কিন্তু ওসব দেশে ছিল সরকার বনাম জনগন। স্বৈরাচারী সরকারের এক বাহিনী থাকে। তারা বল প্রয়োগ করে ক্ষমতা ধরে রাখে। সারা দেশের জনগন থাকে তাদের বিরুদ্ধে। প্রানের ভয়ে হয়ত প্রতিবাদ করতে পারে না, কিন্তু জনগন অন্তত ওই ধরনের সরকারকে পছন্দ করে না। দেশের বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, মিডিয়া, লেখক যাদেরকে সমাজের বিবেক বলা হয়, তারা জনগনের সাথে একইভাবে সরকারকে ঘৃনা করে। মাঝে মাঝে তাদের লেখনীতে সরকারেরে বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ হয়ে পড়ে। এভাবে ধীরে ধীরে একদিন জনগন স্বৈরাচারির পতন ঘটায়। আমাদের দেশে এর কোন সম্ভাবনা নেই। কারন - আমাদের দেশের সমাজ এর আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সব যায়গাতেই, এখনো আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছে।

দেখুন - আওয়ামী সমর্থক কারা

- বুদ্ধিজীবি ১০০%

- মিডিয়া ৯৯%

- তারকা ৯৫%

- সাংবাদিক ৯৫%

- পুলিশ ৯৯%

- সন্ত্রাসী ৯৮%

- সরকারী কর্মচারী ৮০%

- লেখক ৮৫%

- রাজনীতিবিদ ৭০%

- জনগন ৪০%

উপরের এই তথ্য আমার মনগড়া। কিন্তু এর সত্যতা আপনি যাচাই করতে পারবেন। আপনার আশে পাশে যাদেরকে চিনেন তাদের মধ্যে খুজে দেখুন, আওয়ামী লীগের অভাব নেই। দেশে মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব, তারকা, সাংবাদিক, এসব পেশায় আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কে আছে? আওয়ামী লীগ ছিল না এমন মিডিয়া আর সংবাদ পত্র তো এখন বন্ধ।

আওয়ামী লীগের কার্জকলাপে সাধারন জনগন বিরক্ত হলেও, এখনো আওয়ামী লীগের সমর্থকের অভাব নেই। বিদেশে শেওলামুক্ত সমাজে এমন দলের একজনও সমর্থক থাকত না। পার্থক্য এখানেই। আমাদের এই আওয়ামী লীগের খপ্পরেই থাকতে হবে। অন্য অস্বাভাবিক বিষয়গুলিকে যেভাবে স্বাভাবিক বলে মানে নিয়েছেন ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিন। দেশের প্রথম শ্রেনীর লোকেরা বুদ্ধিমান, তাই বিষয়টি আগেই বুঝে ওরা সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৭১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File