মুসলমানেরা কেন মার খায়
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৩ মে, ২০১৩, ১১:৪৪:২৬ রাত
আমরা তো নগন্য মুসলমান। বলা চলে খাতায় কোন মতে নাম লিখিয়েছি। আমাদের আচার আচরন, চাল চলন, আলাপ ব্যাবহার, কার্জকলাপ ইত্যাদি কোন কিছুতেই ইসলাম নেই বললেই চলে। শুধু আমরা নয়, সত্যিকারের মুসলমান যারা, তারাও যুগে যুগে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। সাহাবিরা তো দুরের কথা, রাসুল (সঃ) নিজেই শারিরিক ভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন। পাথর মেরে তাকে রক্তাত্ত করা হয়েছে। আর মানষিক অত্যাচার তো ছিলই। কিন্তু কেন? মুসলমানদের কি দোষ? তারা মার খায় কেন?
আদম (আঃ) এর আমল হতে আল্লাহ লক্ষ নবীর মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করার কথা প্রচার করেছেন। সকল নবীর প্রচার করা ধর্মই ছিল আল্লাহর ইবাদত করা ও আল্লাহর দেওয়া নীতিমালা অনুসরন করা। এই ধর্মগুলোকে মানুষ বিভিন্ন নাম দিয়েছে, বিভিন্ন ভাবে বিকৃত করছে। কিন্তু আল্লাহর দ্বারা আদেশকৃত সকল ধর্মের কথা একই। শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তার দেওয়া নীতিমালা মেনে চলা। এই ধারাবাহিকতার সবচেয়ে শেষ নীতিমালাই হচ্ছে ইসলাম। যারা আল্লাহর ইবাদত ও নীতিমালা প্রচার ও অনুসরন করেছে তারাই মার খেয়েছে। এর কারন কি? এর একটাই কারন - আর তা হচ্ছে ক্ষমতা। এটা হয়ত আপনার কাছে বেমানান মনে হচ্ছে। ধর্মের সঙ্গে ক্ষমতার আবার সম্পর্ক কিসের। আসুন বিষয়টি বুঝে নেই।
প্রথমে বুঝতে হবে ধর্ম কি। ধর্ম হচ্ছে এক ধরনের পরিচয় যেটা সম্পুর্ন আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এটা সামাজিক ব্যাবস্থার মতন এক ধরনের ব্যাবস্থা যেটা মেনে নিতে আপনি বাধ্য নন। উদাহরন, হিন্দুদের মন্দিরে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিমা পুজা করার পদ্ধতি। বিবাহিত মহিলারা মাথায় সিদুর দেয় বা মঙ্গলসুত্র পরে। আবার রয়েছে (কর্ভাচত) উপবাস এর পদ্ধতি। একটি বিশেষ দিনে বিবাহিত মহিলারা স্বামীর মঙ্গল কামনায় সারাদিন না খেয়ে থাকে। সন্ধ্যায় চাদ দেখে স্বামীর সামনে উপবাস ভাঙ্গে। আরো রয়েছে "দীপাবলি" (মোমবাতি ও আতস বাজি জ্বালানোর উতসব)। রয়েছে "হলি" (রঙ নিয়ে খেলার উতসব) । খ্রিস্টানদের গির্জায় রয়েছে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মুর্তি যার সামনে সবাই মোমবাতি জ্বালায়। গির্জার ধর্মগুরুর সামেনে নিজের পাপ বর্ননা করে অনুশোচনা করে পাপমুক্ত হয়। ইত্যাদি সবই এই সব ধর্মের পদ্ধতি। এগুলো আসলে সামাজিক ব্যাবস্থার মতন কিছু ব্যাবস্থা।
সামাজিক ব্যাবস্থা হল সেই সব ব্যাবস্থা যেগুলো অমান্য করলে বিষয়টি দেখতে খারাপ লাগে, মানুষ খারাপ বলে। কিন্তু এর জন্য কোন শাস্তি হয় না। উদাহরনঃ আমাদের সমাজে বাবার সামনে সিগারেট খায় না। এটি আমাদের সামাজিক ব্যাবস্থা। কিন্তু যদি কেউ বাবার সামনে সিগারেট খায় তবে সামাজিক ব্যাবস্থায় তার জন্য কিন্তু কোন শাস্তির বিধান নেই। একই ভাবে উপরে বর্নিত হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কাজগুলো না করলে ওসব ধর্মীয় ব্যাবস্থাতে শাস্তির কোন বিধান নেই। হিন্দু বা খ্রিস্টান ধর্মের কোন বইতে লেখা নেই যে পুজা না করলে বা গির্জায় না গেলে সে ইহকালে বা পরকালে শাস্তি পাবে। ওদের নরক বা হেল এর শাস্তির কথা বলা হয়েছে তাদের জন্য যারা চুরি, ডাকাতি বা হত্যা ইত্যাদি করেছে। সামাজিকতা ও ধর্ম এমন একটি জিনিস যেটি না মানলে লোকে খারাপ জানে কিন্তু কোন শাস্তি হয় না। সামাজিকতা ও ধর্মের পদ্ধতির সুনির্দিস্ট কোন নীতিমালা থাকে না। যার ফলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দু ধর্মের পদ্ধতি একেবারেই আলাদা।
ইসলাম আসলে কোন ধর্ম নয়। এটি একটি জীবন ব্যাবস্থা। এটি একটি সুনির্দিস্ট নীতিমালা। এসব নীতিমালা না মানলে ইহকালে ও পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি। এসব নীতিমালা ও শাস্তির বিধান রয়েছে লিখিত। অন্যান্য ধর্মকে যদি সামাজিকতার সঙ্গে তুলনা করা যায় তবে ইসলামকে তুলনা করতে হবে আইনের সঙ্গে। আইন সুনির্দিস্ট ভাবে লেখা থাকে ও কঠোর ভাবে মেনে চলা হয়। ইসলামে হয়েছে বাধ্যতামুলক নামাজের ব্যাবস্থা, রয়েছে সুদ মুক্ত থাকার আদেশ, রয়েছে রমজানে একমাস রোজা থাকার আদেশ, রয়েছে জাকাত দেওয়ার ব্যাবস্থা ইত্যাদি। এগুলো না করলে রয়েছে পরকালে শাস্তির ব্যাবস্থা। আর চুরি, ডাকাতি বা হত্যার শাস্তির ব্যাবস্থা ইহকালেই রয়েছে।
এবার মুল কথায় ফিরে আসি। মুসলমানেরা কেন মার খেয়েছে এবং খায়। রাসুল (সাঃ) এর আমলে, ইসলাম ধর্ম যদি কোন ঐচ্ছিক পদ্ধতি নিয়ে আসত তবে কারো এ বিষয়ে কোন আপত্তি ছিল না। এমন হলে, রাসুল (সাঃ) সারাদিন মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করার কথা বলতেন। যার মানার সে মানত, যার পছন্দ হত না সে এড়িয়ে যেত। এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতো না। কিন্তু উনি নিয়ে এলেন পরিপুর্ন জীবন ব্যাবস্থা, আনলেন জীবনের এক নতুন আইন। একে একে সবাই যদি তার ব্যাবস্থার আওতায় চলে আসে তবে সমাজে নতুন এক ব্যাবস্থা শুরু হবে। এতে করে তখনকার প্রচলিত ব্যাবস্থা এবং প্রচলিত নেতারা সবাই অকেজ হয়ে পড়বে। এক কথায় নেতারা ক্ষমতা হারাবে। রাসুল (সাঃ) হবেন তখন ক্ষমতাবান নতুন নেতা। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই নেতারা রাসুল (সাঃ) ও তার অনুসারীদেরকে বিভিন্ন শারিরিক অত্যাচার করত। তাদের মিশন ছিল এভাবে অত্যাচার করে সবাইকে ইসলামের বাইরে নিয়ে এসে ইসলামকে বন্ধ করা। তাহলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে। ক্ষমতায় থাকার জন্যই মুলত নেতারা কাফের হয়েছিল। মুসলমান হলে তো রাসুল (সাঃ) এর অধীনে আসতে হয়। তখন আর ক্ষমতা থাকে না।
আল্লাহর রহমতে কাফেরদের এসব অত্যাচার ইসলাম প্রতিস্টাকে ঠেকাতে পারেনি। নিন্দুকেরা ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম বলে অপবাদ দেয়। কিন্তু আসলে ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে কম রক্তপাতে অর্জিত কোন নতুন আইন বা পদ্ধতি বা মতবাদ। ইসলাম প্রতিস্টা পেতে রাসুল (সাঃ) এর আমলে (কাফের ও মুসলিম) উভয় পক্ষে মাত্র কয়েক শত লোক নিহত হয়েছে। ইদানিং তো মিছিলেই কয়েকশত লোক নিহত হয়।
এটা ঠিক, অন্য ধর্মের প্রতিস্টার জন্য তো একজন লোকও মারা যায়নি। এর কারন আমি আগেই বলেছি। অন্য ধর্ম ঐচ্ছিক ব্যাবস্থা এনেছে। ইসলাম এনেছে আইন। ইসলাম বাস্তবায়ন হলে ক্ষমতাবানেরা ক্ষমতা হারায়। অন্য ধর্মগুলো যদি এমন ক্ষমতাবানদের জন্য হুমকি নিয়ে আসত তবে দেখতেন যুদ্ধ আর প্রানহানী কাকে বলে। নতুন আইন প্রনয়ন ও ক্ষমতার যুদ্ধেই - সমাজতন্ত্র প্রতিস্টা করতে স্টালিন ৬০ লক্ষ লোক হত্যা করেছে। হিটলার ৪০ লক্ষ হত্যা করেছে। বাংলাদেশে স্বাধিনতার জন্য লক্ষ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। লক্ষ লোকের প্রানের বিনিময়ে এসেছে ফরাসী বিপ্লব।
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অতীতে মুসলমানদের মারা হয়েছে, বর্তমানে হয়, ভবিশ্যতেও হবে। আল্লাহর রহমতে, অবশেষে সঠিক সময়ে বিজয় মুসলমানদেরই হবে।
[ দ্রস্টব্যঃ ইসলামের রাজনীতি ও শাশন ব্যাবস্থা ইত্যাদি নিয়ে অনেকেই ভুল ধারনা পোষন করেন। ইসলাম পরিপুর্ন জীবন ব্যাবস্থা। এতে অর্থনীতি, রাজনীতি সবই রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে প্রথমে গদি দখল করতে হবে এর পরে সবাইকে মুসলমান বানাতে হবে। বিষয়টা ঠিক উলটো। সবাইকে সত্যিকারের মুসলমান হতে হবে, তখন গদি এমনিতেই দখল হয়ে যাবে]
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন