আওয়ামী লীগের পতন যেভাবে আসবে
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ০৬ মে, ২০১৩, ০৭:৩২:১২ সন্ধ্যা
নমনীয় হলে বিপ্লব বা আন্দোলন হয় না। এ বিষয়ে আমার আগের এক লেখাতে লিখেছিলাম (লিঙ্ক এখানে)। নতুন ঘটনা প্রবাহে সেই বিষয়টি আরো স্পস্ট হয়ে গেল। লক্ষ লোকের আন্দোলন সরকারকে সেভাবে নড়াতে পারছে না। হেফাজতীর কর্মীরা গনহারে মারা যাচ্ছে আর এর সাথে যুক্ত হচ্ছে হেফাজতের উপর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ। তারা নাকি ঢাকায় তান্ডব চালাছে। নিজেদের শত কর্মীর জীবন চলে যাচ্ছে। তারা তান্ডব চালাচ্ছে নাকি তান্ডবের শিকার?
দেশে গত কয়েক মাস ধরে যে অস্থিরতা চলছে তার পেছনে বড় কারন মাত্র দুটি। তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও যুদ্ধাপরাধীর নামে জামায়াতের নেতাদের বিচার। বাংলাদেশে সন্ত্রাস দুর্নীতি এগুলো বছরের পরে বছর চলে আসছে। সাধারন জনগনের এগুলো এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু তত্বাবধায়ক ও যুদ্ধাপরাধী এই দুটি নতুন আইটেম। সঙ্গে সাইড আইটেম রয়েছে শাহবাগ। এর আগে তত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে আন্দোলোন হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ছিল তত্বাবধায়ক সরকার বিলম্বিত হওয়ার, বা ওই ব্যাবস্থা দলিয়করন করার বিরুদ্ধে। কিন্তু এবার এই ব্যাবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
এরশাদ সরকারের পতনের পরে, তত্বাবধায়ক ব্যাবস্থা চালু হয়। এর পরে গত ২০ বছরে আওয়ামী লীগ ও বি এন পি পালাক্রমে সরকারী ও বিরোধী দলে থাকে। আমাদের রাজনীতিতে, সরকারী দলের চাহিদা, আজীবন ক্ষমতায় থাকা আর বিরোধী দলের চাহিদা, যেভাবেই হোক সরকারকে গদি থেকে নামানো। প্রতিবারেই সরকারী দলের মিত্র দল ছিল জামায়াত এ ইসলাম। তাদের কেউ কেউ এম পি ও মন্ত্রীও হয়েছিল। জামায়াত সব সময় একটা সাহায্যকারী দল ছিল। আওয়ামী লীগ কিন্তু এবার ধংশ করতে গিয়ে জামায়াতকে সামনের কাতারে নিয়ে এসেছে।
একথা স্বীকার করতেই হবে যে, সবচেয়ে বেশী রাজনৈতিক কূটবুদ্ধি সম্পন্ন দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা অদ্ভুত কিছু বুদ্ধি বের করে সব সময়ে আমাদের আবেগপ্রবন জনগনকে বোকা বানায়। এর সঙ্গে রয়েছে প্রশাসন, মিডিয়া ও দলীয় সন্ত্রাসীরা। এভাবে আওয়ামী লীগ এক প্রকার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হল "সম্পুর্ন ঝুকিমুক্ত থাকা"। চিরকাল ক্ষমতায় থাকবার পথে আওয়ামী লীগের ঝুকি ৩টি।
১। সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ
২। তত্বাবধায়ক সরকার
৩। জামায়াত-শিবির
সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপঃ বি ডি আর বিদ্রোহে অর্ধশতাধিক সেনা অফিসার নিহত হওয়ার পরে, আওয়ামী সরকারের উপর সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ এর ঝুকি অনেক কমে গেছে। এর পরেও যদি দেশে সামরিক শাশন আসে, তা হবে সীমিত সময়ের জন্য। এরপরে সেনাবাহিনী, গনতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে, সেই সরকার আওয়ামী লীগের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
তত্বাবধায়ক সরকারঃ অনেকে হয়ত জানেও না, তত্বাবধায়ক সরকারের এই আইডিয়াটা দিয়েছিলেন রাজাকার ও বর্তমান যুদ্ধাপরাধী বিচারাধীন গোলাম আজম। বি এন পি ও আওয়ামী লীগ প্রথমে এই আইডিয়া নাকচ করলেও, পরে চিন্তাভাবনা করে এটা মেনে নিয়েছে। এখন সেই তত্বাবধায়ক সরকার আইন এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী সরকার চাইলে নতুন তত্বাবধায়ক সরকার এর আইন করতে পারে বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যাবস্থা করতে পারে। কিন্তু এটি করলে তো নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ঝুকি রয়েছে। তাই এটি তারা করবে না। এর এর জন্যই চলছে ও চলবে বিরোধী দলের আন্দোলন। আর দেশে হচ্ছে অশান্ত পরিস্থিতি।
জামায়াত-শিবিরঃ পেছনের সারির দল হলেও জামাতের রয়েছে সবচেয়ে শক্ত সাংগঠনিক অবকাঠামো। এদের নেতা যাকে তাকে বানানো হয় না। সুগঠিত এই দলটিকে যদি এখনই নির্মুল করা না যায় তবে এটি ভবিশ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য ঝুকিপুর্ন হয়ে উঠবে। আর তার জন্যই হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর বিচা, হচ্ছে শাহবাগ নাটক।
আওয়ামী লীগ যেভাবে যুদ্ধাপরাধীর নামে জামায়াতেকে নির্মুল করতে চেয়েছে। যেভাবে জনসমর্থন তৈরির জন্য মাঠে নামিয়েছে শাহবাগীদের। জামায়াত-শিবিরও ঠিক একইভাবে, নাস্তিকের নামে আওয়ামী সরকারের পতন আনতে চেয়েছে। মাঠে নামিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের অদুরদর্শিতা ও নমনীয়তা আজ আওয়ামী লীগকে আরো সাহস দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে করেছে অনড়।
৬ই এপ্রিল হেফাজতের সমাবেশ দেখে আওয়ামী সরকার কিছুটা ভয় পেয়েছিল। তাদের শত বাধা সত্বেও ঢাকায় প্রায় ২০ লক্ষ লোক জমা হয়েছিল। সে সময় আওয়ামী মিডিয়া বুঝে কথা বলেছে, ইসলাম বিরোধী ব্লগ সাময়িক ভাবে বন্ধ ছিল, প্রশাসন ছিল নমনীয়। এটা হেফাজতে ইসলামের জন্য বড় একটা সুযোগ ছিল আওয়ামী সরকারকে গদি থেকে নামানোর। ৫ই মে হেফাজতে ইসলাম যা করেছে সেই একই কাজ ৬ই এপ্রিল করলে আমাদেরকে আজ এই দিন দেখতে হত না। তা না করে হেফাজত ১৩ দফা দাবী দিয়েছে, আর দিয়েছে এক মাস সময়। এই সময়ে আওয়ামী লীগ হেফাজতকে প্রতিহত করার নীল নকশা করার সুযোগ পেয়েছে। ৬ই এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি ছিল না কিন্তু ৫ই মে তারা ছিল প্রস্তুত। এই এক মাসে তারা "আমার দেশ" পত্রিকা বন্ধ করেছে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে, বি এন পি এর প্রায় সব নেতা গ্রেফতার করেছে। ৫ই মে বিদ্যুত বন্ধ করেছে, মোবাইল সংযোগ বন্ধ করেছে আর চালিয়েছে নির্বিচারে গুলি। এতে আন্দোলন হয়েছে ছত্রভঙ্গ। এছাড়া মিডিয়া তো রয়েছেই। হেফাজতের শত শত কর্মী মারা যাওয়াটা তাদের কাছে খবর নয়। তাদের খবর হল, হেফাজতেরা গাড়ী ও বইয়ের দোকান পুড়িয়েছে।
ওদিকে বি এন পি এর আন্দোলন হল শুধু মুখের কথা আর টক শো। ওরা সুযোগে রয়েছে, ইসলামিক আন্দোলনকারীরা বুকের রক্ত দিয়ে সরকারের পতন ঘটাবে আর বিএনপি ক্ষমতা দখল করবে। ৫ই মে রাতে বিএনপি হেফাজতের সঙ্গে আন্দোলনের মাঠে থাকলে নির্বিচারে গুলি অনেক কমে যেত। ইসলামিক আন্দোলন কারীরা এখন যদি শক্ত অবস্থান নিতে পারে তবে তাদের জয় হবে। আর যদি রনভঙ্গ দেয় তবে তো আর কথাই নেই। আওয়ামী লীগ সরকার স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় বসে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা বিএনপি এর নেই।
আশার কথা হল, দেরীতে হলেও, অত্যাচারী শাসকের একদিন পতন হয়। যদি ইসলামিক এই আন্দোলন সেই পতন আনতে পারে তবে বাংলাদেশে ইসলাম আরো জোরদার হবে। তা না হলেও আওয়ামী লীগের পতন হবেই। আর কেউ এই পতন না আনতে পারলেও তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনবেই। নিজেদের ফাদে নিজেরাই ধরা পড়ে যাবে। পতনের পরে এরশাদ কয়েক বছর জেলে ছিলেন। জেলে থেকেই তিনি ৫ টি আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরশাদ স্বৈরাচারী হলেও তার একটা নীতি ছিল। কিন্তু নীতিহীন আওয়ামী লীগ, ক্ষমতায় থেকে যেভাবে আমলনামা ভারী করছে তাতে বোঝা যায়, পতনের পরে তাদের নেতাদের অবস্থা কত শোচনীয় হবে। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সেই পতন দেখার তওফিক দান করেন।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন