মফিজের মানিব্যাগ বনাম হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন
লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৩৪:৪৪ সকাল
মফিজ একদিন সন্ধায় বাসায় ফিরছিল। সে ঢাকার এক নাম না জানা কলেজের ছাত্র। হটাত বাসার খানিক দূরে অল্প চেনা, কলেজের আশেপাশে ঘোরা তিনটি বখাটে ছেলে তার পথ আটকে দাড়ালো। একজনে হাতে ধারালো ছুরি, লাইট পোস্টের আলোতে চকচক করছে। মফিজ ভয় পেয়ে গেল। একজন জিজ্ঞেস করলা "কি মফিজ, দিনকাল কেমন যাচ্ছে?" মফিজ কথার উত্তর দিল না। অপর একজন মফিজের জামার কলার ধরে বলল "ভাল চাও তো মোবাইল আর মানিব্যাগ দিয়ে দাও"। মফিজ কথা না বাড়িয়ে সেগুলো দিতে যাবে ঠিক এই সময় হাজির হল পাড়ার দোকানদার ও তার দুই সহকর্মী। তারা মফিজকে জিজ্ঞেস করল "কি ভাগ্নে, ব্যাপারটা কি?"। মফিজ তখন ঘটনাটা বলছে।
এর মধ্যেই ছেলে তিনটি মফিজের মোবাইল নিয়ে নিয়েছে, মানিব্যাগটা এখনো নিতে পারেনি। দোকানদার সব শুনে ওই তিনিটি ছেলের উদ্দেশ্যে বলল "ছি ছি, এগুলো কি করছ, এখনই মোবাইলটা ফেরত দাও"। ছেলে তিনটির মধ্যে একজন বলল "আপনি কে, এখান থেকে চলে যান"। ঠিক সেই সময় মফিজের বাড়িওয়ালা ও তার চাকর সেই পথে যাচ্ছিল। তারা জটলা দেখে থামল, ঘটনাটা জানল এবং মফিজের পক্ষ নিল। মফিজ সহ এই দলে এখন ছয় জন, আর ছিনতাইকারী দলে তিন জন। মফিজের দলের লোকেরা ক্রমাগত দাবী জানাতে লাগল "বাবারা, মফিজের মোবাইলটি ফেরত দাও"। ছিনতাইকারী দলের একটি ছেলে তখন বলল "মোবাইল ফেরত দিব কি? মফিজ, ভাল চাও তো মানিব্যাগটিও আমাদের দিয়ে দাও, এই ছুরি দেখেছ? একেবারে বুকে বসিয়ে দিব"
গল্পের শেষ অংশঃ ১
অগত্যা মফিজ মানিব্যাগ দিয়ে দিল। এর পরে আশেপাশের ভীড় করল নামাজ শেষে মসজিদ ফেরত ২০-২৫ জনের একটি দল । এদের দেখে ছিনতাইকারীদের হাত পা কাপতে শুরু করল। না জানি কি পিটুনি আছে তাদের কপালে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই দলও কোন মারামারীতে না গিয়ে দাবী জানাল "বাবারা, মোবাইল ও মানিব্যাগ ফেরত দাও"। ছিনতাইকারীরা এবার সাহস পেল। তারা বলল "কার কাছে কত টাকা আছে বের করেন, আর মফিজ তুমি তোমার জামা, প্যান্ট ও জুতা খোল"। এক মিনিটের মধ্যে তিনজন ছিনতাইকারী মফিজকে জাঙ্গিয়া পরা অবস্থায় রাস্তায় রেখে তার সব নিয়ে গেল, আর সাথে নিল বাকী ৩০ জনের কাছ থেকে টাকা।
আমি জানি, গল্পটি অবাস্তব ও অপছন্দনীয় হয়েছে - শেষটা আপনার একেবারে পছন্দ হয়নি। আচ্ছা শেষটা (আগের প্যারাটি) বদলে দিচ্ছি।
গল্পের শেষ অংশঃ ২
মফিজ মানিব্যাগ দিয়ে দিল। এর পরে আশেপাশের ভীড় করল নামাজ শেষে মসজিদ ফেরত ২০-২৫ জনের একটি দল । তারা ঘটনা জানার পরে কোন কথা না বলে, ছিনতাইকারীদের ছুরিওয়ালা ছেলেটিকে লাগালো এক ঘুষি। সে ধপ করে মাটিতে পড়ে গেল। নাক দিয়ে রক্ত বেরুল। অপর দুইজন ছিনতাইকারী কোন কথার আগেই - পকেট থেকে মফিজের মানিব্যাগ ও মোবাইল বের করে দিয়ে দিল। ক্ষমা চাইল ও তাদের সাথিকে মাটি থেকে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল।
আমার এই গল্পের সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পুরোপুরি মিল না থাকলেও, বোঝানোর জন্য এই উদাহরনের আশ্রয় নিচ্ছি।
গত ২০ বছর ধরে একই সাথে রাজনীতি করে এখন জামাতের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। এই বিচার করতে শাহবাগ নাটক শুরু হয়েছে, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পুলিশের গুলিতে হত্যা আর গন গ্রেফতার তো রয়েছেই। এসব দেশবাসীর কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে। সবাই চায় শান্তি। গত ৬ই এপ্রিল হেফাজত এ ইসলাম নামক অরাজনৈতিক সংগঠনটি মহাসমাবেশের ডাক দেয়। ঢাকার সঙ্গে দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরেও ১৫-২০ লাখ লোক এই সমাবেশে হাজির হয়। ঢাকার সাধারন জনগন তাদেরকে খাবার ও পানি দিয়ে সাধ্যমতন সহায়তা করে। কারন সবাই আশা করেছিল, এত লোকের বাহিনী হয়ত কোনভাবে দেশকে এই অরাজকতা থেকে রক্ষা করবে। সবাই এতে সমর্থন করেছিল।
ওই সমাবেশের দিনে, পুলিশ নমনীয় ছিল, ইসলাম বিরোধী ব্লগগুলো সাময়ীক ভাবে বন্ধ ছিল, আওয়ামী সমর্থক ব্লগারেরা ওইদিন আওয়ামী কোন কথা ফেসবুকে বা কোন ব্লগে বলে নি। সবাই ভয়ে ছিল, এত লোক!! না জানি কি হয়। সেদিনই শাহবাগের সমাবেশে ৩০০ লোক উপস্থিত ছিল। এই সমাবেশে ইমরান সরকার বলেছে "হেফাজতের রক্ত নিয়েই শাহবাগ ঠান্ডা হবে- আপনারা সবাই বাশ ও লাঠি নিয়ে হেফাজতকে প্রতিহত করুন"। লক্ষ লক্ষ লোক উপস্থিত থাকা সত্বেও হেফাজতে ইসলাম এটি হজম করে নিয়েছে। হেফাজতেরা শান্তিপুর্নভাবে তাদের দাবী জানিয়ে ফিরে এসেছে। এটা ঠিক মফিজের গল্পের সেই মুসল্লী বাহিনীর মতন, যারা বলেছে "বাবারা, মোবাইল ও মানিব্যাগ ফেরত দাও"। এতে আওয়ামী লীগ বুঝে গেছে, হেফাজতের লোকেরা নিতান্ত ভদ্রলোক। তাদের ভয় ভেঙ্গে গেছে এবং এর পরেই আবার শুরু হয়েছে তাদের পরবর্তী খেলা।
এই খেলায় রয়েছেঃ
- হেফাজত কর্মীরা নারী সাংবাদিককে আহত করেছে এটা বোঝানো
- হেফাজতের দাবী মধ্যযুগীয় বলা
- হেফাজতের দাবী নারীর অধিকার বঞ্চিত করেছে এটা বলা
- মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার ও ১৩ দিনের রিমান্ডে
- ১৪ দিন রিমান্ডের শেষে শিবির সভাপতি আবার ১৮ দিনের রিমান্ডে
- হেফাজতের নেতা আল্লামা শাফীর বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার মামলার প্রস্তুতি
- দেশ চলবে "মদিনা সনদ" অনুযায়ী এমন ঘোষনা
হেফাজত ওই ৬ই এপ্রিল নিজেদেরকে ভদ্রলোক প্রমান না করলে পরবর্তী খেলাগুলি আমাদেরকে দেখতে হত না। আমি বলছি না যে হেফাজতের কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মারামারী করুক। কিন্তু তাদের অবস্থান শক্ত ছিল না। ৮০% হিন্দু জনবসতির দেশ ভারতে হাইকোর্টে একবার কোরআন নিষিদ্ধ হওয়ার আওয়াজ উঠেছিল। তখন দিল্লির মসজিদের ইমাম বলেছিলেন "যে বিচারপতি কোরআন নিষিদ্ধ হওয়ার রায় লিখবে আমি তাকে মাটিতে ফেলে গলায় পা ঠেকিয়ে, হাত দিয়ে জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব"। একে বলে শক্ত অবস্থান। আল্লাহর রহমতে ভারতে কোরআন নিষিদ্ধ হয়নি।
৯০% মুসলমান জনবসতির দেশ বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ থেকে ইসলাম অবমাননাকারীদেরকে কেউ কোন কথা বলতে পারল না। এমনকি ইমরান যেখানে বলেছে "হেফাজতের রক্ত নিয়ে শাহবাগ শান্ত হবে" সেখানে হেফাজতের কেউ বলতে পারল না "এত বড় সাহস - তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব"। ইসলাম নিয়ে বাংলাদেশের ব্লগারেরা যত অশ্লিল কথা লিখেছে, এমন অশ্লিল কথা লিখতে এর আগে কেউ সাহস পায়নি। তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদী কেউ এমন সাহস পায়নি। ইসলাম বিরোধীদের এই সাহসের অন্যতম মূল কারন মুসলমানদের নমনীয় অবস্থান। অন্য যে কোন মুসলিম দেশে এতক্ষনে ওই সব বিরোধীদের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যেত না।
আমরা আজ অত্যাচারীত - এর কিছুটা দায় আমাদেরও। আমরা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরেও আক্রমানাত্বক না হয়ে এখনো রক্ষনাত্বক রয়েছি। আর এর ফায়দা লুটে যাচ্ছে সমাজের গুটিকয়েক খারাপ লোক।
সবশেষে কোরআনের বানী
-----আল্লাহ কোন জাতীর অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে ---- (সুরা রা'দ - ১১)
আমাদের অবস্থার পরিবির্তনের চেস্টা আমাদেরকেই করতে হবে - তবেই তো আল্লাহর সাহায্য আসবে।
বিষয়: বিবিধ
২৪২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন