প্রধানমন্ত্রীর ট্রেন ভ্রমন

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:২৪:৩৮ রাত



এটা কোন রূপকথা নয়। খবরটা বেশ পুরাতন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে ভ্রমন করেছিলেন, তাও আবার দাড়িয়ে। তিনি কোন সিট ফাকা না পাওয়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেউ তাকে নিজের সিট ছেড়ে দেয়নি। এ নিয়ে আমেরিকার মতন দেশেও প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। কোন পত্রিকায় এও লিখেছে, "আমেরিকাতে আমরা এমন দৃশ্য কেন দেখতে পাইনা। তাহলে কি ব্রিটেন আমেরিকার চেয়ে বেশী নিরাপদ?"

ইনি ডেভিড ক্যামেরুন, ব্রিটেনের সবচেয়ে নবিন প্রধানমন্ত্রী, বয়স ৪৬ বছর। তার উত্তর ইংল্যান্ডের লীডস নামক স্থানে কেবিনেট সভায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল। লীডসে পৌছানোর জন্য তার হাতে তখন বেশী সময় ছিল না। উনি গাড়িতে করে গেলে অনেক সময় লাগত। কারন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী রাস্তা বন্ধ করে, জনসাধারনের দুর্ভোগ করে, গাড়ী চড়ে না। তাই উনি ট্রেনে চড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তার সঙ্গে ছিল মাত্র একজন দেহরক্ষী। এই ট্রেনে তিনি বসার যায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রমন করেন। ট্রেনে চড়া তার পুরাতন অভ্যাস। ১৯৯৬ সালে একবার তিনি এম পি পদের জন্য মনোনিত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সেই মনোনয়ন পান নি। এর কারন ছিল, তিনি যে ট্রেনে এসেছিলেন সেটি লেট ছিল, তিনি সময় মতন মনোনয়ন অনুস্টানে যেতে পারেন নি।



তার এই ট্রেন ভ্রমনে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ভারতীয় এক নারী। তার নাম সনোজিতা মায়ার। তিনি কয়েকটি বলিউড সিনেমায় ছোটখাটো অভিনেত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী ইয়ানকো এবং তাদের তিন মাস বয়সের শিশু কন্যা। সানোজিতা ও তার পরিবার, ট্রেনে আগেই ছিল। ডেভিড ক্যামেরুন পরে ট্রেনে উঠেন। তিনি সানোজিতা কে বলেন "তোমার বাচ্চাটি দেখতে খুব সুন্দর"। সানোজিতা তাকে ভদ্রতাসুলভ ধন্যবাদ জানিয়ে একটু দূরে গিয়ে স্বামিকে জিজ্ঞেস করেন "ভদ্রলোকটি কে?" । স্বামী বলেন "উনি প্রধানমন্ত্রী"। মহিলাটি একথা বিশ্বাস না করায়, বিষয়টি নিয়ে এই দম্পতি ছোট ঝগড়া করে। অবশেষে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সানোজিতা তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে "আপনি কি প্রধানমন্ত্রী?"। ক্যামেরুন তাতে হ্যা বলেন। তিনি সানোজিতের সঙ্গে ছবিও তোলেন।

আমার ছোট কিছু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি বেশ কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়াতে থেকেছি। সিডনীর হার্বার ব্রিজ ও অপেরা হাউজ সবাই চিনে। ওই নদীর ওপারে রয়েছে মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের নেতাদের বাসভবন। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ী একেবারে নদীর পাড়ে। ওই এলাকায় একটা পার্ক রয়েছে। এটা জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত। আপনি যদি ওই পার্কে সকালে জগিং করতে যান, তবে দেখতে পাবেন আপনার আশেপাশে হাটাহাটি করছে দেশের অনেক মন্ত্রী। মাঝেমাঝে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাবেন। নিরাপত্তার জন্য সবার আশেপাশে সাদা পোষাকে পুলিশ থাকে। কোন মন্ত্রীকে দেখে আপনার হ্যালো বলতে হবে না, চোখে চোখ পড়লে তারাই আপনাকে হ্যালো বলবে।

একবার আমি সিডনী এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম এক বন্ধুকে বিদায় দিতে। বিদায় শেষে আমি বাসায় যাব, তার আগে একটি সিগারেট খাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টের গেটের কয়েক মিটার দুরে দাড়ালাম। এই সিগারেট শেষ করে আমি বাসায় রওনা হব। হটাত দেখতে পেলাম আশেপাশে অতি দ্রুত কেমন যেন জনশুন্য হয়ে গেল। এর পরেই দেখি একজন বয়স্ক লোক একা এয়ারপোর্টের এক গেটে ঢুকছে। ঢোকার আগে আমাকে (কয়েক মিটার দূরে) দাঁড়ানো দেখে হেসে দিল। আমিও অন্য মনস্কভাবে হাসলাম। এটা অস্ট্রেলিয়াতে প্রচলিত এক ধরনের ভদ্রতা। কারোর চোখে চোখ পড়লে হেসে এক ধরনের হ্যালো বলা আরকি। লোকটিকে চেনা লাগলেও, মনে করতে পারলাম না। কয়েক সেকেন্ড পরে দেখতে পেলাম হুড়মুড় করে ক্যামেরা মাইক্রোফোন নিয়ে ১০-১৫ জন ওই বয়স্ক লোকের পিছু নিয়ে ভেতরে ঢূকে গেল। এর পরে আরো অনেক লোক এল। এলাকাটা আবার আগের মতন স্বাভাবিক হয়ে গেল। এরপরে জানতে পারলাম উনি প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড। আমার চিনতে না পারার কারন ছিল, আমি তাকে এভাবে দেখব তা আশা করিনি। লক্ষ্য করার বিষয়, ওখানে অবশ্যই নিরাপত্তা কর্মীরা ছিল। তারা কেউ কিন্তু আমাকে ওখান থেকে সরিয়ে দেয়নি।

অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে একটি মজার তথ্য হল, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে ড্রাইভার রয়েছে। এছাড়া কোন সরকারী কর্মকর্তার কোন ড্রাইভার নেই। মন্ত্রীরা নিজের গাড়ী নিজেই চালায়। ১০০% লোকের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। এটাই ওদের জাতীয় পরিচয়পত্র।

এখন, আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে গেলে, তার সঙ্গে আমলা থাকত ২০ জন আর দেহরক্ষী থাকত ৫০ জন। ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট থেকে পিটিয়ে লোক নামাতো। পার্কে মন্ত্রীরা গেলে সেই পার্কের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে ঢোকা যেত না। আমি দেশের এয়ারপোর্টে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। এক তরফা নেতাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আপনি সবই জানেন। আমাদের আসলে অমন পরিবেশই নেই। নেই তেমন ব্যাবস্থা। তাই অমন নেতাও নেই, অমন জনগনও নেই।

সুত্র দেখুন

বিষয়: বিবিধ

১৯৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File