১৮ দলীয় জোটের ডিফেন্স এবং ডিফেন্সিভ এলায়েন্স খুব দুর্বল
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১৮ মার্চ, ২০১৩, ০৬:২৪:০১ সন্ধ্যা
সকল পর্যায় দেশ ২ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে । একদিকে জাতীয়তাবাদী এবং ইসলাম পন্থী শক্তি আপর দিকে ইসলাম বিরোধী [ ধর্মনিরপেক্ষবাদী এবং নাস্তিক ] শক্তি । দেশের সর্বোচ্চ আইন অঙ্গনে আওয়ামী বলয়ের দুর্গ ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে । সরকারের সীমাহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রচন্ড ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । গণ বিস্ফোরন ঠেকাতে সরকার নির্বিচারে গুলি করে ২৮শে ফেব্রুয়ারী১৩ তে '' গণহত্যা'' চালিয়েছে । ৪০ জেলার ডিসি নিরাপত্তা চেয়ে লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছে । পুলিশ বিভাগের '' চেইন অব কমান্ড '' ভেঙ্গে গেছে । দেশ এবং দেশের বাইরের নানামুখী চাপে সরকার দিশাহারা । চরম নাজুক পরিস্থিতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে সরকার । প্রতিটি ঘটনায় সরকার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ।
ঠিক সেই মুহুর্তে আমরা দেখলাম সরকার বিরোধী পক্ষের ডিফেন্স এবং ডিফেন্সিভ এলায়েন্স খুবই দুর্বল । তাদের বিশাল জনসমর্থন থাকা সত্বেও আন্দোলনের গতিপ্রবহ সৃষ্টির কৌশল এবং বাস্তবমুখী পদক্ষেপে পিছিয়ে আছে । বিএনপির সিকি ভাগ জনসমর্থন জামায়াতের থাকলে এতদিনে গোটা দেশ তারা অচল করে দিত । এই ক্ষেত্রে বিএনপি এত দুর্বল কেন ? কোন জায়গায় বিএনপির সংকট তা তাদেরকেই নিরুপন করতে হবে । একটি লক্ষ্য বাস্তবায়নে --- বাস্তবমুখি পরিকল্পনা , সম্মেলিত সিদ্ধান্ত - সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা , ডেডিকেটেড কর্মীদের সাথে ডায়নামিক লিডারদের রাস্তায় অবস্থান খুবই জরুরী । এই ক্ষেত্রে বিএনপির যথেষ্ট্য জনবল এবং নেতা থাকা সত্বেও দুর্বলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে । এই সুযোগ নিয়ে পুলিশ বিএনপির একটি বিশাল মিছিল এবং ১৮ দলীয় একটি বড় সমাবেশ পন্ড করতে সক্ষম হয়েছে । বিএনপিতে ডিফেন্স অভিজ্ঞ যথেষ্ট সংখ্যক লোক আছেন । তার পরেও কেন এত তারা ডিফেন্সলেস তা বুঝে আসে না । একটি রাজনৈতিক শক্তির ডিফেন্স সাইড শক্তিশালী করার জন্য কোন আস্র-শস্র দরকার নেই । জনবলে প্রচন্ড মনবল তৈরী করে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্যে তাদেরকে প্রস্তুত করতে পারলে কোন শক্তি তাদেরকে দমাতে পারে না । জামায়াত-শিবির তার বাস্তব উদাহারন । তারা দেশের কোথায়ও ইট-পাথর-লাঠি ছাড়া আর কিছুই ব্যবহার করেনি । মিডিয়া তাদেরকে '' তান্ডব '' সৃষ্টিকারী '' সন্ত্রাসী '' হিসাবে দেখাবার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাদের হাতে একটি ছুড়ি বা দা বা কুড়াল দেখাতে এখন পর্যন্ত সক্ষম হয়নি । তাদের ডিফেন্সের মুলভিত্তি হল '' ঈমানী শক্তি '' এবং কর্মীদের মাঝে নেতাদের উপস্থিতি । ১৮ দলের মাত্র ১০ টি স্পটে ১০ জন নেতার নেতৃত্বে ১০ টি ডিফেন্স বলয় তৈরী করা কি খুব কঠিন ? যেখানে নেতারাই পুলিশের মুল টার্গেট সেখানে স্বস্বদলের ডিফেন্স সাইড খুব শক্তিশালী থাকা জরুরী ।
একটি প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতাধর রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটা খুব সহজ নয় । যেখানে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সরকার দলের ক্যাডাররাও সশস্র হামলায় অংশ নিচ্ছে সেখানে আক্রান্ত পক্ষ কি দিয়ে মোকাবিলা করবে ? বিষয়টা খুব জটিল হলেও মোকাবিলার কাজটা খুব কঠিন নয় । নিরস্র জনতার স্রোত হল বাঁধ ভাঙ্গা অপ্রতিরোধ্য জোয়ার । তা রুখবার ক্ষমতা কারো নেই । দেশের বেশ কয়েকটি জিলায় তা প্রমানিত হয়েছে । আন্দোলনে গণমানুষের সম্পৃক্ততা না হলে তা ফলপ্রসু হয় না । ১৮ দলের নেতারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে , সরকার নাজুক পরিস্থিতে তাদের '' ডিফেন্সিব এলায়েন্স '' হিসাবে জামায়াত-বিএনপি বিরোধী সকল শক্তিকে এক করার চেষ্টা হিসাবে '' বিশাল ভোজ সভার '' আয়োজন করেছে নাগরিক সমাজের ব্যানারে । এই সকল সু-চিল রা বরাবর সাইবেরিইয়ার শীত পাখি । বছরের পর বছর এক চোখা বিবৃতিজীবি ।
তাদের পরবর্তি টার্গেট জামায়াত বিএনপি বিরোধী ইসলাম পন্থীদের একফ্লাট ফর্মে ভিরানোর উদ্যোগ । জামায়াতে ইসলামীর বাইরে বড় বড় ইসলামী শক্তির দুর্গ হল ---
১] হেফাজতে ইসলাম -সারা দেশে তাদের অবস্থান । নেতৃত্ব আছেন প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লাহমা মুফতি শফি ।
২] লালবাগ-কেরানী গঞ্জ---এর নেতৃত্বে আছেন আল্লামা আহম্মদ উল্লাহ আশরাফ ।
৩] ইসলামী আন্দোলন - নেতৃত্বে আছেন - পীর সাহেব মাওলানা ফয়েজুল করীম ।
৪] শরশীনা আলীয়া মাদ্রাসা এবং পীর সাহেব শরশীনা ।
এই ইসলামী দুর্গগুলোর সহযোগিতা এবং অংশগ্রহন ছাড়া বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লব সম্ভব না । ১৮ দলের সফলতা তাদের সহযোগীতা ছাড়া অসম্ভাব । তারা বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না । কিন্তু যখনই কেউ এই সকল দুর্গে ঢিল মেরেছে-----আল্লাহ-রসুল স , ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করেছে তখনই দুর্গের ঘুমন্ত মুজাহীদরা বাঘের মত ঝাপিয়ে পড়ে ইসলামের দুষমুনদের উপর । সালমান রুশদী , দাউদ হায়দার , তাসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে তারা প্রচন্ডভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল । আজ শাহাবাগের নাস্তিক গুলো যখন ইসলামের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালো তখন এই দুর্গগুলো আবার বারুদের মত জ্বলে উঠল । প্রতিবাদের ঝড় তুলল ।চারিদিকে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে । তাদের ভিতরে দ্বন্দ্ব কলহ জাগ্রত করে তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করার লক্ষ্যে সরকার তার মিশন চালু করেছে । সরকারের অভিযানে কিছু ভান্ডারী মাজারী ভন্ড ইসলামের নামে জাল তৈরি হতে পারে । কিন্তু দেশের প্রখ্যাত কোন আলেম - পীর সাহেব সরকারের সেই ফাঁদে পা দিবেন এমনটা আশা করা যায় না ।
১৮ দলীয় জোটকে খুব গুরুত্বের সাথে ইসলাম পন্থীদের এই শক্তিশালী কেন্দ্র সমুহের সাথে গভীর সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরী । তাদের সাথে পরামর্শ সভা করা একান্ত প্রয়োজন । ইসলামী শক্তির বাইরে আওয়ামী এবং বাম বিরুধী দল গুলোর সাথে নির্বাচনী সমঝোতা ঐক্য হতে পারে । সাংস্কৃতি এবং পেশাজীবি সংগঠনগুলো শক্তিশালী করা জরুরী । কোন যুদ্ধে বিজয়ের জন্য ডিফেন্সিভ এলায়েন্স খুব গুরুত্বপুর্ণ । সাম্ভাব্য প্রতিপক্ষের সহযোগী হতে পারে এমন ছোট ছোট শক্তিকে পক্ষে টানা অথবা নিষ্ক্রিয় করে দেয়া লড়াইয়ের সফলতার অন্যতম শর্ত । এই কর্মের জন্য দায়িত্বশিল নেতৃত্বের একটি টীম থাকা জরুরী ।
গণহত্যার ডকুমেন্টারী ওয়েব তৈরী করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় , কুটনৈতিক মহলে , জাতিসংঘ , ওআইসি , আরব লীগ সহ সকল মানবাধিকার সংস্থায় দেয়া প্রয়োজন । ১৮ দলীয় জোটে এসকল কাজের অভিজ্ঞ লোকের অভাব নেই । প্রয়োজন দিক নির্দেশনা এবং উদ্যোগ গ্রহনের । আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় তারা তা করতে সফল হবেন ইনশাআল্লাহ ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন