জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করা কি খুব সহজ ?

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১৮:৫০ সন্ধ্যা



জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবী কারা করছেন ? ধর্মনিরপেক্ষবাদী আবং সুবিধাবাদী বাম পন্থীরা বরাবর ইসলাম বিদ্বেষী । ইসলামের অনুশাসন তারা মানছে না । তাদের একটি অংশের নেতা '' শেখ মুজিব '' অন্য অংশের নেতা '' লেলিন - কাল মার্ক্স- মাওসেতুং । তাদের আদর্শ --- ১] ধর্মনিরপেক্ষবাদ ২] সমাজতন্ত্র । তাদের দলীয় সংবিধানে স্পষ্টভাবেই লিখা আছে । সে আলোকেই তাদের কর্ম পন্থা নির্ধারিত হচ্ছে । জনগনের ম্যান্ডেট ছাড়াই ১৯৭২ সালে এই আদর্শ তারা সংবিধানে দেশের আদর্শ হিসাবে সংযোজন করে । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্তেহারে এই আদর্শ ছিল না । ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনেও তা ছিল না । ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিলের অস্থায়ী সরকারের লিখিত নীতিমালায়ও তা ছিল না । পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সংবিধান তৈরী করেছেন । তখন তারা দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে কোরআন - হাদীস পরিপন্থী বাংগালী জাতীয়তাবাদ সহ এই ২ টি মতবাদ সংবিধানে স্থাপন করে । দেশের বরেণ্য আলেম-পীর মাশায়েখ - ইসলামী দল সমুহ এবং ধর্মপ্রান মুসলিম সমাজ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন । ইসলাম যার আদর্শ এবং নবী মুহাম্মদ স যাদের একমাত্র নেতা তাদের অন্য কোন মতবাদ গ্রহন করার সুযোগ নেই । সকল সমস্যার সমাধান ইসলামে রয়েছে । কোন দুঃখে মুসলমান আল্লাহর দেয়া বিধান ত্যাগ করে মানুষের গড়া ল্যাংড়া খোড়া আদর্শের পিছু দৌড়াবে ?

আল্লাহর দেয়া বিধান ছেড়ে যারা অন্য জগতে সুখ খুঁজে বেড়ায় তারাই আজ দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে । ইসলামী নেতাদের হত্যা করে , ইসলামী ব্যবসা বানিজ্য , ইসলামী বীমা , ব্যাংক , প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে এবং দাবি জানাচ্ছে । তারাই জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করতে চায় ।

******* ইহা জামায়াতের জন্য পুরাতন ইসু ************

১] পাকিস্তান আমলে স্বৈরাচার আইয়ুব খান গায়ের জোরে জামায়াত নিষিদ্ধ করেছিল । জামায়াত প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী ফাঁসী দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলেন । তার বিরুদ্ধে ফাঁসীর নির্দেশ হয় । রায় কার্যকর করার মাত্র কয়েকদিন আগে তাকে ক্ষমাচাইতে বলা হয় । একটি প্রতিনিধি দল ফাঁসীর পোষাক পরিহিত মাওলানাকে ক্ষমা চাইতে অনুরোধ করে তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন , '' জম্ম এবং মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে হয় না , তা হয় আসমানে । একটি মানুষ জান্নাতে যেতে চায় আর তোমরা তাকে জাহান্নামের দাওয়াত দিতে এসেছো ? '' সেই মামলায় তিনি বেকছুর খালাছ পান । জামায়াতের উপর চাপিয়ে দেয়া অবৈধ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় ।

২] বাংলাদেশ হয়ার পর ১৯৭২ সালে জামায়াত সহ সকল ইসলামী দলকে আওয়ামী লীগ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষনা করে । সবুর খান , শাহ আজিজুর রহমান , মাওলানা আব্দুর রহীম , আধ্যাপক গোলাম আযম সহ ৩৭ জন বিশিষ্ঠ ব্যক্তির নাগরিকত্ব সেই সরকার বাতিল করেছিল । পরবর্তিতে অধ্যাপক গোলাম আযম ছাড়া বাকী সকলের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করা হয় । গোলাম আযম আপোষ ফর্মুলার পরিবর্তে আইনের আশ্রয় নেন । সুপ্রীমকোর্ট তার বিরুদ্ধে আনিত [ রাজাকার , দেশদ্রোহী , মানবতা বিরোধি অপরাধ প্রভৃতি ] অভিযোগ আসার প্রমান করে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে ঘোষনা করেছে ।

৩] শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে ১ম যে সংসদ নির্বাচন হয় সে নির্বাচনে জামায়াত নিজ নামে নির্বাচন করার অনুমতি পায়নি । তারা ইসলামিক ডেমক্রেটিক দল নামে নির্বাচন করে ৬ টি আসন পায় । শহীদ জিয়া ৫ম সংশোধনির মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে আওয়ামী লীগ , জামায়াতে ইসলামী সহ সকল দল নিজ নামে কাজ করার সুযোগ পায় । সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত একটি সংসদীয় দল হিসাবে আইনী প্রক্রিয়ার ভিতরে জামায়াতে ইসলামী তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে ।

৪] এরশাদ সরকার রাষ্ট্র ধর্ম '' ইসলাম '' সংবিধানে সংযোজন করায় সকল ইসলামী দল আরো একদফা সাংবিধানিকভাবে দৃঢ়ভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হওয়ার রাস্তা সিলগালা হয়ে যায় ।

***এখন যদি আওয়ামী লীগ সরকার সেই সিলগালা পুরে ছাড়খার করতে চায় তাতে তারা নিজেরাই পুরে ছাড়খার হয়ে যাবে । দাবী তোলা যত সহজ দাবী পুরন করা খুবই কঠিন । এক আলেমের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে তাদের ত্রাহী ত্রাহী কম্পন শুরু হয়েছে । সংবিধানে সংশোধনী এনে ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করার সাহস থাকলে টেস্ট করতে পারেন ।

**** বিতর্কিত আওয়ামী ক্রিমিনাল ট্রাইবুনাল গায়ের জোরে সেই জাতীয় কিছু করতে চাইলে আরো বড় ধরনের বিপদ এই সরকারের মাথায় চেপে বসবে । এমনি সরকারের বিপদের শেষ নেই । আর কত ???

**** সরকার এবং তাদের নাস্তিক সহযোগিরা যৌথভাবে জামায়াত শিবির কে সন্ত্রাসী দল হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য সকল আস্র প্রয়োগ করেছে । গণহত্যা করেছে । নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে । এক চরম রাস্ট্রীয় সন্ত্রাস জম্ম দিয়েছে । তার জবাবে জামায়াত শিবির ইট পাথর আর লাঠি ব্যবহার করেছে । প্রায় ১৪ আনা মিডিয়া সরকারের । তারা আজ পর্যন্ত শিবিরের হাতে ব্যবহার করা একটি দা বা কুড়ালও দেখাতে পারেন নি । দেশের কোন স্থানে জামায়াত শিবির আস্র ব্যবহার করেছে এমন একটি ছবি কারো নিকট থাকলে দয়া করে দিন । ছাত্র লীগ যুব লীগ পুলিশ লীগ নর্বিচারে গুলি করেছে , ধারালো আস্র দ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ খুন করেছে তার দৃশ্যমান ছবি প্রচুর রয়েছে ।

এখন বাংলা দেশে সন্ত্রাসী হিসাবে কোন সংগঠন কে নিষিদ্ধ করতে হলে ১মে ছাত্র -যুব লীগ তার পর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করতে হবে । একটি বিচার বিভাগিয় তদন্ত টীম করুন । সেই টীমের রিপোর্টের আলোকে উদ্যগ নিন । আমরা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম ।

*** নির্বাচন কমিশনের বাপের সাধ্য নেই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার । নির্বাচন কমিশন পারে কোন দলকে শুধু নির্বাচনের জন্য নিবন্ধিত করতে । ঐ নিবন্ধের শর্ত কেউ পুরন না করলে আইনী প্রোসেসে তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ।এর বাইরে তাদের ক্ষমতা নেই ।

গায়ের জোরে সরকার জামায়াত শিবিরের কর্মকান্ড ন্নিষিদ্ধ করলেও তাদের জন্য এটা বড় ধরনের সমস্যা নয় । কি করতে হবে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা জামায়াত নেতাদের রয়েছে । হতাশার কিছুই নেই । ইসলামী আন্দোলন বসে থাকে না । হোচট খায় । আঘাত প্রাপ্ত হয় । আছার খায় ঘুরে দাঁড়ায় । পিটা খায় শরীর এবং ঈমান পাকা হয় । জেলে যায় , গুলি খায় , মৃত্যুর জন্য পাগল হয় । সাহসী হয় । এমন পাগল রুখবে কে ?

বিষয়: বিবিধ

১৮৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File