ব্যক্তি - গোষ্টিকে গুম , খুন এবং দলকে নিষিদ্ধ করা যায় কিন্তু আদর্শ হত্যা করা যায় না ।

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৪৮:৩৯ দুপুর



আমরা কি উম্মাদ হয়ে গেলাম ? আমরা কি দেশটাকে মগের মুল্লক পেলাম ? যা ইচ্ছা বলব এবং করব এরই নাম কি স্বাধীনতা ? আজ আমরা আইন আদালত মানছি না । সবাই আইনের উর্ধেব ।বিচারপতিদের হাত পা বেঁধে পানিতে নিক্ষেপ করছি । নিজের মত করে আইন বানাই । নিজের সাথে মনের অমিল হলে বারটা বাজাই । ভিন্ন মত পোষনের অধিকার নেই । সমালোচনার সুযোগ নেই । প্রতিবাদের ভাষায় কথা বলা যাবে না । অন্যায়ের বিরুদ্ধে যিনি কথা বলবেন মাটির উপরে থাকার অধিকার হারাবেন । তিনি গুম হয়ে যাবেন । খুন হয়ে মাটির নীচে চলে যাবেন । একদম না ফেরার দেশে ।

যারা গুম বা খুন হচ্ছে তারা আর ফিরে আসবে না । জীবিনের পথে জীবিতরা কি মৃত্যু ঠেকাতে পারবেন ? কেউ আগে কেউ পরে যেতেই হবে । নির্ধারিত সময় হলেই '' মৃত্যু '' ---------গুম হয়ে , খুন হয়ে , ফাঁসী হয়ে , দুর্ঘটনা,ব্যাধি-পীড়া ইত্যাদির ভিতর দিয়ে হাজির হবে । মৃত্যু কে ঠেকাবে আছে কেউ ? কেউ নেই । এই ক্ষমতা কোন মানুষকে দেয়া হয়নি । ক্ষমতাটা সংরক্ষিত মহান রব্বুল আলামিনের নিকট । তাই মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে হয় না । হয় আসমানে ।

যেখানে নিজের জীবনের একটি সেকেন্ডের গ্যারান্টি নেই সেখানে আমরা গুম করি - হত্যা করি । শেষ করে দেই তরু তাজা জীবনকে । মৃত্যু ব্যক্তির পরিবারে এনে দেই দুঃখ - বেদনা - শোকের ছায়া । তার পরে '' লাশ '' নিয়ে করি রাজনীতি । মা বলেন আমার ছেলে রাজনীতি করত না । তার খুনের বিচার চাই । বাবা মামলা করেন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী খুন করেছে । খুনের বিচার চাই । আমাদের নেতারা দৌড়ে যান , চোখের পানি ফেলেন , আফসোছ করেন । শান্তনার বাণী , বিচারের আশ্বাস দেন । কারা খুন করেছে তাও বলে দেন সবজান্তা নেতারা । পুলিশ নেতাদের হুকুমের গোলাম । কর্তা ব্যক্তিদের নির্দেশ পালন করে । আলতু ফালতু কিছু ধরে । মুল হত্যাকারী পর্দার আড়ালে বসে হাসে । এই চেক , সেই চেক , রিমাণ্ড , গুরুত্বপুর্ণ তথ্য প্রাপ্তি, সুরাতহাল-মেডিক্যাল রিপোর্ট , ডিএনএ টেস্ট , তদন্ত রিপোর্ট ইত্যাদি ----তারপর ------তারপর -------কিছুই হয় না । বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে । হায়রে দেশ- হায়রে আদালত !

যাকে গুম বা খুন করা হয় তার লালিত আদর্শটা গুম বা খুন করা যায় না । সে যে আদর্শ ধারন করেছে তা কিন্তু শেষ হবে না । যে যেমন আদর্শের উপর মৃত্যু বরন করবে ঠিক তেমন আদর্শ নিয়েই আল্লাহর দরবারে হাজির হবে । সেই আলোকেই তার হিসাব - নিকাশ হবে । সেখানে স্বাক্ষী দরকার হবে না । অপরাধীর হাত - পা সব মেমরী কাডের মতই বলে দিবে । পার পাবার কোন রাস্তা থাকবে না ।

যার যা প্রাপ্য তা তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে । মহা বিচারক পরিপুর্ণভাবেই ইনসাফ কায়েম করবেন ।

আজ শুক্রবার রাজীব হায়দার শুভ এবং কক্সবাজারে নির্মভাবে খুন হল ৬ জন । কক্সবাজারে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা গুলি করে হত্যা করলেন ৬ জন । আর ঢাকায় নিজ বাসার কাছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসী [ তার বাবা থানায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসী দ্বারা খুন হয়েছে বলে মামলা করেছেন ] খুন করল ব্লগার রাজীবকে । দেখা গেল রাজীব হত্যার তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া হল ----বলা হল এটা জামায়াত শিবিরের কাম । সাগর -রুনীর হত্যার কুল কিনারা নেই । প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বজিৎ খুনীদের সুস্পষ্ট পরিচিতি প্রকাশ হল কিন্তু কামের কাম কিছুই হচ্ছে না । এইভাবে একের পর এক গুম-খুন হচ্ছে । কিন্তু বিচার হচ্ছে না । ফলে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে । সব কিছু নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে ।

মামলা - হামলা - জেল জুলুম নির্যাতন কোন কিছুতেই জামায়াত শিবির নির্মুল হচ্ছে না । এই বার সর্বত্র ডাইরেক্ট গুলি করেও তাদের দমাতে পারছেনা সরকার । শাহাবাগের মঞ্চ থেকে দাবী তোলার ব্যবস্থা করা হল ----জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ ঘোষনা করতে হবে । বাংলাদেশে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি চলবে না । প্রধান মন্ত্রীও বলে দিলেন জামায়াত শিবিরের রাজনীতি করার অধিকার নেই । ১৭/২/২০১৩ তারিখে সংসদে ব্যক্তির সাথে দলের শাস্তি দেয়ার বিধান রেখে আইন পাশ করেছেন । একদলীয় ডিক্টেটরগণ প্রতিপক্ষকে ঠ্যাংগনোর জন্যে নানামুখী ফন্দী করেন । জেল নির্যাতন ফাঁসী এবং দল নিষিদ্ধ সহ হাজারো আয়োজন করেন । ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার দুঃস্বপ্ন দেখেন । আবশেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে জীবন বাচাবার পথ খুঁজেন ।

ইসলামী আদর্শের একটি সুসংগঠিত সুশৃংখল সাহসী সুশিক্ষিত দল--- জামায়াতে ইসলামীর ১ম সারীর কয়েকজন নেতাকে হত্যা করে , দলকে নিষিদ্ধ করে বা নিবন্ধন বাতিল করে এই দলটিকে নির্মুল করা যাবে ? এই ভাবে দল নিষিদ্ধ হতে পারে । কিন্তু তারা যে আদর্শ ধারন করেছে তা খতম করা যাবে ? দেশ - বিদেশের কোথায় তারা নেই ? রাষ্ট্রের কোন অঙ্গে তারা অনুপস্থিত ? দেশের একটি জেলা শহরে ১৯৮৩ সালে তাদের রুকন- কর্মী ছিল মাত্র ৫ জন । শহরে বাড়ী ছিল তিন জনের । আর এখন ২০১৩ সাল । সেই শহরে তাদের শতাদিক লোক বাড়ী করেছে , ব্যবসা প্রিতিষ্ঠান , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ নানামুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে । বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান তারা । সরকারী বেসরকারী চাকুরীতে আছে প্রচুর লোক । অনেকে আওয়ামী -বিএনপি পরিবারে বিবাহ বন্ধনে সম্পৃক্ত মুজবুতভাবে । সমাজের গোড়া-মাথায় বসবাস করে তারা ।এটা একটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এলাকার চিত্র । আর যে এলাকায় মেম্বার চেয়ারম্যান ,মেয়র হয়ে তের হাত মাটির নীচে তাদের শিকর প্রবেশ করেছে সেখানে বুরো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কি করবেন ? এই অপ্রতিরোধ্য আদর্শবাদী এক শক্তিকে আইন করে নিষিদ্ধ করা গেলেও নির্মুল করা যাবে না । তুরস্ক এবং মিশরে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে একাধিক বার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে । তাদেরকে রুখা যায়নি । বামদের তৈরী ফাঁদে পরে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হবে আওয়ামী লীগের । দেশপ্রেমিক দুরদর্শী খাটি আওয়ামী নেতারা বামদের খপ্পর হতে নেত্রীকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলে আওয়ামি লীগ মস্কোলীগে হারিয়ে যাবে । আর দেশে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে ।

বিষয়: বিবিধ

৯৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File