ভাষাসৈনিক - মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম কে নিয়ে কামাল লোহানীদের যন্ত্রনার শেষ নেই ।

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫৮:৫৭ রাত





ডানের বিপরীত বাম । পবিত্র কোরআন ইয়ামীন - ইয়াসার [ ডান - বাম ] সুস্পষ্টভাবেই চিহ্নিত করেছে । তাদের কর্মফল বলে দেয়া হয়েছে ।[ সুরা ওয়াকিয়া ] । সারা দুনিয়ার বাম পন্থীরা চরম কোরআন - হাদীস বিরোধী । যারা নিজেদেরকে শুধু সেক্যুলার ভাবেন তাদের অনেকে ব্যক্তিজীবনে আংশিক ধর্মকর্মে বিশ্বাসী । পারিবারিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক এবং রাষ্ট্রিয় জীবনে তারা ধর্মীয় অনুশাসন মানতে রাজী নন । এই ২ দলের মধ্যেই আছেন কামাল লোহানীরা । ইসলাম , ইসলাম পন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু না লিখলে বড় মাপের বুদ্ধিবিক্রেতা , কলামিষ্ট , বিশিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হওয়া যায় না । ইসলাম পন্থীদের চিত-কাত করা লেখা বেশী সংখ্যক সম্পাদকের বেশী পছন্দ । টক শোতেও বেশী দাম । দাদা বাবুদের শুভ দৃষ্টি মিলে । অর্থ-কড়ির অভাব হয় না ।

সে বাম ঘরের এক বুড়া শিয়াল পন্ডিত '' কামাল লোহানী '' । ৫/৯/২০১৩ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় তিনি পন্ডিতি জাহির করলেন '' গর্দবের মত '' গোয়েবলেস স্ট্যাইলে । মানসিক বিকারগ্রস্ত মহাশয়ের লিখার শিরনাম '' গোলাম আযম ভাষাসৈনিক ছিলেন না '' । তার ভাষায় গোলাম আযম ---- ধর্মব্যবসায়ী , বেহায়া , মিথ্যাচারী , ইতিহাসবিকৃতকারী , আত্মপ্রচারে সিদ্ধ , হানাদার বাহিনীর খাদেম , মওদুদী তার নেতা ইত্যাদি -----------। তার মতে গোলাম আযম নিজেই নামের আগে বিশেষন হিসাবে '' ভাষাসৈনিক '' মজলুম জননেতা '' লিখে আত্মপ্রচারে সিদ্ধ মিথ্যুক ।

আধ্যাপক গোলাম আযম ভাষাসৈনিক ছিলেন কিনা সে সার্টিফিকেট বেকুব কামাল লোহানীর দিতে হবে না । এখনও অনেক ভাষাসৈনিক জীবিত আছেন , যারা চলে গেছেন তাদের লিখা ইতিহাস , সাক্ষাৎকার , অনেক গবেষকের লিখা দলিল-দস্তাবেজ বর্তমান আছে । ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃতকারী এই জ্ঞানপাপীরা বললেই মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ? মানুষ উনার মত এত বেকুব নয় । ভাষা আন্দোলনের কত নম্বর সাড়িতে ছিলেন ? ১ম , ২য় , ৩য় , ৪ র্থ লাইনে থাকলে তো গোলাম আযমকে দেখতে পেতেন । সালাম , জাব্বার , রফিক , বরকাতের সাথে থাকলে তো '' শহীদ '' হয়ার কথা ছিল । প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম , গাজীউল হক , আব্দুল মতিন , নুরুল হক ভুইয়া , অলি আহাদ , মোহাম্মদ তোহা , ডঃ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ , সৈয়দ নজরুল ইসলাম , আবুল খায়ের , আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী , শামছুল হক , শামছুল আলম ---এই সম্মানীত নেতাদের কাতারে থাকলে তো কামাল লোহানীকে খুঁজে ভাষা আন্দোলনের নেতা মনে করা যেতো ।

১ম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তায় তমুদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় । তার কনভেনার ছিলেন জনাব নুরুল হক ভূঁইয়া । ফাউন্ডিং মেম্বার ছিলেন ---- জনাব শামছুল আলম , আবুল খায়ের , আব্দুল অয়াহেদ চৌধুরী , অলি আহাদ । এর বর্ধিত কমিটিতে ছিলেন জনাব মোহাম্মদ তোহা এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম । ১৯৪৮ সালের জানুয়ারী মাসে '' রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ '' আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাপকতা লাভ করে ।

**** অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষাসৈনিক হলেন কিভাবে ? *****

১] ভাষা আন্দোলনের মুল নেতৃত্ব দিয়েছেন তমুদ্দুন মজলিশ নেতারা । গোলাম আযম ঐ মজলিশের একজন সক্রিয় দায়িত্বশীল পর্যায়ের ছাত্রনেতা ছিলেন ।

২] ১৯৪৬-৪৭ সালে তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলের [ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ] নির্বাচিত জিএস ছিলেন । হলের ছাত্রনেতা হিসাবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ।

৩] তিনি ১৯৪৭-৪৮ এবং ১৯৪৮-৪৯ সালে ডাকসুর নির্বাচিত জিএস ছিলেন । একজন মেধাবী ছাত্রনেতা হিসাবেই ততকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন ।

৪] তিনি ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকসুর জিএস হিসাবে জিমনেসিয়াম ফিল্ডে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবী জানিয়ে মেমোরেন্ডাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে পাঠ করে শুনান ।

৫] তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন । ছাত্রজীবন শেষ করে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন । রংপুরে তিনি তমুদ্দুন মজলিশের শাখা গঠন করেন । ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে তিনি ১৯৫২ এবং ১৯৫৪ সালে ২বার কারা বরন করেন । একই কারনে চাকুরীও হারান ।

৬] দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার জরিপে ৮১ ভাগ পাঠক অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষাসৈনিক হিসাবে অভিমত দিয়েছে । ২২/২/২০১১ , আমাদের সময় । দেখুন জনমত জরিপের ফলাফল ------

****প্রশ্ন - ভাষাসৈনিক হিসাবে অধ্যাপক গোলাম আযমের স্বীকৃতি দাবী করেছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ । আপনি কি তা সমর্থন করেন ?

*** হ্যাঁ == ৮১ . ৩৪ জন । [ ১৫, ৫১৮ জন ]

*** না == ১৮ . ৪৩ জন । [ ৩,১০০ জন ]

*** মন্তব্য নেই == ০. ২৩ জন । [ ৪২ জন ]

*** মোট ভোট দাতা == ১৬ ,৬৭০ জন । প্রিন্ট এবং ইন্টারনেট সংস্করনে ১৮, ৬৬০ জন উল্লেখ করা হয়েছে


সমাজের স্বচেতন নাগরিকগন পত্রিকা পড়েন । তারা কি চা-সিংগারা খেয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমকে ভাষাসৈনিক হিসাবে স্বীকৃতি দিল ? কামাল লোহানীরা এই জনমত জরিপকে কি বলবেন আজগুবি ব্যাপার সেপার ? একদম ডাহা মিথ্যা ? এই জরিপের কোন মুল্য নেই ? ইতিহাস বিকৃতিকারী কি গোলাম আযম না কামাল লোহানীরা ? আপনারা মিথ্যুক ইতিহাস চোর নন তা প্রমান করুন । ঢাকসুর অফিসিয়াল বোর্ডে ১৯৪৭-৪৮ এবং ১৯৪৮-৪৯ নির্বাচিত জিএস এর স্থান ফাকা কেন ? এই ভাবে নাম মুছে ইতিহাস বিকৃত কারা করেছে ? কামাল লোহানীদের কোন জবাব আছে কি ?

**** অধ্যাপক গোলাম আযম মজলুম জননেতা হলেন কিভাবে ? ****

১] ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জেল খাটলেন , চাকুরী হারালেন । অথচ এই রাষ্ট্র তাকে ভাষাসৈনিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে । জামায়াতে ইসলামীর আমীর হওয়া কি মস্ত বড় অপরাধ ?

২] তার বিরুদ্ধে কামাল লোহানীদের অপবাদের তুফান আজও বন্ধ হয়নি ।

৩] রাজনৈতিক কারনে তিনি ১৯৬৪ সালেও কারাবরন করেছেন । তিনি অখন্ড পাকিস্তানে ১৯৫৫-১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাক-সরকার বিরোধী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন । কপ , পিডিএম , ডাক প্রভৃতি আন্দোলনে জনাব শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল দলের নেতাদের সাথে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে তাদেরকে অভিনন্দন জানান এবং বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা দেয়ার জন্যে তিনি পাক-প্রেসিডেন্টের প্রতি দাবী জানান ।

৪] পাকসেনা টিক্কা খানের সাথে এক মিটিং এর ছবির বরাত দিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা চালানো হয় । গণহত্যা বন্ধের দাবী জানাতে সে মিটিং এ ছিলেন-------

ক] জনাব নুরুল আমীন ---পিডিপি

খ] জনাব অধ্যাপক গোলাম আযম --জামায়াতে ইসলামী

গ] জনাব মৌলভী ফরিদ আহমাদ ---নেজামে ইসলামী

ঘ] জনাব খাজা খয়েরুদ্দীন ----মুসলিম লীগ

ঙ] এ এস এম সোলাইমান --- কে এস পি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ।

দেশের মানুষকে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে অধ্যাপক গোলাম আযম একাই মারত্মক অপরাধি হলেন । সমস্ত অপকর্মের বোঝা ইসলামী আন্দোলনের সিপাহসালার হয়ার কারনেই বহন করতে হচ্ছে । ডাহা মিথ্যার পাহার তৈরি করা হয়েছে ।

৫] শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া অধ্যাপক গোলাম আযমকে দেশে আনেন নি । বেগম খালেদা জিয়া তার নাগরিত্ব ফিরিয়ে দেননি । বরং ১৯৯১ সালে জামায়াতের সমর্থনে ক্ষমতায় এসে তাকে জেলে পাঠান । ১৯৭৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী সরকার অন্যায়ভাবে তার জম্মগত নাগরিক অধিকার হরন করেছিল ।১৯৯৪ সালে সুপ্রীম কোর্টের সর্বস্মমত রায়ে তিনি জম্মগত নাগরিক অধিকার ফিরে পান ।তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয় । এইভাবে তিনি বার বার জেল , জুলুম , নির্যাতনের শিকার হলেন ।

৬] ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম কেয়ার টেকার সরকারের ফর্মুলা দেন অধ্যাপক গোলাম আযম । স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধি আন্দোলনের মুল দাবী ছিল কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করা । ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার এই দাবী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ।

৭] ২০০০ সালে তিনি স্বেচ্ছায় জামায়াতের আমির পদ হতে অব্যাহতি নেন । বাংলাদেশের ইতিহাসে মৃত্যুর পুর্বে কোন সুস্থ্য নেতা স্বেচ্ছায় পার্টির সর্বোচ্চ পদ ত্যাগ করার নজির এই প্রথম । কিন্তু তথাকথিত এক শ্রেনীর মিডিয়া তার বিরুদ্ধে মিথ্যা , ভিত্তিহীন , কল্পকাহিনী প্রচার অব্যাহত রেখেছে ।

৮] বর্তমান সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হত্যা করার চক্রান্ত করেছে । ৯০ বছরের বৃদ্ধ মজলুম এই নেতাকে ৯০ বছরের সাজা দিয়েছে সম্পুর্ন অন্যায়ভাবে । প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী নেই , প্রমানিক দলিল নেই । তারপরও শাস্তি । এক নির্মম জুলুম ।

মজলুম এই জননেতা দেশ , দেশের মানুষ এবং আখেরাতের কল্যানের উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন । তিনি আদৌ আত্মপ্রচার এবং আত্মপ্রতিষ্ঠায় নিজকে নিয়োজিত করেননি । তিনি নিজে নিজের নামের সাথে '' ভাষাসৈনিক '' মজলুম জননেতা '' লিখেছেন এমন প্রমান বেকুব কামাল লোহানীর নিকট আছে কি ? থাকলে দেখাতেন নিশ্চয় । ভারতের পা চাটা গোলাম কামাল লোহানীরা কানা বোবা বধির বিক্রিত মস্তিস্কের ধারক বাহক । শিল্প কলা একাডেমীর মাধ্যমে দাদাবাবুদের বেহায়া-আশ্লীল-নগ্ন সংস্কৃতি আমদানী করে রিচি-মিতা-কল্পনা -লাকী-ঐশীদের তৈরী করেছেন এই কামাল লোহানীরা । অনৈতিক প্লাবনে যুব সমাজকে ভাসিয়েছেন ।

আর অধ্যাপক গোলাম আযম লক্ষ লক্ষ পথভ্রষ্ট যুবকের হাতে কুরআন - হাদীস - ইসলামী সাহিত্য তুলে দিয়েছেন । প্রচুর সাহিত্য রচনা করেছেন । ধর্মীয় অনুভুতি জাগ্রত করেছেন । ইসলামী আদর্শকে পরিপুর্ন জীবন ব্যবস্থা হিসাবে উপস্থাপন করেছেন । দেশের ধর্মীয় মহল , দেশপ্রেমিক মানুষ জনাব অধাপক গোলাম আযমকে একজন বিশিষ্ঠ্য ভাষাসৈনিক এবং মজলুম জননেতা হিসাবে সম্মান করে । তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করে । আল্লাহ এই মহান নেতার সকল অবদান কবুল করুন । তাকে জনতার মাঝে ফিরিয়ে দিন --এই কামনা করেছি ।

বিষয়: বিবিধ

১৫২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File