আইন শৃংখলার উচ্চ পদে বসে '' ফাউল '' খেলা মানায় না

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:৫৭:০৪ দুপুর



দেশের আইন শৃংখলা রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মুল দায়িত্ব পুলিশ বিভাগের । মানুষের জান -মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদেরই দায়িত্ব । পুলিশ মানুষের বন্ধু হবে , বিপদে তাদের সাহায্য পাবে , সবাই তাদের উপর আস্থা রাখবে , তারা দুষ্টের দমন করবে এমনটাই আশা আমাদের । কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার আমাদের পুলিশ বিভাগ সে চরিত্র অর্জনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে ।

এই জন্যে শুধু পুলিশ বিভাগই দায়ী নয় । আমাদের নোংরা রাজনীতির দুষ্ট চরিত্রের নেতারাও দায়ী । রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি উদ্দেশ্যে পুলিশকে ব্যবহার করে গোটা পুলিশ বিভাগকে '' বাণিজ্যিক কোম্পানীতে '' পরিনত করা হয়েছে ।

দেশের গৌরব পুলিশ বিভাগ আজ নানামুখী প্রশ্নের
সম্মুখীন । এখন পুলিশ হেড অফিস হতে স্বাধীন সত্ত্বানিয়ে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত হয় না । তাদের হেভী পাওয়ারফুল কন্ট্রোল রুম হল '' স্বরাষ্ট্র '' এবং '' প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র '' গণভবন '' ।

তাই তারা কখনও শান্ত পুতুল , কখনও নির্মম কসাই , কখনও তোতা পাখি আবার কখনও ভোতা দা । সরকার যা করতে বলে তাই করে আবার যা বলতে বলে হুবুহু তাই শুনিয়ে দেয় । টেলিফোনের ঠেলায় সন্ত্রাসীকে ধরে ছেড়ে দেয় আর ভাল মানুষ ধরে চালান দেয় ।

৫ই মে ২০১৩ । শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যা । ৪ মাস পর ৫/৯/১৩ তারিখে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজি একে এম শহিদুল হক সংবাদ সম্মেলন করে গণহত্যা অস্বীকার করলেন । তিনি হুমকি দিলেন সমাবেশে মৃতের সংখ্যা নিয়ে কেউ অপপ্রচার করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিবেন । তিনি আরো যা বললেন ---------

**** আমরা মিশরের মত কিছু করিনি ।

**** হেফাজত মোনাফেকি করেছে ।

***** এখানে কোন মারণাস্র ব্যবহার করা হয়নি ।

***** প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসাবে জনগনের ট্যাক্সে আমার বেতন । আমি একটি মিথ্যাও বলব না । আমি রাজনীতি করি না ।

*****বিভিন্ন থানায় হেফাজতের বিরুদ্ধে যে সকল মামলা আছে তার ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে ।

****** ঐ রাতের অভিযানে কোন নিহতের ঘটনা ঘটেনি ।

****** অভিযান শেষে আগে মারা যাওয়া ৪ জনের লাশ ছাড়া আর কোন লাশ উদ্ধার হয়নি ।

******'' অধিকারের '' প্রকাশিত ৬১ জন নিহতের তালিকায় পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়েছে । তাতে ৫ জনের নাম ২বার এসেছে । ১৮ জনের ঠিকানার কোন অস্তিত্ব মিলেনি । ৪ জন জীবিত আছে । [ ৫ জনের নাম ২ বার =১০ , ঠিকানার অস্ত্বিত্ব নেই =১৮ , জীবিত =৪ মোট =৩২ জন , ৬১- ৩২ =২৯ জন কোথায় ? ]

*******৫ই মে অভিযানের আগে -পরে ১৩ জনের মৃত্যু হয় । পরদিন [৬ইমে ] সারাদেশে বিজিবি সদস্যসহ ১৩ জন মারা যায় ।

****** অভিযানে রাইফেলের যে গুলিতে মানুষ মারা যায় সে গুলি ব্যবহার করা হয়নি । সাউন্ড গ্রেন্ড , জলকামান এবং টিয়ার শেল ব্যবহার করা হয় ।

***** যেসব মুলধারার সাংবাদিক সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন , তারা কেউ গণহত্যার কথা বলেননি । কিন্তু যারা ঘরে ছিলেন তারাই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন ।

**** দেশের গৌরব পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মেনে নিতে পারি না । এই হল দেশের শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ । তার বক্তব্যের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের আগে কিছু প্রমান দেখুন ।

****১ম অনুরুধ মাত্র ২ টি ৫ই মের গণহত্যার ডকুমেন্ট দেখুন *******

https://www.facebook.com/photo.php?v=362001090576543&set=vb.122121397866368&type=2&theater

https://www.facebook.com/photo.php?v=380658205377498&set=vb.122121397866368&type=2&theater

******* মাত্র কয়েকটি ছবি দেখুন ********

[১]



[২]



[৩]



[৪]



[৫]



[৬]



এখানে মাত্র ৬টি ছবি দেয়া হল । এই ছবি গুলি কি কেউ ঘরে বসে তৈরী করেছে ? সরাসরি ভিডিও চিত্র কি তৈরী করা হয়েছে ? যুগান্তর সহ অনেক দেশী - বিদেশী মিডিয়া বলেছে ঐরাতে যৌথ বাহিনী দেড় লক্ষাধিক বুলেট খরচ করেছে । একদল নিরীহ - নিরস্র মানুষ তাড়াতে রাতের আঁধারে এত বড় অভিযান কেন ?

**** সন্ধারাত হতে সে এলাকার বাতি নিভিয়ে দেয়া হল কেন ?

****মুফতি সফি সাহেবকে মঞ্চে আসতে দেয়া হল না কেন ?

**** এই নিরীহ মানুষ গুলো কোন ধরনের আস্র মজুদ করে কারো প্রতি বা অফিস -বানিজ্যিক ভবনে আক্রমন করেছিল ?

**** আইন শৃংখলা বাহিনীর একজনকেও কি গুলি করেছিল ?

***** তাদেরকে ভোর পর্যন্ত চলে যাবার সুযোগ দেয়া হল না কেন ?

***** ভোর ৪টায় শুধুমাত্র দিগন্ত টিভি এবং ইসলামী টিভি বিনা নোটিশে গায়ের জোরে বন্ধ করে যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া হল কেন ?

***** অভিযানের আগে মিডিয়া কর্মীদের তাড়িয়ে গুটিকতেক বাছাইকৃত মিডিয়ার লোক পিছে পিছে নিয়ে আসা হল । তাদের ধারনকৃত ভিডিও ফুটেজ কোথায় ?

***** শাহাবাগ আন্দোলনের ধর্মবিদ্বেষীদের ৩ মাস বিরানী এবং ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা দেয়া হল অথচ দেশের খ্যাতিমান দ্বিনদার আলেম এবং তাদের ছাত্রদের মাত্র ১ রাত অবস্থান করতে দেয়া হয়নি কেন ?

***** ৩ বাহিনীর যৌথ অভিযান হল কিন্তু অভিযোগের ব্যাপারে যৌথ প্রেস ব্রিফিং হয়নি কেন ?

**** সকল মহলের দাবী ছিল এই গণহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা । কিন্তু তা হয়নি কেন ?

***** অধিকারের ৬১ জনের তালিকা তদন্ত করলেন তারা যারা এই গণহত্যার মুল অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনী । তাতে সত্য কখনও বের হবে ? পুলিশের উপর এই আস্থা পাবলিকের আছে কি ? পুলিশ কর্মকর্তা তদন্তের যে হিসাব দিলেন তাতে বড় ধরনের গড়মিল । ৫জনের নাম ২বার থাকলে হয় ১০ , ১৮ জন ভুয়া , ৪জন জীবিত তাতে হল ৩২ জন । বাকী ২৯ জনের ব্যাপারে কিছুই বললেন না ।তারা কি জীবিত না ভুয়া না নিখোজ কিছুই বুঝা গেল কি ? আন্দারে হাইকোর্ট দেখালেন ?

পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজিপি একে এম শহিদুল হক সাহেব । সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না । ছবি ধারন করতে এখন আর দামী ক্যামেরা লাগে না । প্রত্যেকের সাথেই ক্যামারা মোবাইল থাকে । হাজার হাজার মানুষ তা ধারন করেছে । কথার মার প্যাচে ছবি মুছা যাবে না । ডিজিটাল যুগ । ঐদিনের রেকর্ড শুধু দিগন্ত চ্যানেলই করেনি । আরো অনেকেই করেছে । কিভাবে আপনারা সব কিছু মিথ্যা বলবেন ? মুলত হেফাজত ফিনিশ হয়নি আপনারা ফিনিশ হয়ে গেছেন ।

এই দ্বীনদার আলেম - ওস্তাদদেরকে মুনাফিক বলেছেন ।যাদের উপর ইতিহাসের নিষ্ঠুর অত্যাচার চালালেন তাদেরকে মুনাফিক বলার দুঃসাহস দেখালেন । যে অপপ্রচার করবে তাকে শাস্তি দেয়ার হুমকি দিলেন । আপনি নিজেই আওয়ামী সরকারের পক্ষে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন । রাজনৈতিক নেতাদের মতই বক্তব্য দিয়েছেন । মুল ধারার সাংবাদিক বলতে কি বুঝালেন ? বাম -সেক্যুলার সাংবাদিক ? বাকীরা পরগাছা ? ৭ টি ইসলামী দলকে দায়ী করেছেন কিসের ভিত্তিতে ? কোন তদন্ত কমিশন হয়েছে ? বিচারের আগে রায় ঘোষনা ? গ্রেপ্তার , নির্যাতন , ঠান্ডা মাথায় গুলি কোনটা বাকী রেখেছেন ?

প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রী অপপ্রচারে আত্মনিয়োগ করেছেন । এই হুজুরদের জঙ্গি হিসাবে প্রচার চালাচ্ছেন । তাদের ভাষায় ঐদিন হুজুররা গাড়িতে -পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন দিয়েছে , গাছ কেটেছে । যারা এই অপকর্মে লিপ্ত ছিল তাদের ছবি মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে । আজ পর্যন্ত আপনারা এই পশুগুলো ধরলেন না কেন ? দেশের মানুষ এত বোকা নয় । আপনারা যা বলবেন তাকেই সত্য বলে মেনে নিবে ? হাজার হাজার যুবক-বৃদ্ধা বুলেট নিয়ে হাসপাতাল গিয়েছে , বাড়িতে গিয়েছে । লক্ষ লক্ষ মানুষ টা দেখেছে ।

আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুন । গোটা পুলিশ বাহিনীকে জনতার মুখোমুখী করেছেন । আপনার পেশাগত জীবন অনেক দীর্ঘ । । অনেক দক্ষতা-অভিজ্ঞতা -সততা -সাহস-ত্যাগের বদৌলতে শীর্ষ পর্যায় এসেছেন । প্রধানমন্ত্রীর শুভদৃষ্টির জন্যে সব কিছু ম্লান হয়ে যেতে পারে না । রাষ্ট্রের এত বড় সম্মানীত দায়িত্বশীলগন দলবাজী সরকারের সুরে কথা বললে গৌরবের পুলিশ বাহিনীর গৌরব থাকে কোথায় ? আপনার বক্তব্য আপনার বিবেককে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাড়া করবে । দয়া করে পুলিশ বিভাগকে রক্ষা করুন । দেশকে রক্ষা করুন । কোন দলবাজ সরকারকে নয় । অপরাধ -অপরাধীকে রক্ষা নয় । দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন ।

সাবেক ২ আইজিপিকে হাতকড়া পরিয়েছেন , রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের চোর-ডাকাতের মত ডান্ডা বেরী লাগিয়েছেন ,বিরোধী দলীয় চীপ হুইপ পিটালে আপনারা রাষ্ট্রীয় পদক পান , একজন বর্শীয়ান ওস্তাদ বাবু নগরীকে নির্যাতন করে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছেন , একজন সাহসী সৎ সম্পাদককে বার বার নির্যাতন করেছেন , শিবির করার অপরাধে একজন মেধাবী ছাত্রকে নির্মম -নিষ্ঠুর-চরম নির্যাতন করেছেন ,পর্দানশীল নারীদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছেন -এসব তালিকা অনেক লম্বা ।এই পুলিশ বিভাগ পুনরায় আজকের শীর্ষ পর্যায়ের কারো হাতকড়া বা পায়ে ডান্ডা বেরী লাগালে আমরা হতবাক হব না । তবুও নীরবে এই অসম্মানের দৃশ্য আর দেখতে চাই না । দয়া করে পুলিশ বাহিনীকে এমন নির্মম আচরন থেকে মুক্ত হয়ার ব্যবস্থা নিন । সম্মানীত -খাদেম হিসাবে থাকুন ।

৫ই মের গণহত্যার হাজার হাজার স্বাক্ষী , প্রমান ,আলামত রয়েছে । বিষয়টা খুব তাজা । লুকানো যাবেনা । শাপলা চত্তরের মাটি , গাছ , পাশের বিল্ডিং ,বাতাস ,পানি সব কিছু শাহাদা হয়ে আছে । স্বাক্ষী যৌথ বাহিনীর সদস্যগন । তাদের ব্যবহার করা মারনাস্র , গাড়ী , ড্রাইভার , ময়লার -পানির গাড়ীও স্বাক্ষী হয়ে আছে । কোন বক্তব্য দিয়ে ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হবে না । ইতিহাসের কাঠগড়ায় , আইনের আদালতে এবং আখেরাতের বিচারালয়ে একদিন দাড়াতেই হবে ।

'' আজ আমরা ইহাদের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছি । ইহাদের হাত কথা বলবে , পা গুলো স্বাক্ষ্য দিবে , ইহারা দুনিয়ায় কি করেছিল '' ---সুরা ইয়াসিন-৬৫ । '' পৃথিবী যখন ভীষনভাবে দোলাইয়া দেয়া হবে এবং জমিন নিজের মধ্যকার সব বোঝা বাইরে নিক্ষেপ করবে এবং মানুষ বলে উঠবে , উহার কি হয়েছে ? সেদিন উহা নিজের [উপরে ঘটিত ] সমস্ত অবস্থা বলে দিবে । কেন না , তোমার রব উহাকে [ এই রুপ করার ] নির্দেশ দিবেন '' - যিলযাল -১-৫ ।

বিষয়: বিবিধ

২০৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File