ইসলামপন্থীদের সামনে '' রুহামাউ ওয়া বাইনাহুম'' এবং '' বুনিয়ানুম মার্সুস '' এর বিকল্প কিছু আছে কি ?

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৭:৪৭:৪৪ সন্ধ্যা



পাক-ভারত উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব আলেম সমাজ দিয়েছে । ১৮৩১ সালের ৫ই মে বালাকোর্ট প্রান্তরে ২০হাজার মুজাহিদ শাহাদাত বরন করেছেন । সে আন্দোলনের নেতা ছিলেন সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী রঃ ।ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে যিনি ১ম শহীদ তিনি একজন আলেম ছিলেন । তিনি হলেন মাওলানা সৈয়দ নেসার উদ্দিন তীতুমীর । ভারত , পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের আজকের ইসলামী আন্দোলন তাদের উত্তরসুরী । সে ধারিবাহিকতার অংশ ।

চতুর বৃটিশরা ইসলামী শক্তিকে ছিন্নভিন্ন করার লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সুদুরপ্রসারী ষড়যন্ত্র করে যায় । আধুনিক শিক্ষা , আলীয়া মাদ্রাসা এবং কওমী মাদ্রাসা এই তিন ধারার শিক্ষা চালুকরে তারা সফল হয় । ঘরে ঘরে সংঘাত-সংঘর্ষের বীজ বুনে দেয় । এক মায়ের তিন সন্তান , তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানার্জন করে , তিন প্রকৃতির তিন সংসার শুরু করে , তিন ধারার জীবন নিয়ে ব্যস্ত । পীরবাদ একটি বাধা হিসাবেই আছে । তারা রাজনৈতিক ময়দানে অনেকটা অনুপস্থিত থাকেন । কেউ কেউ হাজির থাকলেও আলাদা থাকেন যা ইসলাম বিরোধী শক্তির সহায়ক ভুমিকা রাখে ।মাঝে মধ্যে নিজেরা খাঁটি বাকী ইসলামী দল ভুয়া , দালাল এইজাতীয় বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করেন ।

**** রুহামাউ ওয়া বাইনাহুম ---এর প্রতিফলন *****

'' মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল । যারা তার সঙ্গে আছে তারা কাফেরদের প্রতি শক্ত-কঠোর এবং পরস্পর পুর্ণ দয়াশীল [রুহামাউ বাইনাহুম ] ।'' সুরা ফাতাহ--২৯ ।সাহাবা কেরামদের ভিতর এই আয়াতের প্রতিফল ঘটেছিল । রসুল সঃ এর অনুসারীদের ভিতর কোন দুরত্ব ছিল না । দ্বন্দ্ব-কলহ , হিংষা-বিদ্বেষ , কাদা ছোড়া ছুড়ি ছিল না । তাদের যত কঠোরতা ছিল ধর্মবিদ্বেষীদের সাথে । মুমিনদের প্রতি ছিল স্নেহ,মায়ামমতা ,কোমলতা , দয়া , সহায়নুভুতি । নীতি এবং আদর্শের ঐক্য তাদের ভিতর ভালবাসা-সহযোগিতার দরজা খুলে দিয়েছিল । আল্লাহর নিয়ামত এবং সাকিনাত প্রাপ্ত হয়েছিলেন ।

আমাদের আলেম সমাজ এবং ইসলাম পন্থীদল সমুহের ভিতর বর্তমানে দুরত্ব আগের তুলনায় অনেক কম । কাদা ছোড়া ছুড়ি তেমন নেই । অবশ্য একটি শ্রেনীর বিষাক্ত তীর শেষ হয়নি । হবেও না । তাদের এজেন্ডা বুঝা বড় দায় । ইসলাম বিরোধী শক্তি তাদের রসদ যোগান দেয় । লেজে কুত্তা নাড়ায় । তারপরও আমরা আশাবাদী ।

জামায়াতের কঠিন সংকটে সরকার চেয়েছিল আলেম-ইসলাম পন্থীদের বিরাট এক অংশ জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে । জামায়াত ইসলামী দল নয় , জামায়াত স্বাধীনতা বিরুধী , জামায়াত নেতাদের ফাঁসী চাইবে , বিবৃতি দিবে এমন আশা করেছিল সরকার । সরকার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় । দেওবন্দ লাইনের আলেমগন কট্টর জামায়াত বিরোধী ছিলেন । জামায়াতের কিছু বিষয় তাদের আপত্তি আছে । তা সত্ত্বেও দেশের এই হক্কানী আলেম সমজকে বর্তমান সরকারের ইসলাম বিরোধী অবস্থান বাস্তবতার মুখোমুখী করেছে । ইসলামঅপন্থী দল এবং ইসলামী ব্যক্তিত্ব একটি বিশেষ বার্তা পেয়েছেন । তাদের সুপ্ত '' রুহামাউ ওয়া বাইনাহুম '' চেতনা জাগ্রত হয়েছে । তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন সরকারের আক্রমন-নির্মুল অভিযানের টার্গেট শুধু জামায়াত নয় । পরিবার -সমাজ-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-রাষ্ট্র সহ সকল স্থান হতে মুলত ইসলাম নির্মুল অভিযানে নেমেছে এই সরকার ।

***** সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ইসলামপন্থীদের চোখ খুলে দিয়েছে ********

১] সংবিধান হতে আল্লাহর প্রতি আস্থা-বিশ্বাস বাতিল করে ধর্মহীনতার আদর্শ সেক্যুলারিজম সংযোজন ।

২] ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং নারীনীতি চালু করা ।

৩] সারা বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিল-তাফসির মাহফিল করতে না দেয়া ।

৪] সেক্যুলার -নাস্তিক দ্বারা শাহাবাগ আন্দোলন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ,ব্যবসা-বাণিজ্য বন্দের দাবী তোলা ।

৫] ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, রিমান্ড, হয়রানী , হত্যার ষড়যন্ত্র করা ।

৬] ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং দলের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে অপপ্রচার চালানো ।

৭] ৫ই মের শাপলা চত্তরে আলেম-ওলামার উপর নির্মম গণহত্যা চালানো ।

৮] প্রখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসীর মিথ্যা হুকুম এবং তার প্রতিবাদী মিছিলে পুলিশের গণহত্যা চালানো ।

৯] জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এবং জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত ।

এই জাতীয় পদক্ষেপ মুলত ইসলাম পন্থীদের ঈমান-আকিদা -অস্তিত্বে চরম আঘাত হেনেছে । সকল ইসলাম পন্থীর জন্যে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ । এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা ব্যর্থ হলে আরো কঠিন বিপদে পরতে হবে । বিষয়টি নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেছেন বলে মনে হচ্ছে । প্রতিষ্ঠিত কায়েমী শক্তির মোকাবিলা একা একা কেউ করতে পারবেন না ।সকল ইসলামী শক্তি ছোট খাটো আপত্তি-ত্রুটি ভুলে একটি শক্তিশালী ফ্লাটফর্ম তৈরী করে সম্মেলিতভাবে এর মোকাবিলা করতে পারেন । এই জন্যে সার্বিক প্রস্ততি দরকার ।

***** কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাই নিখাত '' বুনিয়ানুম মার্সুস '' ******

'' তোমরা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর রজ্জু ধারন কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না '' -আল-কুরআন ।

'' আল্লাহ তাদেরকেই বেশী ভালবাসেন যারা সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সুসংবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে '' -আল-কুরআন ।

এই বাক্য ২ টি জানা নেই এমন আলেম আছে কি ? এর ব্যাখ্যা-দাবী-আবেদন-হুকুম কি তাও আলেমগন অবগত আছেন । এ বিষয় জীবন ভর দারস দিয়েছেন , ওয়াজ করেছেন , শ্রেনী কক্ষে পাঠ দিয়েছেন । এইবার বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছেন ।

আমরা আশাবাদী সম্মানীত ওস্তাদগণ , হক্কানী আলেম সমাজ , হক্কানী আলেম পীরগন , ইসলামী পন্ডিত ব্যক্তিগন , ইসলামী দল এবং নেতাগন সক্রিয় হবেন , সম্মেলিত শক্তি নিয়ে ময়দানে ঝাপিয়ে পরবেন । বিশাল যুব শক্তি আপনাদের ডাকে শাহাদত বরন করার জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে । দেশের তাওহীদি জনতা আপনাদের পাশে থাকবে । এই দেশের মানুষ বড় ধর্ম প্রান । তারা ইসলামী অনুশাসনের পক্ষে জীবনবাজী রেখে লড়াই করতে প্রস্তুত । আজ ইসলামী শক্তির সম্মেলিত এক ফ্লাটফর্ম তৈরীতে যারা বেশী অবদান রাখতে পারেন তারা আগে থেকেই দেশে শ্রদ্ধার আসনে আছেন ।

১ ] আল্লামা মুফতি আহম্মদ সফী হুজুর --- হুজুরের এক বিবৃতিতে শাহাবাগ ধর্মবিরোধী নাস্তিক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে তছনছ হয়েছে । এই সরকার নাস্তিকদের পৃষ্টপোষক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে । সারাদেশে এক গণজাগরন সৃষ্টি হয়েছে । হুজুর আজ ঐক্যের প্রতীক । তিনি অবশ্য ইসলাম পন্থীদের ঐক্যের ভিত্তি রচনা করেছেন । তার বাস্তব চিত্র রচনায় হুজুরের অবদান আজ বেশী প্রয়োজন ।

২] খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা শাহ আহম্মদ উল্লাহ আশরাফ ----প্রবীন আলেম । তিনি বর্তমানে এই প্রচেষ্টায় অগ্রনী ভুমিকায় আছেন ।

৩] হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব , শর্ষিনার পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ -----শর্ষিনা আলেমদের দুর্গ । আলেম তৈরীর কারখানা । সারা বাংলাদেশে আলীয়া লাইনের বড় বড় আলেম পয়দা হয়েছে এই শর্ষিনায় । তিনিও বর্তমানে ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিরাট ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন ।

৪] নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী ---তিনিও ঐক্য প্রচেষ্টায় অগ্রনী ভুমিকায় আছেন ।

৫] ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফ নিজামী ----তিনি আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।

৬] মাসিক মদিনার সম্পাদক প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মহিউদ্দিন খান --- দীর্ঘ দিন ধরে ইসলাম পন্থীদের এক ফ্লাটফর্ম তৈরীর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন ।

তা ছাড়া খেলাফত মজলিশ , সম্মেলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ , সমমনা ১২ দলও বর্তমানে সক্রিয় ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে । আমরা আশা রাখি আলেম সমাজ -তাওহীদিজনতার একক সম্মেলিত একটি ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন । যা হবে বাংলাদেশের মুল ধারা , এক অপরাজীত শক্তি ।

জামায়াতে ইসলামীকে আলেম-ওলামা-পীর মাশায়েখদের সাথে দুরত্ব কমাবার ফর্মুলা খুজতে হবে । সবচেয়ে বড় এবং সুসংগঠিত দল হিসাবে এই ক্ষেত্রে অনেক ছাড় দিতে হবে । গুরুত্বপুর্ন টেকসই ভুমিকা নিতে হবে । তাদের বন্ধু নয় , ভাই হিসাবে পাশে দাড়াতে হবে । এই ক্ষেত্রে জামায়াত নেতা এবং জনশক্তিকে অতি সতর্ক কথা-বার্তা এবং পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবী ।

সকল ইসলাম পন্থীর একটি ছোট টীম যেখানে প্রত্যাকের যোগ্য প্রতিনিধি [ মাদ্রাসা + আধুনিক শিক্ষিত ] থাকা জরুরী । এই টীম যৌথভাবে ইরান , তুরস্ক , মিশর সফর করতে পারেন । এই তিনটি দেশের ইসলামী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট , সফলতা-ব্যর্থতা, গতি-প্রকৃতি , মান ,ভিন্ন ভিন্ন রুপ নিয়েছে । তারা কেউ সশস্র বিপ্লবের পথে যায়নি । বাংলাদেশের ইসলাম পন্থী কোন দলই সশস্র বিপ্লবে বিশ্বাসী নন । তারা বাংলাদেশে '' মদীনা স্ট্যাইল '' ইসলামী বিপ্লব চায় । আগে পরিবেশ-উপযোগী ক্ষেত্র এবং যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চান । তাই ৩ টি দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশ উপযোগী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী । কিন্তু কেউ সশস্র বিপ্লবের চিন্তায় মশগুল থাকলে আফগানিস্তান গিয়ে ধবংসলিলার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন । ইসলামের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পারেন । মানুষ মেরে ইসলাম কায়েম হয় না । উপর হতে জোর করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যায় না । রুট লেভেলে আসুন । মেম্বার , চেয়ারম্যান হোন , সালিশ -দরবার করুন , সামাজিক -সাংস্কৃতি-অর্থনৈতিক কাজে আত্মনিয়োগ করুন । জনগনের চরিত্র মেরামত করুন । শুধু মসজিদের নয় সমাজেরও ঈমাম হোন । ইসলামী শক্তিকে কেউ রুখতে পারবেনা । আল্লাহর দ্বীনের বিজয় সুনিশ্চিত ।

'' নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়াফাথহুম ক্কারিব ।''

গ্রামের সলিম উদ্দিন , কলিম উদ্দিন , হনুফার মা , কাল্লুর ভাইকে নিয়ে ভাবুন , তাদের পাশে আসুন , তাদের সমস্যা দেখুন , সামান্য অর্থের জন্যে তাদের মেয়ে বিয়ে দিতে পারেনা , চিকিৎসা পায়না , তাদের ঈদ-চান্দ নেই , বস্র নেই । চাদা নিন , যাকাত নিন , নিজের পকেট হতে কিছু দিন । মানবতার সেবায় আসুন । কর্মজীবি নারীদের বিরুদ্ধে কথা বন্ধ করুন । তাদের সার্বিক নিরাপত্তার আওয়াজ তুলুন । মাটির রাস্তায় হাটুন । পানিতে সাঁতার কাটুন । '' বোবা বাক্স '' হতে যুবক-যুবুতিদের উদ্ধার করুন । নুরুন আলা নুর দেখান । নিজ ঘরের আবর্জনা সাফ করুন । ইসলামের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না । দুনিয়াতে জান্নাতের সুগন্ধি পাবেন । ঐতো আশার আলো দেখা যাচ্ছে । '' নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়াফাতহুম ক্কারিব '' ।

বিষয়: বিবিধ

২৯৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File