সংবিধান প্রেমিক সংবিধানে চড় মেরে চলেছেন
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:১২:১৭ রাত
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একমাত্র সংবিধান প্রেমিক । সংবিধান মানার মত , বুঝার মত আর মানুষ আছে কি ?সংবিধান নির্মাতাগন ফেল ।তিনি নতুন করে ঘোষনা দিলেন সংবিধান হতে এক চুলও নড়বেন না ।অথচ ২৪ জানুয়ারী ২০১৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে সংবিধানের পোষ্টমার্টম করতে হবে নিজের স্বার্থে । তখন কি করবেন ? এই সংবিধান আওয়ামী লীগের জন্যে তৈরী হয়নি । প্রধানমন্ত্রীর একক কতৃত্ব-নেতৃত্বের জন্যেও নয় । দেশের মানুষের জন্যে তৈরী সংবিধান জনস্বার্থে সংশোধিত হতে দেখা যায় না । সংবিধানে জনস্বার্থ সংরক্ষিত থাকলেও তা ভুলন্ঠিত হচ্ছে বার বার । ক্ষমতায় আসার সহজ গ্রহনযোগ্য পথ রুদ্ধ করে বিদায়ের সহজ পথটিও জটিল করে তুলেছেন তিনি । কেন ? কার স্বার্থে ? ব্যক্তি-দলের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে মুলত সংবিধানে চড় মেরে শপথ ভঙ্গ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
আজ জনমনে হাজারো প্রশ্ন দানাবেধেছে ---------
****** এত উপদেষ্টা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় সংবিধানের কোন ধারায় আছে ?
****** চুরি করার অপরাধে মন্ত্রীত্ব হতে বিদায় নিয়েও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী কার স্বার্থে ? সংবিধানের কোন ধারায় এর বিধান আছে কি ?
***** বিদেশে পারিবারিক বিয়েতে যোগ দিতে ৪৮ জনের রাষ্ট্রীয় সফর-অর্থ অপচয়ের সুযোগ সংবিধান প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কাউকে দিয়েছে কি ?
******* গণভবনে রাষ্ট্রীয় খরচে দলীয় সভা-মতবিনিময় করার বৈধতা সংবিধানের কত নম্বর ধারায় আছে ?
****** ট্রাইবুন্যালের বিচারক , অনৈতিক কর্মের কারনে পদত্যাগ করে সংবিধানের কোন ধারার অধিকারে আবার হাইকোর্টে বিচারপতি হিসাবে ফিরে যান ?
******* প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় খরচে সফরে যান , রাজনৈতিক বক্তব্য দেন , সরাসরি নৌকায় ভোট চান । এই অধিকার সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে দেয়নি । তিনি সংবিধান লংঘন করে চলেছেন । তার শপথ ভঙ্গ করেছেন । তিনি তো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন । তিনি আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন নি ।
****** দেশের মানুষ '' তত্ত্বাবোধায়ক '' বিধানের পক্ষে । জনমতের প্রতিফলন হিসাবে সংবিধানে তা সংযুক্ত হয়েছিল । এই বিধান বাতিলের জন্যে পাবলিক ভোট দেয়নি । এই বিধান বাতিল করে সংবিধান তথা জনগনের বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নিয়েছেন ।
******* আওয়ামী লীগের প্রবীন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদরাও তত্ত্ববোধায়ক বিধানের পক্ষে । উপেদেষ্টাদের অধিকাংশ এই বিধানের পক্ষে মতামত দিয়েছেন । কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একাই দেশের সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজের মত করে কাটছাট করেছেন । ইহা সংবিধানের মুল স্প্রীটকেই চ্যালেঞ্জ করেছে ।
***** সাংবিধানিক অধিকার বলে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় । সে অধিকার চুরমার করে বিরোধী পক্ষকে রাস্তায় দাড়াতে দিচ্ছেন না , ঘরে ৪/৫ জন লোক একত্রিত হতে পারছে না । রিমান্ডের নামে চরম নির্যাতন চলেছে ।গণহত্যার উৎসব । এগুলো হচ্ছে কোন ধারা বলে ?
***** দেশের প্রখ্যাত ৩ আইনজীবি কি বলেন ?******
১} প্রধানমন্ত্রী যে সংবিধানে আসক্ত সে সংবিধান প্রনেতা প্রখ্যাত আইনবীদ ডঃ কামাল হোসেন বলেন , " সংবিধানের উপর দিয়ে সরকার সুনামি বইয়ে দিয়েছে '' ।২৫/৮/১৩ , আমার দেশ , অন লাইন ।
২} প্রখ্যাত প্রবীন আইনবীদ ব্যারেষ্টার রফিক উল হক বলেন , '' সরকার এবং কোর্টের মধ্যে যোগসাজশের প্রশ্ন উঠতেই পারে '' ।
৩} দেশের আর এক প্রখ্যাত আইনজীবি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন ,'' রায়ের আগেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে '' ।
দেশের খ্যাতিতিমান বিজ্ঞ আইনজীবি এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞগন বার বার মৌলিক গলদ দেখিয়ে আসছেন । কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কারো বক্তব্যের কোন পাত্তা দিচ্ছেন না । সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর নিকট ঐশীবাণী তুল্য হলে ভিন্নভাবে চিন্তা করা যেত । নিজের স্বার্থে তছনছ কিন্তু জনস্বার্থে '' একচুলও নড়িব না '' । সংবিধান বুকের উপর থেকে এক সেকেন্ডের জন্যেও নীচে রাখা হবে না । ইহা বড় সম্মানীত কিতাব । সে কিতাবের '' ২৬ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত যা লিপিবদ্ধ আছে তা ভাল করে পড়ে দেখুন । সেখানে মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিশেষ বিশেষ অধ্যায় রয়েছে ।
****আইনের দৃষ্টিতে সমতা
****সরকারী নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা
****আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার
****জীবন-ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার
**** গ্রেপ্তার-আটক সম্পর্কিত সুরক্ষা
****চলাফিরার স্বাধীনতা
****সমাবেশ , সংগঠন , চিন্তা-বিবেক, বাক,পেশা , ধর্মীয় স্বাধীনতা
প্রভৃতি বিষয়াবলী সুস্পষ্টভাবে লিখিত আছে । প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার এই ধারাগুলো মেনে চলেছেন কি ? জনগন কোন প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছে না । বরং দিন দিন সংকট ঘনীভূত করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন । সুন্দরভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে তিনি মোটেই আন্তরিক নন । তিনি বলছেন , অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না । বেগতিক অবস্থায় পড়ে হয়ত পদত্যাগ করে বলবেন , '' আমরা অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করব না '' । কারন খালেদা জিয়া যা বলেন তার বিপরীত বাক্যটা শেখ হাসিনাকে বলতেই হবে । তাতে দেশ গোল্লায় যাক । এক চরম জটিলতা সৃষ্টি করবেন । সংসদের মেয়াদ শেষ হলে কেউ তো আর নির্বাচিত থাকেন না । তারা ১০০% দলীয় মেম্বার । স্পীকার এবং রাষ্ট্রপতি ১০০% আওয়ামী লীগ আছেন বিধায় ঐস্থানে আসীন হয়েছেন । তাদের দায়িত্বে অন্তর্বর্তী সরকার হলেও বিএনপি যেতে পারে না । আদা আদা বিএনপি মানসিকতার এমন ১০ জন ব্যক্তি যারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবে না ----তাদের দিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার করা হয় তাইলে আওয়ামী লীগ কি সে নির্বাচনে যাবে ? নিশ্চয় যাবে না । তাইলে বিএনপি কোন দুঃখে ১০০ ভাগ আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে ? গায়ের জোরে কিছু করতে চাইলে আগে মল্ল যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আসুন । মল্ল বীর একজন দিলাম ।কুস্তি লড়ুন । প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে '' শাজাহান খান '' বা নব্যবীর '' লতিফ সিদ্দিকীকে '' মাঠে নামাতে পারেন ।
প্রধানমন্ত্রী যেখানে সুষ্পষ্টভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বানের ঘোষনা দিলেন সেখানে বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে তত্ত্বাবোধায়ক বিষয় আলোচনা করতে বলা একটা বড়ধরনের প্রতারনার শামিল । বিরোধী দল কি এত বোকা ? কোনটা ফাদ, কোনটা খাদ , চোরাবালি-ষড়যন্ত্র কিছু বুঝার জ্ঞান কি তাদের নেই ? শেখ হাসিনার ধোকাবাজী বিরোধী পক্ষ ভালভাবেই অবগত আছে । তিনি সংবিধানের দোহাই দিয়ে বার বার পাবলিকেরে বোকা বানাবার চেষ্টা করেছেন । নিজেই সংবিধান মানছেন না । বিরোধী পক্ষ মানবে কেন ? মানতে পারে না ।তাহলে রাজপথই হবে সমাধানের পথ ? বড় কঠিন পথ । অশান্তির দগ্ধ আগুনে সবাইকে পুড়তে হবে । আগ্নেয় গিরির দাবা নলে জ্বলতে হবে । কেউ রক্ষা পাবেন না । সময় কারো কথা শুনবে না । কারো বাঁধা মানবে না ।
আসময় হায় ! হায় ! কেউ কারো নয় ! অপ্রত্যাশিত ঘটনা মাথা পেতে নিতে হয় । সিডরের ভারী বোঝা সবাইকে বহন করতে হয় ।
বিষয়: বিবিধ
২৯৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন