দুই '' রাজপুত্তুর '' এর সামনে উত্তপ্ত কড়াই

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৩৮:৩৯ বিকাল



বাংলাদেশ এক অদ্ভুত দেশ । প্রতি হিংষার রাজনীতির দেশ । সংঘাত-সংঘর্ষের দেশ ।ফরমালিন যুক্ত রাজনীতি '' হাইব্রিড গণতন্ত্র '' জম্ম দিয়েছে ।সেই গণতন্ত্রের রশি ২ নেত্রীর হাতে ।আর ২নেত্রীর অবস্থান ২মেরুতে । ২ পরিবারকে ঘিরে চলেছে রাষ্ট্রের সকল চাকা । সব কিছুর মুলে আছেন ২ ম্যাডাম । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারাই থাকবেন । ক্ষমতার অদল-বদল তাদের মর্জির উপর নির্ভরশীল । মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ । রেডিক্যাল চ্যাঞ্জ নেই । আছে শুধু সর্বত্র গণভবনের প্রভুত্ব । '' হাওয়া ভবন '' আর ''সুধা সদন '' এর কতৃত্ব । এই ২ পরিবারের বাইরে রাষ্ট্রের উত্তরসূরি সহসা পয়দা হচ্ছে না । এখন দেখার বিষয় ২ ম্যাডাম তাদের উত্তরাধিকারী সিলেকশন করেন না নির্বাচনের ভিতরদিয়ে ঠিক করেন । গ্রহন -বর্জনে কতটা যোগ্য বানালেন তাও পাবলিক দেখতে চায় ।

*****এক রাজপ্পত্তুর তারেক রহমান ******

মা-বাবা ২জনই তার বিশাল এ্যাসেট । রাজনীতির প্রেরনার মুল উৎস । তারেক রহমানের '' হাওয়া ভবন '' নিয়ে অনেক কথা । এই ভবনের সূচনা পর্ব দলকে ক্ষমতায় আনতে এবং দলকে চাঙ্গা করতে বিরাট অবদান রাখে । কিন্তু শেষ পর্ব দুর্নামের বোঝার ভারে তলিয়ে যায় ।তবে দলের তৃনমুলে জোয়ার সৃষ্টিতে তারেক রহমান সফল হলেন ।আবার আসময় রাষ্ট্রের ব্যাপারে নাক গলাতে গিয়ে এবং কতিপয় অসৎ লোকের খপ্পরে পরে দুর্নাম কুড়ালেন । পেশী শক্তি এবং অর্থের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করতে চাইলেন ।আঁকাবাঁকা পথে হাটলেন । তাতে অনেক অর্জন খুয়ালেন ।অপবাদের বোঝা ভারী করলেন ।

দলের আবেগ তাড়িত বিপুল জনশক্তি তাকে অনেক আগেই '' প্রধানমন্ত্রী '' বানিয়ে ফেললেন । চাটুকারের দল তো আছেই । অনেক চাটুকার খালেদা জিয়া পর্যন্ত পৌছতে পারেনি । তারেক জিয়ার চারিপাশে ঘুর ঘুর করে ফায়দা লুটেছে । । শত্রু পক্ষ বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি । শুরু হল তার চরিত্র হননের ব্যাপক প্রচার । অঙ্কুরেই তাকে ভেজাল বানিয়ে দাও । উত্তপ্ত কড়াইয়ের মধ্যে লাফিয়ে পড়ুক । তাতে ডুবে মরুক ।

জেনারেল মইন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশান্তর করতে ব্যর্থ হয়ে তারেক রহমানকে তুলে আনে ।নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চালায় । জেল খাটায় । রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই বড় ধাক্কা । তার জন্যে ভালই হল । নুতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল । রাজনীতি করতে হলে নির্যাতন-জেলের ঝাঁঝ কে সাথে রাখতে হয় । নিজের ত্রুটি শোধরাবার পথ হল । ঝানু -পাকা রাজনীতিবিদ হতে হলে জেল-জুলুমের নিশানা থাকতে হয় ।

রাজপুত্তুরদের দুর্নামের বোঝা বইতে হয় । রাজনীতিতে আসলে বোঝা বেশী ভারী হয় । তা হতে বাঁচতে হলে নৈতিক ভিত্তি এবং রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা-প্রজ্ঞার ভান্ডার মজবুত হতে হবে । ব্যাপক অধ্যায়ন জরুরী । আদুরদর্শী সিদ্ধান্ত বড় ক্ষতির কারন হয় । একক কতৃত্ব -নেতৃত্ব ধবংস ডেকে আনে । দলের আদর্শ হাইলাইট না হয়ে নেতা হাইলাইট হলে সংকট বাড়ে । এইদিক হতে জামায়াত ছাড়া বাকীরা নেতামার্কা দল নিয়ে আছেন । দলে গণতন্ত্র অনুপস্থিত । অথচ দেশে গণতন্ত্র কায়েম করতে চান । দলের বিপুল জনশক্তি '' জাতীয়তাবাদ '' বুঝে না । মুক্তি যুদ্ধের আসল চেতনা জানে না । দলের গঠনতন্ত্র জীবনে চোখেই দেখেনি । তারা জিয়াকে , ম্যাডামকে এখন তারেক রহমানকে ভালবাসে ।দলের আদর্শকে ভালবাসে না । দলের আদর্শ যে কি তা বুঝে এমন লোকের সংখ্যা কত ? ক্ষমতায় গেলে দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে । কিন্তু কিভাবে তাহবে বলতে পারে না । আওয়ামী লীগ দেশ খাইছে । ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করেছে । বাচ ! হয়ে গেল চায়ের কাপের খানিক ঝড় । রাজনীতির দৌড় এই পর্যন্ত ।

তারেক রহমান দেশের কর্ণধার হতে চাইলে আগে দলে গণতন্ত্রের প্রাক্টিস করতে হবে । দল মেরামত আগে হতে হবে ।বিএনপির ভিতরে আর একটি বিএনপি সক্রিয় আছে । তা অনুধাবন করতে হবে । বাবা-দাদাদের ছাত্রদল হতে এখন আর নেতা উতপাদন হয় না । বর্তমানে দলের উচ্চ পর্যায় যে পরিমান ঝানু -বাঘা বাঘা , অভিজ্ঞ প্রবীন রাজনীতিবিদ আছেন তা অন্য দলে নেই ।তবে আওয়ামী রাজনীতির মোকাবিলায় তারা '' শিশু '' বলেই প্রতিমান হচ্ছে । হেরে যাচ্ছে । মার খাচ্ছে । কেন ? ভিতরের দ্বন্দ্ব-কলহ প্রধান কারন হতে পারে । সম্মেলিত সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট ঘাটতিও থাকতে পারে ।তারেক রহমানকে তা খুঁজে বের করতে হবে । নিজের যোগ্যতা দিয়ে সব মোকাবিলা করতে হবে । '' রাজপ্পত্তুর '' নামক দেয়াল ভাংতে হবে । তাইলে আসম্ভবকেও জয় করা সম্ভব । বিএনপির নেতৃত্ব এত বড় বড় মুক্তিযোদ্ধা । অথচ বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল প্রমান করতে পারছে না । প্রচার মাধ্যম খুব দুর্বল বলেই এই দশা ।

জিয়াউর রহমানের জম্ম গ্রামে । প্রেসিডেন্ট জিয়ার জম্ম ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে । সেই জিয়া সাগর হতে নদীতে , নদী হতে খালে -বিলে সাঁতার কেটে মানুষের ঘরে ঘরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন । স্বনির্ভর বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্র নায়ক । তার রাজনীতির মুলে ছিল ---------

১] মহান আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস এবং আস্থা । সেই অবস্থান হতেই ---বিসমিল্লাহ , নারায়ে তাকভীর - আল্লাহু আকবার , বাংলাদেশ - জিন্দাবাদ - এ ফিরে আসা । মুসলিম জাতিসত্ত্বার ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখার সংগ্রাম ।

২] বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা ।

৩] স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা চালানো ।

৪] মুসলিম বিশ্বের সাথে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করা ।

দিল্লী-মস্কো - ওয়াশিংটন তার কেবলা ছিল না । তার কেবলা ছিল কাবা । বেগম খালেদা জিয়াও কাবা মুখী । তারেক রহমান পিতা-মাতার এই আদর্শ ধারন করতে ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের পরিনতি ভোগ করতে হবে । আদর্শিক ভিত্তি যাদের মুজবুত তাদের ক্ষয় নেই , পরাজয় নেই । যোগ্যতা -অভিজ্ঞতার সাথে জগাখিছুরী মার্কা আদর্শ হলে সাময়িক চমক সৃষ্টি করা যাবে । কিন্তু ভালবাসা অর্জন সম্ভব নয় । ক্ষমতা দখল করা যাবে কিন্তু জনতার মনের জায়গায় স্থান হবে না । রাজনীতির উত্তপ্ত কড়াইকে ঠান্ডা করতে হবে । আক্রমনাত্ত্বক বক্তব্য ভুলে যেতে হবে । প্রতিহিংষার রাজনীতি উচ্ছেদ করতে হবে ।তারেক রহমান পারবে কি ঘুরে দাড়াতে ? পারস্পরিক আস্থার জায়গা মেরামত করতে সক্ষম হবে কি ?

**** আমাদের আর এক রাজপুত্তুর সজীব ওয়াজেদ জয় ******

এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবারেই জয়ের জম্ম । বাবা রাজনীতি করেননি । মা-নানা বড় মাপের রাজনীতিবীদ । মায়ের আর্শিবাদ সন্তান নানা হতে চেষ্টা করবে । উচ্চ শিক্ষিত সন্তান । প্রযুক্তি বিষারদ । ডিজিটাল বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা ! শুরুতেই ''ঘড়ির কাঁটা '' ঘুরানি কর্ম । তাতে শুভফল আসল না । সেই প্রজেক্ট তেজ্য হল ।

অনেক দেরীতে রাজনীতি শুরু । দেশের প্রতিহিংষার রাজনীতিতে রাজপরিবারের শিক্ষিত সন্তান পজেটিভ কিছু দেখাবেন । উত্তপ্ত কড়াই ঠান্ডা করার দাওয়াই দিবেন । এমনটা সকলের আশা ছিল । দীর্ঘ দিন আমেরিকার বাসিন্দা । আমেরিকান গণতন্ত্রের কিছু নমুনা সাথে আনবেন । দেশের উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবার বার্তা শুনাবেন । ধর্মনিরপেক্ষমতবাদ-বাংগালীজাতীয়তাবাদ বুঝাবেন ।

অবাংগালী বিয়ে করে বাংগালীপনার সাথে উপহাস করলেন । রাজনীতিতে পা দিয়েই উত্তপ্ত কড়াইকে আরো উত্তপ্ত করার কৌশল প্রয়োগ শুরু করলেন । বিতর্কের ঝড় তুললেন । প্রতিপক্ষের হাতে একের পর এক আস্র তুলে দিতে থাকলেন । সরাসরি মাকে অনুসরন করতে লাগলেন । প্রত্যেক বিষয় কথা বলতেই হবে । '' কথা মালার প্রজেক্ট '' চালু করলেন । প্রযুক্তিবিদ্যার বদৌলতে রাতের আধারে রাজধানীর সকল বিলবোর্ড দখল সুত্রে সেটে দিলেন এক নতুন সাড়া জাগানো সিনেমার পোস্টারে । সিনেমার নাম দিলেন '' উন্নয়নের জোয়ার '' । দর্শক চোক বন্ধ করে '' থুথু '' মারা শুরু করল ।অবশেষে বোধদয় হল এই সিনেমা চলবে না । তাই চুপিসারে রাতের আধারে পোস্টারগুলো নিজগুনে সরিয়ে নিলেন ।

রাজনীতি করতে হলে রাজনীতিবিদদের সাথে থাকতে হয় । শিখতে হয় । দলের ভিতর গ্রহন যোগ্যতা থাকতে হবে । সেই কৌশল জানতে হয় । খোচা-খুচি করে প্রতিপক্ষকে আক্রমন করে বড় রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না । নিজের দলে ঝানু ঝানু পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এখনও ২/৪জন জীবিত আছেন । তাদের কাছে কিছু শিখবেন বলে মনে হচ্ছে না । দলের কর্মীরা শেখ মুজিবের অন্ধ ভক্ত । আদর্শ বুঝে না । দলের ভিতরে নেতা শেখ মুজিবকে খুজে পায় না । তাই জাদরেল অনেক নেতা বিদায় নিয়েছেন । এখন আওয়ামী লীগ মানি শেখ হাসিনা । শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বর্তমানে জনপ্রিয়তার একদম তলানীতে আছে । নৌকা পদ্মা নদীতে ডুবে গেছে । এই প্রেক্ষাপটে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আগমন ঘটল । জেদাজেদি-প্রতিহিংষার স্থান ত্যাগ না করতে পারলে একই বৃত্তের ভিতরে ঘুরতে হবে । জনতার চোখের ভাষা যারা বুঝে না তাদের জন্যে রাজনীতি নয় । রাজনীতির নেগেটিভ ধারা বাতিল করতে হবে । দোষারুপ-আক্রমনাত্মক ভুমিকায় দেশ শেষ । মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত -ক্ষুব্ধ ।

জয়ের নিকট দেশের মানুষ ভাল কিছু আশা করে । পারবে কি জয় সেই আশা পুরন করতে ? ''রাজপ্পুত্তুর '' নামক দেয়াল ভাংগা কি সম্ভব ? প্রধানমন্ত্রীর প্রটেকশনে -সরকারী সুবিধা ভোগ করে পৈত্রিক বাড়িতে যেতে হল কেন ? সুচনায় এত প্রটেকশন হলে ভবিষ্যতে আরো কত লাগবে তার হিসাব আছে কি ? জনগনের কাতারে যেতে হলে সাধারন মানুষ হতে হবে । প্রযুক্তি বিদ্যা গ্রামের মানুষ খায় না । গ্রাম্য বিদ্যা-বুদ্ধি বেশী দরকার ।

বিষয়: বিবিধ

১৮৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File