সেক্যুলার ধর্মের শিক্ষিত ছাওয়াল

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ২৫ জুলাই, ২০১৩, ০৬:১১:০০ সন্ধ্যা



পৃথিবীর প্রতিটি পদার্থ , উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের নিজ নিজ ধর্ম আছে । প্রত্যাকের জন্যে আল্লাহ ধর্ম নির্ধারন করে দিয়েছেন । এই দিক হতে আল্লাহর নির্ধারিত ধর্ম পালনে সব কিছুই বাধ্য । প্রাকৃতিক জগতে তা উপেক্ষীত হচ্ছে না । মানুষ তার হাতকে ডানা বানিয়ে পাখীর মত উড়তে পারে না । পাখীও ইচ্ছা করলে তার ডানা গুটিয়ে মাছের মত পানীর নীচে সাঁতার কাটতে পারে না । সকল লতা-পাতা-গুলম ইচ্ছা করলেই লজ্জাবতি উদ্ভিদের মত পাতা গুটাতে পারে না । লাগামহীন স্বাধীনতা ভোগ করার ক্ষমতা আল্লাহ কাউকেই দেননি । মানুষ বিবেকের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে । সীমিত আকারে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেয়া আছে । যা ইচ্ছা তাই মানুষ করতে পারে না । পারলে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেত ।

চয়েস অব ফ্রীডম প্রাপ্ত মানুষের সামনে ২ টা পথ আল্লাহ সুস্পষ্টভাবেই দেখিয়েছেন । একটি '' সিরাতল মুস্তাকীম '' আর একটি '' ধাল্লীন '' । একটি সহজ-সরল- সোজা - হকের পথ [ আল্লাহর পথ ] অপরটি বিভ্রান্ত -পাপিষ্ট -বাকা ঝোকা শয়তানের পথ । আল্লাহর দেখানো পথের বাইরে যত মত -পথ - বিধান - আদর্শ আছে তা শয়তানের তৈরী । মানুষ এখন কোন পথে যাবে তার ফয়সালা বিবেক খাটিয়ে নেয়ার ক্ষমতাও আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন । সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক পথে হাটলে সে আপন ঠিকানা জান্নাতে যাবে । আর ভুল করলে ভুল পথে হেটে শয়তানের ঠিকানাই হবে তার আবাস স্থল জাহান্নাম ।

সেক্যুলারিজম একটি ধর্ম । মানব রচিত একটি আদর্শ । ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকতে হবে । পৃথিবী কোন ধর্মের মানুষ তার নিজের ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকেন এমন কেউ আছেন বলে আমার জানা নেই । আমি মুসলমান । আমি রোজাদার । আমার সম্মুখে দিনে দুপুরে একজন সিগারেট আর একজন মদ পান করল অপরজন দাঁড়িয়ে পেশাব করে দিল । এগুলো সব ধর্মেই নিষিদ্ধ । এমন অপকর্ম নিজ চোখে দেখে আমি বলব কি ? করব কি ? আমি ধর্ম নিরপেক্ষ । এগুলো থামানো আমার কাজ নয় । রোজা রাখতেই যেখানে আমাকে বাধ্য করা হচ্ছে না । সেখানে রাস্তার সমস্যা নিয়ে আমার মাথা ঘামানো দরকার কি ? একজন ধর্ম নিরপেক্ষবাদীর তো এগুলো ঠেকানো দায়িত্ব নয় । যদি তিনি ঠেকান তাইলে সামাজিক বোধ হতে ঠেকাতে পারেন । তারতো ধর্মীয় বোধের গরজ নেই । আসলে আমার যদি এমন অবস্থা হয় তাইলে বুঝতে হবে কোরআন -হাদীসের দৃষ্টিতে আমার ঈমান নেই । আমি হলাম নির্ভেজাল সেক্যুলারিস্ট ছাওয়াল ।

****** ভেজাল সেক্যুলারিস্ট বাদশাহ আকবর *******

আসলে আমাদের সেক্যুলারিস্টগণ বাদশাহ আকবর এবং কামাল আতার্তুকের শাসন কায়েম করতে চান । বাদশাহ আকবর রাষ্ট্র হতে কোরআন -হাদীস বিদায় দিয়ে '' দ্বীন এলাহী '' নামে সেক্যুলার ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন । তার হেরেমে সব ধর্মের নারী স্বস্ব ধর্ম বিনা বাধায় পালন করত । শিব লিংগ ধোয়া পানি খেতে , কপালে সিঁদুর দিতে , আযানের সময় লুলু ধবনি , গনেশ পুজা , হাত তুলে মুনাজাত , নৃত্য-গিটার-হারমোনিয়াম-তবলা-ঢোল বাজানো , সরাব পান হতে শুরু করে সব চলত হরদম ।

আপনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলে আপনার হেরেমে এসবের আয়োজন চলবে ? যেই ঘরে কোরআন -হাদীস , তসবিহ-জায়নামাজ থাকে সেখানে '' আকবরের বালাখানার '' আয়োজন হতে পারে ? যে ঘরে নামাজ -কোরআন তেলাওয়াতের ভিতর দিয়ে দিনের সুচনা হয় , আযানের সাথে সাথে সন্ধ্যা নামে , রাতের নামাজ শেষ করে খানা খায় , কোরআন বুকে নিয়ে [তেলাওয়াত করে সুরা বাকারার শেষ ৩ আয়াত - আবেদন , আয়াতুল কুরসী --সেলফ গার্ড-হাউজ গার্ড , সুরা ইখলাস -ফালাক-নাস---আত্মরক্ষা ঢাল ] ঘুমায় সেখানে শয়তানের স্থান নেই । সেখানে ফেরেশতা নামে । এই ঘর বাসীর জন্যে ফেরেশতারা মহান আল্লাহর দরবারে সার্বিক নিরাপত্তা চেয়ে দোয়া করে । এই ঘরকে আপনি দারুস সালাম বলতে পারেন । এই ঘর নির্মুল করতে সেক্যুলারিজমের জম্ম । এই ঘর মৌলবাদী - জংগী তৈরীর কারখানা ! এখানে সেক্যুলারিজমের দুশমন জম্ম নেয় । এই ঘর ভাংতে হবে !

আপনি কি ঘর বানালেন ? বাদ্য যন্ত্র নেই । নৃত্যের চর্চা নেই । রবীন্দ্র সংগিত নেই । ঘরে বিশ্ব কবির মুর্তি নেই , ছবি নেই । আপনি সেকেলে । আপনার ভিতর প্রগতি -আধুনিকতার ছোয়া পড়েনি । আপনার সন্তানরা স্মার্ট হবে না । আপনি হাজার বছর পিছনে । আপনি রমনা বটমুলে যাবেন , শাহাবাগ যাবেন । মুলধারায় প্রবেশ করবেন । প্রথম আলো আপনার ঘর কালচারে ভরে দিবে । এটা প্রগতির গতি সৃষ্টি করে !

******* খাঁটি সেক্যুলারিস্ট কামাল আতার্তুক ******

তুরুস্কে কামাল আতার্তুক রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ হতে শুধু ইসলাম নির্মুল করেনি । কোন জায়গায়ই ইসলামের স্থান দেয়নি । আরবীতে আযান নিষিদ্ধ , ইসলামী নাম , হিজাব , দাড়ি রাখা , ইসলামী ড্রেস , ইসলামী প্রতিষ্ঠান , শিল্প -সাহিত্য-সংস্কৃতি সহ সকল ক্ষেত্রে ইসলাম নির্মুল অভিযান সফলভাবে চালিয়েছে । শত শত বছরের ইসলামী সভ্যতার স্থান দখল করল ইউরোপ সভ্যতা । এসব কামাল আতার্তুকের অবদান । সে মুলত নির্ভেজাল সেক্যুলারিষ্ট । তার প্রতিষ্ঠিত সেক্যুলারিজমের বিষবাস্প হতে তুরুস্ক এখনও বের হয়ে আসতে পারেনি । তবে তারা এখন ইসলামী সভ্যতায় ফিরে যেতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

অথচ আমাদের শিক্ষিত বুড়া -জোয়ান -ছাওয়াল মিলে না বুঝে অন্ধের মত দৌড়াচ্ছে । কেউ সম্রাট আকবর হতে চান , কেউ কামাল আতার্তুক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন । সেক্যুলার হতে খুব ভালবাসেন । তারা খুব দামী মানুষ ।

এক ধরনের সেক্যুলারিষ্ট সব সময় খবরের কাগজে থাকেন । তাদের দল নেই । তবে দলের সঙ সেজে বিবৃতি ছাড়া কোন কামে নেই । তারা বিবৃতিবাজ সেক্যুলার । হুজুরদের বিরুদ্ধে বাক্যবানে ব্যস্ত । তারা স্বপ্নে শুধু মৌলবাদ - জংগীবাদ দেখে আঁতকে উঠেন । ঘুমাতে পারেন না ।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী হলেন ভেজাল সেক্যুলার । তিনি কোরআন পড়েন । নামাজ পড়েন । শালিন পোষাক পড়েন । নির্বাচনের সময় হিজাব পড়েন । তাসবিহ হাতে দেখা যায় । শাহাজালাল মাজার হতে নির্বাচনী কাম শুরু করেন । কিসাসের আইন এবং মদিনা সনদে দেশ চালাতে চান ! হেফাজতের অনেক দাবী পুরন করেছেন , কিছু বিবেচনায় -আলোচনায় আছে বলে ৩/৫/১৩ তারিখে সাংবাদিকদের জানালেন ।

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় পাঞ্জাবী -টুপি মাথায় দিয়ে ইফতার মাহফিলে হাজির । রোজা ইসলামের মৌলিক এবাদত , ইফতার মাহফিল মৌলিক কালচার । এগুলো যারা করেন তারা খাঁটি মৌলবাদী । সেক্যুলার দাবীদার কেউ এই জাতীয় মৌলিক কাজে অংশ নিলে তিনি হন ভেজাল সেক্যুলারিষ্ট ।

আমাদের সৈয়দ আশরাফ সাহেব হলেন নির্ভেজাল সেক্যুলারিষ্ট । তিনি সত্য কথাটি অকপটে বলে দিয়েছেন । তিনি '' হিন্দুও না , মুসলমানও না '' । একদম খাঁটি মানুষের নির্ভেজাল কথা । বাকীরা পাকা সেক্যুলার হতে পারেন নি বা সেক্যুলারিজম বুঝেন নি । তাই যত তালবাহানা । ধোকাবাজী ।

যিনি ইসলামী আদর্শে বিশ্বাস করেন , বুঝেন , মানেন তার সেক্যুলার হওয়ার দরকার নেই । ইসলাম তো ল্যাংড়া-খোড়া-কানা-বরা -অসুস্থ্য অপুর্ন কোন আদর্শ নয় । আল্লাহর মনোনীত একটি পরিপুর্ণ আদর্শ থাকতে কোন দুঃখে আমাকে শয়তানের পথে চলতে হবে ? সেক্যুলার ধর্মের শিক্ষিত ছাওয়ালদের নিকট কোন যুক্তিপুর্ণ জবাব আছে কি ?

বিষয়: বিবিধ

১৭০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File